আউটসোর্সিং ও ফ্রীল্যান্সিং বর্তমান সময়ে বাংলাদেশ সহ বিশ্বের অনেক দেশে অর্থনৈতিক চালিকা শক্তির সবচেয়ে গুরুপ্তপূর্ণ ভিত্তি। বিশেষ করে যুব সমাজের কাছে যারা পড়াশুনার পাশাপাশি নিজের পকেট খরচ চালাতে চায়। একটা সময় দেখা যায় এই পেশায়তারা এমনভাবে জড়িয়ে পড়েন, যা কিনা তাদের ভবিষ্যতের আয় উন্নতির স্থায়ী পথ হয়ে যায় এই ফ্রীলান্সিংকে কেন্দ্র করেই।
আউটসোর্সিং এবং ফ্রীলান্সিং কি?
আউটসোর্সিং ও ফ্রীলান্সিং শব্দ দুটি আমরা একই জিনিসবুঝলেও, অর্থ এবং কার্যগত দিক থেকে এদের পার্থক্য রয়েছে। আউটসোর্সিং(Outsourcing) মানে বাহিরের মাধ্যম থেকে কোন কাজবা তথ্য নিজের কাছে নিয়ে আসা বা নিজের কাজ বা তথ্য অন্যের কাছে পাঠিয়ে দিয়ে তুলনামূলক কম মূল্যে করিয়ে নেয়া। এক্ষেত্রে শুধু ফ্রীলান্সিংকেএককভাবে আউটসোর্সিংবলা চলে না। যেকোনো বিষয় এর সাথে যুক্তহতে পারে। এক্ষেত্রে স্থানীয়/নিজ দেশের কাজকেও আউটসোসিং বলা চলে না।আর ফ্রীলান্সিং (Freelancing) বলতে, মুক্ত বা স্বাধীনভাবে কাজ করার মাধ্যমকে বুঝায়।
ফ্রীলান্সাররা কারোকাছে কুক্ষিগত নয়, এবং কখনও হতেও পারে না। ফ্রীলান্সাররা দেশ বিদেশের সকলের সাথে সম্পূর্ণ নিজের স্বাধীনতায় এবং নিজ যোগ্যতা দ্বারা কাজ করে। কেউতাকে বাঁধা দিতে কিংবা কাজে বিঘ্নিত করতে পারে না। তবে হ্যাঁ, এক্ষেত্রে কেউ যদি নিজের চেষ্টায় না করে অন্য কোন ফ্রীলান্স দল/গ্রুপ আর আওতায় থেকে কাজ করে তবে তার সেই কাজকে ফ্রীলান্সিং বলা যাবে না। ফ্রীলান্সিং সাইট গুলোতে নিবন্ধন করতে কোন অর্থ দিতে হয়না এবং বায়ারের কাজগুলো ফ্রীলান্সিং সাইট থেকে নিতে নগণ্য পরিমাণ অর্থ(ডলার) প্রদান করতে হয়ে। এক্ষেত্রে বলে রাখা ভাল, আমার জানা এবং কাজ করার অভিজ্ঞতার আলোকে বলতে পারি, একমাত্র ফ্রীলান্সার.কম সাইট থেকে কাজ নিতে এবং কাজ পোস্ট করতেইঅর্থ ব্যয় করতে হয়।এবার আসা যাক মূল প্রসঙ্গে…বর্তমানে আমাদের যুব সমাজকে ফ্রীলান্সিং কি, কেনবা এই ধারার প্রশ্নগুলো তেমন কাউকে বুঝিয়ে বলতে হয় না বিশেষ করে যারা অনলাইন-মুখী। কারণ গত কয়েক বছর ধরে আমাদের দেশে ফ্রীলান্সারদের যে আধিপত্য বিস্তার লাভ করেছে তা আমাদেরসবারই জানাশুনার মধ্যেই। আবার কিছু কিছু ক্ষেত্রে রয়েছে ভিন্নতা। ভিন্নতা বলতে সেই বিষয়গুলো যারা চোখের সামনে ভালো মন্দ গুলো দেখাও বিচার করতে পারে না আসলেই তাঁর কি করা উচিৎ।
আমি মূলত পোস্টটি লিখেছি তাদের জন্য, যারা তাদের চোখের সামনে ভালো কিছু দেখেও সেগুলোকে নিজের করে নিতে পারেনা বা বুঝে উঠতে পারে না আসলেই কিভাবে তাঁরা নিজেকে একজন সফল ফ্রীলান্সার হিসেবেপ্রতিষ্ঠিত করতে পারবেন।কিছু কিছু বিষয় যা আপনি ফলো করতে পারলেই আপনার ফিল্মসর হওয়ার স্বপ্ন পূরণে অনেক সহায়তা করবে। দেখুন কারণ হিসেবে আমি এখানে যে বিষয়গুলোকে নেগিটিভলি উল্লেখ করবো সেগুলোকে আপনি বেশি কিছু না শুধু নিজের সাথে মিলিয়ে দেখেন এবং পারলে সেইবিষয়গুলোকে পজিটিভকরে নিন নিজের জন্য নিজের মত করে। তাহলেহয়তো আর পিছে ফিরে দেখতে হবে না…
১. অধ্যাবসায়হীনতাঃঅধ্যবসায় ফ্রীলান্সার হবার মূলমন্ত্র! এই গুনটিআপনার মাঝে নাই। আপনি অধ্যবসায়ী হতে পারেন নাই বা চেষ্টাও করেন নাই কখনও। একটা বিষয় চিন্তা করুন, আপনি হয়তো অন্য সব সফল ফ্রীলান্সারদেরকে ফ্রীলান্সিং এর মাধ্যমে আয় করতে দেখে ভাবেন “আমিও সফল হবো” অথবা “আমি ঐভাইয়ের মতো এইটা হবো, ঐটা হবো”। দেখুনচাইলেই অনেক কিছু পাওয়া যায়, একথাটিঅনেক ক্ষেত্রে সত্যি। তবে শুধু কি চাইলেই হবে কারণ এই কথাটি বলে আপনি যতই চেঁচামেচি করেন না কেন কোন লাভ হবে না। আপনার সফলতা কখনই আসবে না। কারণ আপনি যে ভাইয়ের মতো হইতেচাচ্ছেন সেই ভাই অনেক সাধনা করেই ঐটাহয়েছে কিন্তু আপনি কি করেছেন এবং করছেন? সফলতা চাইতে হলে বা সফল হতে হলে আপনাকে বেশি কিছু করার দরকার হবেনা! শুধু দরকার আপনার পছন্দের বিষয়ে তীব্র”অধ্যবসায়”!একবার অধ্যবসায় শুরু করুণ। দেখবেন আপনার সফলতা আপনাকে হাত ছানি দিয়ে ডাকছে।
২. সময়জ্ঞানহীনতাঃযারা অধ্যবসায়ী না তাঁদের কখনও সময়ের মূল্যায়ন করতে পারেন না। কারণ আপনিঅধ্যবসায় শুরু করলেই আপনাকে সময় সম্পর্কে অনেক চিন্তা ভাবনা করে চলতে হবে। এমন অনেকেই দেখা যায়, যারা “টাকা আকাশে উড়ে” শুধু এই চিন্তা নিয়েই ফ্রীলান্সিং করতে আসেন। আসলেই তো টাকাউড়ে! কি বিশ্বাস হয় না? একবার ফ্রীলান্স সাইটগুলোতে দেখেন, প্রতিদিন কত কোটি ডলারের কাজ পোস্ট হয়। যার মধ্যে খুব বেশি হলে ৫০% কাজ সম্পূর্ণ হয় আর বাকীগুলান কর্মীর অভাবে বাতিল হয়ে যায়। আপনি কখনও একথায় বিশ্বাস-ই করবেন না কারণ আপনারসময়-ই নাই এসব সাইটে ভিজিট করে দেখবার। কারণ আপনি সময়জ্ঞানহীনতা নিয়ে অনেক ব্যস্ত থাকেন হয়তো!!!
৩. অপ্রত্যাশিতভাবে টাকার পিছনে ছুটছেনঃআবারও আসি “টাকা আকাশে উড়ে” নিয়ে। বর্তমান সময়ে আমাদের দেশে এমন কিছু ফ্রীলান্সার আছেন। যারা আসলেই “ফ্রীলান্স” বা “ফ্রীলাসিং” কথাটির অর্থই জানেন না। তাঁদের জন্য প্রথমের ৩টা প্যারা আবারো নিচে দিলাম…আউটসোর্সিং বা ফ্রীলান্সিং কি?আউটসোর্সিং বা ফ্রীলান্সিং বর্তমান সময়ে বাংলাদেশ সহ বিশ্বের অনেক দেশে অর্থনৈতিক চালিকা শক্তির সবচেয়ে গুরুপ্তপূর্ণ ভিত্তি। বিশেষ করে যুব সমাজের কাছে যারা পড়াশুনার পাশাপাশি নিজের পকেট খরচ চালাতে চায়। একটা সময় দেখা যায় এই পেশায়তারা এমনভাবে জড়িয়ে পড়েন, যা কিনা তাদের ভবিষ্যতের আয় উন্নতির স্থায়ী পথ হয়ে যায় এই ফ্রীলান্সিংকে কেন্দ্র করেই।আউটসোর্সিং ও ফ্রীলান্সিং শব্দ দুটি আমরা একই জিনিসবুঝলেও, অর্থ এবং কার্যগত দিক থেকে এদের পার্থক্য রয়েছে। আউটসোর্সিং(Outsourcing) মানে বাহিরের মাধ্যম থেকে কোন কাজবা তথ্য নিজের কাছে নিয়ে আসা বা নিজের কাজ বা তথ্য অন্যের কাছে পাঠিয়ে দিয়ে তুলনামূলক কম মূল্যে করিয়ে নেয়া। এক্ষেত্রে শুধু ফ্রীলান্সিংকেএকক ভাবে আউটসোর্সিং বলা চলে না। যেকোনো বিষয় এরসাথে যুক্ত হতে পারে। এক্ষেত্রে স্থানীয়/নিজ দেশের কাজকে আউটসোসিং বলা চলে না।আর ফ্রীলান্সিং (Freelancing) বলতে, মুক্ত বা স্বাধীনভাবে কাজ করার মাধ্যমকে বুঝায়। ফ্রীলান্সাররা কারোকাছে কুক্ষিগত নয়, এবং কখনও হতেও পারে না। ফ্রীলান্সাররা দেশ বিদেশের সকলের সাথে কাজ করে সম্পূর্ণ নিজের স্বাধীনতায় এবং নিজ যোগ্যতা দ্বারা। কেউ তাকে বাঁধা দিতে কিংবা কাজে বিঘ্নিত করতে পারে না। তবে হ্যাঁ, এক্ষেত্রে কেউ যদি নিজের চেষ্টায় না করে অন্য কোন ফ্রীলান্স দল/গ্রুপ আর আওতায় থেকে কাজ করে তবে তাকে মুক্ত বা স্বাধীন ফ্রীলান্সার বলা যাবে না। ফ্রীলান্সিং সাইট গুলোতে নিবন্ধন করতে কোন অর্থ দিতে হয়না এবং বায়ারের কাজ গুলো ফ্রীলান্সিং সাইট গুলো থেকে নিতে নগণ্য পরিমাণ অর্থ(ডলার) প্রদান করতে হয়ে। এক্ষেত্রে বলে রাখা ভাল, আমার জানা এবং কাজ করার অভিজ্ঞতার আলোকে বলতে পারি, একমাত্র ফ্রীলান্সার.কম সাইট থেকে কাজ নিতে এবং কাজ পোস্ট করতেইঅর্থ ব্যয় করতে হয়।দেখুন আপনি কাজ জানেন আপনার কাছে কাজ আসবে এটা ঠিক। তবে, আপনি যদি চুপ করে বসে থাকেন তাহলেকি কেউ আপনাকে জানবে? আপনাকে কাজ দিবে? অর্থ আয় করতেচাইলে আপনাকে আপনার কোয়ালিটি প্রকাশ করতে জানতে হবে। প্রমাণ করতে হবে যে, আপনি এই কাজের জন্য বেস্ট! ইদানীং অনেককেই দেখা যায় যারা কখন ফ্রীলাসিং করেনি তবে নিজের জ্ঞান আর দক্ষতা দিয়ে নিজ প্রোডাক্টের ব্রান্ডিং করে ঠিকই আয় করছেন। আর আপনি এভাবেও না চলতে পারলে শুধু টাকার পিছনে ছুটাই হবে, ফ্রীলান্স করে টাকা কামানোর শখ কোনদিন পূরণ হবে না।
৪. কাজ শিখার অমানুষিকতা:এই বিষয়টিতে সবচেয়ে বেশি অমনোযোগী নতুনরা। অনেকেই প্রশ্ন করে বসেন, “ভাই সব চেয়ে সহজ কাজ কোনটি? যেটাতে তেমন কিছু শিখতে হবে না”। এমন কথা যারা বলেন তাঁদের জন্য ফ্রীলান্সিং না! কারণ, আপনি যদি সাধারণ মানের লিখালিখির কাজ করেও আয় করতে চান তবে আপনাকে জানতে হবে, কিভাবে লিখলে আপনাকে বায়ার কাজ দিবে বা লিখায় কতটাসৌন্দর্য দিতে পারলে বায়ার আপনাকে বেঁছে নিবে সবার মাঝে থেকে! অনেকে বলেন, ভাই আমি গ্রাফিক বা ওয়েব ডিজাইন শিখতে চাই কিন্তু কোথায় শিখবো, কার কাছে শিখবো জানি না। তাঁদের জন্য বলি, সৃষ্টিকর্তা তো আপনাকে অন্ধ করে পাঠান নাই, তাই না? আপনিতো অন্তত নেট ব্রাউজ/চালাতে পারেন। তাহলে গুগল করুন না আপনি যে বিষয়টি খুঁজছেন। যদি ওয়েব ডিজাইন টিউটোরিয়াল পেতে চান, তাহলে সার্চ করুন “Free Web Design Tutorials” অথবা “Free Web Design Video Tutorials”। আমি ১০০% সিওর আপনি আপনার কাঙ্ক্ষিত বস্তুটি পেয়ে যাবেন। একটি কথা মনেরাখবেন, আপনি এখন ২০১৩ সালে এসে যে জিনিস গুলো বাংলায় খুঁজে পাচ্ছেন সেগুলো ২/৩ বছর আগেওবাংলা ছিল না। আপনি আজ বাংলালায়ন সহ হাইস্পিডের ইন্টারনেট ইউজ করেন কিন্তু আজ যে বর ভাইয়ের মত হতে চাইছেন তিনি জিপি বাএই সমমানের ধীর গতিরইন্টারনেট দিয়েই শিখেছেন। আজ যারা সফল তাঁরা কিন্তু একটা সময় আপনার মতইছিলেন। তাঁরা ইন্টারনেটের এই বিশাল ময়দান থেকে অনেক যুদ্ধ করে আজকের সফল ব্যক্তিত্ব হয়েছেন। আপনি তাঁদের মত হওন বা না হওন, নিজে খুঁজে নেয়ার চেষ্ঠাতো করবেন? না পেলে না হয় কারো সহায়তা নিবেন। নিজের চিন্তা এবং মেধা শক্তিকে কাজে লাগান। নাহলে, একটা সময় কোন কিছুই খুঁজে পাবেন না নিজের মাঝে থেকে! আর ফ্রীলান্সার হবার মূল মন্ত্রই হচ্ছে নিজ স্বাধীনতা, নিজের উপর নির্ভরতা।
৫. ভ্রান্ত ধারনা থেকে ফ্রীলান্সিং শুরু করাঃফ্রীলান্সিং নিয়ে ভ্রান্ত ধারনা কি, তা হয়তো এই সময়ে আর বলে দিতে হবে না।
উপরে লিখা “
আউটসোর্সিং বা ফ্রীলান্সিং কি?”
এইবিষয়টি ভাল করে বুঝতে পারলে আপনাকে কেউ ভ্রান্ত করতে পারবে না। তারপরেও বলি, ধরুন, আপনি যাদেরকে ফ্রীলাসিং এ সাকসেস হতে দেখে নিজেও ফ্রীলান্সিং করতে আসলেন। কিন্তু,আপনি ভাল করে জেনে নিলেন না আসলেই আপনার ঐ ভাইটি কি কাজ করে ফ্রীলান্সিং এ সাকসেস হয়েছেন। আর আপনার এই না জানার কারণেই বর্তমান সমাজে কিছু কুলাঙ্গাররা সুযোগ নিবে আপনার মূল্যবান সময়, শ্রম,অর্থ হাতিয়ে নেবার জন্য। বাস্তবিক ভাবে অনেককেই দেখেছি এখন দেখছি, কেউ কেউ নিজের সম্পত্তি বিক্রয় করেও টাকা ইনভেস্ট করে সেসব মূল্যহীন কাজে। একবার ভাবুন তো বা খোঁজ নিয়ে দেখুনতো, আপনি আপনারপাশের যে ভাইটির সফলতা দেখে ফ্রীলান্সিং করতে নামলেন তিনি কি কাজ পেতে নিজের সম্পত্তি বিক্রয় করেছেন? এমনটা হতে পারে, তিনি কাজ শিখার জন্য টাকা ইনভেস্ট করেছেন কিন্তু কাজ পেতে নয়।এখানে আবার আপনার ভাবে দেখবার পালা। উপরের পাঁচটি কারণের যে কোন একটি আপনার মাঝে থাকলে আপনি কখনই সফল ফ্রীলান্সার হতে পারবেন না। আপনি কি উপরের কোনটির সাথে আপনার মিল খুঁজে পান? যদি মিল খুঁজে পেয়ে থাকেন আর স্বপ্ন দেখেন সফল হবার, তাহলে আপনি ভুল পথে হাঁটছেন। এখনি সাবধান হোন… !
একদম নতুন কম্পিউটার ব্যবহারকারী থেকে যেভাবে সফল ফ্রীলান্সার হবার পথে হাঁটবেন…বর্তমান সময়ে আমরা বা আমাদের তরুণ সমাজযেভাবে ইন্টারনেটেরসাথে মিশছে তাতে প্রতি ১০০ জনের মধ্যে গড়ে খুব বেশিহলে ২০-৩০ জন আসছেন সময়ের সাথে নিজেদের যোগ্যতা অর্জন করে ভাল কিছু করে, জেনে এবং নিজের প্রফেশনাল ক্যারিয়ারের সাথে সমন্বয় রেখে। আর বাকিরা আসছেন অপরিণত মস্তিষ্ক নিয়ে “ইন্টারনেটে আয়” নামক সোনার হরিণ খুঁজতে। হয়তো অনেকের মনে প্রশ্ন আসবে। সবাইতো করে এতে নতুন করে প্রবলেম কি? হ্যাঁ, প্রবলেম অবশ্যই আছে। কারণ, অপরিণত জ্ঞান নিয়ে যত আয়ের পিছনে ছুটবে তাঁর ভবিষ্যৎ ক্যারিয়ারের জন্য সেটা হবে অনেক “বড় ভুল”! আবারো বলবেন কেন ভুল? হ্যাঁ, অবশ্যই “বড় ভুল”! কারণ, আপনি অপরিণত জ্ঞান নিয়ে মার্কেটপ্লেসে চলবেন, সেখানে আপনি যা চাইবেন সেটা করতেপারবেন না। ভুল বসত যদি কোন কাজ পেয়েও জান, তবে সেটা ভাল মতনা জানার কারণ প্রপার্লি সাবমিট করতে পারবেন না। ফলেএকদিকে নিজের ক্ষতি অন্যদিকে দেশের রেপুটেশন খারাপ করলেন। আর অনেক প্রবলেমই আপনি পরবেন। সেগুলো নিয়ে এখানে আলোচনা করবো না কারণ আমি শুধু টেকনিক্যালি আলোচনা করবো কিভাবে একজন নতুন ইন্টারনেট ব্যবহারকারী থেকে সফল ফ্রীলান্সার হবার পথে হাঁটবেন এবং অবশ্যই সেটা সময়ের সাথে তাল মিলিয়ে…
১. কম্পিউটারের সঠিকব্যবহার: আমাদের মধ্যে অনেকেই, বলতে গেলে প্রায় ৭০ শতাংশের বেশি কম্পিউটার ইউজার আছেন যাদের কোন প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা নেই কম্পিউটার সম্পর্কে। তাঁদের কম্পিউটারের উপরে কোন সার্টিফিকেট কোর্স করা নেই। আমি বলছি না এটা খারাপ কিছু। অবশ্যই বাহবা পাবার যোগ্য। বলা যায়, এর ওর দেখে বিশেষ করে বন্ধুদের দেখে কম্পিউটারের প্রতি আগ্রহ সৃষ্টি হয়। এভাবেই একসময় নিজের কাছে কম্পিউটার চলে আসে। প্রাতিষ্ঠানিক ভাবেনা শিখেন কিন্তু আপনাকে মান সম্পন্নভাবে জানতে হবে, তাই নয় কি? নিজের বাস্তব অভিজ্ঞতা থেকে বলছি,আমার পরিচিত এমন অনেকেই আছেন যারা কম্পিউটারের এক্সপার্ট তবে, এমএসওয়ার্ড অ্যাপ্লিকেশান সফটওয়্যারে বিজয় বাংলা এবং ইংরেজি টাইপ করতে পারেন না।বিজয় বাংলা এবং ইংরেজি কেন বলছি সেটা অবশ্যই বলে দিতে হবে না আমাকে। কম্পিউটারে বিজয় বাংলা এবং ইংরেজি টাইপ করতে না পারার কারণে নিজের সামান্য নোট তাকে অন্যকে নিয়ে করিয়ে নিতে হয়। তাহলে, আপনার কম্পিউটার জ্ঞানের শুরুটাই তো ঠিক মত হল না!! আপনি যদি লিখা লিখি করে আয় করতে চান, পারবেন?
২. ইন্টারনেটের ব্যবহার: বর্তমান মডার্ন যুগে সবাই ইন্টারনেট চালায়। তরুণ সমাজকে ইন্টারনেটে আকৃষ্ট করার মূল জিনিসটাই হচ্ছে ফেসবুক! ভুল বললাম কি? যাদের পিসি নেই তাঁরা দিব্বি মোবাইল ফোন নিয়ে ফেসবুক চালায়। আহ কি শান্তি! কিন্তু, যারা পিসি ইউজ করেন তাঁরা শুধু ফেসবুক নিয়েই ক্ষান্ত। এই টাইপ এর তরুণদেরই ইন্টারনেটে আয় করার ঝোঁক বেশি। ভালই, খারাপ কি! কিন্তু, তাঁদের একবার বলুন, আপনাকে একটু ডকুমেন্ট এটাচ করে মেইল করতে। বেশির ভাগই পারবে না!!! এটাচতো দূরের কথা তাঁরা কখনও মেইলইনবক্স খুলে দেখে না। বিশ্বাস হয় না?আপনার পাশে এমন টাইপএর কাউকে পেলে ট্রাইকরে দেখুন, প্রমাণ মিলবে। এবার যদি বলেন, ইন্টারনেট থেকে কোন কিছু খুঁজে(Search) দিতে। অনেকেই “গুগল”-কে বলবে “গুগলি” বলতে। এরপরওসার্চ করতে দিয়ে আমতা আমতা করবে। আচ্ছা ধরুন, আপনি পিসি আর নেট কানেকশনহাতে পেয়েছেন ২ মাসহল। এর মধ্যেই আয় করবেন বলে বদ্ধ পরিকর হলেন। ধরুন আপনি ওয়েব রিসার্চের কাজে বিড দিলেন। ভাগ্যক্রমে কাজও পেলেন (মনে রাখবেন: আপনি পুঙ্খানুপুঙ্খ কাজ না জানলে অভিজ্ঞ বায়ার থেকে কাজ কোনদিনও পাবেন না) এবার বুঝতে পারছেন না কিভাবে কাজটি করবেন। আপনার দৌড়ানোর কাজ শুরু। এবার জ্বালাতন করবেন অন্যদের। ভাই কিভাবে কাজ করবো, বায়ারের কথা বুঝি নাই আরও অনেক কিছুই।আমার কথা গুলো খারাপশোনাচ্ছে কিন্তু বলার নাই আমার, শুধু মনে রাখবেন। আপনি যাকে ডিস্টার্ব করবেন সেও হয়তো একজন ইন্ডিপেনডেন্টফ্রীলান্সার। আপনারঅক্ষমতার জন্য কেন সে আপনাকে সময় দিবে? আপনাকে তো কাজশিখতে কেউ মানা করে নাই। তাহলে কেন কাজ না শিখে কাজ নিয়ে অন্যকে জ্বালাবেন?
৩. ইমেইল, মেসেঞ্জার এর ব্যবহার শিখুন: উপরে ইন্টারনেটের ব্যবহার সম্পর্কে বলেছি। দেখুন, আপনি ফ্রীলান্সিং করবেন কিন্তু ইমেইল, মেসেঞ্জার এর সঠিক ব্যবহার জানবেন না তাহলে কিভাবে বায়ারের সাথে যোগাযোগ রাখবেন? ফ্রীলান্সিং জগতে ইমেইল এবং মেসেঞ্জার এমন ২টি পথ যেগুলো ব্যবহার না করতে পারলে আপনি কখনও বায়ার ধরতে পাবেন না। তাই আমি রিকমেন্ড করবো যারা এখনও বিগেনার আছেন, ইমেইল করা, ইমেইল এ ফাইল এটাচ করা। ইয়াহু, স্কাইপ, জিটকমেসেঞ্জার এর ব্যবহার শিখুন। নিজে না বুঝলে কিভাবে এসবের ইউজ করতে হয় নেটে সার্চদিন “How to use Yahoo/ Gtalk/ Skype messenger” লিখে।হাজার হাজার অডিও, ভিডিও টিউটোরিয়াল পাবেন। দেখুন, নেটে এসব সার্চ করতে হলে কিন্তুই আপনাকে অবশ্যই “ইন্টারনেটের ব্যবহার” জানতে হবে।
৪. ধৈর্য ধারণ করুন:ধৈর্য, অধ্যবসায় এবং সময় এসব কিছু ফ্রীলান্সিং এর পূর্বশর্ত। এই গুন গুলো আপনার মাঝে না থাকলে বা না আনতে পারলে আপনার জন্য ফ্রীলান্সিং নয়। কারণ, আপনি চাইলেই একদিনেই একাউন্ট সাইন-আপ করেই কাজ পাবেন না। নিজে বুঝুন আগে কোথায় কিকরতে হবে, না বুঝলে ফ্রীলান্সিং নিয়ে অনেক গ্রুপ-ফোরাম এবং ফেসবুক পেজ আছে সেখানে জয়েন করুন। আপনাদের প্রবলেম গুলো বলুন। কেউ না কেউ অবশ্যই হেল্প করবে। তবে মনে রাখবেন। কোন সল্যুশন পেতে অস্থির হবেন না। আপনার প্রবলেম এর সল্যুশন সাথে সাথেই পাবেন এমনটা আশা করুন বোকামি। আমি এখানে আমার নিজের অফিসিয়াল গ্রুপ এবং পেজ এর লিঙ্ক দিয়েছি। আপনারা নির্দ্বিধায় জয়েনকরতে পারেন। সাধ্যমত সহায়তা করতে চেষ্টা করবো।
৫. অভিজ্ঞদের সাথে আলোচনা করুন: উপরে বলেছিলাম “আপনিযাকে ডিস্টার্ব করবেন সেও কিন্তু একজন ইন্ডিপেনডেন্টফ্রীলান্সার। আপনারঅক্ষমতার জন্য কেন সে আপনাকে সময় দিবে? আপনাকে তো কাজশিখতে কেউ মানা করে নাই। তাহলে কেন কাজ না শিখে কাজ নিয়ে অন্যকে জ্বালাবেন?” আসলে বেপারটা খারাপ শোনালেও বেপারটা এমন: আপনি নতুন সেটা একজন অভিজ্ঞ ফ্রীলান্সার এর সাথে কথা বললেই তিনিবুঝবেন। তার সাথে আপনার সকল প্রবলেম গুলো আলোচনা করুন। তবে হ্যাঁ, অবশ্যই তার অবসর সময়ে। তারথেকে জেনে নিন, তিনি কখন অবসর থাকেন। নয়তো, তাকে ইমেইল করুন না আপনার সব প্রশ্ন গুলো। তিনি অবশ্যই আপনাকে সদুত্তর দিবেন যতদ্রুত সম্ভব। একটা কথা মনে রাখবেনবেশিরভাগ ফ্রীলান্সাররা মুক্ত মনের অধিকারী। তারা চান অন্যকে সহায়তা করতে। কিন্তু, বিগেনারদের তাড়াহুড়োর কারণে তারা এখন দিকনির্দেশনা দিতে ইতস্তবোধ করে বা আগ্রহ পান না। কোন মতেই অভিজ্ঞদের সাথে দীর্ঘ সময় আলোচনায় যাবেন না। এতে, আপনারই লস হবে। কারণ, কথা পিঠে অনেক কিছুই আলোচনা বহির্ভূত বিষয় চলে আসবে। এতে আপনি যে উদ্দেশে তার কাছে আসলেন সেটার কিছুটা হলেও ব্যাঘাত ঘটবে।৬. ফ্রীলান্স মার্কেটপ্লেস+ আপনার পছন্দের কাজগুলো চিনুন:অভিজ্ঞদের সাথে আলোচনার একটা বিষয় এটা হতে পারে। আপনি কিভাবে ফ্রীলান্স মার্কেটপ্লেস নির্বাচন করবেন। কোনটা আপনার জন্য ভাল হবে। কি কাজ আপনি করতে পারবেন আসব নিয়ে। লক্ষ করুন, সারা বিশ্বে বেশ কিছু রেপুটেড ফ্রীলান্স সাইট আছে। তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য: oDesk.com, Freelancer.com, eLance.com ইত্যাদি। এদের সম্পর্কে কিছু লিখা দিলাম নিচে…ফ্রীলান্সার.কম:নিউসাউথ ওয়েলস, সিডনী-তে অবস্থিত ফ্রীলান্সার.কম সাইটটি গেট-এ-ফ্রীলান্সার.কম নামে যাত্রা শুরু করে ২০০৪ সালে। পরবর্তীতে ২০০৯ অস্ট্রেলিয়ান কোম্পানি Ignition Networks ৭ই মে ২০০৯ সালে গেট-এ-ফ্রীলান্সার.কম কে কিনে নেয় এবং সেই বছরের অক্টোবর মাসে সাইটটির নাম পরিবর্তন করেন নাম কর হয় বর্তমান ফ্রীলান্সার.কম। সাইটটির সিইও হিসেবে আছেন Matt Barrie. সাইটটিতে বর্তমানে ৭০,১২, ৪৪৫ জনেরও বেশি সংখ্যক ফ্রীলান্সার ৪২,৩২,৭১২টি প্রোজেক্টে কাজ করেছেন বায়ার এবং প্রোভাইডার হিসেবে এবং এই নিউজটি লিখারমুহূর্ত পর্যন্ত সর্বমোট অর্থ আয়ের পরিমাণ ১০৬,৪৭,৩৩,১৩৬ডলার। সাইটটিতে আপনি একই সাথে কাজ করতে এবং আপনার কাজ অন্যদের দিয়ে করিয়ে নিতে পারবেন। বর্তমানে সাইটটিতে আপনি ঘণ্টা ভিত্তিক এবং বরাদ্দকৃত(Fixed) মূল্য ওয়েব ডিজাইন ও ডেভেলপমেন্ট, গ্রাফিক ডিজাইন, সফটওয়্যার ডিজাইন, আপ্লিকেশন ডিজাইন সহ আর ২০০ এর উপরে বিভিন্ন ক্যাটাগরিতে অজস্র কাজ পাবেন।
ওডেস্ক.কম: ফ্রীলান্সার.কম এর মতো ওডেস্ক-ও বর্তমানে সর্বাধিক জনপ্রিয় ফ্রীলান্সিং মার্কেটপ্লেস। ২০০৩সালে রেড সিটি, ক্যালিফোর্নিয়া-তেওডেস্কের কার্যক্রমশুরু হয়। ওডেস্কের সিইও হিসেবে আছেন Matt Coper. ওডেস্কেও কাজের ধরন ২টি। ঘণ্টা ভিত্তিক এবং বরাদ্দকৃত(Fixed) মূল্য। ওডেস্কেও আপনি বিভিন্ন বিভাগের আওতায় কয়েক লক্ষাধিক কাজ পাবেন। এখানে ঘণ্টা ভিত্তিক কাজের টাকা আপনি আপনার ওডেস্ক সফটওয়্যারের রেকর্ড অনুযায়ী কাজ শেষে পাবেন। তবেনির্ধারিত(ফিক্সড) মূল্যের কাজের টাকার পেমেন্ট গুলোর কোন গ্যারান্টি পাবেন না। সেটা আপনি প্রোজেক্ট এর বিড প্লেস করার আগেই জানানো হয়। উইকিপিডিয়ার তথ্যমতে সাইটটিতে এখন পর্যন্ত প্রায় ২,০০,০০০ এর বেশি বিভিন্ন দেশের মানুষ বায়ার এবং প্রোভাইডার হিসেবে কাজ করছেন। এই সাইটটিতেও আপনি একই সাথে কাজ করতে এবং আপনার কাজ অন্যদের দিয়ে করিয়ে নিতে পারবেন।
অর্থ উত্তোলন পদ্ধতি:সাইটগুলোতে কাজ করে বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে টাকা হাতে পাওয়াটা কিছুটা কষ্টকর হলেও আমাদের দেশের তরুণরা কাজ করা থেকেপিছিয়ে নেই। বর্তমানে প্রতিটি ফ্রীলান্সিং সাইট-ই আন্তর্জাতিক ডেবিট মাস্টার কার্ড দিয়ে অর্থ উত্তোলনের সুবিধা দেয়, সাথে মানিবুকার্স, পেপাল এবং ওয়েবমানি ট্রান্সফার এর মাধ্যমে কিছু চার্জ দিয়ে নগদ অর্থ দেশের ব্যাংক একাউন্টে জমা করা যায়।
৭. অতঃপর আয়:অপরের প্রতিটি স্টেপ কোন না কোন ভাবে আপনাকে মানতেই হবে। ধৈর্য নিয়ে নিয়ে কিছু পথপাড়ি দিতে পারলেও সপ্তম পথে এসে আপনাকে এর পথ হাতড়াতে হবেনা। আপনাকে টাকা খুঁজতে হবেনা, টাকা আপনাকে খুঁজবে। মার্কেটপ্লেস গুলো চিনার সাথে সাথে আপনার পছন্দের কাজ শিখুন। যে কাজে আপনিকমফোর্ট পাবেন সেই কাজ করুন। অন্যের বুঝায় দেয়া কাজে যদি নিজে মন থেকে পছন্দ করতে না পারেনতবে ভুলেও সেই কাজে পা বাড়াবেন বা। আপনি যে কাজটি পছন্দকরবেন, সেটি যদি ছোট কাজও হয় তবে সেটি নিয়েই শুরু করুন না। কাজ করবেন, আয় করবেন সাথে নিজেকে প্রতিনিয়তই ডেভেলপকরবেন প্রযুক্তির সাথে। তাহলে আপনার ফ্রীলান্স জগত অনেক সহজ হবে এবং একজন নতুন ফ্রীলান্সার থেকে সফল ফ্রীলান্সার হবার পথে পাড়ি জমাতে পারবেন।উপরের কথাগুলো একান্তই নিজের বাস্তব জীবনে অনুসরন করে লিখা। তবে অনেকের ক্ষেত্রেই অল্পতেই সফলতা আসতেও পারে, তবে এতে নিজেকে দ্রুতই সফল মনে করা ভুল। কারণ, ফ্রীলান্সিং বেপারটি দক্ষতার সাথে সাথে ভাগ্যের উপরেও অনেকটা নির্ভর করে। তাই, ফ্রীলান্সিং জগতে দীর্ঘ সময় না কাটানো পর্যন্ত নিজেকে পুরোপুরি সফল ভেবে বসাটা বোকামিই বটে!
Comments (No)