দেশে বছরে ফ্রিল্যান্সিংয়ে আয় ৮৫০ কোটি টাকা 1

বৈশ্বিক ডিজিটালাইজেশন ও প্রযুুক্তিগত উন্নয়নে আউট সোর্সিংয়ে ক্রমেই এগিয়ে যাচ্ছে বাংলাদেশ। বিশ্বে আউটসোর্সিং সেবাদানকারীর ১৬ শতাংশই অবদান রাখছে বাংলাদেশ। এতে বিশ্বে এ সেবায় বাংলাদেশ রয়েছে দ্বিতীয় অবস্থানে।

এদিকে গত আট বছরে ফ্রিল্যান্সিংয়ের জন্য নিবন্ধন নিয়েছে প্রায় সাড়ে ছয় লাখ বাংলাদেশী। যদিও ২০১১ সালের এ সংখ্যাটা ছিলো মাত্র কয়েক হাজার। আর এ খাতে চাহিদা ও যোগান বাড়ায় বছরে আয় হচ্ছে ১০ কোটি ডলারের বেশি।

খাত সংশ্লিষ্টরা জানায়, দেশের অনেক তরুণ লেখাপড়ার পাশাপাশি ফ্রিল্যান্সার হিসেবে আউটসোর্সিংয়ের কাজ করছে। অনেকেই দেশের শীর্ষস্থানীয় বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পড়াশোনা করে চাকরির আশায় না থেকে আউটসোর্সিং শুরু করছে। বর্তমান সময়ে এই খাত তরুণদের জন্য নতুন এক সম্ভবনাময় পেশা হয়ে উঠেছে। আউটসোর্সিংয়ে কাজ করতে গিয়ে একদিকে নতুন নতুন প্রোগ্রামিং, ওয়েব ডিজাইনিং ও গ্রাফিক্সের কাজ শিখছেন তারা। পাশাপাশি এ সেবা দিয়ে দেশের জন্য আনছেন মূল্যবান বৈদেশিক মুদ্রা। এতে প্রতিনিয়ত তরুণরা এসব কাজে দক্ষতা বাড়ছে। শুধু ঢাকা নয়, ঢাকার বাইরেও অনেকে তরুণরা আউটসোর্সিংকে পেশা হিসেবে নিচ্ছেন।

গত বছরের জুলাইয়ে অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষণা ও পাঠদান বিভাগ অক্সফোর্ড ইন্টারনেট ইনস্টিটিউট-এর সমীক্ষা প্রতিবেদনে বলা হয়, আউট সোর্সিং বা অনলাইনে সেবাদানকারী দেশগুলোর মধ্যে সারা বিশ্বে দ্বিতীয় স্থানে রয়েছে বাংলাদেশ। আর এ খাতে বিশ্বে ১৬ দশমিক ৮ শতাংশ অবদান রাখা হচ্ছে বাংলাদেশ থেকে। অর্থাৎ প্রায় ছাড়ে ছয় লাখ বাংলাদেশী তরুণ-তরুণী কাজ করছে আউট সোর্সিংয়ে। আর এ খাতে প্রথম স্থানে রয়েছে পাশ্ববর্তী দেশ ভারত। আউটসোর্সিংয়ে দেশটির অবদান রাখছে ২৪ দশমিক ৬ শতাংশ। আর তৃতীয় স্থানে রয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। এক্ষেত্রে প্রতিবেশী ভারত প্রথম স্থানে থাকলেও দুই দেশের জনসংখ্যার বিশাল পার্থক্য বিবেচনায় আনলে বাংলাদেশই সার্বিক বিবেচনায় এগিয়ে।

আউটসোর্সিংয়ে যে কাজগুলো করা হয় তার মধ্যে সফটওয়্যার ডিপার্টমেন্ট অ্যান্ড টেকনোলজিতে ২১ শতাংশ; ক্রিয়েটিভ অ্যান্ড মাল্টিমিডিয়ায় ২৪ দশমিক ৯ শতাংশ; সেলস অ্যান্ড মার্কেটিং সার্পোটে ৪০ দশমিক ৯ শতাংশ। অর্থাৎ সেলস অ্যান্ড মার্কেটিংয়ে বেশি কাজ করা হয়। এছাড়া রাইটিং অ্যান্ড ট্রান্সলেশনে দুই দশমিক ৭ শতাংশ; ক্লিয়ারিং অ্যান্ড ডেটা এন্ট্রিতে সাত দশমিক ৪ শতাংশ ও প্রোফেশনাল সার্ভিসে দুই দশমিক সাত শতাংশ।

প্রতিবেদনে বলা হয়, ইন্টারনেট ফ্রিল্যান্স কাজ করা এবং ডিজিটালি তা ছাড় করানোর জন্য বৈশ্বিক বাজার সৃষ্টি করেছে এবং এই বাজার দ্রæত বাড়ছে। শীর্ষ পেশাদারিত্বের ক্ষেত্রে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে লিখন ও অনুবাদ গুরুত্ব পাচ্ছে। অন্যদিকে, ভারতীয় উপমহাদেশে সফটঅয়্যার উন্নয়ন ও প্রযুক্তি গুরুত্ব পাচ্ছে।

উল্লেখ্য, একটি দেশের অর্থনৈতিক ডিজিটাইজেশন শুধু পণ্য ও সেবার উদ্ভাবনই বাড়ায় না, সেই সঙ্গে অভ্যন্তরীণ বাজারে বিপুল কর্মসংস্থান তৈরি করে ও অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধিকে জোরালো করে। কম খরচ ও ঝুঁকি বিবেচনায় যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য ও অস্ট্রেলিয়াসহ উন্নত বিশ্বের অনেক বড় বড় কম্পানি এখন বাংলাদেশের মতো উন্নয়নশীল দেশগুলো থেকে আইটি আউটসোর্সিং করছে। এতে বাংলাদেশ হয়ে উঠছে ফ্রিল্যান্সিং কর্মসংস্থানের একটি বড় উৎস।

ফ্রিল্যান্সিং কাজের মধ্যে কম্পিউটার প্রোগ্রামিং থেকে শুরু করে ওয়েব ডিজাইন, কর প্রতিবেদন প্রস্তুতকরণ ও অনুসন্ধান ইঞ্জিন ও পটিমাইজেশনসহ অনেক কাজই রয়েছে। তথ্য-প্রযুক্তিভিত্তিক এসব কাজ উদীয়মান দেশগুলোতে কর্মসংস্থানের বিপুল সুযোগ তৈরি করেছে, যা আগে ছিল না। ফলে বাকি বিশ্বকে আউটসোর্সিং সেবা দেওয়ার দিক থেকে বিশ্বের শীর্ষস্থানে রয়েছে এখন এশিয়া।

এদিকে সেবা রফতানি বাড়াতে ফ্রিল্যান্সারদের আরও সুবিধা দিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। এখন থেকে একবারে ১০ হাজার ডলার পর্যন্ত রফতানি আয় অনলাইনে দেশে আনতে পারবেন তারা। এতোদিন পারতেন ৫ হাজার ডলার। গত বুধবার বাংলাদেশ ব্যাংকের বৈদেশিক মুদ্রা নীতি বিভাগ থেকে এ-সংক্রান্ত একটি সার্কুলার জারি করা হয়েছে।

Leave a Reply

You missed

এই সাইটের কোন লেখা কপি করা সম্পুর্ন নিষেধ