ফ্রিল্যান্সিংয়ে সফল হতে যে যোগ্যতা গুলো থাকা খুব জরুরীঃ
১) টাকা নয় কাজকে ভালবাসতে হবে।
২) ফ্রিল্যান্সিংকে শুধু পার্টটাইম না, ফুলটাইম ক্যারিয়ার হিসেবে ভাবতে হবে।
৩) কমিউনিকেশন দক্ষতা ফ্রিল্যান্সিংয়ে সফল হতে অনেক বেশি সাহায্য করে।
৪) যত বেশি বিষয়ে দক্ষতা অর্জন করতে পারবেন, ততো বেশি ফ্রিল্যান্সিংয়ে সফল হতে পারবেন।
৫) নিজেকে সবসময় আপডেট রাখতে হবে আর দক্ষতা বৃদ্ধির নেশা থাকতে হবে।
৬) যে যত বেশি গুগলের উপর নির্ভরশীল, সে ততো বেশি ফ্রিল্যান্সিংয়ে সফল হবে।
৭) ইন্টারনেটের উপর জীবনকে নির্ভরশীল করতে পারলে আরও বেশি ফ্রিল্যান্সিংয়ে সফল হওয়া যায়।
৮) প্রচন্ড ইচ্ছাশক্তি থাকতে হবে। প্রচন্ড ইচ্ছাশক্তি ছাড়া কোন কিছুতেই সফল হওয়া যায়না।
৯) এছাড়াও ধৈয্য শক্তিও ফ্রিল্যান্সিং সেক্টরের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
১) টাকা নয় কাজকে ভালবাসতে হবে
ফ্রিল্যান্সিংয়ে সফল হওয়ার জন্য টাকার লোভ ত্যাগ করে কাজে দক্ষতা অর্জনের দিকে বেশি নজর দিতে হবে। দক্ষ লোকদের সমাদর সব জায়গার মত ফ্রিল্যান্সিংয়ের ক্ষেত্রেও। সেজন্য সবার প্রথমে বিভিন্ন রিসোর্স থেকে কাজ শিখে সে গুলোর বাস্তব ভিত্তিক কাজ করে দক্ষতা অর্জন করলেই অনলাইনে কাজের রেট এবং চাহিদা দুটি বৃদ্ধি পাবে। এই রকম চাহিদাপূর্ণ অবস্থানে আসার জন্য অবশ্যই কিছুটা সময় দিতে হবে। একটা কথা সবসময় মনে রাখবেন, অদক্ষ ব্যক্তিদেরকে টাকার পিছনে দৌড়াতে হয়। কিন্তু দক্ষ ব্যক্তিদের পিছনে টাকা দৌড়ায়।
২) ফ্রিল্যান্সিংকে ফুলটাইম ক্যারিয়ার হিসেবে ভাবতে হবে
সময় এসেছে ফ্রিল্যান্সিং পেশাকে পার্টটাইম চাকুরি না ভেবে ফুলটাইম হিসেবে ভাবতে। তাহলে প্রত্যেকে কাজের ব্যাপারে আরো বেশি সচেতন হবে এবং দক্ষ হওয়ার ব্যাপারে আগ্রহী হবে। তখন বিদেশী বায়াররা এদেশের ফ্রিল্যান্সারদেরকে কাজ দিতে আরো বেশি স্বস্তি পাবে। মূলত ফ্রিল্যান্সিংকে পার্টটাইম ভাবার কারণে আমরা তিন ভাবে ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছি। যথাঃ
ক) দিনের সময়ের সর্বোচ্চ সময়টি ফ্রিল্যান্সিংয়ের জন্য বরাদ্দ রাখতে পারছিনা। সেজন্য দক্ষ যেমন হতে পারছিনা, তেমনি কাজও বেশি করতে পারছিনা।
খ) যখন ফ্রিল্যান্সিংকে ফুলটাইম হিসেবে ভাবা শুরু হবে তখন আরো বেশি মানুষের সম্পৃক্ততা বাড়বে। বৈদেশিক মুদ্রা আরো বেশি দেশে আসবে, যা সামগ্রিক ভাবে দেশের অর্থনীতিতে বড় সুফল বয়ে নিয়ে আসবে।
গ) ফুলটাইম কাজ ভাবা শুরু করলে ফ্রিল্যান্সিং শুধুমাত্র অনলাইন আয়ের মধ্যেই সীমাবদ্ধ থাকবেনা, ধীরে ধীরে এটি তখন সম্মান জনক ক্যারিয়ার হিসেবে বিবেচিত হওয়া শুরু হবে। তখন প্রত্যেকের মধ্যে ভাল করার ব্যাপারে উৎসাহ আরো বাড়বে।
৩) যোগাযোগের দক্ষতা বাড়াতে হবে
ফ্রিল্যান্সিংয়ের ক্ষেত্রে ইংরেজি হচ্ছে যেকোন ধরনের বায়ারের সাথে যোগাযোগের মূল ভাষা। যে যত ভাল ইংরেজি পারবে, সে ততো বেশি ভালভাবে বায়ারের সাথে সম্পর্ক স্থাপন করতে পারে। এক জরিপে দেখা গেছে, যাদের যোগাযোগ দক্ষতা বেশি তারা অন্য সব জায়গার মত ফ্রিল্যান্সিংয়ের ক্ষেত্রেও সফল সবচাইতে বেশি হয়ে থাকে। যোগাযোগ দক্ষতা বলতে বুঝায়, বায়ারের বক্তব্য সঠিক ভাবে বুঝতে পারা, বায়ারকে নিজের বক্তব্য সঠিকভাবে বুঝাতে পারা এবং সেই সাথে বায়ারকে কনভেন্স করতে পারাটাই হচ্ছে যোগাযোগের মৌলিক দক্ষতা।
যোগাযোগের এই মৌলিক দক্ষতা থাকলে বায়ার কাজ দিয়ে স্বস্তি পায়। আর সেজন্য একবার কাজ করলে পরের কাজটিরও একই ফ্রিল্যান্সারকে দেওয়ার জন্য চেষ্টা করে। কাজের দক্ষতা বৃদ্ধির সাথে সাথে যোগাযোগের দক্ষতা বৃদ্ধির জন্যও চেষ্টা চালিয়ে যেতে হবে। তাহলে ফ্রিল্যান্সার হিসেবে খুব দ্রুত সফল হতে পারবেন। বেশির ভাগ সময় দেখা যায়, শুধুমাত্র ভাষাগত সমস্যার কারণে ক্লায়েন্টকে কাজ করে দিয়ে সন্তুষ্ট করার পরও বায়ার এ ফ্রিল্যান্সারের কাছে আর নতুন কোন কাজ নিয়ে ফিরে আসেনা। একজন সফল ফ্রিল্যান্সার হওয়ার জন্য তাই নিজেকে ইংরেজিতে ধীরে ধীরে দক্ষ করে তোলার দিকে নজর দিতে হবে।
৪) বিভিন্ন বিষয়ে দক্ষতা অর্জন করার চেষ্টা করা
যদি একজন ফ্রিল্যান্সারের কাছে একটি কাজের বাইরে অন্যান্য আরও কাজের সাপোর্টও পাওয়া যায়, তাহলে তার সাথে বায়ারের দীর্ঘদিনের জন্য সম্পৃক্ত হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। সেজন্য সব কাজেই দক্ষতা তৈরি করতে পারলে ফ্রিল্যান্সিংয়ের ক্ষেত্রে বায়ারদের কাছে নিজের চাহিদা বৃদ্ধি করা যায়। এক্ষেত্রে মাথাতে রাখতে হবে, সব কাজে সমান দক্ষতা অর্জন করাটা অনেক বেশি কষ্টকর। যেটা করতে হবে, কোন একটিতে ভাল দক্ষ হতে হবে আর বাকি গুলোতে মোটামুটি দক্ষ হলেই চলবে।
৫) নিজেকে সবসময় আপডেট রাখতে হবে
ফ্রিল্যান্সার হিসেবে বহুদিন পর্যন্ত বায়ারদের কাছে নিজের চাহিদা ধরে রাখার জন্য সব সময় নতুন কিছু শেখার অভ্যাস গড়ে তুলতে হবে। ধরি, কেউ যদি এসইওর কাজের মাধ্যমে ফ্রিল্যান্সিং করে থাকেন, তাহলে প্রতিদিন একটা নির্দিষ্ট সময় এসইও সম্পর্কিত লিখা পাওয়া যায়, এরকম ব্লগ গুলোর পোস্ট নিয়মিত পড়া উচিত। নতুন যত আপডেট আসছে, সেগুলো জেনে আরও বেশি দক্ষতা অর্জন করতে হবে।
৬) গুগলের উপর নির্ভরশীলতা বাড়াতে হবে
কোন সমস্যাতে পড়লে সে বিষয়ে জানার জন্য কোন ব্যক্তির কাছে প্রশ্ন না করে, সে বিষয়ে গুগলকে প্রশ্ন করা উচিত। গুগলের উপর এই নির্ভরশীলতা জানার পরিধি অনেক বাড়িয়ে দেয়। গুগলে খোঁজ করলে অনেক গুলো উত্তর পাওয়া যাবে, যা চিন্তা শক্তিকে বাড়াবে। ফ্রিল্যান্সিংয়ে সফল হওয়ার জন্য শুরু থেকেই গুগলের উপর নির্ভরশীলতা বাড়াতে হবে।
৭) ইন্টারনেটের উপর জীবনকে নির্ভরশীল করতে পারলে ফ্রিল্যান্সিংয়ে সফল হবেন
ফ্রিল্যান্সিং শুরু করলেই কাজ পাওয়া যায়না। ফ্রিল্যান্সিংয়ে সফল হওয়ার জন্য শুরুর দিকে কষ্ট অনেক বেশি করতে হয়। আর এজন্য ইন্টারনেটে দিনের বেশিরভাগ সময় ব্যয় করা উচিত। শুধু ফেসবুকে সময় ব্যয় না করে, বিভিন্ন ব্লগ, ফোরাম, ভিডিও কিংবা অনলাইনের অন্য জায়গা গুলোতে প্রতিদিনের বড় একটা সময় ব্যয় করার অভ্যাস গড়ে তুলতে হবে। এইসব জায়গা গুলোতে সারাবিশ্বের বিভিন্ন সফল ফ্রিল্যান্সাররা তাদের অভিজ্ঞতার আলোকে বিভিন্ন বিষয় শেয়ার করেন। এগুলো সত্যিকার ভাবে অনেক কিছু শিখতে এবং সবকিছুর বিষয়ে আরো অ্যাডভান্স হতে সহযোগিতা করে।
৮) প্রচন্ড ইচ্ছাশক্তি থাকতে হবে
যেকোন কাজের সফলতার জন্য যেমন সবার প্রথমে দরকার ইচ্ছাশক্তি, ফ্রিল্যান্সিংয়ের ক্ষেত্রেও বিষয়টা ব্যতিক্রম নয়। প্রচন্ড ইচ্ছাশক্তি থাকলে ফ্রিল্যান্সিংয়ে সফল হওয়ার ব্যাপারে যত প্রস্তুতি মূলক পরিশ্রম করা দরকার, সবকিছু করতে আগ্রহ থাকবে। সুতরাং কারও কথা শুনে হালকা ভাবে লক্ষ্য নিয়ে নামলে ব্যর্থ হওয়ার সম্ভাবনাটা ৯৫%। কিন্তু যদি নিজের তীব্র ইচ্ছা ও একাগ্রতা থাকে, তাহলেই কেবলমাত্র ফ্রিল্যান্সিংয়ে সফল হবেন।
৯) ধৈয্য শক্তি ফ্রিল্যান্সিংয়ের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ
ফ্রিল্যান্সিং শুরু করার আগেই ধৈয্য শক্তি বাড়িয়ে নেওয়া উচিত। কাজও ধৈয্য নিয়ে শিখতে হবে। এবং শুরুতে কাজ পাওয়ার জন্য ধৈয্য সহকারে চেষ্টা চালিয়ে যেতে হয়। এমন হতে পারে, কাজ শেখার পর ১ম কাজের অর্ডার পেতে ৬ মাসও লেগে যেতে পারে। কিন্তু তারপরও ধৈয্য হারালে চলবেনা। চেষ্টা চালিয়ে যেতে হবে, নিজেকে দক্ষ করতে হবে। হতাশ না হয়ে কাজ পাওয়ার ব্যাপারে সকল প্রকার চেষ্টা চালিয়ে যেতে হবে।
একজন সফল ফ্রিল্যান্সার হতে হলে উপরের বিষয় গুলো নিজের ভিতরে নিয়ে আসার চেষ্টা শুরু করে দিন আজ থেকেই, যদি আপনি একজন সফল ফ্রিল্যান্সার হতে চান। আন্তর্জাতিক বাজারে টিকে থাকার চ্যালেঞ্জে জিততে হলে নিজের মধ্যে বিশেষ কিছু থাকতেই হবে। কাজের দক্ষতার পাশাপাশি অধ্যাবসায়, ধৈয্য এবং নতুন কিছু শিখার নেশা সফলদের কাতারে পৌছিয়ে দিবে।
বিশেষ করে ফ্রিল্যান্সিংয়ের ক্ষেতে দক্ষ লোকদের মূল্য অনেক বেশি। দক্ষ লোকদের জন্য অনলাইন থেকে মাসে ১ থেকে ২ লাখ টাকা আয় করা খুবই স্বাভাবিক ঘটনা। সেক্ষেত্রে আপনার একাডেমিক ব্যাকগ্রাউন্ড কিংবা আপনার বয়স কোন ধরনের বাধা হয়ে দাঁড়াবে না। আমাদের দেশে নারী কিংবা প্রতিবন্ধী যাদের জন্য ঘরের বাইরে গিয়ে কাজ করা কষ্টসাধ্য, তারাও ফ্রিল্যান্সিং শিখে পুরুষের পাশাপাশি পরিবারের অর্থনীতিতে অনেক বড় ভুমিকা রাখতে পারে। আর ফ্রিল্যান্সিংয়ে সফল হতে হলে অবশ্যই নিজের মধ্যে কিছু যোগ্যতা অর্জন করতে হবে। সেই যোগ্যতা গুলো নিয়েই আমাদের আজকের এই পর্বটি।
রিলেটেড আর্টিকেল…….
ফেসবুক পেইজে ভিডিও অপলোড করে টাকা আয় করুন ফেসবুক ভিডিও মনিটাইজ করে
নিরাপদে WhatsApp ব্যবহারের কিছু টিপস
ইউটিউবের ভিডিও মনিটাইজেশন করার জন্য নিয়ে নিন ১ হাজার সাবস্কাইব এবং ৪০০০ ঘন্টা ওয়াচ টাইম