জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে ফেসবুকসহ বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে রাষ্ট্র বিরোধী নেতিবাচক তথ্য প্রচার প্রতিরোধে উদ্যোগ নিয়েছে র্যাব। এলক্ষ্যে আগামী ৪ মাসের জন্য তথ্যপ্রযুক্তি বিষয়ে অভিজ্ঞ কোনো প্রতিষ্ঠান নিয়োগ দেওয়া হবে। প্রতিষ্ঠানটির দুই হাজার ৫০ জন দক্ষ তথ্যপ্রযুক্তিবিদ ২৪ ঘণ্টা উল্লিখিত মাধ্যম গুলো নজরদারিতে রাখবে।
তারা রাষ্ট্র বিরোধী যেকোন ধরনের গুজব, বিদ্বেষ এবং বিভ্রান্তি মূলক পোস্টের জবাব দেবে। একই সাথে এইসব কাজে যারা যুক্ত থাকবে, তাদেরকে চিহ্নিত করে আইনের আওতায় আনতে র্যাবকে সহযোগিতা করবে। এছাড়া এইসব মাধ্যমে সরকারের উন্নয়ন মূলক কর্মকাণ্ডের সঠিক তথ্য প্রচারেও দায়িত্ব পালন করবে প্রযুক্তিবিদরা।
সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম গুলো পর্যবেক্ষণ নামে প্রস্তাবিত প্রকল্প প্রস্তাবের উপর অনুষ্ঠিত মূল্যায়ন কমিটির (পিইসি) সভার কার্য বিবরণী সূত্রে এই তথ্য জানা গেছে। প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করতে ১২১ কোটি টাকা ব্যয় নির্ধারন করা হবে। গত ১৪ অক্টোবর পিইসি এর সভায় এটি নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা হয়। এরপর চূড়ান্ত অনুমোদন এর জন্য জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) বৈঠকে উপস্থাপন এর সিদ্ধান্ত হয়। খুব দ্রুতই এই প্রকল্প একনেকে উঠবে বলে জানা গেছে।
প্রকল্প বাস্তবায়নের সময়ে অর্থাৎ আগামী নভেম্বর থেকে ফেব্রুয়ারি মাস পর্যন্ত র্যাব সদস্যরাও প্রকল্পের সার্বিক কর্মকাণ্ড নিবিড় ভাবে পর্যবেক্ষণ করবে। এজন্য র্যাব সদস্যদের প্রশিক্ষণও দেওয়া হবে। প্রকল্পের আওতায় ক্রয় করা সমস্ত সফটওয়্যার এবং পণ্য চার মাস পর র্যাবের কাছে হস্তান্তর করা হবে। পরবর্তীতে এই পর্যবেক্ষণ কাজ র্যাব চালিয়ে নিবে।
সরাসরি ক্রয় পদ্ধতি অনুসরণ করে সমস্ত পণ্য এবং সেবা ক্রয়ের যৌক্তিকতা নিয়ে প্রকল্প মূল্যায়ন কমিটির সভায় আলোচনা হয়। এই বিষয়ে র্যাবের মতামত হল, প্রকল্পটি স্বল্প মেয়াদের জন্য। প্রকল্পের আওতায় বিশেষ ধরনের বিভিন্ন পণ্য ও সেবা ক্রয় করা হবে। সরাসরি ক্রয় পদ্ধতি অনুসরণ করলে পণ্য ও সেবার গুণগত মান নিশ্চিত করা সম্ভব হবে। প্রকল্পটির অনুমোদন প্রক্রিয়া শুরুর আগে পরিকল্পনা মন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামালের নিকট থেকে সম্মতি নেওয়া হয়।
সম্প্রতি ফেসবুকসহ বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম গুলোতে ব্যাপক ভাবে সরকার বিরোধী নানা অপপ্রচার চালানো হচ্ছে। এমনকি ব্যক্তি বিশেষের বিরুদ্ধেও কুৎসা রটনা করা হচ্ছে। নির্বাচন কালে এইসব অপপ্রচার আরো বাড়ার আশঙ্কা রয়েছে। প্রকল্প প্রস্তাবে বলা হয়, এই রকম অপপ্রচারের তাৎক্ষণিক জবাব না দিতে পারলে জনগণ বিভ্রান্ত হবে। এজন্যই এই প্রকল্প জরুরি।
প্রকল্প প্রস্তাবনায় উল্লেখ করা হয়েছে, একটি বিশেষ গোষ্ঠীর অনুগত স্বার্থান্বেষী মহল দেশ ও বিদেশ থেকে সমান তালে এই ধরনের কুকর্মকাণ্ডের মাধ্যমে বাংলাদেশে একটি অস্থিতিশীল পরিস্থিতি তৈরি করার অপচেষ্টা চালিয়ে আসছে। এছাড়া এই স্বার্থান্বেষী গোষ্ঠীর সদস্যরা বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংগঠন, সরকারি ও বেসরকারি দপ্তর গুলোতে মিথ্যা তথ্য পরিবেশনের মাধ্যমে আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে বাংলাদেশকে নেতিবাচক ভাবে উপস্থাপন করছে।
এইসব পরিস্থিতি বিশ্নেষণ করে র্যাব বলছে, বিশ্ব দরবারে বাংলাদেশকে হেয়প্রতিপন্ন করতে ষড় যন্ত্রের অংশ হিসেবে ফেসবুক, ইউটিউবসহ বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমে এইসব অপকর্ম করা হচ্ছে। রাষ্ট্র বিরোধী এইসব গোষ্ঠীর সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম গুলো চিহ্নিত করা গেলেও তাদের ব্যক্তি পরিচয় অনেক সময় বের করা সম্ভব হয়না। কিন্তু এই প্রকল্পের আওতায় কেনা প্রযুক্তির মাধ্যমে এখন তাদের ব্যক্তিগত পরিচয় ও অবস্থান সহজে শনাক্ত করা সম্ভব হবে। এই অপশক্তিকে প্রতিহত করার জন্য প্রকল্পটি বাস্তবায়নের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।
প্রকল্পটির মাধ্যমে বিভিন্ন ধরনের গুজব, বিদ্বেষ এবং বিভ্রান্তি মূলক পোস্ট তদারকির মাধ্যমে তাৎক্ষণিক সত্য ঘটনা জনগণের সামনে তুলে ধরে বিভ্রান্তি দূর করা হবে। শুধু তাই নয় যেসব ফেসবুক পেজ বা আইডি থেকে বিভ্রান্তি মূলক অপপ্রচার চালানো হয়, সেগুলোর ব্যাপারে রিপোর্ট করা ও সেগুলো বন্ধ করার ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
এই বিষয়ে জানতে চাইলে র্যাবের আইন ও গণমাধ্যম শাখার কমান্ডার মুফতি মাহমুদ খান বলেন, প্রকল্পটি এখন অনুমোদনের অপেক্ষায় আছে। অনুমোদনের পরই প্রকল্পের কাজ শুরু করা হবে।
আরও পড়ুন
Comments (No)