চেষ্টার নেশা, সফলদের একমাত্র পেশা

একটা মুহূর্ত কাজে না লাগানোর মানে একটা মুহূর্তের চিরতরে হারিয়ে ফেলা

কোন কিছু অর্জন করার চার স্টেপ

চেষ্টার নেশা, সফলদের একমাত্র পেশা ট্যালেন্ট বা যোগ্যতা দিয়ে জীবনে কিছু একটা করে ফেলবো- এমনটা আশা করে কোন লাভ নাই। কারণ দুনিয়াতে ট্যালেন্ট বা যোগ্যতা দিয়ে কাউকে বিচার করা হয় না। বিচার করা হয় অর্জন দিয়ে। তোমার চারপাশে তাকালেই দেখতে পাবে- একজন মানুষের সাথে আরেকজন মানুষের আর্থিক, সামাজিক, পারিবারিক স্ট্যাটাসের ডিফারেন্স তৈরি হয় তাদের অর্জনের ডিফারেন্স দিয়ে। ট্যালেন্টের ডিফারেন্স দিয়ে না। এইটাই বাস্তবতা। এইজন্যই চাকরি দেয়ার সময় কোয়ালিটি দেখার আগে কোয়ালিফিকেশন দেখে। অংক বুঝতে পারার উপর মার্কস না দিয়ে, অংক লিখতে পারার উপর মার্কস দেয়।

অর্জনই গর্জন। যার জীবনে অর্জন যত বেশি, সে তত বেশি এগিয়ে যায়। আর জীবনের অর্জন যে যতবেশি উপলব্ধি করতে পারবে, সে তত বেশি হ্যাপি হবে। তবে কারো জীবনের অর্জনের সংখ্যা বাড়ানো খুব কঠিন কিছু না। বরং সিম্পল চারটা স্টেপ ফলো করলে যে কেউ জীবনে অনেক কিছু অর্জন করতে পারবে।

স্টেপ-১: যে কাজটা শুরু করি করি বলে শুরু করা হয়ে উঠতেছে না। সেটা শুরু করে দিতে হবে। কনফিউশন, ভয়, আর মাইনসের কাছ থেকে গাইডলাইন পাওয়ার জন্য যতদিন অপেক্ষা করবে, জীবনে কিছু একটা করার সম্ভাবনা তত বেশি কমবে। বিজনেস শুরু না করে, বিজনেস আইডিয়া নিয়ে যত বেশি দিন চিন্তা করবে, একই আইডিয়া নিয়ে অন্য কেউ বিজনেস শুরু করার চান্স তত বেশি বাড়বে। সো, প্ল্যান বানাতে গিয়ে সময় নষ্ট করো না। পড়ার রুটিন বানাতে গিয়ে ,পরীক্ষার পড়া বন্ধ করে রেখো না। যেটা মেইন কাজ, সেটা যত দ্রুত সম্ভব শুরু করে দাও।

স্টেপ-২: যে কাজটা শুরু করছো সেটা ফিনিশ করতে হবে। কবিতা অর্ধেক লিখে তুমি কবি হতে পারবা না। শুধু A মাইনর আর G মাইনর শিখে গিটার বাদক হতে পারবা না। ৮০ পাতা থিসিসের ১০ পাতা লিখলে ডিগ্রি দিবে না। কাজটা ফিনিশ করতে হবে। শেষ করতে হবে। ভালো না লাগলে, নিজের উপর জোর করে হলেও ফিনিশ করতে হবে।

স্টেপ-৩: আজকে যে কাজটা করছো। কালকেও সেই কাজটাই করতে হবে। কালকের চাইতে ভালো হোক বা খারাপ হোক, সেই একই কাজ করতে হবে। শুধু তিনটা গান সুর করে মিউজিশিয়ান হতে পারবা না। চারদিন ইট গেঁথে বিল্ডিং বানানো যায় না। দুই সপ্তাহ ক্রিকেট খেলে ন্যাশনাল টিমে চান্স পাওয়া যায় না। কাজটার পিছনে লেগে থাকতে হবে। লেগে থাকলেই উন্নতি হবে। দক্ষতা আসবে। নতুন নতুন কৌশল তোমার নিজের ভিতর থেকেই উদ্ভব হবে। হতাশ হয়ে ছেড়ে দিলে যে কয়দিন ট্রাই করছো, সেই কয়দিন সময় অপচয় ছাড়া আর কিছু না। তাই ভালো হচ্ছে, না খারাপ হচ্ছে। ভবিষ্যতে লাভ হবে কি, হবে না- বিচার না করেই লেগে থাকো।

স্টেপ-৪: শো-অফ করতে হবে। ওভার কনফিডেন্স দেখাতে হবে। তোমার যোগ্যতা যতটুকু, তার চাইতে বাড়িয়ে বলতে হবে। কারণ টুথপেস্ট দিয়ে দাঁত ব্রাশ করলে ফুলের গন্ধ বের হবে, পিছনে হট মডেল ঘুরবে না দেখলে আমরা টুথপেস্ট কিনি না। ৩০ হাজার টাকা দিয়ে যে বিয়ে করে ফেলা যায়, সেই বিয়েতে ৩০ লাখ খরচ করে শো-অফ না করলে প্রেস্টিজ আসে না। তাই তোমার নিজের ঢোল নিজে পিটাতে গিয়ে একটু শো-অফ করে দিবা। হালকা বাড়িয়ে বলে নিজের যোগ্যতার মার্কেটিং করবা। অতটুকু বাড়িয়ে বলবে, যতটুকু এক্সট্রা পরিশ্রম করে, দুই-তিন সপ্তাহ খাটা-খাটুনি করে কভার করে দিতে পারবা।

চেষ্টার নেশা, সফলদের একমাত্র পেশা 1

অর্জনের প্রসেসে ঢুকে পড়ো। সম্মান, সম্পদ, সুখ সব হাতের মুঠোয় চলে আসবে।

কোন কিছু কঠিন মনে হলেই লেজ গুটিয়ে পালানো যাবে না। আরাম কেদারায় বসে বসে ইন্টারনেটে সময় নষ্ট করলে, সফলতার মুকুট আপনা-আপনি ডাউনলোড হয়ে যাবে না। কাজে না নেমে আইডিয়া নিয়ে বসে থাকলে, কোটি টাকার ব্যবসা থেকে ফুটা পয়সাও কামাই হবে না। হা-হুতাশ, কান্নাকাটি করলেই লাইফের প্রব্লেম সলভ হয়ে যাবে না। কমপ্লেইন করে, অজুহাত দেখিয়ে সাময়িক সান্ত্বনা পেলেও, তোমার কন্ডিশন চেইঞ্জ হয়ে যাবে না। নিজেকে ট্যালেন্টেড, জিনিয়াস মনে করে নাকে তেল দিয়ে ঘুমালে- ঘুমের মধ্যে সফল হয়ে যাবে না। আলসেমিকে ডাণ্ডা মারতে না পারলে, রেজাল্টের আন্ডা কোনদিনও থামবে না।

তাই যেই রাস্তা কঠিন সেই রাস্তায় চেষ্টার পরিমাণ চারগুণ করতে হবে। যে জিনিস বুঝতে পারো না, সেই জিনিস চৌদ্দবার পড়লে না বুঝার মতো কিচ্ছু থাকবে না। একভাবে কাজ না হলে দশভাবে ট্রাই করতে হবে। ক্রিকেট খেলার বোলারদের মতো। প্রত্যেকবার ব্যাটসম্যানকে আউট করার টার্গেট নিয়ে ক্রিজের কাছে ছুটে আসতে হবে। প্রথম বলে আউট না হলে পরের বল করার জন্য আবারো দৌড় দিতে হবে। ওভারের পর ওভার বল ফেলতে হবে। ইয়র্কারে কাজ না হলে, স্লো ডেলিভারি দিতে হবে। সুইং এ কাজ না হলে, বাউন্সার মারতে হবে। তোমাকেও তোমার টার্গেটের প্রতি ওভারের পর ওভার বল করে যেতে হবে। এক ভাবে কাজ না হলে দশভাবে ট্রাই করতে হবে। টাফ লাগলে, টায়ার্ড হলে দুই মিনিট রেস্ট নিয়ে আবার শুরু করতে হবে। মাগার চেষ্টা চলতেই থাকবে। নন স্টপ।

কোন স্বপ্ন, কোন লক্ষ্যই আরামের না। দুনিয়াতে কোন কিছুই ফ্রি না। দোকানে ১০% ডিসকাউন্ট দেয় না, ৯০% টাকা পকেট থেকে বের করে নেয়। শপিং মলে একটা কিনলে

একটা ফ্রি দেয় না,- একটার দাম দিয়ে, দুইটার ব্যবসা পুষিয়ে নেয়। কারণ তারা জানে, ছাড় না দিলে কাস্টমারের আগ্রহ বাড়বে না। একইভাবে আড্ডা, মাস্তি, খেলা, মুভি দেখাতে ছাড় দিলে তোমার ফিউচার শক্ত হবে না। দুই ঘন্টা রসিলা গান শুনা থেকে দুইটা ছাড় দিয়ে, দশটা ওয়ার্ড পড়লে কাজে লাগবে। পাঁচটা ক্লাস ট্যুর থেকে একটা ছাড় দিয়ে কোন সফটওয়ারের স্কিল ডেভেলপ করতে পারলে, অন্যদের চাইতে এগিয়ে যেতে পারবে।

বাহানা দিয়ে সময় নষ্ট করো না। অন্যসবার অভিমতের তোয়াক্কা করলে, তোমার জীবনে কিচ্ছু হবে না। ১০০% প্রিপারেশন নিতে গেলে প্রিপারেশন নেয়া কোনদিনও শেষ হবে না। তোমার যতটুকু আছে ততটুকুই যথেষ্ট। তুমি যে সিচুয়েশনে আছো, সেই সিচুয়েশনটাই শুরু করার জন্য পারফেক্ট। আর চেষ্টা যখন করতেই হবেই, আজকেই থেকেই শুরু করবে। ক্লান্ত হলে, পায়ে ফোস্কা পড়লে কি করা লাগবে, সেটা তখনই দেখা যাবে। তবে চ্যালেঞ্জের ভয়ে ঘরে বসে থাকলে কিচ্ছু হবে না, ভায়া।

টিকে থাকার সংগ্রাম

চেষ্টার নেশা, সফলদের একমাত্র পেশা

এক ওভার বল করে কেউ বোলার হয় না। এক বেলা রান্না করে কেউ বাবুর্চি হয় না। একদিন ঘাস খেতে দিয়ে, গরুর কাছে সারা বছর দুধ আশা করা যায় না। অথচ তুমি একরাত পড়েই পাশ করে ফেলতে চাও? দিনে এক ঘন্টা সময় না দিয়েই, এক একটা সাবজেক্টের সবকিছু বুঝে ফেলতে চাও? সারা বছর ফাঁকিবাজি করেও ভালো ভার্সিটিতে চান্স পেতে চাও?

শুনো, বৃষ্টি একদিন হলে তাকে বর্ষাকাল বলে না। অফিসে দুইদিন হাজিরা দিলে, সারা মাসের বেতন পাওয়া যায় না। বেতন পেতে হলে অফিসের কাজ প্রতিদিন করতে হবে। বোলার হতে হলে ম্যাচের পর ম্যাচ বলে করে যেতে হবে।

অথচ, আমরা বোলিং ছেড়ে দিয়ে, পিচের উপর দোষারোপ করি। ঘাস খেতে না দিয়ে, গরুর বিরুদ্ধে অভিযোগ আনি। ঠিক জায়গায় ময়লা না ফেলে, এলাকা নোংরা বলি। সেজন্যই বইখাতাকে চিমটি না কেটে- মনোযোগ আসে না, বুঝতে পারিনা, ভালো লাগে না, এসব অজুহাত পেশ করি। তারপর জ্যামে আটকা পড়ে, বিরক্ত হয়ে পকেট থেকে মোবাইল বের করে ফেইসবুকিং করি কিন্তু ব্যাগ থেকে বই বের করে এক মিনিটও পড়ার ইচ্ছা করি না। পাঁচ মিনিট পর পর খেলার আপডেট বন্ধুকে জিজ্ঞেস করতে পারি, কিন্তু সূত্রের প্রমাণটা একটু বুঝিয়ে দিতে বলতে পারি না। ইউটিউবে সারাদিন গান শুনতে পারি কিন্তু খান একাডেমীর দুই-একটা ভিডিওতে ক্লিক করতে পারি না।

দিনে ২৫০বার মোবাইল চেক করার নেশা ধরিয়ে দিয়ে, গড়ে প্রতিদিন সাড়ে চার ঘন্টা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ব্যয় করিয়ে, ফ্রি নিউজ, মজার ট্রেলার দেখিয়ে তোমাকে আনন্দ দিচ্ছে না। তোমার সময় কেড়ে নিচ্ছে। তোমার স্বপ্নটা হাতছাড়া করে দিচ্ছে। ঘুম ভাঙ্গার সাথে সাথেই নোটিফিকেশন দিয়ে ওদের পথে ডেকে নিচ্ছে। দিনে দিনে তথ্য-প্রযুক্তি যত সহজলভ্য হচ্ছে, মূল লক্ষ্য থেকে সরে যাওয়া তত ইজি হচ্ছে। কানেক্টেড থাকার নাম করে, সময় নষ্ট করার নেশা ধরিয়ে দিয়ে, স্বপ্নগুলিকে গলা টিপে হত্যা করছে।

এখন টিকে থাকতে হলে- নেশা আর ইচ্ছার মধ্যে ছোট্ট একটা সংগ্রাম চালাতে হবে। ক্ল্যাশ অফ ক্লান্স, ফেইসবুকিং, খেলা দেখার নেশা যখন ডাক দিবে, তখন নেশাটাকে জোর করে পাঁচ মিনিট পিছিয়ে দিতে হবে। নেশা ছাড়বা না। জাস্ট পাঁচ মিনিট পিছিয়ে দিবা। তারপর সেই পাঁচ মিনিটে তোমার ইচ্ছা বা স্বপ্ন রিলেটেড কাজ করবা। এই রকম নেশা আর ইচ্ছার যুদ্ধ এক সপ্তাহ চালিয়ে যদি ৬০% সফল হতে পারলে, তোমার লাইফ আবার লাইনে আসা শুরু হবে।

জীবনকে জীবনের গতিতে চলতে দিও নাা

চেষ্টার নেশা, সফলদের একমাত্র পেশা

জীবনকে জীবনের গতিতে চলতে দিও না। বরং জীবনের সামনে রুখে দাড়াও। সময় অপচয়ের টুটি চেপে ধরো। আজকের সকালটা, আজকের দিনটা তোমার জন্য ইফেক্টিভ না হলে, এই মাসটা, এই বছরটা তোমার জন্য ইফেক্টিভ হবে না। তাই প্রতিটা দিনের, প্রতিটা ঘন্টার জবাবদিহিতা নিশ্চিত করো।

কোন সমস্যাই জীবনের চাইতে বড় না। কোন ব্যর্থতাই জীবনের সব সম্ভাবনাকে মুছে দিতে পারে না। কারো অভিমত, কারো ভালো লাগা, কারো পাশে থাকার উপর তোমার বেঁচে থাকা নির্ভর করতে পারে না। কোন প্রেমই জীবনের সর্বস্ব হবে না। তোমার জীবন তোমার চিন্তার চাইতেও বড়। তোমার ইমোশনের চাইতেও বড়।

হতাশা কাটাতে জীবনকে ধাক্কা দাও। নিজের ভিতরে স্পৃহা জাগাও। স্টেপগুলো, চিন্তাভাবনাগুলো কন্ট্রোল করো, লাইফ কন্ট্রোলে চলে আসবে।

আজকে যে অবস্থানে আছো- সেটাই তোমার বাস্তবতা। বাস্তবতাকে স্বীকার করো, প্রকাশ করো। চেপে রেখো না, চাপ বাড়বে। আগে কী ছিলা, সেই ইতিহাস জাবর কেটে লাভ নাই। বরং কালকে কোন লেভেলে যাবা, সেটার চেষ্টা করো। সাথের বন্ধুদের অবস্থান চিন্তা করে হতাশার বীজ না এনে, চেষ্টায় তেজ আনো। উপহাস, উপেক্ষার জবাব দেয়ার জন্য মিরাকল না খুঁজে, স্কিল খুঁজো।

স্বপ্ন দেখে লাভ নেই। চেষ্টা করলে লাভ আছে। রুটিন বানানো কোন অর্জন না। কাজ করাটা অর্জন। শুধু আশা নিয়ে বসে থাকলে কিচ্ছু চেইঞ্জ হবে না। লেগে থেকে সাধনা করলে চেইঞ্জ হবে। তাই স্বপ্ন দেখো না। চেষ্টা করে দেখাও। চেষ্টার পরিমাণ বাড়াও। মনোবল বেড়ে যাবে।

সমালোচক না হয়ে বিশ্লেষক হও

চেষ্টার নেশা, সফলদের একমাত্র পেশা

আছাড় না খেয়ে কেউ হাঁটা শিখে না। ল্যাং না খেয়ে, কেউ ফুটবল খেলে না। বরং ফুটবল খেলতে গিয়ে যতবার ল্যাং খাবে, ততবারই উঠে দাঁড়াতে হবে। গা ঝাড়া দিয়ে আবারো বলের পিছনে ছুটতে হবে। কোনভাবে কারো কাছ থেকে বল কেড়ে নিতে পারলে সাথে সাথেই গোলপোস্টের দিকে দৌড় মারতে হবে। এইভাবে একবার দুইবার, দশবার বিশবার চেষ্টা করার পরেই একটা গোল উদযাপন করার সুযোগ আসবে।

এই যে একটা গোল দিতে গিয়ে উনিশবার ব্যর্থ হইছো- এটা কেউ হিসেব করবে না। কয়বার ল্যাং খাইছো, সেটা কেউ মনে রাখবে না। কারণ ব্যর্থতা মেইন ফ্যাক্টর না। ব্যর্থতার পরের রিএকশনটাই- মেইন ফ্যাক্টর। ব্যর্থতার পরে যে ‘দেখায় দিমু’ টাইপের মেন্টালিটি সেট করে- সে ঠিকই দেখায় দিতে পারে। জিততে পারে। আর যে ব্যর্থতার পরে মুখ লুকানোর জায়গা খোঁজে। তাকে মুখ লুকিয়েই রাখতে হয়।

শুনো, ভয় কখনো জয় দিবে না। বরং পিছনে ফেলে দিবে। সংশয় নিয়ে অংশগ্রহণ করলে, কোনরকমে পার পেতে পারো কিন্তু টপ পারফর্মার হতে পারবে না। কারণ টপ পারফর্মার হতে হলে ডিটার্মিনেশন থাকা লাগবে। ডেডিকেশন লাগবে। শুধু পরীক্ষার আগের রাতের ডেডিকেশন দিয়ে কেউ ক্লাসের টপ হবে না। বরং সারা বছরের ডেডিকেশন দিয়েই একজন টপ-এ আসে।

আর যারা নিজেদের উঁচু জাতের প্রাণী ভাবো। তারা মনে রাখবে- দাম্ভিকতার অপর নাম অলসতা। সো, দাম্ভিক হয়ো না। সমালোচক হয়ো না। বরং বিশ্লেষক হও। বিশ্লেষণ করে নতুন রাস্তা বের করো। নিজের সামর্থ্য নিয়ে সন্দেহ প্রকাশ না করে চেষ্টার ঘাটতি নিয়ে সন্দেহ প্রকাশ করো।

টার্গেটের পিছনে লেগে থাকো। যতক্ষণ পর্যন্ত সফলতা না আসবে ততক্ষণ পর্যন্ত ফোকাসড থাকতে হবে। কারণ FOCUS এর মিনিং হচ্ছে- Follow one course until success.

চেষ্টার নেশা, সফলদের একমাত্র পেশা 2

মরিয়া হয়ে চেষ্টা

চেষ্টার নেশা, সফলদের একমাত্র পেশা

একটা-দুইটা বাড়ি দিয়ে, লোহার টুকরাকে দা-বটি বানানো যায় না। চার-পাঁচটা ইট রাখলেই, আস্ত একটা বিল্ডিং দাঁড়িয়ে যায় না। দুই-একবার পানিতে নেমেই কেউ সাঁতার শিখে ফেলে না। বরং বারবার পানিতে নামতে হবে। যতবার পানিতে নামবে, ততবার আগের চাইতে একটু বেশি চেষ্টা করার, একটু বেশিক্ষণ টিকে থাকার ইচ্ছা নিয়ে নামতে হবে। তারপর ইচ্ছাটা কাজে রূপান্তর করতে হবে। দিনের পর দিন টার্গেটের পিছনে টইটই করে ঘুরতে হবে। লক্ষ্যের পিছনে ছেঁচড়া এর মতো লেগে থাকতে হবে। হোঁচট খেলেও বার বার উঠে দাঁড়াতে হবে।

তবে কতবার চেষ্টা করছো, কতবার পানিতে নামছো, কতবার পড়তে বসছো, কতবার পরীক্ষা দিছো- সেটা মেটার করবে না। বরং প্রত্যেকবার চেষ্টা করার আগে, আগের বারের চাইতে ডাবল প্রিপারেশন, ডাবল শ্রম, ডাবল চেষ্টা, ডাবল স্কিল ডেভেলপ করছো কিনা- সেটা মেটার করবে। মনে রাখবে- একটা-দুইটা বাড়ি খেলে, লোহার টুকরা দেখতে দা-বটির মতো শেইপ পেয়ে যাবে না। এক-দুইদিন ঝাঁকি দিলে তোমার আলসেমির সব মরিচা ঝড়ে পড়বে না। তোমার জড়তা, তোমার ভয়, তোমার চারপাশের মানুষের নেগেটিভিটি একদিনে চেইঞ্জ হবে না। তবে একটা দীর্ঘ সময় লেগে থাকলে চেইঞ্জ আনা অসম্ভবও না।

কারো লাইফকে ঘুরিয়ে দেয়ার জন্য যদি একটা জিনিসের প্রয়োজন হয়। সেটা হচ্ছে- মরিয়া হয়ে চেষ্টা। যখন মরিয়া হয়ে কিছু অর্জন করতে চাইবে, তখন সব ডিস্ট্রাকশন জানালা দিয়ে পালাবে। ফোকাসনেস আপনা-আপনি গজিয়ে উঠবে। কনফিডেন্সের আবির্ভাব হবে। ফিউচার নিয়ে কনফিউশন একটু একটু করে কেটে যাবে। আর চেষ্টা না করলে, ইচ্ছাগুলোকে একটু একটু করে কাজে কনভার্ট না করলে- ছোটবেলায় দেখা স্বপ্ন, আত্নীয়-স্বজনের বিশ্বাস, ইন্টারনেটে পাওয়া মোটিভেশন, সব বুড়িগঙ্গার জলে ভেসে যাবে। তখন অন্যের এগিয়ে যাওয়া দেখা ছাড়া তোমার কিছুই করার থাকবে না।

অন্যের আশায় বসে থেকো না

চেষ্টার নেশা, সফলদের একমাত্র পেশা

ভেঙ্গে যাওয়া ব্রিজ ঠিক হওয়ার আশায় বসে থাকলে, দিন চলে যাবে, গন্তব্য কাছে আসবে না। প্রশ্ন সোজা হওয়ার ভরসায় সময় অপচয় করলে, টেনেটুনে পাশ হয়ে যাবে, স্কিল ডেভেলপ হবে না। চাকরির বাজার ভালো হওয়ার জন্য অপেক্ষা করলে, বাসা ভাড়ার বকেয়া বাড়তে থাকবে, অফার লেটার হাতে আসবে না।

তাই এক রাস্তার ব্রিজ নষ্ট হলে, অন্য রাস্তা দিয়ে যাবে। এক বাস নষ্ট হলে অন্য বাসে উঠবে। রিক্সার স্পিড বাড়াতে না পারলে, টেম্পু খুঁজবে। কর্তৃপক্ষের পলিসি চেইঞ্জ করাতে না পারলে, তোমার স্ট্রাটেজি চেইঞ্জ করবে। তারপরেও অন্যের আশায় বসে থাকবে না। অন্যকে চেইঞ্জ করতে গিয়ে সময় নষ্ট করবে না। বরং তোমার এক্টিভিটিস চেইঞ্জ করবে।

শুনো, ক্লাস সিক্স থেকে উপরের ক্লাসে উঠতে গেলে, আগের ক্লাসের বইয়ের মায়া ছাড়তে হবে। একইভাবে নতুন কিছু করতে হলে, নিজেকে আপগ্রেড করতে চাইলে, আগের লেভেলের আরামের কথা, পুরাতন হতাশার কথা, মাথা থেকে ডিলিট মারতে হবে। জ্যামের মধ্যে যে বাসে বসে আছো সেই বাসের মায়া ছাড়তে না পারলে, সামনের বাসে গিয়ে উঠার আনন্দ পেতে পারবে না। পড়া বুঝতে না পারার হতাশাকে আগলে ধরে বইখাতা না খুললে, কোনদিনও পড়া বুঝতে পারবে না। কোনদিনও ভালোভাবে পাশ করতে পারবে না।

তবে এক লাফে আসমানে উঠার স্বপ্ন দেখো না। দু-চারদিন প্রাকটিস করে বিশ্ব জয় করার আশা করলে, হতাশার সমুদ্র নিয়ে ফিরার সম্ভাবনা বেশি। বরং হারতে হারতে শরীরের শেষ রক্ত বিন্দু দিয়েও লেগে থাকার ইচ্ছা নিয়ে নামতে পারলে কিছু হবার সম্ভাবনা থাকবে। কারণ স্ট্রাগলের খনি তৈরি করতে পারলেই, আগ্নেয়গিরির উত্তপ্ত লাভা হিসেবে বেরিয়ে আসতে পারবে। সফলতার চারাগাছ দেখার আগেই, চেষ্টার বীজ বুনতে পারলেই, মাঠ ভরা ফসল গুদামে ভর্তি করতে পারবে। নিঃশেষ হওয়ার ইচ্ছা নিয়ে ঝাঁপিয়ে পড়তে পারলেই, আত্মবিশ্বাস নিয়ে ফিরে আসতে পারবে। তখন টিটকারি মারা বন্ধুরাও তোমাকে অভিবাদন দিতে লাইনে দাঁড়াবে।

মরিয়া হয়ে চেষ্টা করার নামই সফলতা

চেষ্টার নেশা, সফলদের একমাত্র পেশা

জ্যামের কারণে পরীক্ষার হলে পৌছতে দশ মিনিট দেরী হলে, পরেরদিন ঠিকই খেয়াল করে দেড়-ঘন্টা আগে বাসা থেকে বের হও। যাতে ট্রাফিক জ্যাম, রাস্তার মিছিল, ঝড়-বৃষ্টি কোনকিছুই তোমাকে দেরি করাতে না পারে। পাঁচ ঘন্টা লাইনে দাড়িয়ে থাকার পরেও কাউন্টারে গিয়ে বাসের টিকেট না পেলে, তুমি হাল ছেড়ে দাও না। অন্য সিস্টেমে, অল্প কিছু টাকা বেশি দিয়ে হলেও টিকেট ম্যানেজ করে ফেলো। কারেন্ট নাই বলে টিভিতে খেলা দেখতে না পারলে তুমি কিন্তু হাত পা ছেড়ে বসে থাকো না। মোবাইল দিয়ে ক্রিকইনফোতে চোখ রাখো। কারেন্ট আসার সাথে সাথে ইউটিউবে হাইলাইটস দেখে ফেলো। পকেটে টাকা না থাকলেও, ক্যামনে ক্যামনে জানি টাকা ম্যানেজ করে সেন্টমার্টিন চলে যাও বন্ধুদের সাথে।

অথচ প্রেম করার টাইম আসলেই তোমার সাহসে আর কুলায় না। এক মাস-দুই মাস, এক-দুই বছর চলে গেলেও সাহস করে সামনে গিয়ে দাঁড়াতে পারো না। এইটা শুধু তোমার ক্ষেত্রে না। দুনিয়ার ৯০ ভাগ প্রেমই প্রপোজ কারার আগেই হারিয়ে যায়। শুনো, একটা প্রেম সফল করার জন্য অনেক অনেক চেষ্টা, অনেক অনেক ফন্দি ফিকির করে পিছনে লেগে থাকতে হয়। দুই-একবার রিজেক্ট করে দিলেও বন্ধু হওয়ার চেষ্টা করতে হয়। ছলেবলে কৌশলে বারবার প্রিয়জনের কাছে থাকতে পারলেই প্রেম হবে। আর অল্পতে টায়ার্ড হয়ে ছেড়ে দিলে, প্রিয়জন অন্য কারো প্রিয় হয়ে যাবে। আর তুমি গান ধরবে- “ফাইট্টা যায়, ও আমার বুকটা ফাইট্টা যায়”।

প্রেমের মতো; লাইফের ড্রিম, লক্ষ্যগুলোতে সফল হতে চাইলে, লক্ষ্যের পিছনে লেগে থাকতে হবে। এক দুই বার হোঁচট খাবে, অনেক অনেক চেষ্টা করেও দেখা যাবে কিছুই আউটপুট পাওয়া যাচ্ছে না। তারপরেও চেষ্টা চালিয়ে যেতে হবে। জীবনে যা কিছুই করতে চাও না কেনো, একদিনে সেটা পেয়ে যাবে না। বাসের টিকেট, খেলা দেখা, বন্ধুদের সাথে ঘুরতে যাওয়ার জন্য যতটুকু ডেসপারেট, তার চাইতেও বেশি ডেসপারেট না হলে, তোমার স্বপ্ন নিজে নিজে ফ্রাই হয়ে তোমার প্লেটে চলে আসবে না।

নরম বিছানা, আরামের সোফা থেকে উঠে দাড়াতে হবে। আড্ডা কমিয়ে কাজে নামতে হবে। নিজের দুর্বলতা কাটিয়ে উঠার চেষ্টা করতে হবে। প্রয়োজন হলে অন্য কারো হেল্প নিতে হবে। কোনদিন রানের খাতা খোলার আগেই আউট হয়ে গেলে, লজ্জায় মুখ লুকিয়ে পালিয়ে যাওয়া যাবে না। তাহলে সেঞ্চুরি করার স্বাদ কোনদিনও পাবে না। বরং একদিন ডাক মারলেও পরেরদিন আবার মাঠে নামতে হবে। চেষ্টা করতে হবে। উপরে উঠার রাস্তা খুঁজতে হবে। লেগে থাকলে একদিন না একদিন সে রাস্তা ঠিকই পেয়ে যাবে। আর এভাবেই একটার পর একটা সিঁড়িতে পা ফেলে সফলতার শিখরে পৌঁছে যেতে পারবে।

চেষ্টার অভ্যাস, লাইফ-স্টাইলে চেইঞ্জ

চেষ্টার নেশা, সফলদের একমাত্র পেশা

যতই রান্নার রেসিপি, কেকা ফেরদৌসির টিভিসি, বা কেএফসি খাও না কেনো। সেইসব রেসিপি অনুসারে, তোমার রান্নার স্টাইল চেইঞ্জ না করলে; তরকারির স্বাদ, সংবাদ, বা আবাদ কোনটাই ইম্প্রুভ হবে না। পোষা গণ্ডির বাইরে না এসে, মশার মতো খোসার ভিতরে বসে ঘ্যান-ঘ্যান করলে, তোমার গান তুমি ছাড়া অন্য কেউ শুনবে না। উঁচু লেভেলে উঠতে চাইলে, খোসা ভাঙতে হবে, উঁচু লেভেলের সিঁড়ি খুঁজতে হবে। দড়ি ধরতে হবে। এক দড়ি ছিঁড়ে গেলে, অন্য দড়ি লাগাতে হবে। চেষ্টার অভ্যাস ডেভেলপ করতে হবে।

চেষ্টার অভ্যাস ডেভেলপ না করলে, লাইফ-স্টাইলে চেইঞ্জ না আনলে; হতাশা, কনফিউশন ছাড়া অন্য কোন লোশন তোমার কপালে ফিট খাবে না। লম্বা লম্বা প্ল্যান, শত শত শুভাকাঙ্ক্ষী, কেউ ই তোমার লাইফে তরমুজ-বাঙ্গি নিয়ে আসবে না। উৎসাহমূলক লেখা, ভাগ্যের রেখা, মোটিভেশনাল ভিডিও থেকে শেখা, কোন কিছুই আউটপুট দিবে না- যদি না, তুমি কাজটা শুরু না করো। লেগে না থাকো, চেষ্টা না করো।

শুরুটা বিশাল আকারে করতে গিয়ে, ক্যাঁচাল বাধিয়ে, ঘোড়াশাল গিয়ে ঝিমানোর অবস্থা তৈরি না করে, অল্প অল্প করে শুরু করো। ডেইলি আধা ঘন্টা পারো, এক ঘন্টা পারো- সেই সময়টায় মোবাইল-ইন্টারনেট বন্ধ করে, লোভ-লোকসানের হিসাবকে অন্ধ বানিয়ে, চেষ্টার ছন্দ তৈরি করতে পারলেই, লাইফে সফলতার গন্ধ আসবে। অর্জন আসবে।

সিগারেটখোর স্টাইলে স্কিল ডেভেলপ

চেষ্টার নেশা, সফলদের একমাত্র পেশা

সিগারেট খাওয়া কেম্নে শুরু হয় সেটা সবাই জানে। প্রথম প্রথম, বন্ধুদের সাথে এক টান, দুই টান। তারপর আসে, কে কতক্ষণ ধুয়া ধরে রাখতে পারে, গিলে খাইতে পারে। কে কত বেশি ধোঁয়া- নাকে দিয়া, পশ্চাদ অঙ্গ দিয়া বের করতে পারে, সেই কম্পিটিশন। আস্তে আস্তে অভ্যাস তৈরি হয়। তারপর, দুপুরে ভাত খাওয়ার পর একটা না খাইলে ভালো লাগে না। চা খাওয়ার পর একটা না হইলে ঝমে না, গা ম্যাজম্যাজ করে। কয়েকদিন পরে দেখা যায় দিনে মোটামুটি পাঁচ টা লাগে। আরো কিছুদিন পরে দেখা যায় আধা প্যাকেট কাজ হয় না।

অন্যদিকে, যে জীবনে কোন দিন সিগারেট খায় নাই, যদি তারে গিয়ে বলো- “আজকে সারাদিন সিগারেট খাবা। সারাদিনে দুই প্যাকেট শেষ করবা।” সে দুই প্যাকেট তো দুর কি বাত, দুই পিসও খাইতে পারবে না।

ধরো তুমি ওয়েব ডেভেলপমেন্ট শিখতে চাও। সেটার অভ্যাসও আস্তে আস্তে তৈরি করতে হবে। সিগারেট খাওয়া শুরু করার স্টাইলে। তারপর ফ্রেন্ড বা পরিচিত কেউ, যে প্রোগ্রামিং করে তারসাথে প্রোগ্রামিং নিয়ে আড্ডা দাও। সে কেম্নে কি করে সেটা জানতে চাও। অনেকেই আছে, নিজের কাজ বা মুনশিয়ানা দেখাতে ভালোবাসে। তারে সেই সুযোগ দাও। তার বকর বকর শুনো। মাথা মুণ্ডু কিচ্ছু না বুঝলেও শুনো। অনেকটা সাব-টাইটেল ছাড়া তামিল মুভি দেখার মতো। রেন্ডম দুই একটা ভিডিও, দুই চার মিনিট দেখো। ভালো না লাগলে বন্ধ করে দাও।

রাতে ঘুমানোর আগের ১০ মিনিট ফেইসবুকিং না করে, হুকুশ পাকুশের প্রোগ্রামিং সাইটে কয়েকটা লাইন দেখে, তারপর ঘুমাতে যাও বা অন্য কোনো সাইটে, জাস্ট ১০মিনিট টাইম পাস করো। জাস্ট ১০ মিনিট। ল্যাপটপে না পারলে, মোবাইলে। এক-দেড় মাস পরে, দেখা যাবে, ১০ মিনিট টাইম স্পেন্ড করতে গিয়ে ২০ বা ৩০ মিনিট টাইম স্পেন্ড করে ফেলছো। তারমানে আস্তে আস্তে নেশার জগতে প্রবেশ করতেছো। আরো কিছু দিন পরে দেখবে, সকালে উঠেই ডাইরেক্ট ফেইসবুকে না গিয়ে এমনকি দাঁত ব্রাশ করারও আগে, ১০ বা ২০ মিনিট কিছু টিউটোরিয়াল দেখে ফেলছো। বা লাইট অফ করে ঘুমানোর পরে, আবারো লাইট জ্বালিয়ে অন্যভাবে প্রোগ্রাম ট্রাই করতেছ।

এইভাবে নেশার জগতে আস্তে আস্তে আস্তে প্রবেশ করে ফেল্লে, সারাদিন প্রোগ্রামিং বা ফটোগ্রাফি বা গিটার বাজানো কোনো ব্যাপারই না। কিন্তু হুট করে সারাদিন করার প্ল্যান করলে, এক চিমটিও লাভ হবে না। সো, ধীরে ধীরে শুরু করো। একটু একটু করে বাড়াতে থাকো। দেখবে নিজের অজান্তেই স্কিল ডেভেলপ করার নেশার জগতে ঢুকে গেছো। সেই ইফেক্টিভ নেশাগ্রস্থ হবার আশীর্বাদ রইলো।

চেষ্টার চেইন ই আনবে জীবনের গেইন

চেষ্টার নেশা, সফলদের একমাত্র পেশা

কোন একটা লাইভ টিভি প্রোগ্রাম কিংবা বিশাল একটা কনসার্ট শুরু হবার পাঁচ মিনিট আগে, আপনাকে যদি বলে- এই মুহূর্তে স্টেজে পারফর্ম করতে হবে। আপনি কি পারবেন? না পারবেন না। ভয়ের চোটে প্যান্ট ভিজিয়ে ফেলবেন। অথচ এই আপনিই, কেউ সুযোগ দিচ্ছে না বলে মাসের পর মাস ঘ্যানর ঘ্যানর করতেছেন। আসলে যারা সুযোগ পাইনা বলে চিল্লাচিল্লি করে, তাদেরকে সুযোগ দিলেও সেটা কাজে লাগাতে পারবে না। তাই সুযোগের জন্য কমপ্লেইন না করে নিজের সামর্থ্য বাড়ান। সামর্থ্যকে সুযোগের চাইতে বড় করে তোলেন। তাইলে, সুযোগ আপনা আপনিই চলে আসবে।

আপনি যেটাই করতে চান না কোনো। যে স্বপ্নই দেখেন না কোনো। কোন কিছুই সহজ না। কোন কিছু চাইলেই ফ্রি ফ্রি পেয়ে যাবেন না। কারণ, ইটস হার্ড। ইটস টাফ। ইটস রিয়েল ওয়ার্ল্ড। সেজন্যই আপনার আশেপাশের কেউই কঠিন রাস্তায় নামতে চায় না। নিজেদেরকে কমফোর্ট জোনের বাইরে নিয়ে যেতে চায় না। পহেলা বৈশাখ, বিজয় দিবসে ঘুরে বেড়ানো সহজ বলেই, লাখো লাখো মানুষ ঘুরে বেড়ায়। আড্ডা দেয়, সেলফি তোলে। অল্প কিছু মানুষ, যারা নিজেদেরকে কমফোর্ট জোনের বাইরে নিয়ে যেতে চায়। নিজেদেরকে চ্যালেঞ্জ করতে চায়। ডিফারেন্ট কিছু করতে চায়। তারাই ঘুরাফেরা বাদ দিয়ে পহেলা বৈশাখের মঞ্চে উঠে দাড়ায়। গলা ছেড়ে গান গাইতে চায়। প্রাণ খুলে নাচতে চায়। এই গান গাওয়া, নাচতে চাওয়া, পারফর্ম করা, পহেলা বৈশাখের আগের দিন চাইলে হবে না। ফসল ঘরে তুলতে হলে, মৌসুমের শুরুতেই বীজ বুনতে হবে। জীবনে স্পেশাল কিছু হইতে চাইলে, ড্রিম ফুলফিল করতে চাইলে, স্টুডেন্ট লাইফেই স্বপ্নের গোড়াপত্তন করতে হবে। দিনের পর দিন, মাসের পর মাস সেই স্বপ্নের পিছনে চেষ্টা করতে হবে। প্যাশন টাকে পিছনের পকেটে লুকিয়ে না রেখে, সামনে এনে পরিচর্যা করতে হবে। তাইলেই প্যাশনের গাছ এক দিন ফল দিবে। অন্যথায় অনুর্বর জমি হিসেবে অবহেলিত থাকতে হবে সারাটা জীবন।

আপনি হিমালয় থেকে উৎপত্তি হয়ে আসছেন নাকি ঢাকার ড্রেনে ভেসে বেড়াচ্ছেন – বড় কথা না। বড় কথা হচ্ছে- আপনি টার্গেট ঠিক রেখে স্টেপ বাই স্টেপ চেষ্টার চেইন চালু রাখতে পারতেছেন কিনা। সাহস আর চেষ্টার সম্মিলন ঘটাতে পারলে, শত শত মাইল পাড়ি দিয়ে বঙ্গোপসাগরের বুকে আপনিও আনন্দে ভেসে বেড়াতে পারবেন।

চেষ্টার নেশা, সফলদের একমাত্র পেশা 3

ফুলবল খেলার স্টাইলে চেষ্টা

চেষ্টার নেশা, সফলদের একমাত্র পেশা

ধরেন আপনি ফুটবল খেলতে নামছেন লাথি দেয়া শুরু করলেন মাঝ ফিল্ড থেকে দুই কদম না আগাতেই, প্রতিপক্ষের মিডফিল্ডার এসে পড়লো তাকে পাশ কাটাতে না কাটাতেই আরো দুইজন আপনার সামনে হাজির, এদেরকেও পাশ কাটিয়ে, একটু আধটু চেষ্টা করে প্রতিপক্ষের ডি-বক্সের কাছে আসতেই চার-পাঁচজন ডিফেন্ডার এসে ঘিরে ধরলো আপনি মরিয়া হয়ে চাইলেন, এই বাধার দেয়াল পার হতে কিন্তু পারলেন না। আপনার কাছ থেকে বল কেড়ে নিয়ে গেলো লম্বা একটা শর্ট দিয়ে, অনেক অনেক দুরে বল পাঠিয়ে দিলো

এক মুহূর্ত আগে, যে বলটা আপনার কাছে ছিলো, আপনি যেটাকে কন্ট্রোল করতেছিলেন সেটা এখন চলে গেছে, অনেক অনেক দূরে এখন, আপনি কি সেখানে ঠায় দাড়িয়ে থাকবেন? আপনার আর গোল দেয়ার সম্ভাবনা নাই দেখে আপনি কি খেলা ছেড়ে উঠে যাবেন? না যাবেন না।

বরং মাঝ মাঠের দিকে ছুটে যাবেন ইনফ্যাক্ট। যেখানে, এখন বল আছে, সেখানে যাবেন। অন্য কারো কাছ থেকে, সহজে বা কষ্ট করে বল অর্জন করতে পারলে নব্য উদ্যমে, আরেকবার শুরু করতে চাইবেন। এইভাবে একবার-দুইবার নয়, শত শত বার চেষ্টা করে কখনো একটু বেশি আবার কখনো অনেক অনেক কম আগাতে পারবেন। চেষ্টা করতে করতে, একসময় গোলপোস্ট ফাঁকা পেয়েও গোল মিস হয়ে যেতে পারে কিন্তু যেটা মিস হবে না, সেটা হচ্ছে আপনার গোল দেয়ার আপ্রাণ চেষ্টা এই চেষ্টা বহাল থাকলে, গোল আপনি পাবেনই আজকে না হয়, কালকে। এই বছর না হয় পরের বছর।

জীবনটা জাস্ট একটা খেলার মাঠ, এখানে সফল হইতে চাইলে, লক্ষ্য অর্জন করতে হলে আপনার অনেক প্রতিপক্ষ আসবে ল্যাং মারবে, ধাক্কা দিবে, পা ভেঙ্গে ফেলবে সরকারী সংস্থা এসে আপনাকে হলুদ কার্ড, লাল কার্ড দেখাবে যত্ত কিচ্ছুই হোক না কেনো, আপনাকে বলের পিছনে ছুটতে হবে

দুনিয়ার সেরা ফুটবলারকে দেখে আমরা ভাবি, “ওর মধ্যে, ম্যাজিক আছে” সত্যিই কি তাই? নেক্সট টাইম খেলা দেখতে বসলে, খেয়াল করবেন প্রত্যেক চেষ্টায় সে কিন্তু, ইনস্ট্যান্ট ম্যাজিক দেখাতে পারে না। অনেক অনেক শর্ট মিস করে, তার কাছ থেকেও বল কেড়ে নেয় আপনার যেমন, বল হারিয়ে ফেলার, ধাক্কা খাবার, ব্যর্থ হবার ভয় আছে, তারও সেই ভয় আছে।

তবে, চ্যাম্পিয়ন আর সফল লোকদের আসল ম্যাজিক হচ্ছে, চেষ্টা করার, কনস্ট্যান্ট ক্ষুধা তৈরি করার ক্ষমতা যতবার ব্যর্থ হয়, ক্ষুধা তত বেশি হয়। আজকে বিশ্ব সেরা খেলোয়াড় হইলেও, রিলাকট্যান্ট হয় না। ক্ষুধা আরো বাড়িয়ে, পরের দিন মাঠে নামে ধাক্কা খেয়ে পড়ে গিয়ে, আবারো উঠে, লক্ষের পিছনে ছুটে . . আপনি সফল হইতে হইলে, আপনারও বার বার চেষ্টা করার ক্ষুধাটা লাগবে কারণ, বারে বারে লাথি দিলে, তালা ঠিকই ভাঙ্গবে স্বপ্নের দরজাটা একদিন খুলবে

চেষ্টা না করার মানেই ব্যর্থতার নদীতে ডুবে মরা

চেষ্টার নেশা, সফলদের একমাত্র পেশা

সাতার না জানাটা সমস্যা না। সাতার জানি না বলে, হাত পা ছোড়াছুড়ি না করাটা সমস্যা। নিজের হাত পা নিজে ছোড়াছুড়ি না করলে, অন্য আরেকজন এসে আপনার হাত পা ছোড়াছুড়ি করে দিবে না। আপনি ভেসে থাকার চেষ্টা না করলে আরেকজন মাথায় তুলে আপনাকে ভাসিয়ে রাখবে না। আপনার ভাসা আপনাকেই ভাসতে হবে। আপনার টিকে থাকা, এগিয়ে যাওয়ার চেষ্টা আপনাকেই করতে হবে। সাতার জানি না, মনে হয় পারবো না, কিছু বুঝতেছিনা, আমারে দিয়ে হবে না মনে করলে, দুই মিনিটেই দশ ঢোক পানি গিলে, খুব সহজেই ডুবে যাবেন। হারিয়ে যাবেন। ডুবে যাওয়া কঠিন কিছু না। বেচে থাকা, এগিয়ে যেতে পারাটাই কঠিন কিছু। সেই কঠিন সবকিছুর সামনে বুক চেতিয়ে দাড়াতে পারলেই জীবনে সফল হওয়া যায়।

ঝামেলায় পড়ে, সমস্যায় আটকে গিয়ে কোনভাবেই ঝট খুলতে না পারলে, একটু অন্যভাবে চিন্তা করে দেখেন। সাতার জানি না তো কি হইছে, হাত পা নাড়াচাড়া তো করতে পারি। হাত পা নাড়াচাড়া করেই দেখেন কি হয়। যতক্ষণ হাত পা নাড়াচাড়া করতে পারবেন, ততক্ষণ ভেসে থাকতে পারবেন। হাত পা নাড়াচাড়া করতে করতে একটু পরে দেখবেন গায়ের জামাকাপড় পানিতে ভিজে ভারী হয়ে গেছে। এগুলা সহ নাড়াচাড়া করতে কষ্ট হয়। দরকার হলে আন্ডারওয়ার রেখে প্যান্ট খুলে ফেলেন। তারপর পা দিয়ে পানিতে লাথি দেয়া সহজ হয়ে যাবে। একটু পরে, ভাবলেন গায়ের ভারী শার্টটা আরোও ভারী হয়ে গেছে। সেটা খুলে একটু দুরে ছুড়ে ফেলে দেন। গাঢ় নীল রঙের শার্টটার দিকে মন খারাপ করে তাকাতেই দেখলেন, শার্টের নিচে বাতাস জমে পানির উপরে ফুলে আছে। সেটা দেখেই মাথায় আইডিয়া আসবে। শার্টের নিচে জমে থাকা বাতাস একটা বাতাস ভর্তি টিউবের মতো। এখন শার্টের নিচে বাতাস আটকিয়ে পানির উপরে চেপে ধরলে এক মিনিট ভেসে থাকা যাবে। এই এক মিনিটে একটু একটু করে পানিতে লাথি দিয়ে তীরের দিকে একটু একটু করে এগিয়ে যেতে পারেন। তীরে পৌঁছে যেতে পারেন।

যন্ত্রণা, প্রতারণা, হতাশা বা ব্যর্থতার নদীতে ডুবে মরার চাইতে একটু একটু করে সমস্যা গুলাতে লাথি মারেন। সব সমস্যা এক সাথে লাথি মারতে পারবেন না। একটা সমস্যাকেই বার বার লাথি মারেন। আর একটু একটু করে তীরের দিকে আগাইতে থাকেন। সমস্যা যত কঠিনই হোক, নদী যত বড়ই হোক, চেষ্টার লাথি মারতে থাকলে, সফল হবার সম্ভাবনা বাড়তে থাকবে। চেষ্টার লাথি বন্ধ করলে, অল্পতেই ডুবে মরতে হবে।

সফলতা না খুঁজে, চেষ্টার প্রসেস এনজয় করো

চেষ্টার নেশা, সফলদের একমাত্র পেশা

একবার না পারিলে দেখো শতবার – কথাটাতে বলে নাই, শত বার চেষ্টা করার পরে না হইলে কি করবো? ছেড়ে দিবো, নাকি আরো চেষ্টা চালিয়ে যাবো? তার চাইতেও বড় ঘাপলা হচ্ছে, ওরা বলে নাই, একশবারের চেষ্টা কি একই সিস্টেমে চালিয়ে যাবো?

ধরেন, আপনি তেলের সাথে পানি মিশানোর চেষ্টায় নামলেন। একবার চামচ দিয়ে ঘুঁটা দিলেন, লাভ হলো না। পরেরবারও ঘুঁটা দিলেন, তাতেও লাভ হলো না। এই একই সিস্টেমে দশ-বিশবার ট্রাই করে আপনি ভাবলেন – আরে বাহ্, আমিতো বিশবার ট্রাই করে ফেলছি। আসলে আপনি বিশবার ট্রাই করেন নাই। বরং একটা ট্রাই বিশবার করছেন। সেজন্যই ট্রাই এর সংখ্যা বেশি মনে হইলেও, লাভের লাভ কিছু হয় না।

তার চাইতে বরং প্রথমবার ট্রাই করার পরেও যখন কাজ হলো না। তখন দ্বিতীয়বার ট্রাই করার আগে একটু ভেবে দেখলেন, আগেরবার কেনো কাজ হলো না। এইবার ট্রাই করার সিস্টেমে কি পরিবর্তন করা যায়। হয়তো পানি একটু গরম করে নিলেন বা তেল ফ্রিজে রেখে ঠাণ্ডা করে দেখলেন। নতুবা একটু লবণ যোগ করে দেখলেন কি হয়। দুইদিন পরে অন্য আরেকটা বুদ্ধি বের করে, একটু ডিটারজেন্ট দিয়ে দেখলেন। সেটাতেও কাজ না হলে, একদিন না একদিন- একটু খাবারের রং আর একটু ডিটারজেন্ট দিয়ে, তেল আর পানি ঠিকই মিশিয়ে ফেলবেন। কারণ আপনি চেষ্টার প্রসেসটাকে এনজয় করেছেন। ডিফারেন্ট এঙ্গেল থেকে ডিফারেন্টভাবে ট্রাই করতে করতে আপনি ভুলেই গেছেন, কতবার ট্রাই করেতেছেন আর কতবার ব্যর্থ হয়েছেন। সেজন্য যারা চেষ্টার প্রসেসকে উপভোগ করে তারা পারসুয়েসিব (আত্মপ্রত্যয়ী) হয় এবং শেষ পর্যন্ত সফল হয়েই যায়।

তাই, চেষ্টার প্রসেসটাকে এনজয় করুন, সফলতা আপনাআপনি চলে আসবে।

দুনিয়ার সবচেয়ে বড় মিথ্যা

চেষ্টার নেশা, সফলদের একমাত্র পেশা

দুনিয়াতে সবচেয়ে বড় মিথ্যা -“পড়ালেখা আপনাকে সফল করে তুলবে” এইটা যদি সত্যিই হতো, তাইলে দুনিয়ার সবচেয়ে বড় ডিগ্রীধারী লোকগুলা সবচেয়ে বেশি সফল হতো। তা কিন্তু না। বরং সফল অনেকেই ঠিকমতো গ্রাজুয়েশনই শেষ করে নাই।

এই বাজে মিথ্যা আঁকড়ে ধরে রাখার কারণ হচ্ছে, “ভয়” থ্রি ইডিয়টসের ভাষায়, “ডিগ্রী না থাকলে, জব পাওয়া যাবে না। জব না থাকলে, মেয়ের বাপ মেয়ে দিবে না। ব্যাঙ্ক ক্রেডিট কার্ড দিবে না। দুনিয়া রেসপেক্ট দিবে না।”

আমাদের মুরুব্বিদের কাছে, আমরা কি চাই বা আমাদের কি ভালো লাগে তার চাইতে সেইফ হওয়া বেশি ইম্পর্টান্ট সেইজন্য মিউজিশিয়ান, আর্টিস্ট, কবি, এডভেঞ্চার বা মাউন্টেন রাইডার এমনকি ফেইসবুক সেলিব্রেটি টাইপের লোকগুলা সবচেয়ে ভালো যে কাজ করতে পারে, সেই কাজের জন্য কোন চাকরি নাই ভুল কাজ করে, সংসার চালাতে গিয়ে, লাইফ টাকে সেইফ মুডে রাখতে গিয়ে স্বপ্নটাকে দূরে ঠেলে দিচ্ছে।

খুব ছোট বেলায় আপনি হয়তো নাচ ভালো জানতেন আপনার আব্বু-আম্মু এসে বলল, “এইবার পড়ালেখায় মনোযোগ দাও” হারিয়ে গেলো আপনার ভালো লাগা, ধূলায় মিশে গেলে আপনার স্কিল, স্বপ্ন

প্রতিদিন অফিস থেকে ফেরার পথে ভাবি, গুগলে সার্চ মেরে, কোড কপি পেস্ট করতে কি আমি জন্মেছি? আবার মাঝে মাঝে ভাবি, যদি নিজেকে আনএডুকেটেড করে ফিরে যেতে পারতাম শৈশবে স্কুলের ৯৫% অপ্রয়োজনীয় জিনিস শিখে টাইম নষ্ট না করে আমার ড্রিমটাকে ফলো করতাম। জীবনটাকে সফল করতে পারতাম সেইফ থাকতে গিয়েই সবচেয়ে বড় রিস্কে পড়েছি, কারণ The biggest risk is to take no risk.

বাঁকা আঙ্গুলে ট্রাই

চেষ্টার নেশা, সফলদের একমাত্র পেশা

চেষ্টার নেশা, সফলদের একমাত্র পেশা 4

ঢাকা শহরের যেকোনো ব্যস্ত রাস্তা ক্রস করতে গেলে সেরাম লেভেলের হেডম লাগে। ভো ভো করে, একটার পর একটা, বাস, ট্রাক রিক্সা ডাইনে-বামে কাইট মারে, দেখলে মনে হয় এক একটা আজরাইল প্যাঁ পো করে চলে যাচ্ছে। তারপরেও আমি-আপনি সবাই প্রতিদিন রাস্তা ক্রস করার এটেম্পট নেই। টেম্পুর হর্ন বা বাসের হেলপারের চিল্লানি শুনে পিছিয়ে গেলেও চেষ্টা করা বন্ধ করে দেই না। বাসায় ফেরত চলে যাই না। বরং যে জায়গায় দাড়িয়ে ছিলাম, তার একটু দুরেই, আমার-আপনার মত আরও দুই-চারজন যারা রাস্তা পার হবার ট্রাই করতেছিলো, তাদের কাছে চলে যাই। অল্প সময়ের মধ্যেই অপরিচিত চার-পাঁচজন মানুষের একটা গ্রুপ তৈরি হয়ে যায়। এদের কেউ কাউরে চিনে না। কিন্তু সবার একটাই টার্গেট, রাস্তা পার হতে হবে। তখন দেখা যায়, একজন সামনে, আরেকজন পিছনে এইভাবে পার হতে শুরু করলে, কান ঝালাপালা করে দিয়ে হর্ন বাজানো গাড়িগুলাও একটু স্লো হয়ে, রাস্তা ক্রস করার সুযোগ করে দেয়।

আপনি প্রোগ্রামার, ফটোগ্রাফার, ফ্যাশন ডিজাইনার, বিজনেস ওনার যা ই হতে চান না কোনো। আশেপাশের সবাই ভুভুজেলা বাজিয়ে আপনাকে ছিটকে ফেলে দিবে। আপনার স্বপ্নের রাস্তা থেকে। তবে হতাশ হয়ে বাসায় ফিরে যাওয়া যাবে না। দুই-চারবার নিজে নিজে ট্রাই করে সুবিধা করতে না পারলে। রাস্তা-ঘাটে, ভার্সিটিতে, যেকোন ছোট খাটো আড্ডা, ওয়ার্কশপ, কনফারেন্স বা গ্রুপ ডিসকাশনে আপনার মত একই পথের পথিকদের খুঁজে বের করতে হবে। অন্যরা আগ্রহ না দেখালেও, যেচে যেচে পিছে পিছে ঘুরতে হবে। চামে-চুমে খাতির করার চেষ্টা করতে হবে। হেল্প করতে না চাইলেও, দূর থেকে দেখতে হবে, কিভাবে করতেছে। তারপর সেটার মত করে করার চেষ্টা করতে হবে। ওদের দেখে দেখে, কপি মেরে করতে গেলেও এক চান্সে সব হয়ে যাবে না। তবুও চেষ্টা চালিয়ে যেতে হবে। একই পথের পথিকদের নিয়ে একটা গ্রুপ তৈরি করতে হবে। বা অনেক অনেক খোঁজাখুঁজি করে একটা গ্রুপ খুঁজে বের করতে হবে। তখন দেখা যাবে রাস্তা পার হবার মতো করে, একজন সামনে, আরেকজন তাকে ফলো করে করে, কঠিন রাস্তা ঠিকই পার হয়ে যাবেন। কারণ, একের বোঝা দশের লাঠি।

গুলা-বিশেক ট্রাই করে করে খুব কাছের স্বপ্নটাকে ধরতে না পারলে, একটু এনালাইসিস করুন কেনো হচ্ছে না। অন্য কিভাবে ট্রাই করতে পারেন। রাস্তার সাইডে দাড়িয়ে একটু ভাবুন, দেখুন অন্যরা কিভাবে ক্রস করতেছে, কি কি বিকল্প উপায় আছে। একটু ভাবলে, আশেপাশে তাকালে, একটু দুরে দেখবেন, হা করে একটা ওভারব্রিজ তাকিয়ে আছে। হয়তো এক্সট্রা একটু হাটতে হবে, তবুও রাস্তা ক্রস করতে পারা তুলনামূলক সহজতর হবে। তাই, খুব কাছের স্বপ্নটা অধরা হয়ে উঠলে, বিকল্প পথে টাইম একটু বেশি লাগলেও, সফল হবার চান্স বেশি থাকে।

Comments (No)

Leave a Reply

এই সাইটের কোন লেখা কপি করা সম্পুর্ন নিষেধ