ফেসবুক পিক্সেল: এটি কী এবং কীভাবে ফেসবুক পিক্সেল ব্যবহার করবেন আপনি কি কোনো ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠানের সাথে যুক্ত? প্রতিষ্ঠানটি থেকে আয়ের একটি সিংহভাগ আপনার বিজ্ঞাপনের পিছনে খরচ হয়ে যায়? তাহলে আপনার জন্য সবথেকে কার্যকরী মাধ্যমটি হচ্ছে ফেসবুক পিক্সেল। এটি আপনার বিজ্ঞাপন সম্পর্কিত সকল উপাত্ত প্রদানের মাধ্যমে আপনার ব্যবসার প্রসার ঘটাবে। তাহলে চলুন জেনে আসি ফেইসবুক পিক্সেল সম্পর্কে।
যারা ফেসবুকের মাধ্যমে বিজনেস করে থাকেন তারা জানেন যে ফেসবুক পিক্সেল ফেসবুকেরমাধ্যম করা এসব ব্যবসার বিক্রয় বৃদ্ধি করতে সাহায্য করে। বর্তমান সময়ে অনেক সফল বিজনেসম্যান লক্ষ্য করেছেন যে ফেসবুকে শুধুমাত্র একটি পোস্ট বুস্ট করার মাধ্যমেই বিক্রি বৃদ্ধি পায় না। এর কারণ হয়তো ফেসবুকের মনিটাইজেশনের বিভিন্ন রকম জটিলতা। এক্ষেত্রে আপনি ফেসবুক পিক্সেল ব্যবহার করে সহজেই আপনার পণ্যের বিক্রয় বৃদ্ধি করতে পারবেন। তাই আপনার জন্য ফেসবুক পিক্সেল এবং ফেসবুক পিক্সেল ব্যবহার করে কিভাবে আয় বৃদ্ধি করতে পারবেন সেই বিষয় নিয়ে সাজিয়েছি আজকের আয়োজন।
ফেসবুক পিক্সেল কি?
ফেসবুক পিক্সেল এক ধরনের টুলস যা আপনার পণ্যের বিক্রয় বৃদ্ধিতে সহায়তা করে। যারা অনলাইন ব্যবসার সাথে জড়িত তারা অবশ্যই গুগল এনালাইটিক্স এর নাম শুনে থাকবেন। এই গুগল এনালাইটিক্স হচ্ছে এক ধরনের টুলস যা আপনার ওয়েব সাইটে দেখানো বিজ্ঞাপনগুলোর তথ্য যাচাই-বাছাই করে আপনাকে একটি সম্পূর্ণ রিপোর্ট প্রদান করে। ফেসবুক পিক্সেল এই একই কাজটি করে থাকে। অর্থাৎ আপনার ওয়েবসাইটে দেখানো হয়ে এমন সকল বিজ্ঞাপনের তথ্য আপনাকে প্রদান করে। কোন এলাকার মানুষ, কোন বয়সের মানুষ ওই বিজ্ঞাপন থেকে পণ্য ক্রয় করছে সেই সম্পর্কে আপনাকে রিপোর্ট দেয়।
এছাড়া ফেসবুক পিক্সেল আপনার পণ্য বিক্রয় থেকে হওয়া লাভ এবং বিজ্ঞাপনের খরচের অনুপাত দিয়ে থাকে। এতে করে আপনি বুঝতে পারেন যে আপনার ব্যবসায় কত লাভ হচ্ছে এবং কত খরচ হচ্ছে। ফেসবুক পিক্সেলের রিপোর্টের ওপর ভিত্তি করে আপনি আপনার ব্যবসায়ী নতুন কোন পরিবর্তন আনতে পারেন। অনলাইন ব্যবসা এবং ডিজিটাল মার্কেটিং এর সাথে সম্পর্কিত ব্যক্তি মাত্রই data-driven এর গুরুত্ব স্বীকার করবে। মূলত ফেইসবুক পিক্সেল আপনাকে এই কাজটি করে দেয়। তাই ফেসবুকের দুনিয়ায় এটি একটি শক্তিশালী টুলস।
কেন এত প্রয়োজনীয় ফেসবুক পিক্সেল?
মনে করুন আপনার একটি ফেসবুক পেইজ রয়েছে এবং এর মাধ্যমে আপনি নির্দিষ্ট পণ্য বিক্রয় করে থাকেন। এখন এই পেজের বিক্রয় বৃদ্ধি করার জন্য আপনি পোস্ট বুষ্ট করবেন। কিন্তু আপনি হয়তো লক্ষ্য করেছেন যে বর্তমান সময়ে এই বুষ্টিং থেকে তেমন সেলস বৃদ্ধি পায় না। এক্ষেত্রে প্রয়োজন হয়ে পড়ে ফেসবুক পিক্সেলের।
ফেসবুক পিক্সেল আপনাকে বলে দিয়েছে আপনি কোন ক্যাটাগরির মানুষের কাছে আপনার পণ্যের বিজ্ঞাপন দিলে বিক্রয় বৃদ্ধি পাবে। ফেইসবুক পিক্সেল স্বয়ংক্রিয়ভাবে যাচাই করে যে কোন ক্যাটাগরির বা কোন ধরনের মানুষ আপনার বিজ্ঞাপন দেখে পণ্য ক্রয় করছে। এতে করে যে শ্রেণীর মানুষ আপনার বিজ্ঞাপন দেখে পণ্য ক্রয় করছে না তাদেরকে পুনরায় বিজ্ঞাপন দেখানো থেকে আপনি সতর্ক হয়ে যাবেন। এর ফলে আপনার বিজ্ঞাপন কস্ট কমে যাবে। এবং ওই অর্থ দিয়ে যে শ্রেণীর মানুষ আপনার বিজ্ঞাপন দেখছে তাদের কাছে পৌঁছে যেতে পারবেন।
মনে করুন ইতিমধ্যে আপনার একটা বিজনেস রয়েছে এবং দিন শেষে দেখা গেল আপনি কোন পণ্য বিক্রি করে যে লাভ করেছেন তার প্রায় সবটাই বিজ্ঞাপন খরচ ব্যয় করে ফেলেছেন। তাহলে আপনি কি কোনো লাভ হবে? ঠিক এমন একটি অবস্থায় ফেইসবুক পিক্সেল এর প্রয়োজন হয়ে পড়ে। যার মাধ্যমে আপনি আপনার টার্গেট অডিয়েন্স খুঁজে বের করতে পারবেন এবং অধিক সংখ্যক টার্গেট অডিয়েন্স এর কাছে পৌঁছে যেতে পারবেন।
কি কি কাজ করে ফেসবুক পিক্সেল?
ইতিমধ্যে আমরা জানলাম ফেইসবুক পিক্সেল কি এবং ফেসবুক বিজনেসের জন্য এর প্রয়োজনীয়তা। কিন্তু এর পরও প্রশ্ন থেকে যায় যে আসলে ফেইসবুক পিক্সেল কি কি কাজ করে। মূলত ফেসবুক পিক্সেলের কাজ হচ্ছে আপনার বিজ্ঞাপন সম্পর্কিত সকল উপাত্ত সংগ্রহ করা। যেমন ধরুন আপনার বিজ্ঞাপন ঠিক কোন বয়সের মানুষ দেখছে এবং সেখান থেকে পণ্য ক্রয় করছে সে সম্পর্কে আপনাকে অবগত করা।
এছাড়া কোন এলাকার মানুষ কোন কোন দিনে পণ্য ক্রয় করছে সে সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য ফেইসবুক পিক্সেল আপনাকে দিয়ে থাকে। মনে করুন যে 16 থেকে 25 বছর বয়সী মানুষ আপনার বিজ্ঞাপন থেকে পণ্য ক্রয় করছেন। এক্ষেত্রে ফেসবুক পিক্সেল আপনাকে এই তথ্যটি দিয়ে থাকে। এর ফলে আপনি আপনার পণ্যের বিজ্ঞাপন গুলো এই বয়সের মানুষের কাছে অধিক পৌঁছে দিতে পারবেন। আবার আপনার ব্যবসায়ের প্রসার আনার জন্য অন্যান্য বয়সের মানুষের জন্য নতুন ধরনের পণ্য নিয়ে আসতে পারবেন।
কিভাবে ব্যবহার করবেন ফেসবুক পিক্সেল?
এখন চলুন জেনে নেওয়া যাক কিভাবে ব্যবহার করবেন ফেইসবুক পিক্সেল। মূলত তথ্যের স্বতন্ত্রতা বজায় রাখতে এর প্রতিটি কোড থাকে ভিন্ন ভিন্ন। কাজেই ফেইসবুক পিক্সেল ইন্সটল করার প্রক্রিয়াটি কিছুটা জটিল। প্রথমে আপনি আপনার Facebook business manager এ লগইন করুন। এরপর ডান দিকের মেনু অপশন এ গিয়ে ড্রপডাউন অপশন থেকে পিক্সেল লেখাটা সিলেক্ট করুন। এখন আপনার সামনে একটি উইন্ডো ওপেন হয়েছে। এখানে create a pixel লেখক অপশনে ক্লিক করবেন। এতে করে আপনার সামনে নতুন আরেকটি উইন্ডো খুলে যাবে।
সেখানে একটি নাম দিবেন যার মাধ্যমে আপনি সহজেই আপমার পিক্সেল আইডেন্টিফাই করতে পারবেন। এরপর আপনার ওয়েবসাইটটির ইউআরএল দিবেন। সবশেষে create লেখা অপশনে ক্লিক করে আপনার পিক্সেল টি তৈরি করে নিবেন। ফেসবুক স্বয়ংক্রিয়ভাবে আপনাকে একটি কোড প্রদান করবে। এরপর এই কোডটি আপনি আপনার ওয়েবসাইটে ব্যবহার করে পিক্সেলের সুবিধা পাবেন।
আপনি তিনটি ভাবে এই কোডটিকে আপনার ওয়েব সাইটে ব্যবহার করতে পারবেন। প্রথমত আপনি নিজেই এই কোডটি আপনার ওয়েব সাইটে ব্যবহার করবেন। দ্বিতীয়ত কোন ওয়েব ডেভলপার দিয়ে কাজটি করিয়ে নিতে পারেন। এবং সর্বশেষে গুগোল ট্যাগ বারে আপনার ফেসবুক পেজ সংযুক্ত করে কাজটি করতে পারবেন।
আপনি যদি নিজেই ফেইসবুক পিক্সেল কোডগুলো আপনার ওয়েবসাইটে ব্যবহার করতে চান সেজন্য আপনাকে কিছু পরিশ্রম করতে হবে। কিন্তু আপনি যদি wix.com বা squarespace থেকে আপনার ওয়েবসাইটটি তৈরি করে থাকেন সে ক্ষেত্রে তেমন কোনো পরিশ্রম করতে হবে না। কারণ এদের নিজস্ব পিক্সেল কোড ব্যবহার এর সুবিধা থাকে। সেখানে পিক্সেল কোডটি টাইপ করে সেভ করে দিলেই হল।
কিন্তু আপনি যদি ওয়ার্ডপ্রেস বা অন্য কোন জটিল মাধ্যমে আপনার ওয়েবসাইটটি তৈরি করে থাকেন সেক্ষেত্রে আপনাকে একটু কষ্ট করতে হবে। এক্ষেত্রে প্রথমে আপনাকে পিক্সেল কোড কপি করার সময় সম্পন্ন স্ক্রিপ্টটি কপি করতে হবে। এরপর আপনার ওয়েবসাইটের এইচটিএমএল এর হেডার অপশনে গিয়ে স্ক্রিপ্টটি পেস্ট করে দিতে হবে। এরপর সেভ অপশন এ গিয়ে সেভ করে দিতে হবে। কিন্তু এই ক্ষেত্রে আপনাকে প্রতিটি উপাত্ত সংগ্রহের জন্য ভিন্ন ভিন্ন ইভেন্ট তৈরি করতে হবে। যেমন আপনি লোকেশন বয়স ইত্যাদি ভেদে বিভিন্ন ধরনের ইভেন্ট তৈরি করতে পারেন।
এখানে আমি ফেসবুক পিক্সেল নিয়ে বিস্তারিত ভাবে আলোচনা করেছি। মূলত আপনার পণ্যের বিক্রি বাড়াতে ফেইসবুক পিক্সেল এর গুরুত্ব বলার অপেক্ষা রাখে না। কাজেই এটি ব্যবহার করে আপনি খুব সহজে যথার্থ অনলাইন মার্কেটিং এর মাধ্যমে টার্গেট অডিয়েন্স বৃদ্ধি করতে পারবেন এবং বাড়াতে পারবেন আপনার পণ্যের বিক্রয়।