টাকা ছাড়া ব্যবসা করা কি সম্ভব? কথায় আছে ব্যবসা করতে লাগে হিম্মত বা সাহস। টাকা তো অনেকেরই আছে কিন্তু সবাই কি ব্যবসা করে সফল হতে পারে? উত্তর হবে নাহ।
আমাদের চারপাশে এমন অনেকেই খুঁজে পাওয়া যায় যারা একবারে শূন্য থেকে শুরু করে সফলতার একবারে চরম শিখরে আরোহণ করেছেন। এমনটা নয় যে তারা কোনকিছু বিনিয়োগ করে নাই, হ্যাঁ তারাও বিনিয়োগ করেছেন তবে সেটা টাকা নাহ বিনিয়োগ করেছেন শ্রম এবং মেধার।
আজ আপনাকে এমন ৭টি টাকা ছাড়া ব্যবসার আইডিয়া বলবো সেগুলো দিয়ে আপনি বিনা ইনভেস্টমেন্টে একটু পরিশ্রমের মাধ্যমে সফলতা লাভ করতে পারবেন। অল্প বয়সে কোটিপতি হওয়ার উপায়।
টাকা ছাড়া ব্যবসা
১. ব্লগিং
দুর্ভাগ্য হলেও এটাই সত্যি যে, বেশির ভাগ মানুষই আমরা মনে করি যে ব্লগিং খুব কঠিন আর সময় সাপেক্ষ ব্যাপার। কিন্তু বিষয়টা মোটেই তেমন কিছু নাহ।
একটা ব্লগ লিখতে হলে খুব বেশি হলে ২/৩ ঘণ্টা সময়ের প্রয়োজন। আর দরকার একটা প্লাটফর্ম যার মাধ্যমে আপনি আপনার ব্লগকে সবার সামনে উপস্থাপন করতে পারেন। বর্তমানে সবচেয়ে জনপ্রিয় দুইটি ব্লগিং প্লাটফর্ম হচ্ছে
WordPress
Blogger
নিজের একটা ডোমেইন এবং হোস্টিং কিনে ওয়েবসাইট বানিয়ে তাতে আপনি আপনার পছন্দের বিষয় নিয়ে আলোচনা করতে পারবেন। ৪ হাজার থেকে ৬ হাজার টাকা খরচ হতে পারে।
টাকা ছাড়া ব্যবসা
আপনি যেই বিষয়টি নিয়ে অনেক বেশি আগ্রহী সেই বিষয়টি নিয়ে নিজের মতামত দিতে পারেন। গুগল অ্যাড-সেন্স এর মাধ্যমে আপনার ব্লগে বিজ্ঞাপন প্রদর্শন করবেন এবং কেউ বিজ্ঞাপনগুলোতে ক্লিক করলে আপনি কমিশন পাবেন।
আরও কিছু উপায়ে ব্লগ থেকে আয় করা যায়। যথা:
অ্যাফিলিয়েট মার্কেটিং
নিজের পণ্য বিক্রি করে আয়
সরাসরি বিজ্ঞাপন প্রকাশ
পেইড রিভিউ
পেইড মেম্বারশীপ করে আয়
২. ই-বুক পাবলিশার
প্রযুক্তির উন্নতির সাথে সাথে মানুষের বই পড়ার ধরনও পাল্টে গিয়েছে। মানুষ এখন বই এর হার্ড কপি কিনে পড়ার চাইতে, সফট কপি বা পিডিএফ আকারে পড়তে বেশি দেখা যায়।
এর অনেকগুলো সুবিধা রয়েছে:
প্রধান আর প্রথম সুবিধা হচ্ছে, এতে খরচের পরিমাণ অনেক কম আর এটিতে বহন করতেও সুবিধা।
মোবাইল বা ল্যাপটপে পিডিএফ ফাইল আকারে এটি রেখে দেওয়া যায়। যখন ইচ্ছা তখন পড়েও নেওয়া যায়।
আপনি যদি ই-বুক পাবলিশার হতে চান তাহলে, সবার আগে অ্যামাজনে বা অন্য কোন ই-কমাস সাইটে নিজের একটা একাউন্ট খুলে সেখানে বইগুলো স্টোর করে রাখতে হবে।
ই-বুক লিখেও আপনি খুব সহজেই মাসে ২০-৫০হাজার টাকা উপার্জন করতে পারেন। যদি আপনার ই-বুকের ট্রপিকটা ইন্টারেস্টিং হয়।
আর আপনি কাদের জন্য লিখছেন সেটাও সেটাও একটা মুখ্য বিষয় ।বাচ্চাদের জন্য লিখলে সেটাই এক রকম হবে, তরুণদের জন্য লিখলে সেটাও এক রকম বই হবে ।
বর্তমানে টেন মিনিট স্কুল ই-বুক বিক্রি করে অনেক টাকা আয় করেছে। এছাড়া, প্লে-স্টোরেও এখন ই-বুক বিক্রি করার অনেকগুলো অ্যাপ রয়েছে।
৩. ভার্চুয়াল সহকারী
আপনি যদি ভার্চুয়াল লাইফ বা সোশ্যাল মিডিয়াতে অনেক বেশি দক্ষ হন তাহলে, এই পেশাটি আপনার জন্য। এখানে আপনাকে যে কাজটি করতে হবে তা হলও অন্যের বা কোন কোম্পানির সোশ্যাল মিডিয়াগুলোকে ম্যানেজ করতে হবে।
সেরা ৫টি ফেসবুক মার্কেটিং ফ্রি কোর্স
ফেসবুকে কিভাবে টাকা আয় করা যায়
প্রয়োজন অনুযায়ী সেখানে আপনার পোস্ট করতে অথবা ইউটিউবে ভিডিও শেয়ার করতে হবে। আপনাকে সোশ্যাল মিডিয়ার নিত্য নতুন আপডেট সম্পর্কে জানতে হবে এবং সঠিক নিয়মগুলো অনুসরণের মাধ্যমে মাসে প্রায় ৫০ হাজার থেকে ৮০ হাজার টাকা উপার্জন করতে পারেন।
৪. গ্রাফিক্স ডিজাইনার
আপনার কি আঁকি-ঝুঁকিতে জোক বেশি? আপনি কি সময় পেলেই কম্পিউটারে পেইন টুল নিয়ে আঁকতে বসে যান? তাহলে, গ্রাফিক্স ডিজাইনটি আপনার জন্য।
অন্যান্য পেশার থেকে এই পেশা যেমন নিরাপদ তেমনি ঝামেলা-বিহীন এবং ক্রিয়েটিভও বটে। আর সেলারির কথা একদম শুরুর অবস্থায় সেটা হবে ২০ হাজার থেকে ২৫ হাজার টাকা। এক্সপার্ট হলে আপনার ভালো পোর্টফলিও হলে সেটা ১ লাখ টাকার উপরে হবে।
কয়েকজন মিলে শুরু করে দিতে পারেন গ্রাফিক্স ডিজাইন সার্ভিসের ব্যবসা। আউটসোসিংয়ের মাধ্যমে বিদেশ থেকে কাজের অর্ডার নিতে পারেন। এছাড়া, দেশীয় কাজের অর্ডারগুলোও নিতে পারেন।
ডিজাইন তৈরি করে সেগুলো বিক্রি করেও অনেক সাইট থেকে আয় করা যায়। যেমন:
GraphicRiver
Shutterstock
VectorStock
Freepik
Adobe Stock
৫. ফিটনেস এন্ড ইয়োগা ট্রেইনার
বর্তমান সময়ে আমরা নিজেদের ফিটনেস নিয়ে অনেক বেশি সচেতন। আমরা সবসময় চাই নিজেদের সব সময় ফিট ও স্লিম রাখতে। তাইতো কম বেশি সবাই আমরা জিমে যাই ব্যায়াম করতে।
প্রতিটি জিমেই দুই তিনজন করে ফিটনেস ট্রেইনার থাকে। তারা সঠিক নির্দেশনার মাধ্যমে আমাদেরকে ব্যায়াম করতে সাহায্য করে।
আবার একই ভাবে ইয়োগো মনের প্রশান্তি বাড়ায় এবং দুশ্চিন্তা দূর করে মনের আরও সতেজতা বাড়ায়। ফলে ইয়োগো ট্রেইনারাদেরও অনেক চাহিদা রয়েছে।আপনি চাইলে একটা কোর্স করে সহজেই এই পেশায় যুক্ত হইতে পারেন।
ফিটনেস ট্রেইনার
প্রাথমিকভাবে বিনা পুঁজিতে ট্রেইনার হিসাবে সেবা বিক্রির মাধ্যমে এই ব্যবসা শুরু করতে পারেন। পরবর্তীতে জিম বা রুম ভাড়া করে শুরু করে দিতে পারেন।
৬. ড্রপ-শিপিং
ড্রপ-শিপিং হচ্ছে শূন্য বিনিয়োগের সাথে আরও একটি দুর্দান্ত ব্যবসায়িক ধারণা, যা জনপ্রিয় হয়ে উঠছে দিন দিন। অনলাইনে আপনার নিজের ড্রপ-শিপিং ব্যবসা তৈরি করা মোটামুটি সহজ।
প্রথমে আপনি যে পণ্যগুলি ড্রপশিপিংয়ের মাধ্যমে বিক্রয় করতে চান তা সনাক্ত করতে হবে। পরবর্তী পদক্ষেপ হলও এই পণ্যগুলির সরবরাহকারী এবং নির্মাতাদের কাছে যোগাযোগ করা এবং একটি চুক্তি চূড়ান্ত করা।
আপনি চাইলে অনলাইনের মাধ্যমে লেনদেন সম্পন্ন করতে পারেন। গ্রামীণ জনপদে এখন ইন্টারনেটের সহজলভ্যতার কারণে খুব সহজেই সব অঞ্চলের ক্রেতা-গন এই নেটওয়ার্ক এ খুব সহজেই যুক্ত হতে পারে। এতে করে অল্প পরিশ্রমের পাশাপাশি বেতনের পরিমাণও অনেক বেশি ।
৭. অ্যাফিলিয়েট মার্কেটিং
সহজভাবে বলতে গেলে অ্যাফিলিয়েট মার্কেটিং হচ্ছে অন্যজনের বা অন্য কোম্পানির পণ্য বিক্রি করে দেওয়া। বর্তমান সময়ে সবকিছুই অনলাইন ভিত্তিক হয়ে উঠার কারণে মানুষজন এখন ঘরে বসেই তাদের পছন্দের পণ্য বা প্রোডাক্ট অনলাইনে অর্ডার করে।
আপনি চাইলে নিজের ইউটিউব চ্যানেল বা ওয়েব সাইটে সেই পণ্য গুলোকে প্রচার করার মাধ্যমে একটা নিদিষ্ট কমিশন পেতে পারেন। সেটা ৮% – ১০% পর্যন্ত হতে পারে।
বাজারজাত-কারী হিসাবে আপনি যে পণ্যগুলোকে বিক্রি করতে চান সেগুলো নিয়ে প্রথমে লিখবেন তারপর অনুমোদিত লিংকগুলো আপনি তাদের সাজেস্ট করাবেন আর তারা যদি এই লিংককে ক্লিক করে তবেই আপনি কমিশন পাবেন।
এছাড়া, অ্যামাজন এসোসিয়েট এটি মূলত অ্যাফিলিয়েট মার্কেটিং এর মতো কাজ করে। অ্যামাজনের একটি খুব লাভজনক কমিশন প্রোগ্রাম রয়েছে, যেখানে প্রকাশকরা কেবল তাদের ওয়েবসাইটে লোকাল উল্লেখ করে প্রচুর অর্থ উপার্জন করতে পারে এবং এই প্রোগ্রামটিতে যতবার পণ্য ক্রয় করা হবে আপনি ততবার এর থেকে কমিশন পেতে থাকবেন।
আলিবাবাতে পণ্য বিক্রি করার উপায়
এর জন্য প্রথমেই আপনার নিজের একটি ওয়েব সাইট থাকতে হবে এবং সেখানে আপনার নির্বাচিত পণ্যগুলো রাখতে হবে।
সেখানে লিংক রাখা হবে এবং যদি কোন ব্যবহারকারী যদি ঐ লিংকে প্রবেশ করে তবেই আপনি সেখান থেকে একটা নিদিষ্ট পরিমাণ কমিশন পাবেন। মাসে প্রায় ৫০ হাজারের মতো টাকা খুব সহজেই এখান থেকে উপার্জন করতে পারবেন।
পরিশেষে
এই ছিল টাকা ছাড়া ব্যবসা আইডিয়া নিয়ে সংক্ষিপ্ত লেখা। টাকা ছাড়া বিনিয়োগ মানে এটা নয় যে একেবারেই বিনিয়োগ করতে হয় নাহ। শূন্য বিনিয়োগ মানে এটা যে, টাকা ছাড়া আপনাকে সব বাকি সব কিছুই বিনিয়োগ করতে হবে। কিভাবে একজন সফল উদ্যোক্তা হওয়া যায়?
Comments (No)