Sabbir is successful in freelancing by buying a computer with tuition money
টিউশনির টাকায় কম্পিউটার কিনে ফ্রিল্যান্সিংয়ে সফল সাব্বির/Sabbir is successful in freelancing by buying a computer with tuiti0n money করোনা ভাইরাসের সংক্রমণ যখন বিশ্বজুড়ে ছড়িয়ে পড়েছিলো, তখন কর্ম হারায় লাখ লাখ মানুষ। ঠিক তখন অবসর সময়কে কাজে লাগিয়ে নিজেকে স্বাবলম্বী করতে ফ্রিল্যান্সিংয়ে মনোনিবেশ করেন সাব্বির আহমেদ।
কিশোর বয়স থেকেই তার প্রবল ইচ্ছে ছিলো কম্পিউটার প্রোগ্রামিং শেখার। আর্থিক টানাপোড়েনে কম্পিউটার কেনার সামর্থ্য হয়নি। দীর্ঘদিন টিউশনির টাকা জমিয়ে এবং বাবার কাছ থেকে কিছু টাকা নিয়ে এসএসসি পরীক্ষার পর কম্পিউটার কেনেন তিনি। এরপর গুগল, ইউটিউবসহ বিভিন্ন মাধ্যমে ওয়েব ডিজাইনের কাজ শেখা শুরু করেন।
স্রেফ শখের বশে ডিজাইনিং শিখলেও বছরখানেক পর হঠাৎ তার মনে হয়, যতটুকু শিখেছেন তা কাজে লাগিয়ে উপার্জন করা যায় কি-না। এই ভাবনা থেকেই ইউটিউবে টিউটোরিয়াল দেখে ফাইবারে একাউন্ট খুলে কাজ শুরু করেন। অভিজ্ঞতা না থাকায় একমাস অনবরত চেষ্টার পর মাত্র দুটি কাজ পান তিনি। হাল না ছেড়ে চেষ্টা চালিয়ে যাওয়ায় ধীরে ধীরে কাজের পরিমাণ বাড়তে থাকে তার।
তিনি কাজ করছেন ফ্রন্ট অ্যান্ড ডেভেলপার হিসেবে। বিভিন্ন ব্যক্তি কিংবা প্রতিষ্ঠানের ওয়েবসাইট ডিজাইনের কাজ করেন। পাশাপাশি ওয়েবসাইটের বিভিন্ন বাগ তথা ত্রুটির সমাধান করেন তিনি। সিকিউরিটি সমাধান বা ডাটাবেইজ রিলেটেড সমস্যা সমাধান, সিএসএস রিলেটেড সমস্যা সমাধানে রয়েছে তার দক্ষতা।
ফ্রিল্যান্সিং এর শুরুর গল্প জানতে চাইলে তিনি বলেন, ফাইবারে কাজ শুরু করার পর কিছু সমস্যার সম্মুখীন হচ্ছিলাম। কাজ বুঝে নেওয়ার সময় ক্লায়েন্টের সঙ্গে কথোপকথনে সমস্যা হচ্ছিলো। ধীরেধীরে ইংরেজি বোঝা ও বলায় দক্ষতা অর্জন করে সমস্যাগুলো কাটিয়ে উঠি। দীর্ঘদিন কোনো সমস্যা ছাড়াই কয়েকশো কাজ সম্পন্ন করি। এভাবেই চলছিলো।
হঠাৎ ছোট একটা ভুলের জন্য প্রায় দেড়শত ক্লায়েন্ট রিভিউসহ আমার একাউন্টটি ডিজেবল হয়ে যায়। যা ছিলো আমার ফ্রিল্যান্সিং ক্যারিয়ারের সবচেয়ে বড় হোঁচট। এরপর লিকংডইন, ফ্রিলান্সার ডটকমসহ বিভিন্ন মাকেট প্লেসে টুকটাক কাজ করেছি। কিন্তু আশানুরূপ কাজ না পেয়ে কিছুটা হতাশ হই। ফ্রিল্যান্সিংয়ে ব্রেক দিয়ে পড়াশোনায় মনোনিবেশ করি।
তিনি আরও বলেন, শুরুতে নিজেই নিজের মেন্টর হয়ে কাজ করেছি। কিন্তু ফাইবার অ্যাকাউন্ট নষ্ট হওয়ায় দিশেহারা হয়ে গিয়েছিলাম। এমন দুঃসময়ে ফেসবুকে পরিচয় হয় মোফাজ্জল ইসলাম নামক এক ভাইয়ের সঙ্গে। তার সহায়তা ও দিকনির্দেশনায় ২০২০ সালে করোনাকালে আবার নতুন করে ফাইবারে একাউন্ট তৈরি করে কাজ খোঁজা শুরু করি। সাধারণত নতুন একাউন্টে রিভিউ না থাকায় কাজ পাওয়া কষ্টসাধ্য ব্যাপার।
সাব্বির বলেন, অবাক হলেও সত্য, নতুন অ্যাকাউন্ট খোলার সাত দিনের মধ্যে কাজ পেয়ে যাই। এরপর নতুন উদ্যমে কাজ শুরু করি। এক বছরে লেভেল ২ সেলার হয়ে যাই ফাইবারে। পাশাপাশি কিছু দেশীয় ক্লায়েন্টের কাজ করি এবং মাসিক চুক্তিভিত্তিক কিছু ক্লায়েন্ট পেয়ে যাই আমেরিকা এবং কানাডার। এরপর থেকে আর পিছনে ফিরে তাকাতে হয়নি। এছাড়াও সোশ্যাল মিডিয়া ইনফ্লুয়েন্সার খালিদ ফারহান ভাইয়ের সঙ্গে কাজ করে নিত্য-নতুন কাজ শিখছি। তার সমর্থন, দিকনির্দেশনা আমাকে অনুপ্রেরণা জোগায়।
ফাইবারে দেশি-বিদেশি কাজের পাশাপাশি বিভিন্ন জনপ্রিয় কিছু ওয়েবসাইট ডিজাইন করে প্রশংসা কুড়িয়েছেন সাব্বির। কাজ করেছেন দেশের শিল্পবিকাশের অন্যতম সহযোগী ‘টোটাল বিজনেস গ্রুপ’ এর সাতটি ওয়েবসাইট নিয়ে। এছাড়া নরসিংদীর আঞ্চলিক নিউজ পোর্টাল ‘ নরসিংদীর কন্ঠস্বর’ সাইটটি তিনি ডিজাইন করেছেন।
ক্লায়েন্টকে খুশি রাখার বিষয়ে তিনি বলেন, ক্লায়েন্টের কাজ ডেডলাইনের আগে কমপ্লিট করে ডেলিভারি দেওয়ার চেষ্টা করি। অর্থাৎ কাজ কমপ্লিট করার জন্য যতদিন সময় নেই, তার ২-১ দিন আগেই কাজটা কমপ্লিট করে দেই । এতে করে ক্লায়েন্টের মনে পজেটিভ থিঙ্কিং হয়। পাশাপাশি নেক্সট প্রজেক্টে আমার কাজ পাবার সম্ভাবনা তৈরি হয়। তাছাড়া প্রজেক্ট শেষ হওয়ার পরেও ক্লায়েন্টের সঙ্গে যথাসম্ভব যোগাযোগ রাখি। ফলে কখনোই আমার কাজ ছাড়া বেকার বসে থাকতে হয় না।
ফ্রিল্যান্সিংয়ে ব্যস্ততার মাঝেও একটি বেসরকারি কোম্পানিতে চাকরি করছেন সাব্বির। পাশাপাশি বাবার ইচ্ছে অনুযায়ী ফ্রিল্যান্সিং এর পাশাপাশি পড়াশোনা করছেন স্টেট ইউনিভার্সিটি অব বাংলাদেশে ফুড টেকনোলজি বিষয়ে।
সাহসী এবং উদ্যমী তরুণদের নিয়ে কাজ কাজ করতে চান তিনি। তিনি চান, তরুণদের বেকারত্বের অবসান হোক। তরুণরা তাদের কর্মদক্ষতা বাড়িয়ে বেকারত্ব দূর করে কর্মসংস্থান সৃষ্টি করুক। তিনি বলেন, প্রবল আত্মবিশ্বাস আর ধৈর্য থাকলে ফ্রিল্যান্সিংয়ে ক্যারিয়ার গড়া সম্ভব। তবে কখনো কয়েক মাসের ফ্রিল্যান্সিং কোর্স করে বিরাট ফ্রিল্যান্সার হয়ে যাওয়ার স্বপ্ন দেখবেন না। অক্লান্ত চেষ্টা চালিয়ে গেলে এক সময় নিজের যোগ্যতাই আপনার অবস্থান নির্ধারণ করবে।
দ্বিতীয়ত, ফ্রিলান্সিং করে অল্পদিনেই টাকার জন্য মরিয়া হয়ে যাওয়া নিতান্তই বোকামি। অন্তত দেড়-দুই বছর নিরবিচ্ছিন্নভাবে কাজ করে যাওয়া উচিৎ। পাশাপাশি সুযোগ থাকলে নিজের কাজ সংক্রান্ত নিত্যনতুন কোর্স করা। এতে করে সঠিক গাইডলাইন পাওয়া যায়। পাশাপাশি একজন ভালো ফ্রিল্যান্সার হতে হলে অবশ্যই কমিউনিকেশন স্কিল ভালো থাকা জরুরি। সে ক্ষেত্রে ইংরেজি শেখার বিকল্প নেই।