তরুণরা দেশের সম্পদ। তাই বুদ্ধি ও কৌশলের সাথে পরিশ্রমের মাধ্যমে নিজেকে দেশের সম্পদে রুপান্ত করা আব্যশক। কিন্তু তারা সম্পদে রূপান্তর না হয়ে দেশের বোঝা হয়ে যান। এমন সংকটে ২৮ বছর বয়সেই সফল হয়েছেন তরুণ উদ্যোক্তা প্রকৌশলী মো. মনসুর আলম মুন্না। তিনি নির্মাতা প্রতিষ্ঠান হেক্সাগন ইঞ্জিনিয়ারিং অ্যান্ড কনসালটেন্সি সার্ভিস লিমিটেডের চেয়ারম্যান। তিনি চাকরির পেছনে না ছুটে এখন অন্যকেই চাকরি দিচ্ছেন। মেধাবী এ তরুণ উদ্যোক্তাকে নিয়ে লিখেছেন রিফাত কান্ত।
যেভাবে শুরু: জন্মের ছয় মাস পর বাবার চাকরির সুবাদে কক্সবাজারের উখিয়ায় স্থানান্তর এবং বেড়ে ওঠা। উখিয়ায় প্রাথমিক শিক্ষার হাতেখড়ি ও বাল্যকালের পুরোটা সময় কাটান। ২০০৩ সালের শেষের দিকে পিতৃভূমি চাঁদপুরে ফিরে আসেন। ভর্তি হন ফরক্কাবাদ মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে। ২০০৭ সালে মাধ্যমিকের গণ্ডি পেরিয়ে ভর্তি হন ঢাকা পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটের সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিংয়ে। মাধ্যমিকে পড়ার সময় সৃজনশীল কিছু করার তাড়না অনুভব করেন। উদ্যোক্তা বা ব্যবসায়ী হিসেবে কিছু করার ধারণা মাথায় জেঁকে বসে। মাধ্যমিক পরীক্ষার বিরতিতে উদ্যোক্তা হিসেবে নিজগ্রামে প্রতিষ্ঠা করেন পোল্ট্রি ফার্ম, তবে সেটা বেশি দিন না করে ঢাকায় পড়াশোনায় মনোনিবেশ করেন।
অনুকূল পরিবেশ: মুন্না যখন ব্যবসায় নামেন; তখন পার্শ্ব-পরিবেশ অনুকূলে ছিল না। বাবা-মা দু’জনেই চাকরিজীবী। তাদের পরিবারের কেউ আগে ব্যবসার সাথে জড়িত ছিলেন না। অনভিজ্ঞতা ও নানা ভুল সিদ্ধান্তের কারণে যখন ধুঁকছিলেন; তখন অনেকেই চারপাশ থেকে কটূবাক্য তীরের মতো ছুঁড়তে থাকেন। তাদের সামনে নিজেকে প্রমাণ করার জন্য ব্যবসার বিকল্প কিছুই চিন্তা করতে পারলেন না। ধৈর্য, কঠোর পরিশ্রম ও মেধা দিয়ে স্বপ্ন পূরণে ব্যবসাই বেছে নিলেন।
উদ্যোক্তা হওয়ার চিন্তা: নিজেকে তৈরি করতে পড়াশোনার পাশাপাশি বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে চাকরি করেন এবং সুযোগের অপেক্ষায় প্রহর গুনতে থাকেন। ২০১৪ সালে বিএসসি ইঞ্জিনিয়ারিংয়ে পড়ার সময় একটি প্রতিষ্ঠানের প্রজেক্ট ইঞ্জিনিয়ার তাকে একটি চ্যালেঞ্জিং প্রজেক্টের দায়িত্ব দেন। সেই সাথে আরো বলেন, ‘এ প্রজেক্ট করতে গেলে লোকসান হবে এবং সে লোকসানের টাকা উনি দিয়ে দেবেন।’ তখন তিনি তার বন্ধুর মাধ্যমে লোকবল সংগ্রহ করে নিজ দায়িত্বে কঠোর তত্ত্বাবধানে নির্ধারিত তারিখের আগেই সম্পন্ন করেন। তিনি লোকসানি প্রজেক্টকে কিছুদিনের ব্যবধানে লাভজনক প্রজেক্টে রূপান্তর করেন। তখন থেকেই তিনি ধীরে ধীরে এগোতে থাকেন।
প্রতিবন্ধকতা জয়: কেউ যখন জিজ্ঞেস করতো, ‘পড়াশোনার পাশাপাশি কী করেন?’ তখন তিনি বলতেন, ‘ব্যবসা করি।’ তখন তারা ব্যাপারটা স্বাভাবিক বা পজেটিভভাবে না নিয়ে আড়চোখে তাকিয়ে বলতো, ‘এতকিছু না করে টিউশনি করলেই তো পারো।’ উদ্যোক্তা হতে উৎসাহ না দেওয়া এবং নানাভাবে হেয় করার এমন মানসিকতা অনেক সময় তাকে মানসিকভাবে বিপর্যস্ত করে তুলতো।
ভালো লাগা: বই পড়তে এবং লিখতে তার খুব ভালো লাগে। বিশেষ করে সাহিত্য তাকে নেশার মতো টানে। যদিও উদ্যোক্তা হতে গিয়ে সাহিত্যে কিছুটা ভাটা পড়েছে। তবুও চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন সাহিত্যে আরো মনোযোগী হতে।
তরুণদের জন্য: বিশ্ব অর্থনীতিতে ভূমিকা রাখতে উদ্যোক্তা তৈরির বিকল্প নেই। আগামীর বাংলাদেশ তরুণ উদ্যোক্তাদের ওপর নির্ভরশীল। তাই দেশ ও জাতির উন্নয়নে তার এ ক্ষুদ্র প্রয়াস। তিনি সবসময়ই আশাবাদী। তার স্বপ্নগুলো বাস্তবায়নে কঠোর পরিশ্রমে বিশ্বাসী তিনি। বর্তমানে তার নানা প্রতিষ্ঠানে ১২০ জন প্রকৌশলী, কর্মকর্তা ও অসংখ্য শ্রমিক কাজ করছেন। তিনি স্বপ্ন দেখেন, ২০২২ সাল নাগাদ ৩ হাজার প্রকৌশলী, কর্মকর্তা ও ২০ হাজার শ্রমিকের স্থায়ী কর্মসংস্থান হবে।
যেখানে যুক্ত আছেন: তিনি নির্মাণ ব্যবসা ছাড়াও বাগেরহাটে ৯ একর জমির ওপর সমন্বিত খামার প্রতিষ্ঠা করেছেন। সেখানে ডিম ও মাংস উৎপাদনের জন্য ১ লাখ হাঁস, দুগ্ধ ও দুগ্ধজাত পণ্য ও মাংস উৎপাদনের জন্য ১ হাজার গরু পালন করা হচ্ছে। তিনি চেয়ারম্যান হিসেবে যুক্ত আছেন ডি স্মার্ট-অনলাইন, ডি স্মার্ট টেক্সটাইলস লিমিটেড, ডি-ইভেন্টস, গ্র্যাপভিউ, দ্য বেঙ্গল টেলিগ্রাফ, প্যারাসেল সফটওয়্যারসে। এমনকি বর্জ্য ব্যবস্থাপনা, বর্জ্য রিসাইক্লিনিং প্ল্যান্ট, বর্জ্য ভিত্তিক গ্যাস উৎপাদনের সাথে যুক্ত হতে কারখানা স্থাপনের কাজ চলছে। এছাড়াও তিনি ইউরোপিয়ান ইউনিভার্সিটি অব বাংলাদেশর প্ল্যানিং অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট বিভাগের ডিরেক্টর হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন।
যা কিছু অর্জন: ‘বাংলাদেশ ওপেন সোর্স নেটওয়ার্ক ও চাকরি খুঁজবো না চাকরি দেব’ ২০১৭ সালে তার একটি উদ্যোগকে সেরা উদ্যোগ হিসেবে পুরস্কৃত করে। এছাড়া হাভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ে বাংলাদেশে বর্জ্য ব্যবস্থপনা নিয়ে গবেষণাপত্র গৃহিত হয়।
তিনি বলেন: মুন্না বলেন, ‘দেশ ও দেশের বাইরে বেশকিছু প্রজেক্টের কাজ চলছে; সে প্রজেক্টগুলো প্রতিশ্রুতি অনুসারে হস্তান্তর করার জন্য কাজ করছি। ভারতের পশ্চিমবঙ্গে আমাদের সবচেয়ে বড় প্রজেক্ট চলমান। ভারতে বিভিন্ন ধরনের ১৪২৪টি ভবনে প্রায় ১৬০০ কোটি রুপি মূল্যমানের একটি প্রজেক্ট আমাদের দেশ ও কোম্পানির জন্য গর্বের বিষয়।
Comments (No)