জীবিকার জন্য ব্যবসার চেয়ে উত্তম আর কিছু নেই। আপনি যদি উদ্যোক্তা হতে চান, তাহলে আজকের আর্টিকেল টি আপনার জন্য। ব্যবসায় আপনার সফলতা অনেকটাই নির্ভর করে আপনার জন্য কোন ব্যবসা সঠিক তা বাছাই করার উপর। বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে আজ আমরা এমন কিছু ব্যবসার আইডিয়া নিয়ে আলোচনা করবো যা যে কোন মেয়ে এবং গৃহিণীরা ঘর থেকেই শুরু করতে পারেন। 🙂
আপনার জন্য কোন ব্যবসা টি সঠিক তা বাছাই করা একটি বড় ডিসিশন। তবে এই বিষয় টা নিয়ে দুশ্চিন্তা করবেন না। ব্যবসার সিদ্ধান্ত নেওয়ার আগে নিজেকে এই প্রশ্ন গুলো করুন –
- আপনার ব্যবসার উদ্দেশ্য কি? বা আপনি এর থেকে ঠিক কিরকম ফলাফল চান?
- কোন বিষয় নিয়ে আপনি উৎসাহ বোধ করেন?
- আপনার দক্ষতা এবং দুর্বলতা কি কি?
- ব্যবসায় আপনি কতটুকু সময় দিতে পারবেন?
মেয়েদের জন্য ব্যবসার আইডিয়া
“এখানে ০১ নাম্বার টি ই সেরা বাকিগুলো ভালো নয়, ব্যাপারটা এরকম না। প্রতিটি ব্যবসার ধারণা ব্যাক্তি বিশেষে সেরা। যার সাথে যেটা যায়, তার জন্য সেটাই সেরা।”
1. মেয়েদের পোষাক বিক্রয়
পোষাক ব্যবসা মেয়েদের জন্য এখন একটি ট্রেনডিং (Trending) ব্যবসা। এটা কখনোই ট্রেন্ড থেকে সরবে না। অনেকেই এই ব্যবসাটি ঘর থেকে শুরু করে এখন লক্ষাধিক টাকা আয় করছেন। খুব কম ইনভেস্ট দিয়ে এই ব্যবসা টি শুরু করা যায়।
আপনার কাছে পণ্য থাকলে মানুষ কিনবেই। আপনার শুধু লাগবে ইচ্ছা শক্তি আর একটু ধৈর্য। যে ধরনের পণ্য নিয়ে শুরু করতে পারেন –
- মেয়েদের টি – শার্ট
- প্যান্ট / লেগিংস্ (Leggings)
- অন্তর্বাস (Lingerie)
- ফ্যাশনেবল মোজা (Fashionable Socks)
- হুডি (Hoddies)
- শাড়ি, ইত্যাদি।
আপনি ব্যবসা টি বাসায় থেকে আপনার পাড়া প্রতিবেশীদের থেকে শুরু করতে পারেন। ভালো পণ্য দিতে পারলে আসতে আসতে পরিচিতি বাড়বে এবং কাস্টমার বাসায় এসে কিনে নিয়ে যাবে।
এছাড়া আপনি অনলাইনে ফেসবুক পেইজ বা অনলাইন যে কোন প্ল্যাটফর্ম (যেমন – daraz.com.bd) এর মাধ্যমেও শুরু করতে পারেন।
2. খাবারের গাড়ি
আপনি যদি ভালো রান্না পারেন, তাহলে খাবারের ব্যবসা করতে আপনাকে কেউ আটকাতে পারবে না।
আপনি যেই খাবারের আইটেম গুলো সবচেয়ে ভালো পারেন কিংবা যেই খাবারের চাহিদা রয়েছে আপনার এলাকায়, সেগুলো নিয়ে খুব কম ইনভেস্টে একটি খাবারের গাড়ি বা ভ্যান এর ব্যবসা শুরু করতে পারেন। এটি খুবই লাভবান একটি ব্যবসা। একটি ফুড ভ্যান থেকে মাসে ১৫ থেকে ৩০ হাজার টাকা পর্যন্ত আয় করা যায় সব খরচ দিয়ে।
আপনার শুধু একজন লোক ঠিক করতে হবে যে আপনার খাবারের গাড়িটি পরিচালনা করবে এবং বিক্রি করবে। আপনি শুধু চাহিদা অনুযায়ী খাবার তৈরি করে গাড়িতে পৌঁছে দিবেন এবং দিন শেষে হিসেব নিবেন।
3. দর্জি (Tailor) বা সেলাই ব্যবসা
আপনি যদি সেলাই বা ডিজাইন করা পছন্দ করেন এবং এই বিষয়ে একটু দক্ষতা থাকে, তাহলে এই মুহূর্তে একটি মেশিন কিনে সেলাই ব্যবসা শুরু করাই সবচেয়ে বুদ্ধিমান এর কাজ হবে।
আপনার দক্ষতার উপর নির্ভর করে আপনি বিভিন্ন অর্ডার নিতে পারেন। যেমন – থ্রি পিস, নকশী কাথা, বাচ্চাদের পোষাক ইত্যাদি সেলাই করা বা মেরামত করা।
আপনার দক্ষতা বাড়ার সাথে সাথে আপনার গ্রাহক বাড়বে। ন্যায্য মূল্যে ভালো সার্ভিস দিতে পারলে কাস্টমার খুশি থাকবে এবং আপনি কখনো কাস্টমার হারাবেন না। পরবর্তী তে আপনি আপনার সাথে আরো মেয়েদের ট্রেনিং দিয়ে আপনার ব্যবসা বড় করতে পারেন।
4. হোম চাইল্ড কেয়ার (Home Child Care)
আপনি যদি বাচ্চাদের ভালোবাসেন বা আপনার নিজের বাচ্চা থাকে তাহলে আপনি নিজের বাচ্চার সাথে অন্য বাচ্চাদের যত্নের জন্য বাসায় চাইল্ড কেয়ার ব্যবসা শুরু করতে পারেন।
যে সকল পরিবারে স্বামী স্ত্রী দুজন ই চাকরী করেন, তারা তাদের বাচ্চার দেখাশোনার জন্য একটি নিরাপদ মানুষ এবং নিরাপদ জায়গা খুঁজেন। আপনি যদি তাদের এই চাহিদা পূরণ করতে পারেন, তাহলে তাদের মাধ্যমে আপনি অনেক টাকা আয় করতে পারবেন। শহরে এই ব্যবসা টি একটি উঠতি ব্যবসা এবং এবং দিন দিন মেয়েরা যতো কর্মমূখী হচ্ছে, ততো এই সার্ভিস এর চাহিদা বাড়ছে।
5. Yoga বা যোগব্যায়াম শেখানো
আধুনিকতার সাথে সাথে মানুষের মানুষের এর প্রতিনিয়ত স্বাস্থ্য সচেতনতা বাড়ছে। অনেক মানুষ ই এখন Yoga বা যোগব্যায়াম করতে চায় নিজেকে ফিট এবং সুস্থ রাখার জন্য। আপনি ও যদি তাদের একজন হয়ে থাকেন এবং Yoga পছন্দ করে থাকেন, তাহলে এটা অন্যদের শেখানোর মাধ্যমে ভালো আয় করতে পারেন।
এটার জন্য বড় কোন স্টুডিও দরকার হবে না। আপনার নিজের বাসায় একটা রুমে কিছু জায়গা নিয়ে শুরু করতে পারেন। আপনার প্রতিবেশী রা হবে আপনার প্রথম কাস্টমার।
এটা তে অনেক সময় দেওয়ার প্রয়োজন হয় না। এটার পাশাপাশি আপনি অন্য ব্যবসা ও করতে পারেন।
6. বিউটি পার্লার
সৌন্দর্যের গুরুত্ব মেয়েরা ভালো ভাবেই বুঝে। এজন্য মেয়েদের জন্য সবচেয়ে সফল ব্যবসা গুলোর তালিকায় বিউটি পার্লার অন্যতম।
বিউটি পার্লার মানেই আপনাকে কোন কমার্শিয়াল এলাকায় জায়গা নিতে হবে বা বড় পুঁজি লাগবে এটা ভুল ধারণা।
আপনি যদি এই বিষয়ে কাজ জানেন এবং আত্মবিশ্বাস থাকে, তাহলে আপনি ঘরে একটা রুম নিয়ে এটা করলেও অনেক টাকা আয় করতে পারবেন। এখান থেকে একটা সময়ে বড় জায়গা নিয়ে বিউটি পার্লার করার পুঁজিও জমিয়ে ফেলতে পারবেন।
7. হাতে তৈরি শিল্প (Hand made Craft)
মানুষ প্রতিনিয়ত হাতে তৈরি সামগ্রীর (ব্যাগ, ঝুড়ি, জুয়েলারি, উপহার ইত্যাদি) দিকে ঝুঁকছে এটার অনন্যতা‘র (Uniqueness) জন্য।
আপনি যদি বিভিন্ন উপকরণ দিয়ে দারুণ সব শৈল্পিক জিনিস বানাতে পারেন, তাহলে এটা আপনার অনেক বড় ইনকাম সোর্স হতে পারে।
এর জন্য আপনার দরকার হবে একটি ফেসবুক পেইজ যেটার সাহায্যে আপনি কাস্টমার পাবেন।
আপনি প্রথমে একা ই শুরু করতে পারেন। একবার যদি মানুষের আপনার কাজ পছন্দ হয়ে যায়, তাহলে আর কখনো পেছনে তাকাতে হবে না। ব্যবসা বড় হলে চাহিদা বাড়বে। তখন আপনি আপনার প্রোডাকশন বাড়াতে লোক নিয়োগ দিবেন। এভাবেই বড় হতে থাকবে ব্যবসা।
8. ইউটিউবার (YouTuber)
ইউটিউবার বর্তমানে একটি বহুল আলোচিত শব্দ। ইউটিউব এ প্রতিদিন একবার হলেও ভিজিট করেনা, এমন মানুষ খুব কমই আছে।
আপনি যদি ভিডিও বানাতে পছন্দ করেন, তাহলে আজ থেকেই একটি ইউটিউব চ্যানেল খুলে সেখানে আপনি আপনার মতো করে ভিডিও আপলোড করতে পারেন। সেটা যেকোন ভিডিও হতে পারে যেমন – কোন ট্রেনিং, প্রোডাক্ট রিভিউ, খাবার রিভিউ, ট্রাভেল ভিডিও, রান্না ইত্যাদি অগণিত ভিডিও আইডিয়া রয়েছে ইউটিউব এর জন্য।
প্রথম দিকে আপনি ইনকাম করবেন না। রেগুলার ভিডিও আপলোড করতে থাকবেন। তাহলে আপনার ভিউ এবং সাবস্ক্রাইবার বাড়বে। তারপর একটা সময়ে গুগল অ্যাডসেন্স এর মাধ্যমে ইনকাম শুরু হবে এবং শুরু হলে আর থামার সম্ভাবনা তেমন নেই।
9. খাবার ডেলিভারি সার্ভিস
আপনি যদি খাবারের কোন আইটেম এ স্পেশালিস্ট (Specialist) হয়ে থাকেন, তাহলে আপনি সেটা অনলাইনে মানুষ কে অফার করতে পারেন Cookup এর মাধ্যমে। এক্ষেত্রে Cookup আপনাকে সকল সহযোগিতা করবে।
এছাড়া আপনি ফাস্ট ফুড বা কেক আইটেম বানিয়ে আপনার এলাকার হোটেল বা দোকানে ডেলিভারি দিতে পারেন। তারা সেল করে আপনাকে টাকা দিবে লাভ সহ।
এই ব্যবসা টি বর্তমানে অনেক গৃহিণীরা করছেন এবং ভালো ইনকাম ও করছেন। এখানে লস হবার সম্ভাবনা নেই আর পুঁজি ও খুব কম লাগবে।
এর জন্য আপনার একজন লোক রাখতে হবে যে আপনার খাবার গুলো মার্কেটিং করবে, ডেলিভারি দিবে, এবং দিন শেষে টাকা তুলবে।
শেষ কথা
আমাদের দেশে এই মুহূর্তে উদ্যোক্তা খুব দরকার। “চাকরি করবো না, চাকরি দেবো” এটা হওয়া উচিত আমাদের লক্ষ্য।
আজকে যেই ০৯ টি ব্যবসার আইডিয়া নিয়ে আলোচনা করলাম এগুলো খুব ছোটো থেকে শুরু করা অল্প পুঁজি তে। লসের সম্ভাবনা ও খুব কম।
তবে আমাদের মাথায় রাখতে হবে কোন ব্যবসায়ই খুব দ্রুত বা রাতারাতি সফল হওয়া যায়না। এর জন্য দরকার হয় ধৈর্য আর একাগ্রতা। থেমে গেলে হবে না। ব্যবসার শুরুটাই একটু কষ্টের। কিন্তু একবার সব কিছু সেট হয়ে গেলে, আপনার আর পেছন তাকাতে হবে না।
আমর এই লেখাটি যদি আপনার একটুও ভালো লেগে থাকে, সেটাই আমার সার্থকতা।
আর্টিকেল টি পড়ার জন্য আপনাকে ধন্যবাদ।