জাতীয় দলের ফুটবলাররা এখন থেকে মাসিক বেতন পাবেন! হঠাৎ এ ঘোষণা দিলেন বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশনের (বাফুফে) চারবারের সভাপতি কাজী মো. সালাউদ্দিন। বিশ্বকাপ ও এশিয়ান কাপ বাছাইয়ের বাকি তিন ম্যাচ খেলতে কাতার যেতে না পারা ৫ ফুটবলারের সঙ্গে আলোচনাকালে বৃহস্পতিবার দুপুরে এ ঘোষণা দেন তিনি। আলোচনা শেষে সালাউদ্দিন জানান, ৩০ জন ফুটবলার নিয়ে পুল করে তার মধ্যে তিনটি গ্রেডে বেতন দেয়া হবে। জাতীয় ফুটবল খেলোয়ারদের বেতন নির্ধারণ।
প্রথম পনের জন ‘এ’ ক্যাটাগরি, পরের দশ জন ‘বি’ ক্যাটাগরি এবং শেষ পাঁচ জন ‘সি’ ক্যাটাগরিতে বেতন পাবেন। পারফরম্যান্সের উপর ভিত্তি করে ক্যাটাগরি পরিবর্তন হবে, আবার অনেকে বাদও পড়বেন। ট্যাকনিক্যাল কমিটি পর্যালোচনা করে বিষয়টি চূড়ান্ত করবে। বাফুফে বসের সঙ্গে আলোচনায় অংশ নেন গোলরক্ষক আশরাফুল ইসলাম রানা, ডিফেন্ডার টুটুল হোসেন বাদশা, বিশ্বনাথ ঘোষ এবং ফরোয়ার্ড সাদউদ্দিন ও মাহবুবুর রহমান সুফিল।
এ নিয়ে কিছুটা আক্ষেপ আছে জাতীয় ফুটবলারদের। জাতীয় দলে খেলেন এমন কয়েকজন ফুটবলারের সঙ্গে এ বিষয়ে কথা হয়েছে সারাবাংলার। তাদের বেশিরভাগের মন্তব্য এমন-‘জার্সি পড়ে খেলি এটাই বড় পাওয়া। এমনিতেই ম্যাচ কম হয়।’ কোনো বেতন কাঠামো না থাকার বিষয়টি নিয়ে একটু আক্ষেপ আছে অনেকের। ক্রিকেটে খেলোয়াড়দের দিতে পারলে ফুটবলাররা বঞ্চিত হয় কিনা প্রশ্ন করলে বসুন্ধরা কিংসের তারকা ফুটবলার ইমন মাহমুদ বাবুর কথায়, ‘বঞ্চিত বলা যায়। ক্রিকেটে পায়। আমাদের তো কোনো বেতন কাঠামোই নেই। কাঠামো থাকলে ভালো হতো।’
জাতীয় দলের ফুটবলাররা এত দিন ম্যাচ প্রতি ও ক্যাম্প চলাকালীন সময়ে ন্যূনতম পকেট মানি পেয়ে আসছিলেন। এবার সেটাকে বড় অঙ্কে ও মাসিক ভিত্তিতে রুপ দিতে চান বাফুফে সভাপতি। জাতীয় দলের ফুটবলারদের সেই অর্থে পারিশ্রমিক থাকে না। সামান্য সম্মানী পেয়ে থাকেন মাত্র। শুধু বাংলাদেশেই নয় সারা বিশ্বেই জাতীয় দল এভাবে চলে। তবে এবার ভিন্ন পথে হাঁটার ঘোষণা সালাউদ্দিনের। জাতীয় দলের ফুটবলারদের ভালো বেতন কাঠামোর দিকে আনার কারণ সম্পর্কে তিনি যুক্তিও দিলেন,‘একটি বেতন কাঠামোর মধ্যে থাকলে সবাই জাতীয় দলে খেলার প্রতি আকৃষ্ট হবে, প্রতিদ্বন্দ্বীতা বাড়বে। ইউরোপে ফুটবলাররা ক্লাবে অনেক অর্থ পায় ফলে জাতীয় দলে সেই অর্থে সম্মানীর প্রয়োজন হয় না। আমাদের তো সেটা নেই।’ বাংলাদেশে অন্য পেশার তুলনায় ফুটবলারদের আয় বেশি। এমনকি অনেক ফুটবলার অতিমূল্যায়িত। গত ঘরোয়া মৌসুমে বেশ কিছু ফুটবলার অর্ধ কোটি টাকারও বেশি পারিশ্রমিক পেয়েছেন। এরপরও জাতীয় দলে মাসিক বেতন কেন প্রয়োজন? এমন প্রশ্নে সালাউদ্দিনের উত্তর, ‘সবার আয় সমান নয়। জাতীয় দলের ফুটবলারদের সামাজিক কর্মকান্ড, পারিবারিক অনেক ব্যয়ও রয়েছে। একটা মিনিমাম স্ট্যান্ডার্ডের জন্য অবশ্যই অর্থ প্রয়োজন।’ জাতীয় দল নিয়ে এত গুরুত্বপূর্ণ একটি পরিকল্পনার কথা বাফুফে সভাপতি সভা করে ভাগাভাগি করলেন পাঁচ ফুটবলারের সঙ্গে। সেই সভায় ছিলেন জাতীয় দল কমিটির চেয়ারম্যান। এ প্রসঙ্গে সালাউদ্দিন বলেন,‘আজকের (গতকালের) এই আলোচনা প্রস্তাবনা মাত্র। আমরা এক রকম পরিকল্পনা করছি। কাতার থেকে দল ফেরার পর সবার সঙ্গেই বসবো।’ সালাউদ্দিনের সঙ্গে সভা শেষে জাতীয় দলের সিনিয়র ফুটবলার আশরাফুল ইসলাম রানা বলেন, ‘আমাদের বেতন কাঠামোর আওতায় আনার পরিকল্পনাটা খুবই ভালো। এতে আমরা আরও উৎসাহিত হবো।’
এদিকে বৃহস্পতিবার জাতীয় দলের কাতার সফরের পারফরম্যান্স ও কোচ ইস্যুতে কোনো মন্তব্য করেননি সালাউদ্দিন। তিনি বলেন,‘এখন জাতীয় দল নিয়ে কোনো মন্তব্য করলে সেটা দলে প্রভাব পড়বে। জাতীয় দল নিয়ে পর্যালোচনা ১৫ জুন ওমান ম্যাচের পর করবো।
এ নিয়ে ফেডারেশন কাপ চলাকালীন দেশসেরা তারকা ফুটবলার জামাল ভুঁইয়া একবার বলেছিলেন, ক্লাবে খেলতে ভালো লাগে কারণ ক্লাব তাদের বেতন দেয়। দিনশেষে আর্থিক নিরাপত্তা বলে একটা বিষয় আছে।
বেতন কাঠামো নিয়ে বাফুফের সাধারণ সম্পাদক আবু নাঈম সোহাগ সারাবাংলাকে জানান, ‘কোনো দেশেই জাতীয় ফুটবলারদের বেতন নেই। তাদের আয়ের উৎস ক্লাব। তার উপরেই নির্ভর করতে হয়। তাছাড়া ক্যাম্পে থাকাকালীন তাদের হাতখরচের কিছু টাকা দেয়া হয়। ম্যাচ ফি তো আছেই।’ এমন বেতন কাঠামোয় কখনও যাবে না বাফুফে এমনটা জানিয়ে দিয়েছেন তিনি।
ক্রিকেটারদের বছরজুড়ে নানান টুর্নামেন্টে বা লিগে বিভিন্ন ক্লাবের হয়ে আর্থিক লগ্নির সুযোগ থাকলেও ফুটবলাররা চেয়ে থাকেন শুধু ক্লাবের দিকেই। তাই দলবদলের বাজারে ফুটবলারদের দাম প্রত্যাশার চেয়ে বেড়ে যায় সহসাই। বাফুফের ফুটবলারদের জন্য বেতন কাঠামো না থাকায় দেশের ফুটবলারদের আর্থিক নিরাপত্তার বিষয়টি উঠে আসে ঘুরে ফিরে।
Comments (No)