জলপাই’র আচার দিয়ে শুরু, সীমা এখন সফল ই-কমার্স উদ্যোক্তা সীমা দত্ত, তার জন্ম ও বেড়ে ওঠা বান্দরবান জেলার লামাতে। পড়াশোনায় বিএ শেষের পর আর কর্মজীবনে যাওয়া হয়নি তার। বিয়ের পর একজন সাধারণ গৃহিণী হিসেবেই পরিচিত ছিলেন। বাঙালি বধূ হিসেবে ঘর সংসার ও রান্নার কাজ গুছিয়ে করতে বেশ দক্ষ ছিলেন সীমা। আর এসব দক্ষতাকে কাজে লাগিয়েই বর্তমানে তিনি একজন ই-কমার্স উদ্যোক্তা ।
বান্দরবান জেলার ঐতিহ্য দেশীয় শিল্পকে প্রচারের লক্ষ্য নিয়ে উদ্যোক্তা হয়েছেন সীমা। ফেসবুক পেজ S. ROY’S Collection এর মাধ্যমে সিজোনাল সবধরনের আচারের মতো পণ্য নিয়ে ব্যবসা করছেন। এছাড়াও পরবর্তীতে তার পেজে যুক্ত হয়েছে বান্দরবানের ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠী বম সম্প্রদায়ের কোমড় তাঁতে বোনা ঐতিহ্যবাহী বিভিন্ন ধরনের শাল ও পোশাক। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হল- বম শাল, বম মাফলার ও বম বিছানার চাদর। তার পেজের সিগনেচার পণ্য বরই নাড়ু।
নিজের উদ্যোগের গল্প বলতে গিয়ে সীমা দত্ত বলেন, ‘আমি সবসময় বিভিন্ন ধরনের আচার বানাতাম ঘরের জন্য এবং সেগুলির ছবি আমার ব্যাক্তিগত ফেসবুক প্রোফাইলে পোস্ট করতাম। একসময় আচার নিয়ে অনেকের ভালো ভালো মতামত পেতাম। এভাবেই ৫ কেজি জলপাই এর আচার দিয়ে ২০২০ সালে ব্যবসা শুরু করি। পরবর্তীতে পেজ খুলে পোস্ট দিতে থাকি।
অনেকেই আমার কাজকে ভালোভাবে গ্রহণ করে আবার কেউ কেউ এ নিয়ে হাসাহাসি করে। এদিকে ব্যবসায় সবচেয়ে প্রথম বাঁধা হয়ে দাঁড়ায় কুরিয়ার। কেননা আমাকে ২২ কিলোমিটার পথ পাড়ি দিয়ে কুরিয়ার করতে হয়।’
তিনি আরও বলেন, ‘এছাড়াও গত ১৩ জুন ২০২১ থেকে আমি আমার দ্বিতীয় উদ্যোগ নিয়ে ব্যবসা শুরু করি। যা আমার জেলার ঐতিহ্যবাহী পণ্য বম শাল, মাফলার ও বিছানার চাদর। আমি চিন্তা করলাম আমার জেলার এই পণ্যকে সবার মাঝে তুলে ধরবো। এতে আমাদের দেশীয় পণ্যের প্রচার ও প্রসার বাড়বে। আমরা সবসময় বিদেশি পণ্যের দিকে আকৃষ্ট হই এবং আমাদের বিপুল পরিমাণ অর্থ বিদেশে চলে যায়।
তিনি বলেন, ‘আমি দীর্ঘ সময় ধরে এই বম আদিবাসীদের নিয়ে কাজ করছি। তাদের পোশাক, খাবার, দাবার, বুনন শৈলী এসব নিয়ে। আমি চেয়েছি আমাদের দেশীয় পণ্যের প্রচার হোক। দেশের অর্থনৈতিক সমৃদ্ধ হোক। আমাদের দেশীয় এই পণ্যগুলো হারিয়ে যাওয়ার পথে। অনেকে বাপ দাদার এই পেশা ছেড়ে অন্য পেশার দিকে ঝুঁকছে। তাই আমি সবার মাঝে এর পরিচিতি গড়ে তুলতে উদ্যোগী হই। তাছাড়া এমন পোশাকের মতো পণ্য সবার ক্রয় সীমার মধ্যে থাকে।’
দেশীয় পণ্য ব্যবহারে উৎসাহিত করতে এবং তরুণ-তরুণীদের দেশীয় পণ্য নিয়ে উদ্যোক্তা হতে আগ্রহী করে তুলতে কাজ করে যেতে চান সীমা দত্ত। সেই সঙ্গে কাজকে ভালোবেসে ও পরিবারের সহযোগিতায় নিজের উদ্যোগে নিজেকে পরিচিত করতে চান তিনি।
Comments (No)