Successful entrepreneur in 21 years
২১ বছরেই সফল উদ্যোক্তা/Successful entrepreneur in 21 years শুরুটা মাত্র তিনশ’ টাকায়। অনেকটা শখের বসে নিজের পকেটমানি থেকে সাশ্রয় করা টাকা দিয়ে রোস্ট আর বিরিয়ানি রান্না করে বিক্রি করেছিলেন ছয়শ’ টাকায়। প্রথম দিনেই তিনশ’ টাকার বিনিয়োগে তিনশ’ টাকা লাভ। মাত্র একবছর আগে গল্পের শুরুটা এভাবেই। এখন তার কয়েক লাখ টাকার ফুড বিজনেস।
আয়ও লাখ ছাড়িয়ে যায় প্রতিমাসে। গল্পটা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রী সুপ্তি’র। পুরো নাম আফরোজা সুপ্তি। ঢাকার নর্থ-সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ে অনার্স (ইকোনোমিক্স)-এ ৬ষ্ঠ সেমিস্টারে অধ্যায়ন করছেন। যে বয়সে অন্যরা বন্ধুদের সাথে আড্ডা, বেড়ানোতে সময় কাটায়, সেই বয়সেই সুপ্তি একজন সফল উদ্যোক্তা।
নিজ বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র/ছাত্রীরা ভালো মানের খাবারের জন্য নির্ভর করেন সুপ্তি’র উপর। শহরের বিভিন্ন অনুষ্ঠান, বিয়ে, গায়ে হলুদ, কর্পোরেট আয়োজনে সুপ্তির’ খাবারের চাহিদা বাড়ছে দিন দিন। পড়ালেখার পাশাপাশি নিজ হাতে তৈরি খাবার সরবরাহ করে পরিবার ও নগরে দারুণ সুনাম কুড়িয়েছেন এই তরুণী।
ঢাকার বসুন্ধরা আবাসিক এলাকা কেন্দ্রিক সুপ্তির এই ফুড বিজনেসের নাম ‘হোম টাউন ফুড’। আফরোজা সুপ্তি রাইজিংবিডিকে জানিয়েছেন মাত্র ২১ বছর বয়সে উদ্যোক্তা হয়ে উঠা এবং নিজের সাফল্যের নেপথ্যের কথা।
আফরোজা সুপ্তি বলেন, চাকরি নয়, নিজেই কিছু করার চিন্তা মাথার মধ্যে ঢুকে পড়েছিলো বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির পর থেকেই। কিন্তু কিভাবে কি করবো এমন কোন প্ল্যান শুরু থেকেই ছিলোনা। তবে ভালো খাবার আর রান্নার শখ ছিলো সব সময়। সময়টা ২০১৯ সালের জানুয়ারি। বাবা মায়ের সাথে বসবাস ঢাকার বসুন্ধরা আবাসিক এলাকায়।
এক বন্ধুর মাধ্যমে অনেকটা মজার ছলেই পোলাও এবং চিকেন রোস্ট রান্না করে দেওয়ার অর্ডার নেন সুপ্তি। নিজের পকেট মানি থেকে ৩০০ টাকায় কিনেন মুরগি, পোলাও’র চাল মশলা। আর এই ৩০০ টাকায় তৈরি চিকেন রোস্ট, পোলাও বিক্রি করেন ৬০০ টাকায়।
সুপ্তি বলেন ‘ব্যবসার আইডিয়াটা ঢুকে যায় তখন থেকেই। চেষ্টা করেন রান্নাটা আরো ভালো করে শিখে নিতে। এরপর বসুন্ধরা আবাসিক এলাকা, নিজের বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যান্টিন এবং পরিচিত জনদের কাছ থেকে অর্ডার নেওয়া শুরু করেন। সর্বনিম্ন ৮০ টাকা এবং সর্বোচ্চ ২৫০ টাকার মধ্যেই মজাদার, হাইজেনিক, ঘরে তৈরি দেশি-বিদেশি সব মেন্যুর খাবার অর্ডার দেওয়ার সুযোগ থাকায় সুপ্তি ‘হোম টাউন ফুডের’ সুনাম ছড়িয়ে পড়ে ঢাকার বসুন্ধরা, বারিধারা, বনানীসহ আশেপাশের এলাকায়।
তিনি এখন নিজের বাসাতেই প্রতিদিন তৈরি করেন পোলাও, বিরিয়ানি, রোস্ট, চাইনিজ, কন্টিনেন্টাল, ফার্স্টফুড, নানা ধরনের ফ্রোজেন ফুডসহ মুখরোচক এবং সাশ্রয়ী দামের সব খাবার। তার সিগনেচার ফুডের মধ্যে রয়েছে মাত্র ২০০ টাকায় ‘বিয়ে বাড়ির সেট মেনু’ এবং চিজ বল। এছাড়া ‘মাত্র ১০০ টাকায় লাঞ্চ সেট মিল’ ব্যাপক জনপ্রিয়তা পেয়েছে কর্পোরেট দপ্তরসমূহে। সুপ্তি জানান, সব রান্না তিনি নিজের হাতেই করেন। সরবরাহ এবং রান্নার সহায়তার জন্য রয়েছে বেশ কয়েকজন কর্মী।
এখন তিনি প্রতিমাসে গড়ে দুই থেকে আড়াই লাখ টাকার পর্যন্ত খাবার সরবরাহ করেন। এর মধ্যে কর্মীদের বেতন এবং অন্যান্য খরচ বাদ দিয়ে তার প্রতিমাসে একলাখ টাকা থেকে একলাখ ২০ হাজার টাকা পর্যন্ত লাভ থাকে।
মাত্র ৩০০ টাকা বিনিয়োগে যে ফুড বিজনেস শুরু হয়েছিলো সেটি এখন প্রতিমাসে লাখ টাকা আয়ের উৎস তার। নিজের পড়ালেখার সব খরচ নিজেই বহন করার পাশাপাশি পরিবারের জন্যও ব্যয় করতে পারেন। থাকে আগামী দিনের জন্য সঞ্চয়ও।