গুগল এডসেন্স থেকে আয় করার পদ্ধতি

গুগল এডসেন্স হচ্ছে, গুগলের এমন একটা সার্ভিস যার মাধ্যমে এডভেটাইজ করা হয়। একটু সহজ করে বলি, আপনি নিশ্চয় বিভিন্ন ব্লগ বা ওয়েবসাইট অথবা ইউটিউব ভিডিও গুলোতে কিছু বিজ্ঞাপন দেখেছেন। এই বিজ্ঞাপন গুলো মূলত গুগল এডসেন্সের মাধ্যমে দেওয়া হয়।

গুগল এডসেন্স থেকে আয় করার পদ্ধতি 1

কেউ যখন এই বিজ্ঞাপন গুলোতে ক্লিক করে বিজ্ঞাপন দাতার সাইটে ভিজিট করেন, তাহলে বিজ্ঞাপন দাতা গোগল’কে নির্দিষ্ট একটি টাকা দিয়ে দেন। সেই টাকা থেকে সামান্য কিছু গোগল রেখে দেয়। বাকি টাকা ব্লগ অথবা ইউটিউব ভিডিও এর এডমিন বা মালিক’কে দিয়ে দেন। সুতারং বিজ্ঞাপনে যত বেশি ক্লিক পড়বে ব্লগ অথবা ইউটিউব ভিডিও এর মালিকের এডসেন্স একাউন্টে তত বেশি টাকা জমা হতে থাকবে। সর্বোচ্চ ১০০ ডলার জমা হলে গুগল এডসেন্স টাকা’টা ব্লগ বা ভিডিও এর মালিকের ব্যাংকের একান্টে জমা করে দেন। ব্লগ বা ইউটিউব থেকে ইনকামের এটাই সবচেয়ে বড় এবং বহুল ব্যাবহৃত উপায়।

গুগল এডওয়ার্ড কি?

গুগল এডওয়ার্ড হচ্ছে গুগলের আর একটি পপুলার সার্ভিস। গুগল এডওয়ার্ডের মাধ্যমে গুগল বিভিন্ন প্রোডাক্ট কোম্পানী, ওয়েবসাইট বা প্রতিষ্ঠানের কাছ থেকে তাদের প্রোডাক্ট বা ওয়েবসাইট প্রচার করার জন্য চুক্তি করে একটি নির্দিষ্ট পরিমান টাকা নেয়। অতঃপর গুগল এডসেন্সের মাধ্যমে বিভিন্ন ব্লগ, ওয়েবসাইট অথবা ইউটিউব ভিডিও’তে সেই এড বা প্রচারনা দিয়ে দেয়। গুগল এডসেন্সের এড সাধারণত দুই প্রকার হয়ে থাকে। প্রথমতঃ- বিভিন্ন ব্লগ, ওয়েবসাইট বা ইউটিউব ভিডিওতে ব্যানার প্রদর্শন করায়। দ্বিতীয়তঃ- ইউটিউব ভিডিওতে টেলিভিশনের এডভেটাইজের মত ভিডিও প্রদর্শন করিয়ে। এখান থেকে গুগল যত টাকা আয় করবে তার ৬৮% ব্লগ, ওয়েবসাইট অথবা ইউটিউব চ্যানেলের মালিক পাবে, বাকি ৩২% গুগল তাদের সার্ভিস খরছ হিসেবে রেখে দেয়। বলা যায়, এডসেন্স আর এডওয়ার্ড ওরা দুই মিলেই এক কাজে লিপ্ত।

গুগল এডসেন্স থেকে আয় করার পদ্ধতি 2

এডসেন্স থেকে আয় করতে কি কি লাগবে?

গুগল এডসেন্স থেকে ইনকাম করতে চাইলে, প্রথমতঃ- আপনার একটি ওয়েবসাইট বা ব্লগ থাকতে হবে। অথবা একটি ইউটিউব চ্যানেল থাকতে হবে। আপনি যদি ওয়েব ডিজাইনের কাজ জানেন তাহলে তো ভাল কথা। আর যদি না জানেন তাহলে অন্য কাউকে দিয়ে একটি ওয়েবসাইট অথবা ব্লগ সাইট বানিয়ে নিতে পারেন। ওয়েবসাইট বানানোর পর একটি ডোমেইন হোস্টিং নিয়ে সেটাকে অনলাইন করতে হবে। অতঃপর ওয়েবসাইট স্পিড বাড়াতে হবে। ওয়েবসাইটের উন্নত SEO করতে হবে। প্রচুর আর্টিকেল লিখতে হবে। অন্য ওয়েবসাইটের কন্টেন্ট চুরি করে কপিপেষ্ট যাবে না। মানুষের কাজে আসে এমন আর্টিকেল শুদ্ধ করে লিখতে হবে। আপনার ওয়েবসাইটে সেই ওয়েবসাইট সম্পর্কিত পৃষ্টা অর্থাৎ About পেজ এবং Privacy Policy পেজ থাকতে হবে। ওয়েবসাইটে অন্য কারো এড থাকলে সেটা সরিয়ে নিতে হবে। আপনার ওয়েবসাইটে যখন কিছু ভিজিটর ভিজিট করবে তখন গুগল এডসেন্সের একটি একাউন্ট খোলার জন্য এপ্লাই করতে পারেন। আপনার একটি মেইল আইডি থাকলে সহজে এডসেন্স একাউন্ট খুলতে পারেন।
আর আপনি যদি ইউটিউব চ্যানেলের মাধ্যমে এডসেন্স থেকে ইনকাম করতে চান, তাহলে আপনার একটি ইউটিউব চ্যানেল থাকতে হবে। প্রচুর শিক্ষনীয় অর্থাৎ মানুষের উপকার হয় এমন ভিডিও বানিয়ে সেখানে আপলোড করতে হবে। প্রচুর সাবস্ক্রাইবার এবং ভিউ থাকতে হবে। অতঃপর চ্যানেল’টাকে গুগল এডসেন্সের সাথে সংযোগ করতে হবে। অনেকেই বলে, এডসেন্স পাওয়া খুবই কঠিন। আমি বলব- পৃথিবীতে সহজ বলে কিছুই নেই। চেষ্টা চালিয়ে যেতে হবে। এডসেন্স অবশ্যই পাবেন। একবার এডসেন্স পেলে সেটাকে রক্ষা করার জন্য তাদের নিয়ম নিতি গুলো মেনে চলতে হবে। এডসেন্স সম্পর্কে আরো বিস্তারিত জানতে ।

মোট কত’টি পোষ্ট থাকলে এডসেন্স পাওয়া যাবে?

আমার মতে যত বেশি ইউনিক পোষ্ট থাকবে তত সহজে এডসেন্স পাওয়া যাবে। তবে সর্বনিম্ন ৫০’টির উপরে পোষ্ট থাকতে হবে। কেউ বলে ১০০’টির উপরে থাকতে হবে। এক্ষেত্রে আমি বলব, আপনি নিয়মিত পোষ্ট লিখুন এবং এডসেন্সের জন্য এপ্লাই করতে থাকুন। শুধু খেয়াল রাখবেন লেখার শব্দগুলো যেন শুদ্ধ হয়। কারণ এই লেখা ইংরেজীতে অনুবাদ হতে পারে। অনুবাদ হবার পরে শব্দে ভুল থাকলে উল্টা পাল্টা রেজাল্ট আসবে। তখন হিতে বিপরীত হওয়াটা স্বাভাবিক।

একটি আর্টিকেল সর্বনিম্ন কত শব্দের হতে হবে?

আমার মতে ৫০০ শব্দের বেশি হলে ভাল হয়। কেউ বলে কমপক্ষে ১০০০ শব্দ হতে হবে। এক্ষেত্রে আমি বলব, আর্টিকেল যখন লিখবেন- তখন একটু সহজ করে লিখলে ক্ষতি কি! ছোট্ট একটি কবিতা লিখতে গেলেও পাঁচশত এর বেশি শব্দ ব্যবহার করতে হয়। আর আপনি দু’ই চার লাইন লিখলে সেটা’তো আর আর্টিকেল হয় না। তাছাড়া একটি পেজে দুই চার লাইন লিখে বাকি পেজ খালি রেখে দিলে পেজের সৌন্দর্য নষ্ট হয়। মানুষের উপকারে আসে এমন কিছু লেখা লিখুন যাতে মানুষ সেটা ধৈর্য সহকারে পড়ে। এমন হলে এডসেন্স পেতে আপনার বেশি অপেক্ষা করতে হবে না।

কি কি বিষয় নিয়ে লেখা উচিত?

আমার মতে, লেখার জন্য নির্দিষ্ট কোন বিষয় থাকে না। আপনি যদি ব্লগ লিখেন তাহলে যে কোন বিষয় নিয়ে লিখতে পারেন। আমার এই ওয়েবসাইট ব্লগ সাইট নয়, তবুও প্রয়োজনীয় অনেক লেখা আমি এখানে লিখেছি। এবং আগামীতে আরো অনেক বিষয় নিয়ে লেখার পরিকল্পনা আছে। লেখার ক্ষেত্রে আমি বলব, মানুষ কেমন লেখা পড়তে চাই। অথবা কি পড়লে পড়াটা তার কাজে আসবে বলে আপনি মনে করেন, তাদের জন্য আপনি সেরকম কিছু লেখা লিখুন।

এডসেন্সের জন্য কিভাবে এপ্লাই করব?

প্রথমে উপরোক্ত নিয়ম গুলো মানতে হবে। অতঃপর Google Adsense এখানে গিয়ে ডানে উপরে Sign in বাটনে ক্লিক করে ইমেইল আর পাসওয়ার্ড দিয়ে সাইন ইন হয়ে যাবেন, অথবা সরাসরি Get started বাটনে ক্লিক করে আপনার ওয়েবসাইটের ডোমেইন বা URL দিবেন। আপনার নিজস্ব ই-মেইল এড্রেস দিবেন। দুই রেডিও বাটনের উপরের বাটন সেলেক্ট করে Save and Continue করে দিবেন। এটা খুবই সহজ। মাঝে মাঝে ই-মেইল চেক করবেন। যদি সব কিছু ঠিক থাকে তাহলে জবাব অবশ্যই পাবেন। আর ত্রুটিময় কিছু থাকলে সেটাও ওরা আপনাকে জানাতে পারে। তাদের ই-মেইল পেলে গুরুত্বপূর্ণ মনে করে প্রতিটি বিষয় ভাল করে বুঝে নিয়ে কাজ করতে থাকুন। আশা করি ফলাফল ভাল হবে।

টাকা কিভাবে পাব?

এডসেন্স ভিন্ন ভিন্ন দেশের জন্য ভিন্ন ভিন্ন নিয়মে টাকা প্রদান করে। বিশেষ করে আমাদের এই উপমহাদেশের জন্য Western Union অথবা ব্যাংক চেকের মাধ্যমে টাকা দিয়ে থাকে। তবে বেশির ভাগ চেকের মাধ্যমে দেওয়া হয়। বাংলাদেশে যেহেতু Western Union মাধ্যমে দেওয়া হয় না তাই পোষ্টের মাধ্যমে চেক পাঠানো হয়। তবে ১০০ ডলারের নিচে হলে অপেক্ষা করতে হবে। আপনার একাউন্টে ১০০ ডলার জমা হলে পরে সেই মাসের শেষের দিকে চেক পোষ্ট করা হবে। পোষ্টের মাধ্যমে টাকা আসতে ২০-২৫ দিন সময় লেগে যেতে পারে। তাই মন খারাপ করার কিছুই নেই। তবে ডলারের পরিমান বেশি হলে ৩০ ডলার খরছ দিয়ে DHL কুরিয়ার সার্ভিসের মাধ্যমে সাপ্তাহ খানিকের ভিতরে আনতে পারেন। চেক হাতে পাবার পর সেই চেক ব্যাংকে জমা করলে ও সাথে সাথে টাকা দেবে না। টাকা জমা হতে আরো কিছুদিন সময় লাগবে। মোট কথা, সব মিলিয়ে সময় প্রায় দুই মাস সময় পার হয়ে যায়। সমস্যা নেই! যদি প্রতি মাসে আপনার একান্টের ১০০ ডলার বা তার বেশি জমা হয় তাহলে মনে করুন, গত মাসের টাকা হাতে পাবার আগেই এই মাসের চেক পাঠানো হয়ে গেছে।

Comments (No)

Leave a Reply

এই সাইটের কোন লেখা কপি করা সম্পুর্ন নিষেধ