ওয়েবসাইট বিক্রী করার পদ্ধতি

ওয়েবসাইটও বিক্রয় করা সম্ভব। অন্যান্য পণ্যেরর মত ওয়েবসাইটের সঠিক মূল্য নির্ধারণ করা সহজসাধ্য নয়। যদি আপনি কোন ওয়েবসাইট বিক্রী করার কথা ভাবেন, তাহলে কিভাবে তার জন্য একটি মূল্য নির্ধারণ করবেন এবং কিভাবে বিক্রয় করবেন মূলত তা নিয়েই আজকের এই পোস্ট।

ওয়েবসাইট বিক্রী করার পদ্ধতি 1

সময়ের সাথে পাল্লা দিয়ে বাড়ছে ইন্টারনেট ভিত্তিক ব্যবসায়ী কর্মকাণ্ড। আর সেই সাথে বাড়ছে ব্যবসায়ী ওয়েবসাইটের প্রয়োজনীয়তা। নতুন ওয়েবসাইট তৈরি করে বিক্রয় করা অথবা চলমান ওয়েবসাইট কেনা-বেচাও এখন প্রতিনিয়ত হচ্ছে। কিন্তু অন্যান্য কেনা-বেচার সাথে ওয়েবসাইট কেনা-বেচার কিছুটা পার্থক্য রয়েছে।

অন্যান্য পণ্যেরর মত ওয়েবসাইটের সঠিক মূল্য নির্ধারণ করা সহজসাধ্য নয়। যদি আপনি কোন ওয়েবসাইট বিক্রী করার কথা ভাবেন, তাহলে কিভাবে তার জন্য একটি মূল্য নির্ধারণ করবেন এবং কিভাবে বিক্রয় করবেন মূলত তা নিয়েই আজকের এই পোস্ট। তাহলে চলুন, শুরু করি।

১. ওয়েবসাইট ট্র্যাফিক রিপোর্ট তৈরি করুন

আপনার ওয়েবসাইটের ট্রাফিক বা ভিজিটরদের পরিসংখ্যান তৈরি করুন। যেখানে আপনাকে বেশকিছু বিষয় বিবেচনায় রাখতে হবে। আপনার ওয়েবসাইটে কতজন ইউনিক ভিজিটর আছে তার এভারেজ এবং টোটাল হিসেব তৈরি করুন। একই সাথে ওয়েবসাইটের প্রতিটি পেজভিউর এভারেজ এবং টোটাল হিসেব তৈরি করুন।

ওয়েবসাইট বিক্রী করার পদ্ধতি 2

ভিজিটরের গ্রোথ রেট কিভাবে সময়ের সাথে সাথে বেড়েছে, কোন কোন দেশের ভিজিটর বেশী এবং সার্চ ইঞ্জিনের এবং সরাসরি কতজন ভিজিটর এসেছে, তার রিপোর্ট তৈরি করুন। অনলাইনে Alexa এবং Similar Web এর মত ওয়েবসাইটের র‌্যাংক নির্ণয় করার বেশকিছু টুলস রয়েছে। এগুলো ব্যবহার করে আপনার ওয়েবসাইটের র‌্যাংক কত তা খুঁজে বের করুন।

আপনার ওয়েবসাইটের কোন কীওয়ার্ডগুলো সবচেয়ে বেশী জনপ্রিয় এবং কোন কোন কীওয়ার্ডগুলো থেকে বেশি ইউজার আপনার সাইটে আসে, তার তালিকা তৈরি করুন। কীওয়ার্ড রিসার্সের জন্য আপনি গুগল সার্চ কনসোলের সাহায্য নিতে পারেন। এছাড়াও আপনার সাইটের বাউন্স রেট কেমন, গুগল এনালিটিক্সের মাধ্যমে তা খুঁজে বের করুন।

২. ওয়েবসাইটের ফাইনান্সিয়াল রিপোর্ট তৈরি করুন

আপনার ওয়েবসাইটটি তৈরি করতে ডোমেইন-হোষ্টিং বাবদ কত খরচ হয়েছে, তার একটি খসড়া তৈরি করুন। সাইট তৈরি পরবর্তীকালীন সময়ে মেইন্টেন্যান্সে কোন খরচ হলে সেগুলোর হিসেব রাখুন। ডোমেইন হোস্টিং এর খরচ ছাড়াও অন্য কোন সেবার জন্য অতিরিক্ত খরচ হলে তার হিসেব তৈরি করুন।

আপনার ওয়েবসাইটটি যদি বেশ জনপ্রিয় হয়ে থাকে এবং সেখানে গুগল এডসেন্সসহ লোকাল কোন বিজ্ঞাপন থাকে, তাহলে সেই বিজ্ঞাপন বাবদ আপনার সাইটের উপার্জন কেমন, তার একটি মূল্য তালিকা তৈরি করুন। এর ফলে আপনার ওয়েবসাইটের ক্রেতা যদি খুব সিরিয়াস হয়, তাহলে আপনি অনায়াসেই লাভ-ক্ষতির হিসেব তার সামনে তুলে ধরতে পারবেন।

৩. ভবিষ্যত সম্ভাবনা তুলে ধরুন

আপনি যদি বিজ্ঞাপনের মাধ্যমে সম্ভাব্য ক্রেতাদের দৃষ্টি আকর্ষন করতে চান, সেক্ষেত্রে আপনার সাইটের ইতিহাস, কোন লক্ষ্য সামনে রেখে তৈরি করেছিলেন, তা তুলে ধরুন। পাশাপাশি, সেই লক্ষ্যের কতটুকু নির্দিষ্ট সময়সীমার মধ্যে অর্জন করেছেন এবং এর ভবিষ্যত সম্ভাবনা কেমন তা বোঝানোর চেষ্টা করুন।

আপনি কেন ওয়েবসাইট বিক্রয় করতে চাইছেন? সেই বিষয়গুলো তুলে ধরে “ফিউচার অব দিজ ওয়েবসাইট” ক্যাপশনে একটি রিপোর্ট তৈরি করে ফেলুন। যেখানে আপনি উল্লেখ করবেন এই ওয়েবসাইটটি আপনার কিছু সীমাবদ্ধতার কারণে রাখতে পারছেন না। কিন্তু এর ভবিষ্যত সম্ভাবনা অনেক। তার জন্যে কিছু সম্ভাবনার কথা উদাহরণ হিসেবে বলে রাখুন যেন সহজেই ক্রেতা বুঝতে পারে।

৪. সম্ভাব্য ক্রেতা খুঁজুন

ওপরের বিষয়গুলো অনুসরণ করে আপনি নিশ্চই আপনার ওয়েবসাইটের মূল্য নির্ধারণ করতে পেরেছেন। এবার সময় সম্ভাব্য ক্রেতাদের খোঁজ করার। আপনার তৈরি করা ওয়েবসাইটের জন্য বাজারে কেমন চাহিদা আছে, তা দেখুন। ক্রেতা খোঁজার জন্যে দুটি বিষয় মাথায় রাখুন। যেমনঃ

আপনার নির্দিষ্ট ক্যাটাগরির মধ্যে খুঁজুন: আপনি ঠিক কি ধরনের কাজের জন্য ওয়েবসাইটটি তৈরি করেছিলেন, সেই ক্যাটাগরির ক্রেতা খুঁজে বের করার চেষ্টা করুন। যেমন: এক্ষেত্রে আপনার পণ্য যদি লোকাল হয় সেক্ষেত্রে স্থানীয় ব্যবসায়ীদের সাথে যোগাযোগ করতে পারেন। যারা প্রতিনিয়ত আপনার ওয়েবসাইটে বিজ্ঞাপন দিচ্ছে, তাদেরকেও জানাতে পারেন। এছাড়া বড় কিছু প্রতিষ্ঠান বেছে নিন, যাদের এক্ষেত্রে আগ্রহী হবার সম্ভাবনা আছে বলে আপনি মনে করেন এবং যোগাযোগ করুন।

আপনার নির্দিষ্ট ক্যাটাগরির বাইরে খুঁজুন: যদি আপনার ওয়েবসাইটের নির্দিষ্ট ক্যাটাগরির মধ্যে ক্রেতা খুঁজে না পান, তাহলে আপনাকে ক্যাটাগরির বাইরে ক্রেতা খুঁজতে হবে। তবে আপনাকে মনে রাখতে হবে যে, আপনার ইন্ডাষ্ট্রির বাইরে ক্রেতা খোঁজার সময় আপনাকে অনেক বেশি প্রশ্নের উত্তর দেয়া লাগতে পারে। কারণ, ক্রেতা হয়তো আগ্রহী কিন্তু সে আপনার ইন্ডাষ্ট্রি সম্পর্কে কম ধারণা রাখে। তাই আপনার সেরাটা দিয়ে তাকে বোঝাতে হবে।

আপনার ইন্ডাষ্ট্রির বাইরে ‍যদি ওয়েবসাইট বিক্রয় করতে চান, অনলাইনে বিভিন্ন কেনা বেচার প্লাটফর্মগুলোকে বেছে নিতে পারেন, e-bay এর মতো বড় প্লাটফর্মগুলোতেও এখন ওয়েবসাইট কেনা-বেচার জন্য সুযোগ আছে। তবে এখানে আপনাকে বিডের মাধ্যমে ওয়েবসাইট বিক্রয় করতে হবে।

৫. বিক্রী করার ক্ষেত্রে কিছু বিষয় মাথায় রাখুন

যদি পছন্দনীয় ক্রেতা খুঁজে পান, তাহলে পেমেন্ট মেথডের বিষয়টি ক্লিয়ার হয়ে নিন। ওয়েবসাইট বিক্রয়ের টাকা কখন এবং কিভাবে পাবেন? আপনি কি নগদে, চেকে অথবা অনলাইনে পেমেন্ট নেবেন? কোন মাধ্যমে আপনি নিতে আগ্রহী অথবা আপনার ক্রেতা দিতে আগ্রহী এ বিষয়টি পরিপূর্ণ নিশ্চিত হয়ে নিন।

এছাড়াও আপনার ওয়েবসাইটটি ক্রেতার কাছে হস্তান্তর করার আগে নির্দিষ্ট ও প্রয়োজনীয় ডকুমেন্ট বা কাগজপত্র তৈরি করুন। লিগ্যাল কাগজপত্র তৈরি করুন। যেমন: মালিকানা কাকে দিচ্ছেন এবং কত টাকার বিনিময়ে দিচ্ছেন? কত তারিখে দিচ্ছেন? সেই মতো কাগজপত্র তৈরি করুন। প্রয়োজনে কোন আইনজীবীর সহায়তা নিন যেন ভবিষ্যতে কোন আইনি জটিলতায় পড়তে না হয়।

ওয়েবসাইট বিক্রি পরবর্তী সার্ভিস নিয়ে আলোচনা করে নিন। অর্থাৎ বিক্রির পরে কতদিন পর্যন্ত আপনি ওয়েবসাইট সংক্রান্ত সমস্যার সমাধানে সহায়তা করবেন? আদৌ করবেন কি না, এ বিষয়গুলো কাগজে উল্লেখ করুন।

Comments (No)

Leave a Reply

এই সাইটের কোন লেখা কপি করা সম্পুর্ন নিষেধ