ইউটিউব মাল্টি চ্যানেল নেটওয়ার্ক (MCN) কি? এর সুবিধা এবং অসুবিধা 1

মাল্টি চ্যানেল নেটওয়ার্ক ইউটিউবারদের নিকট খুব পরিচিত একটি শব্দ। তবে অনেক নতুন ইউটিউবারের নিকট শব্দটি অপরিচিত। মাল্টি চ্যানেল নেটওয়ার্ক মূলত ইউটিউব পার্টনারশিপ নেটওয়ার্ক। ইউটিউবে ভিডিও আপলোড করে মাল্টি চ্যানেল নেটওয়ার্কের মাধ্যমে অর্থ আয় করা যায়।

যারা গুগল অ্যাডসেন্সের বিকল্প কোন মাধ্যম থেকে অর্থ আয় করতে চায়; তাদের জন্য মাল্টি চ্যানেল নেটওয়ার্ক খুব গুরুত্বপূর্ণ একটি মাধ্যম।

গুগল অ্যাডসেন্সের মাধ্যমে ইউটিউবে মনিটাইজেশন পাওয়ার জন্য আপনাকে ৪ হাজার ঘন্টা ওয়াচ টাইম এবং ১ হাজার সাবস্ক্রাইবার প্রয়োজন হয়। কিন্তু বিভিন্ন ধরনের মাল্টি চ্যানেল নেটওয়ার্কের ক্ষেত্রে এরকম কঠিন বাধ্যবাধকতা নেই।

ফলে যাদের সাবস্ক্রাইবার এবং ওয়াচ টাইম কম তারাও মাল্টি চ্যানেল নেটওয়ার্কের মাধ্যমে ইউটিউব থেকে আয় করার সুযোগ পেতে পারেন। লেখাটি পড়ার আগে ইউটিউব চ্যানেল থেকে আয় করার ৩টি সহজ উপায় জেনে রাখতে পারেন।

মাল্টি চ্যানেল নেটওয়ার্ক

গুগল অ্যাডসেন্সের যেমন অনেক সুবিধা অসুবিধা রয়েছে, তেমনি মাল্টি চ্যানেল নেটওয়ার্কের অনেক সুবিধা অসুবিধা রয়েছে। যাই হোক, আজকের এই লেখায় আমরা জানব মাল্টি চ্যানেল নেটওয়ার্ক কি? পাশাপাশি জানবো এর সুবিধা এবং অসুবিধা সূমহ।

মাল্টি চ্যানেল নেটওয়ার্ক কি

মাল্টি চ্যানেল নেটওয়ার্কের সংক্ষিপ্ত রূপ MCN। মাল্টি চ্যানেল নেটওয়ার্ক হল ইউটিউব পার্টনারশিপ নেটওয়ার্ক। তবে মাল্টি চ্যানেল নেটওয়ার্ক ইউটিউবের মালিকানাধীন নয় বরং এটা থার্ড পার্টি প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে পরিচালিত। এসব মাল্টি চ্যানেল নেটওয়ার্ক ইউটিউব কন্টেন্ট ক্রিয়েটরদের ভিডিও থেকে অর্থ প্রদানের পাশাপাশি ভিডিও মার্কেটিং সহ অন্যান্য অনেক সুবিধা দিয়ে থাকে। ইন্টারনেটে অসংখ্য ওয়েবসাইট বা প্রতিষ্ঠান রয়েছে যারা মাল্টি চ্যানেল নেটওয়ার্কের সুবিধা দিয়ে থাকে।

এমসিএন সাধারণত ২ প্রকার যথা:

  • অ্যাফিলিয়েট চ্যানেল:অ্যাফিলিয়েট চ্যানেল মূলত মাল্টি চ্যানেল নেটওয়ার্কের সাথে যুক্ত হয়ে কাজ করা বোঝায় অর্থাৎ আপনি তাদেরকে যেসব কনটেন্টের উপর অনুমোদন দিবেন, তারা সেসব কনটেন্ট নিয়ে কাজ করবে।
  • ওউন্ড এন্ড অপারেট (ওএন্ডও):ওউন্ড এন্ড অপারেট বলতে বোঝায় আপনি ভিডিও তৈরি করবেন এবং মাল্টি চ্যানেল নেটওয়ার্ক তা পরিচালনা করবে। সহজ ভাষায় বললে আপনার ইউটিউব কনটেন্টের মালিকানা, দায়বদ্ধতা সবকিছু মাল্টি চ্যানেল নেটওয়ার্কের অধীন থাকবে। গুগল অ্যাডসেন্সের বিকল্প বলা যায় যাকে।

যেকোন মাল্টি চ্যানেল নেটওয়ার্কে যুক্ত হওয়ার পূর্বে বেশ কিছু বিষয় আপনার মাথায় রাখতে হবে যথা:

  • ওয়েবসাইট বা প্রতিষ্ঠানটি ইউটিউব দ্বারা ভ্যারিফাইড কিনা।
  • তারা কত শতাংশ চার্জ নেয় এবং কত শতাংশ আয় শেয়ার করে।
  • তারা অতিরিক্ত কি ধরনের সুযোগ সুবিধা দিয়ে থাকে।
  • তাদের সাথে কাজ করার কোন বাধ্যবাধকতা আছে কিনা।
  • তাদের চুক্তি সময়কাল কত দিনের।
  • চুক্তি ভঙ্গের নিয়ম গুলো কি কি।

মাল্টি চ্যানেল নেটওয়ার্কের সুবিধা

মাল্টি চ্যানেল নেটওয়ার্ক বা এমসিএন এর অনেক সুবিধা রয়েছে। তার মাঝে গুরুত্বপূর্ণ সুবিধাগুলো সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করা হল।

অ্যাডসেন্সর সহজ বিকল্প

পূর্বেই বলা হয়েছে মাল্টি চ্যানেল নেটওয়ার্ক গুগোল অ্যাডসেন্সের বিকল্প হিসেবে কাজ করে। ভিডিও থেকে বিজ্ঞাপন দেখানোর পর নির্দিষ্ট পরিমাণ অর্থ যেমন আপনার গুগোল অ্যাডসেন্সে জমা হয় এবং আপনি সেখান থেকে অর্থ উত্তোলন করতে পারেন। একইভাবে ইউটিউব মাল্টি চ্যানেলের মাধ্যমে আপনি বিজ্ঞাপন দেখাতে পারেন এবং সেই মাল্টি চ্যানেল নেটওয়ার্কের ওয়েবসাইট থেকে অর্থ উত্তোলন করতে পারবেন।

বেশি পরিমাণ বিজ্ঞাপন

স্বাভাবিকভাবেই আপনি মাল্টি চ্যানেল নেটওয়ার্কে যুক্ত হওয়ার পর আপনার ভিডিওতে বিজ্ঞাপনের পরিমাণ বেশি পাবেন। আর যেহেতু বিজ্ঞাপনের পরিমাণ বেশি পাবেন তাই আয়ের পরিমাণ বৃদ্ধি পাবে।

চ্যানেল ব্যান হওয়ার সম্ভাবনা কম

গুগোল অ্যাডসেন্সের অন্যতম প্রধান সমস্যা হলো, কোন নোটিফিকেশন ছাড়াই যেকোনো সময় ইউটিউব চ্যানেল সাসপেন্ড হয়ে যায়। তবে আপনি যদি মাল্টি চ্যানেল নেটওয়ার্কের সাথে যুক্ত হন তবে এ ধরনের ভোগান্তি খুব একটা পোহাতে হবে না। কেননা সাসপেন্ড হওয়ার পূর্বে তারা এর কারণ জানিয়ে নোটিফিকেশন দিবে।

কপিরাইট স্ট্রাইক থেকে মুক্তি

মাল্টি চ্যানেল নেটওয়ার্কের আরেকটি সুবিধা হল, কপিরাইট কন্টেন্ট আপলোড করলে তারা আপনাকে নোটিফিকেশনের মাধ্যমে জানিয়ে দিবে। ফলে ইউটিউব চ্যানেল ব্যান হওয়া এবং কপিরাইট ক্লেইম থেকে মুক্তি পাবেন।

কন্টেন্ট সুরক্ষা

মাল্টি চ্যানেল নেটওয়ার্কে যুক্ত হওয়ার পর তারা আপনাকে একটি কনটেন্ট আইডি দিবে। এ কনটেন্ট আইডি থাকার ফলে আপনার ভিডিও অন্য কোন ইউটিউব চ্যানেলে এ কপি করতে পারবে না। মাল্টি চ্যানেল নেটওয়ার্কের অ্যালগরিদম খুব সহজেই আপনার ভিডিও ইউটিউব থেকে খুঁজে বের করতে পারবে।

রেফার করে আয়

অনেক মাল্টি চ্যানেল নেটওয়ার্ক আছে যারা রেফার সুবিধা দিয়ে থাকে। অর্থাৎ আপনি আপনার কোন ইউটিউবার বন্ধুর চ্যানেল যদি ঐ ওয়েবসাইটে যুক্ত করাতে পারেন তবে তার আয়ের একটা নির্দিষ্ট অংশ আপনিও পাবেন।

ফ্রি ভিডিও মার্কেটিং

আপনার ভিডিওর ভিউ থেকে শুরু করে সাবস্ক্রাইবার বৃদ্ধির প্রায় সব ধরনের মার্কেটিংয়ের কাজ মাল্টি চ্যানেল নেটওয়ার্ক ফ্রিতে নিজেই করে দিবে।

কপিরাইট ফ্রি প্রিমিয়াম মিউজিক লাইব্রেরি

প্রায় সব মাল্টি চ্যানেল নেটওয়ার্কের প্রিমিয়াম মিউজিক লাইব্রেরি রয়েছে যেগুলো আপনি ফ্রিতে আপনার ভিডিওতে যুক্ত করতে পারবেন। এছাড়া জেনে নিন ইউটিউব ভিডিওর জন্যে ফ্রি ব্যাকগ্রাউন্ড মিউজিক পাবেন যে ৫টি ওয়েবসাইটে।

ভিডিও ইডিটিংয়ের প্রিমিয়াম টুলস

প্রায় অধিকাংশ মাল্টি চ্যানেল নেটওয়ার্ক ভিডিও এডিটিং থেকে শুরু করে আরও বিভিন্ন ধরনের কাজের জন্য অনেক প্রিমিয়াম টুলস ফ্রিতে দিয়ে থাকে।

মাল্টি চ্যানেল নেটওয়ার্কের অসুবিধা

এমসিএন বা মাল্টি চ্যানেল নেটওয়ার্কের কিছু গুরুত্বপূর্ণ সুবিধা যেমন রয়েছে, তেমনি রয়েছে কিছু অসুবিধাও। আসুন, অসুবিধাগুলো সম্পর্কে জানি।

আয়ের পরিমাণ কম

মাল্টি চ্যানেল নেটওয়ার্কের অন্যতম প্রধান একটি অসুবিধা হলো গুগল অ্যাডসেন্স থেকে আয়ের পরিমাণ কম। আয়ের পরিমাণ কম বোঝাতে মূলত বোঝাচ্ছে তারা গুগল অ্যাডসেন্স থেকে একটু বেশি পরিমাণ চার্জ নিয়ে থাকে।

চুক্তি ভঙ্গ

যদিও অনেক মাল্টি চ্যানেল নেটওয়ার্কে অ্যাকাউন্ট খোলার পূর্বে বিভিন্ন ধরনের সুযোগ সুবিধার কথা বলে থাকে কিন্তু পরবর্তীতে তারা অনেক সময় সে সব সুযোগ-সুবিধা দিতে গড়িমসি করে থাকে।

চুক্তি সমাপ্ত করার ঝামেলা

অনেক মাল্টি চ্যানেল নেটওয়ার্ক থেকে বের হয়ে যাওয়াটা বেশ ঝামেলাপূর্ণ। কেননা তারা অধিকাংশ সময় চুক্তির মেয়াদ ১ বছর কিংবা ২ বছরের উপরে করে থাকে, ফলে এর পূর্বে অন্য কোন মাল্টি চ্যানেল নেটওয়ার্ক কিংবা অ্যাডসেন্সের সাথে যুক্ত হওয়া যায় না।

দুর্বল সেবা

সেবার দিক দিয়ে বলতে গেলে গুগল এডসেন্স এ আপনি যেই পরিমাণ কাস্টমার সেবা পাবেন, অন্যান্য মাল্টি চ্যানেল নেটওয়ার্কে সেটার পরিমাণ খুব কম।

শেষ কথা

এই ছিল আজকে মাল্টি চ্যানেল নেটওয়ার্ক নিয়ে সংক্ষিপ্ত আলোচনা। মাল্টি চ্যানেল নেটওয়ার্কে যুক্ত হওয়ার পূর্বে অবশ্যই তাদের শর্ত গুলো দেখে নিবেন।

রিলেটেড আর্টিকেল**

ইউটিউব ভিডিও প্রমোট করার ৫টি টিপস্

Leave a Reply

You missed

এই সাইটের কোন লেখা কপি করা সম্পুর্ন নিষেধ