ফেসবুকে ভিডিও পোষ্ট করে আয় করার ইচ্ছা এদেশের মানুষের আজকের নয়। সবার কাছে সহজবোধ্য হবার কারণে অধিকাংশ মানুষই এই প্লাটফর্মটিকে কাজে লাগিয়ে ইনকাম করতে আগ্রহী।
কিন্তু ইচ্ছা থাকলেও কিছু সীমাবদ্ধতার কারণে তা সম্ভব হয়ে ওঠেনি। আর তাই ভিডিও পোষ্টিং করে ইনকাম করার ক্ষেত্রে এককভাবে ইউটিউবের উপরেই সবাইকে নির্ভরশীল থাকতে হয়েছে।
ফেসবুক পেজ থেক আয় করার উপায় সম্পর্কে আমরা প্রায় সকলেই জানি। পেজ ছাড়াও ফেসবুক থেকে মানুষ বিভিন্নভাবে ইনকাম করেছে আমরা জানি, কিন্তু সেটা পরোক্ষভাবে।
ইউটিউবের মতো ফেসবুক সরাসরি কখনও কাউকে কোন অর্থ প্রদান করেনি। ফেসবুকে যাদের পেজে লক্ষ লক্ষ লাইক আর ফলোয়ার রয়েছে একমাত্র তারাই এতোদিন স্পন্সরড পোষ্ট এবং বিভিন্ন পণ্য বা সেবা বিক্রয়ের মাধ্যমে ফেসবুককে কাজে লাগিয়ে ইনকাম করেছে।
কিন্তু “ফেসবুককে কাজে লাগিয়ে ইনকাম করা” আর “ফেসবুক থেকে ইনকাম করা” দুটি বিষয়ই সম্পূর্ণভাবে আলাদা।
ফেসবুকে ভিডিও পোষ্ট করে আয়
অনেক আগে থেকেই ফেসবুক ইউটিউবের মতো ভিডিও মানিটাইজ করার সুবিধা দেওয়ার কথা চিন্তা করে আসছিল। সেই সূত্র ধরে কিছু দিন আগেই পরীক্ষামূলকভাবে নির্দিষ্ট কয়েকটি দেশের জন্য ভিডিও মনিটাইজ করার সুবিধা উন্মুক্ত করে দেয়।
ভিডিও মানিটাইজ ফিচারটি উন্মুক্ত করার পরপরই তা ফেসবুক ব্যবহারকারী এবং পেজ ব্যবস্থাপনাকারীদের মধ্যে তুমলভাবে জনপ্রিয় হতে শুরু করে। পাশাপাশি অন্যান্য দেশের জন্যের এই সুবিধা চালু করার জন্য ফেসবুক কর্তৃপক্ষের কাছে অসংখ্য অনুরোধ আসতে থাকে। আর তারই ধারাবাহিকতায় এবার বাংলাদেশের জন্যে ফেসবুকে ভিডিও মনিটাইজেশন সুবিধা চালু করে দিয়েছে।
ইউটিউবের মতো এই ফিচারকে কাজে লাগিয়ে আপনি আপনার করা ভিডিও পোষ্ট থেকে ইনকাম করা ছাড়াও লাইভ ভিডিও স্ট্রিমিং করার সময় অ্যাড ব্রেক ফিচারকে কাজে লাগিয়ে আয় করতে পারবেন।
আপনার ভিডিও থেকে যে পরিমাণ টাকা ইনকাম হবে তার ৫৫% ফেসবুক আপনাকে প্রদান করবে। তাই চলুন দেরি করে জেনে নিই কিভাবে আপনার ফেসবুক ভিডিও থেকে আয় করতে হবে।
শর্তাবলী:
ফেসবুকে ভিডিও পোষ্ট করে আয় করার জন্য আপনাকে তাদের দেয়া কিছু নির্দিষ্ট যোগ্যতা অর্জণ করতে হবে। একই সাথে কিছু শর্তাবলী পূরণ করতে হবে যেগুলো নিচে আলোচনা করা হল।
- ভিডিও পোষ্ট করার জন্য আপনার অবশ্যই একটি ফেসবুক পেজ থাকতে হবে। ব্যক্তিগত অ্যাকাউন্ট থেকে ভিডিও পোষ্ট করলে তা থেকে কোনভাবেই আয় করা যাবে না। তাই আপনার যদি ফেসবুক পেজ না থাকে, তাহলে এখনই সেটি তৈরী করে ফেলুন।
- আপনার ফেসবুক পেজে কমপক্ষে ১০ হাজার লাইক থাকতে হবে। ১০ হাজার লাইক পাওয়ার আগে আপনি এই সুবিধা নিতে পারবেন না। আপনার পেজে ১০ হাজারের কম লাইক থাকলে দ্রুত সময়ে গঠনমূলক ও মজাদার পোষ্ট করুন এবং সেগুলি শেয়ার করে লাইক অজর্ন করে নিন।
- লাইক বাড়ানোর জন্য ঘন ঘন ভিডিও পোষ্ট করুন। ভিডিও পোষ্টে অতি দ্রুত সময়ে লাইক অর্জণ করা সম্ভব। এর আরো একটি কারণ হলো ফেসবুকের দেওয়া শর্ত মোতাবেক ভিডিও মানিটাইজ করার জন্য শেষ ২ মাসের মধ্যে আপনার পেজে কমপক্ষে ৫০০ ঘন্টার ওয়াচটাইম থাকতে হবে। অর্থাৎ আপনার পেজে মোট যতগুলি ভিডিও থাকবে, তা সব মিলিয়ে যতবার দেখা হয়েছে তা ৫০০ ঘন্টার সমপরিমাণ সময় হতে হবে।
- যে ভিডিওটি মানিটাইজ করবেন তার দৈর্ঘ্য ৩ মিনিটের কম হতে পারবে না। এজন্য যত ভিডিও বানাবেন তা ৩ মিনিটের বেশি সময়ের করার চেষ্টা করুন। কারণ ইউটিউবের মতো এটি এখন টাকা না দিলেও ভবিষ্যতে দেবে।
উপরের সব শর্ত সঠিকভাবে পূরণ করতে পারলেই আপনি আপনার পেজ থেকে ভিডিও পোষ্ট করে আয় করতে পারবেন। আরো বিস্তারিত জানার জন্য ফেসবুক মনেটাইজেশন পেজটি ভিজিট করতে পারেন।
আপনাকে যা করতে হবে:
আপনি যদি ফেসবুকের সকল শর্তাবলী পূরণ করে থাকেন অর্থাৎ আপনার পেজ যদি ১০ হাজার লাইক এবং ৫০০ ঘন্টার ওয়াচটাইম থাকে, তাহলে এখন সময় এসেছে আপনার পেজের সেটিংসগুলি পরিবর্তণ করে নেওয়ার।
- প্রথমে ফেসবুকে লগইন করুন এবং এর আপনার পেজ এর মেন্যু থেকে পাবলিশিং অপশনটিতে ক্লিক করুন।
- পাবলিশিং টুলস এর মেন্যু থেকে ক্রিয়েটর ষ্টুডিও অপশনটি নির্বাচন করুন।
- ক্রিয়েটর ষ্টুডিওর পেজটিতে আপনি আপনার সবগুলি ফেসবুক পেজের সারাংশ দেখতে পাবেন। এখানে রয়েছে চেক অ্যালিজিবিলিটি অপশন যা ব্যবহার করে আপনার পেজটি বর্তমানে ভিডিও মানিটাইজেশনের জন্য প্রস্তুত কিনা জানতে পারবেন। এমনকি, কোন কারণে প্রস্তুত না হয়ে থাকলে কি ত্রুটি রয়েছে তা আপনি দেখতে পাবেন।
- যদি সব ঠিকঠাক থাকে, তাহলে এতো দিন আপনার পেজে যে ভিডিওগুলি পোষ্ট করেছেন, তার তালিকা দেখতে পাবেন। একই সাথে ভিডিওর সামনে ডলার আইকন প্রর্দশিত হবে। এখানে ডলার আইকনটি সবুজ, নীল বা হলুদ হতে পারে। ভিডিওর সামনে থানা সবুজ আইকন ভিডিওটিকে মানিটাইজেশনের জন্য উপযুক্ত হিসেবে ঘোষণা করে। একই সাথে নীল আইকনটি দ্বারা ভিডিও ফেসবুক কর্তৃক রিভিউতে থাকা এবং হলুদ আইকন ভিডিওকে মানিটাইজেশনের অযোগ্য বলে ঘোষণা করে।
আর যে একটি বিষয় নিয়ে আলোচনা না করলেই নয়, তা হলো পেমেন্ট। আপনি ফেসবুকে ভিডিও ভিউ এর জন্য কত পরিমাণ টাকা পাবেন তা নির্ভর করবে আপনার ভিডিওটি কোন দেশ থেকে দেখা হচ্ছে এবং কতবার তাতে বিজ্ঞাপন প্রদর্শিত হচ্ছে তার উপর।
একই সাথে আপনার টাকা উত্তোলনের জন্য ক্রিয়েটর ষ্টুডিও মেন্যুতে রয়েছে পেআউট অপশন। সেখানে আপনার ব্যাংক অ্যাকাউন্ট বা কার্ড যোগ করে আপনি টাকা উত্তোলন করতে পারবেন।
ফেসবুকে ভিডিও পোষ্ট করে আয় করার বিষয়টি অনেকের কাছেই স্বপ্ন পূরণের মতো। আমার মতো যারা এখন পর্যন্ত ফেসবুকে বৃথা সময় না কাটিয়ে সেই সময়কে কাজে লাগিয়ে আয় করার কথা ভাবছিলেন, তাদের জন্য এটি একটি সূবর্ণ সুযোগ। এই সুযোগকে কাজে লাগাতে তাই আজ থেকেই ফেসবুকের জন্যে ভিডিও তৈরি করা শুরু করে দিন। ভিডিও তৈরির জন্যে এ ২টি ফ্রি সফট্ওয়্যার ব্যবহার করতে পারেন।
আমাদের দেশে যেখানে এখনো একজন সফল ইউটিউবার হওয়ার ধারণাটি সবার কাছে পরিষ্কার নয়, সেখানে ফেসবুক ব্যবহারে অভ্যস্ত হওয়ার কারণে এটির সহজবোধ্য ইন্টারফেসকে কাজে লাগিয়ে খুব সহজেই সাধারণ ব্যবহারকারীরাও ইনকাম করতে পারবে বলে আমার বিশ্বাস।
Comments (No)