গুগল বাংলাদেশে তাদের বিজ্ঞাপনী প্ল্যাটফর্ম অ্যাডসেন্সকে উন্মুক্ত করার ঘোষণা দিয়েছে। সম্প্রতি বাংলাদেশী ওয়েবপোর্টালগুলোর জন্য অ্যাডসেন্স ব্যবহার করে আয়ের সুযোগ করে দেয়ার খুঁটিনাটি সম্পর্কে জানাতে একটি সেমিনার আয়োজন করা হয়েছিলো গুগলের পক্ষ থেকে।
রাজধানীর অভিজাত এক হোটেলে আয়োজিত সেমিনারটিতে যোগ দিয়েছিলেন ৩৫ টি মিডিয়া প্রকাশনা প্রতিষ্ঠানের প্রায় ৭০ জন প্রতিনিধি। সময় ডিজিটালের পক্ষ থেকে যোগ দিয়েছিলেন প্রতিষ্ঠানটির সম্প্রচার ও তথ্যপ্রযুক্তি বিভাগের প্রধান সালাউদ্দীন সেলিম। বাংলাদেশে অ্যাডসেন্স ব্যবহারের সম্ভাবনা ও সেমিনারের বিভিন্ন দিক নিয়ে সময় নিউজের সঙ্গে আলাপে মেতে ওঠেন তিনি। সময় নিউজের সাথে করা সাক্ষাতকারটি হুবহু তুলে ধরা হলো।
সময় নিউজ : গুগল অ্যাডসেন্স বাংলাদেশে এলো কীভাবে?
সালাউদ্দীন সেলিম : এতদিন আসলে গুগল বাংলা চিনতো না। গত ২৬ সেপ্টেম্বর গুগল সিদ্ধান্ত নিলো যে এখন থেকে তারা বাংলা বুঝতে শুরু করবে। তখন তারা ডিক্লেয়ার দেয় যে, অ্যাডসেন্স আন্ডারস্ট্যান্ডস বাংলা নাও। বাংলা না থাকার কারণে যে সমস্যাটা হচ্ছিলো, সেটা হলো বাংলাদেশের বেশিরভাগ পোর্টালগুলো বাংলায়। কিন্তু গুগলের কাছে বাংলা ছিলো ব্যানড। বাংলা থেকে কেউ অ্যাপ্লাই করলে গুগল অ্যাডসেন্স অ্যাপ্রুভাল দিত না। আর অ্যাডসেন্স হচ্ছে ইন্টারন্যাশনালি ডিজিটাল অ্যাডভার্টাইজমেন্টের জন্য সবচেয়ে বড় প্ল্যাটফর্ম। সেই বড় প্ল্যাটফর্মে আমাদের ল্যাঙ্গুয়েজ বাংলা হওয়ার কারণে এন্ট্রি করতে পারতাম না। একমাত্র প্রথম আলো ২০১৪ সালে ওদের হোয়াইটলিস্টেড হয়। বাকিদের কারোরই অ্যাডসেন্সের অনুমতি ছিলো না।
সেই হিসেবে ফ্রিল্যান্সার ও বিভিন্ন পোর্টালের পক্ষ থেকে গুগলের সঙ্গে প্রতিনিয়ত মেইল চালাচালি হতো। আমি নিজেও অসংখ্যবার গুগলকে মেইল করেছি। শেষ পর্যন্ত দুই মাস আগে গুগল আমার মেইলে রেসপন্স করেছে এবং বলেছে তারা বাংলাদেশে সেমিনার করতে চায়। যেহেতু একটা কোম্পানির মাধ্যমে আসতে হয়, সেহেতু জাগো-বিডি কম্পানির মাধ্যমে তাদেরকে এখানে নিয়ে আসা হয়। তারপর ওরা একটা সেমিনার আয়োজন করে।
সময় নিউজ : গুগলের সেমিনারে কী হলো? দেশের পোর্টালগুলোর জন্য তাদের পরামমর্শ কী ছিলো?
সালাউদ্দীন সেলিম : সেমিনারে তারা তুলে ধরে, বাংলাদেশের পোর্টালে কী ধরণের সমস্যা রয়েছে। এবং এটাকে কীভাবে আপগ্রেড করা যায়, কীভাবে মোডিফাই করে অ্যাপ্লাই করা যায়- এটাই ওরা উপস্থাপন করেছে।
শুধু ওয়বসাইট না, ওয়েবসাইটটাকে আরও কীভাবে কাস্টোমাইজড ওয়েতে কাজ করানো যায়- সেটা নিয়েও ওরা কাজ করছে। আমাদের ওয়েবসাইটগুলো সাধারণত স্লো হয়। এই ওয়েবসাইগুলোকে আরও ফাস্ট কীভাবে করা যায়, এবং আরও কয়েকটা দিকে কীভাবে কোয়ালিটি কন্ট্রোল করা যায়, সেটা নিয়েও ওরা কথা বলেছে। ওয়েবসাইটটি কতটা ফাস্ট, পিকচার অ্যালেগেশন কীরকম, বিজ্ঞাপনটা কোথায় বসাচ্ছে, সেই জায়গাটা ঠিক আছে কিনা- এই জিনিসগুলোর কোয়ালিটি কন্ট্রোল করে গুগল। গুগল যদি মনে করে যে, ওয়েবসাইটগুলো এই কোয়ালিটি ফুলফিল করতে পারছে- তখনই কেবল অ্যাডসেন্সে পারমিশন দেয়া হয়। আর বাংলাদেশের সাইটগুলোতে এই ধরণের অসুবিধাগুলো বেশি।
আমরা যেমন সাইটে ছবির নিচেই সুন্দর করে অ্যাড বসিয়ে দিই- গুগল এটাকে সাপোর্ট করে না। আমি যেহেতু বিজ্ঞাপন দিচ্ছি, আমার অডিয়েন্সকে বোঝাতে হবে এটা বিজ্ঞাপন। ছবির পাশে না রেখে এাকে অন্য জায়গায় রাখতে হবে বা কোনো একটা বর্ডার দিতে হবে। এই গাইডলাইনগুলো গুগল বরাবরই ফলো করে। আমাদের পোর্টালগুলোর আরেকটা প্র্যাকটিস হলো একটা পেইজে চার-পাঁচটা বিজ্ঞাপন দিয়ে দেয়া। কিন্তু গুগল এক পেইজে দুই-তিনটির বেশি বিজ্ঞাপন না দেওয়াটাই সাজেস্ট করে।
তো গুগল এই গাইডলাইনগুলো এবারের সেমিনারে সবাইকে ফলো করার জন্য অনুরোধ জানিয়েছে। গাইডলাইন ফলো করা হলে গুগল মোটামুটিভাবে নিশ্চয়তা দিয়েছে যে সবাইকে অনুমতি দেয়া হবে। তবে এই মুহূর্তে প্রথম আলো ও বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ছাড়া অন্য কেউ অফিশিয়ালি গুগলের কাছ থেকে অনুমতি পায়নি।
সময় নিউজ : গুগল অ্যাডসেন্স থেকে বছরে কী পরিমাণ আয় করে আন্তর্জাতিক পোর্টালগুলো?
সালাউদ্দীন সেলিম : এটা নির্ভর করে আসলে ট্রাফিক র্যাঙ্কিং-এর উপর। গুগলের হিসাব অনুযায়ী কোনো পোর্টালের মান্থলি ভিউ যদি হয় তিন লাখের উপর, তাহলে গুগলের হিসাব অনুযায়ী একশ’ পঞ্চাশ ডলার পাওয়ার কথা। সেই হিসাবে, আমাদের দেশের পোর্টালগুলোর কোটির উপর ভিউ থাকে। তো একেকটা পোর্টাল থেকে প্রতি মাসে কোটি টাকার উপরে আয় করা সম্ভব। এবং প্রথম আলোর মতো প্রতিষ্ঠানগুলো সেটা করছে।
র্যাঙ্কিং ছাড়াও এটা আসলে ডিপেন্ড করে অডিয়েন্স কোন দেশ থেকে আসছে। বাংলাদেশে সিপিএম রেটটা অনেক কম। সিপিএম রেট মানে, আপনার বিজ্ঞাপনটা এক হাজারবার শো করলে, একটা ইমপ্রেশন দেখানো হয়। এই একেকটা ইমপ্রেশন একেকটা রেট ধরা হয়। উদহারণ হিসেবে কানাডাতে এই রেটকে যেখানে ধরা হচ্ছে পাঁচ ডলার সেখানে বাংলাদেশের বিজ্ঞাপনের জন্য এই রেট পাঁচ সেন্টও না। এমনকি ইউএস, কানাডা কিংবা অস্ট্রেলিয়ার জন্য কখনো কখনো এই রেট আরও অনেক বেশি হয়ে থাকে। সুতরাং পার্থক্য আসলে এতটাই। যাদের অডিয়েন্সটা দেশের বাইরে বেশি, তাদের ইনকামও ততটা বেশি। তবে ইউএস-কানাডার চেয়ে ভারত-বাংলাদেশে সিপিএম রেট অনেক কম।
সময় নিউজ : ভারতে কি অ্যাডসেন্স আছে? অ্যাডসেন্স যেমন এখন বাংলা বোঝে, তেমনি ওরা কি অনেক আগ থেকে হিন্দি বোঝে?
সালাউদ্দীন সেলিম : হ্যাঁ, অ্যাডসেন্স হিন্দি বোঝে। ওদের বড় বড় সব পোর্টালই অ্যাডসেন্স অ্যাপ্রুভড। ভারতে মার্কেটটাও অনেক বড়। ওদের বেশিভাগ বিজনেসই অ্যাডসেন্স প্রুভড। কারণ ডিজিটাল অ্যাডভার্টাইজিং কিন্তু শুধু মাত্র ওয়েবসাইটের জন্যই নয়, ভারতীয়রা এটা এখন বিভিন্ন আইপি টিভিতে নিচ্ছে, বিভিন্ন ভিডিও পোর্টালে দিচ্ছে। ভারতীয়রা এটাকে নিয়ে বিভিন্নভাবে ব্যবসা করছে এবং এটার অনুমতিও আছে। কিন্তু আমাদের দেশে এতদিন সেই অনুমতিটা ছিলো না বলেই এটা করা যাচ্ছিলো না। আমাদের দেশেও শুধু ওয়েবসাইট নয়, বিভিন্ন ধরণের ভিডিও পোর্টাল, এমনকী মোবাইলের অ্যাপস-এর জন্যও অ্যাডসেন্স খুবই লাভজনক হবে।
এসএন
Comments (No)