পশু পালন করে স্বাবলম্বী রূপগঞ্জের কামরুন্নাহার

গবাদি পশু পালন করে স্বাবলম্বী হয়েছেন জীবন সংগ্রামী নারী কামরুন্নাহার (৩৪)। নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জ উপজেলার কায়েতপাড়া ইউনিয়নের ইছাখালী এলাকায় স্বামী, শাশুড়ি, ৩ ছেলে ও ২ মেয়েসহ ৮ সদস্যের সংসার তার। অভাবের তাড়নায় হতাশ হয়ে অবশেষে গুরু পালন শুরু করেন এখন তার মাসিক আয় ৪০ হাজার টাকা।

বন্ধক ছাড়াই ঋণ পাবেন কৃষক ও ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীরা

পশু পালন করে স্বাবলম্বী রূপগঞ্জের কামরুন্নাহার 1

স্বামীর কাঁচামাল ব্যবসায় বারবার লোকসান হওয়ায় ঋণের জালে আটকে পড়ায় হতাশ হয়ে একাধিকবার বাবার বাড়ি চলে যান তিনি। আবার ফিরে আসার মধ্য দিয়ে অতিকষ্টে চলছিল তাদের সংসার। প্রশিক্ষণের অভাবে দেশীয় জাতের গরু পালনেও দেখল না আলোর মুখ। সামান্য রোগবালাই হলেই পালের গরু মারা যেত। তাই সাংসারিক অভাব-অনটন আরো বাড়তে থাকে। ইতোমধ্যে বিভিন্ন এনজিও থেকে ঋণ নিয়ে তা পরিশোধ করতেও হিমশিম খাচ্ছিলেন তিনি।

পশু পালন করে স্বাবলম্বী রূপগঞ্জের কামরুন্নাহার

এক সময় কথা হয় একটি এনজিওর পরামর্শে গবাদি পশু পালনের ওপর একটি প্রশিক্ষণ নেন তিনি। সেই প্রশিক্ষণকে কাজে লাগাতে উপজেলা প্রাণিসম্পদ বিভাগের ভেটেরিনারি চিকিৎসক হাবীব ইউসুফের সঙ্গে আলাপ-আলোচনা করে দেশীয় জাতের পরিবর্তে শঙ্কর ও অস্ট্রেলিয়ার উন্নত জাতের গাভী পালন শুরু করেন। শুরুতে নিজের জোগাড় করা ৫০ হাজার টাকা ও প্রশিক্ষণ নেয়ায় ব্র্যাক থেকে ১ লাখ টাকা ঋণ নেন। এ সময় দেড় লাখ টাকা দিয়ে একটি অস্ট্রেলিয়ার উন্নত জাতের গাভী ক্রয় করা হয়। গাভীটি প্রতিদিন ১২ লিটার দুধ দেয়ায় দৈনিক ৫০ টাকা থেকে ৬০ টাকা কেজি দরে দুধ বিক্রি করে একদিকে কিস্তি পরিশোধ করেন, অন্যদিকে সংসারের অভাব-অনটন দূর করতে থাকেন। একই আয় থেকে নিজের ছেলেমেয়ের লেখাপড়া করাতেও কোনোরকম কষ্ট হয় না। সময়ের ব্যবধানে গাভী পালনের জন্য আলাদা ঘর, প্রশিক্ষণের সব সঠিক পদ্ধতি প্রয়োগ, উন্নত জাত সঠিকভাবে পালন করে আলোর মুখ দেখে কামরুন্নাহার। এখন তার খামারে ৩টি গাভী, দুটি বাছুর ও একটি ষাঁড় রয়েছে। এসব গাভী থেকে প্রতিদিন সকাল ও বিকেলে মিলে ২৫ কেজি দুধ পাওয়া যায়।

লন্ডনে থেকে এসে দেশে গরুর খামার করে এক কোটি টাকা আয়।

সকালের দুধ স্থানীয় মিষ্টির দোকানে পাইকারি দরে বিক্রি করে দেয়। আর বিকেলে বাসাবাড়িতে রোজ হিসেবে বিক্রি করে দেন। এভাবে প্রতিদিন ১৩০০ থেকে ১৫০০ টাকা দুধ বিক্রি থেকে আসে। পরে গো-খাদ্য বাবদ খরচ হয় ৩০০ টাকা, অন্যান্য খরচ আরো ২০০ টাকা হিসাবে গড়ে প্রতিদিন ৮০০-১২০০ টাকা আয় হয়। এ টাকা থেকে মাসিক কিস্তি দিয়েও মাসে ৪০ হাজার টাকা আয় হয় বলে জানান তার স্বামী বিল্লাল হোসেন।

সমন্বিত খামারে প্রতি মাসে ৫ লাখ টাকা আয়

এ সময় তিনি আরো বলেন, প্রতি বছর ঈদুল আজহার জন্য এ বাছুর থেকে একটি করে ষাঁড় পালনের জন্য রেখে বাকিগুলো গো-খাদ্য অভাবে বিক্রি করতে দেন। তবে তার দাবি গো-চারণভূমি, সবুজ ঘাস জাতীয় খাদ্যের অভাবে গবাদি খামার থেকে পালিত গরুর মাংসের স্বাদ নিয়ে বিতর্ক রয়েছে। এ বিষয়ে গৃহবধূ কামরুন্নাহার বলেন, আমার স্বামীর কাঁচামাল ব্যবসায় বারবার লোকসান হওয়ায় সাংসারিক অশান্তি লেগেই থাকত। এখন আর সেই পরিস্থিতি নেই। নিজেদের সংসার চালিয়ে বৃদ্ধা শাশুড়ি, স্বামী, ৩ ছেলে ও ২ মেয়ে ও আমার সব খরচ এই গাভী থেকেই আসে।

এ সময় তিনি আরো বলেন, সঠিক সময়ে ব্র্যাকের নেয়া প্রশিক্ষণকে কাজে না লাগাতে পারলে জীবন চাকা থেমে যেত। ইকোনোমিক ইম্পাওয়ারমেন্ট ফর পুওর এন্ড ভালনারেবল উইমেন ইন বাংলাদেশের (ইইপি) সিনিয়র ম্যানেজার গোলাম মোস্তফা বলেন, সারা বাংলাদেশেই আমরা দরিদ্রদের মধ্যে তাদের চাহিদামতো খাতে প্রশিক্ষণ দিয়ে থাকি। শুধু প্রশিক্ষণেই সীমাবদ্ধ নয় আমাদের কর্মসূচি। কামরুন্নাহারকে প্রশিক্ষণ-পরবর্তী ব্যাংক থেকে ঋণ আদায়, মার্কেটিং, বিভিন্ন শ্রেণিপেশার সঙ্গে সমন্বয়সহ সব বিষয়ে সহযোগিতা করেছি। এভাবে যারা প্রশিক্ষণ নেয় তাদের আমরা সহযোগী করে থাকি। তিনি আরো বলেন, শুধুমাত্র রূপগঞ্জেই ৩৬০০ পরিবারকে প্রশিক্ষণ দিয়েছি। তাদের মধ্যে ৩৩৩৪ জন সদস্য প্রশিক্ষণ নিয়ে লাভবান হয়েছেন।

উপজেলা প্রাণিসম্পদ বিভাগের ভেটেরিনারি চিকিৎসক মো. ইউসুফ হাবীব বলেন, প্রশিক্ষণের অভাবে অনেক খামারি লোকসানের মুখে পড়ে হাল ছেড়ে দেয়। এটা ঠিক না। সঠিক পদ্ধতি ও প্রশিক্ষণ অবলম্বন করলে কোনো খামারিই লোকসানের মুখে পড়বে না। কামরুন্নাহারের সফলতার পেছনে সঠিক পদ্ধতি বিশেষ ভূমিকা রেখেছে বলে জানান তিনি।

লিখেছেন নজরুল ইসলাম

Comments (No)

Leave a Reply

এই সাইটের কোন লেখা কপি করা সম্পুর্ন নিষেধ