কম্পিউটার মেমোরি এক জিনিস নয়—এরা সম্পূর্ণ আলাদাভাবে এবং আলাদা উদ্দেশ্যে কাজ করে।
যেখানে মানুষের কম্পিউটার মেমোরি কোন নাম মনে রাখতে, কারো ফেস মনে রাখতে,
কিংবা আজকের তারিখ মনে রাখতে সংগ্রাম করে চলেছে—সেখানে কম্পিউটার মেমোরিতে দিনের পর দিন আরো পরিপূর্ণতা আসছে।
বন্ধুরা, আমাদের আজকের প্রশ্ন হলো, কীভাবে কম্পিউটারের এই অসাধারন স্মরণশক্তি রয়েছে? এবং কীভাবে এগুলো কাজ করে?
তো চলুন সবকিছু বিস্তারিত করে জেনে নেওয়া যাক।
কোন মেমোরির মৌলিক উদ্দেশ্য হলো (সেটা মানুষের মেমোরি হোক আর কম্পিউটার মেমোরিই হোক)
কোন তথ্যকে একটি নির্দিষ্ট সময়ের জন্য সংরক্ষিত করে রাখা। সবচাইতে মজার ব্যাপার হলো, মানুষের মেমোরি
কোন তথ্যকে মনে রাখার চেয়ে কোন তথ্যকে ভুলে যেতেই বেশি পটু। আর এটি হলো আমাদের ঘেলুর সবচাইতে কমজোর দিক।
যদি কোন বিষয়কে আপনি মনোযোগ সহকারে না লখ্য করে থাকেন, তবে সেটি ভুলে যাওয়া থেকে আপনাকে আর কেউ রক্ষা করতে পারবে না।
আর আমাদের কোন বিষয় সহজে ভুলে যাওয়ার অক্ষমতা থাকার জন্যই—আমরা কোন গুরুত্বপূর্ণ বিষয়কে অনেক মনোযোগের সহকারে রাখি।
ভুলে যাওয়া মানে হলো, কোন পুরাতন আবর্জনা ভর্তি একটি কৌটাকে পরিষ্কার করে আবার নতুন কিছু ভরানোর জন্য প্রস্তুত করা।
কম্পিউটার কখনোই কোন বিষয়কে সেভাবে মনে রাখে বা ভুলে যায়না, যেভাবে মানুষ করে।
কম্পিউটার বাইনারি এর উপর কাজ করে; তারা কিছু জানুক বা না জানুক, যদি একবার কম্পিউটার কোন কিছু শিখে নেয়,
তবে কোন সর্বনাশা ক্র্যাশ ছাড়া সেটা আর কখনোই ভুলে যায়না। কিন্তু আমরা মানুষেরা একটু আলাদা হয়ে থাকি।
আমরা কোন জিনিসকে চিনতে পারি (“আমি মনে হয় এর আগে তোমাকে কোথাও দেখেছিলাম”)
অথবা আমাদের মনে হয় যে আমরা সেটা জানি (“আমি প্রথম হিন্দি শব্দ “পেয়ার” শিখেছিলাম, যখন আমি স্কুলে পড়তাম”)
এবং প্রয়োজন ছাড়াও আমরা কোন তথ্যকে একত্রিত করতে পারি।
কম্পিউটারের অসদৃশ, মানুষ কোন বিষয়কে ভুলে যায়… আবার মনে করে, আবার ভুলে যায়…
আবার মনে করে। সত্যি বলতে আমার কাছে মানুষের মেমোরি অনেকটা ম্যাজিকের মতো মনে হয়। কিন্তু সত্যতা হলো,
আমাদের মস্তিষ্কের চাইতে একটি ৫০০ টাকা দামের পেনড্রাইভও বেশি মনে রাখতে পটু।
মানুষ এবং কম্পিউটার মেমোরির মধ্যে একটি সদৃশ হলো, এদের উভয়েরই দুই প্রকারের মেমোরি রয়েছে।
মানুষের মেমোরি প্রধানত দুটি ভাগে বিভক্ত হয়ে আছে, একটি হলো সর্ট টার্ম মেমোরি (short-term memory
(যা আপনি সম্প্রতি দেখেছেন, শুনেছেন, অথবা মস্তিষ্কে কল্পনা করেছেন)) এবং আরেকটি হলো লং টার্ম মেমোরি (long-term memory
(যা আমরা শিখেছি, বা আমাদের জীবন থেকে অভিজ্ঞতা নিয়েছি, আর এই জন্যই এগুলো আমাদের বেশি ভালো করে মনে থাকে))।
এমনভাবে কম্পিউটারেরও দুই ধরনের কম্পিউটার মেমোরি থাকে।
এর ভেতর এক প্রকারের বিল্ড-ইন কম্পিউটার মেমোরি থাকে যাকে ইন্টারনাল মেমোরি বলা হয়,
এটি সিলিকন চিপ দ্বারা প্রস্তুত করা হয়ে থাকে। এই কম্পিউটার মেমোরি কোন কম্পিউটার ডাটা
অনেক দ্রুত সংরক্ষন এবং উদ্ধার করতে সক্ষম হয়ে থাকে, ফলে একে কম্পিউটারের বর্তমান প্রসেস সম্পূর্ণ করানোর কাজে ব্যবহার করা হয়।
সাধারনত, কম্পিউটারের ইন্টারনাল মেমোরি উদ্বায়ী (যা দ্রুত উবিয়ে যায়) হয়ে থাকে—
অর্থাৎ কম্পিউটার বন্ধ করার সাথে সাথেই এর মধ্যে সংরক্ষিত সকল তথ্য গায়েব হয়ে যায়।
আর এর জন্যই কম্পিউটারের আরেক প্রকার মেমোরির প্রয়োজন পড়ে, যাকে সহায়ক মেমোরি বা স্টোরেজ বলা হয়।
এই মেমোরি, কম্পিউটার অফ থাকা অবস্থায়ও কোন তথ্য মনে রাখতে পারে।
সাধারন পিসি বা ল্যাপটপে হার্ডড্রাইভ বা ফ্ল্যাশ স্টোরেজকে সহায়ক মেমোরি হিসেবে দেখতে পাওয়া যায়।
সহায়ক মেমোরিকে আবার এক্সটারনাল মেমোরিও বলা হয়ে থাকে, কেনোনা হার্ডড্রাইভ
আরেকটি আলাদা মেশিন হয়ে থাকে যা তারের মাধ্যমে কম্পিউটারের সাথে সংযুক্ত করা থাকে।
আবার আজকের মডার্ন কম্পিউটার গুলোর সাথে প্লাগইন সহায়ক মেমোরি দেখতে পাওয়া যায়,
যেমন ইউএসবি ফ্ল্যাশ মেমোরি স্টিক বা এসডি মেমোরি কার্ড, পোর্টআবোল হার্ডড্রাইভ, সিডি বা ডিভিডি রম, ইত্যাদি।
কম্পিউটারের প্রধান মেমোরি কিন্তু অনেক কম হয়ে থাকে, সাধারনত ৫১২ এম্বি থেকে ৮ জিবি পর্যন্ত (মডার্ন কম্পিউটার গুলোতে আরো মেমোরি থাকে)। কম্পিউটারে যতোবেশি প্রধান মেমোরি থাকবে, কম্পিউটার ততোবেশি তথ্য প্রসেস করতে পারবে এবং দ্রুতগতিতে কাজ করতে সক্ষম হবে। যদি কম্পিউটারের এর প্রধান মেমোরির চাইতেও বেশি তথ্য সংরক্ষন করার প্রয়োজন পড়ে তবে এটি হার্ডড্রাইভের কিছু ফাঁকা স্থানে তা সংরক্ষিত করে থাকে, আর একে ভার্চুয়াল মেমোরি বলা হয়।
উইন্ডোজ কম্পিউটারে হয়তো আপনি ভার্চুয়াল মেমোরি অপশনটি দেখে থাকবেন। কিন্তু আজ এর সম্পর্কে একটি সত্যতা জেনে নিন। আপনি যদি লক্ষ্য করেন যে, আপনার হার্ডড্রাইভ বেশিরভাগ সময়ই অনেক ডাটা রীড ও রাইট করতে ব্যস্ত থাকছে, তবে আপনার কম্পিউটার ভার্চুয়াল মেমোরি হিসেবে হার্ডড্রাইভ ব্যবহার করছে। ভার্চুয়াল মেমোরি তাত্ত্বিকভাবে কম্পিউটার পারফর্মেন্স দ্রুত করতে ব্যবহার করা হয়, কিন্তু ব্যস্তবিক ক্ষেত্রে এটি আপনার কম্পিউটার পারফর্মেন্স স্লো করে দিতে পারে। কেনোনা সহায়ক মেমোরি কখনোই প্রধান মেমোরির মতো দ্রুত গতির হতে পারে না। তাই যদি আপনার কম্পিউটারের প্রধান মেমোরির সাইজ মানে র্যামের সাইজ কম হয়ে থাকে তবে তা আপগ্রেড করায় বেস্ট হবে।
ইন্টারনাল মেমোরি—র্যাম ও রম
কম্পিউটার ইন্টারনাল মেমোরি চিপ প্রধানত দুই প্রকারের হয়ে থাকে, একটি র্যাম (RAM) (র্যান্ডম অ্যাক্সেস মেমোরি) নামে পরিচিত এবং আরেকটি রম (ROM) (রীড অনলি মেমোরি) নামে পরিচিত। র্যাম চিপ কোন তথ্যকে ঠিক ততোক্ষণই মনে রাখতে পারে, যতোক্ষণ কম্পিউটারের পাওয়ার অন থাকে, সুতরাং এরা সর্ট টার্মে ডাটা সংরক্ষিত করে রাখে। অপরদিকে রম চিপ তখনও ডাটা সংরক্ষন করে রাখতে পারে, যখন কম্পিউটার অন থাকে না। রমকে ফ্যাক্টরিতে প্রস্তুত করার সময়ই একে প্রি-প্রোগ্রাম করে এর ভেতরে আগে থেকেই তথ্য ঢুকিয়ে রাখা হয়—পরে শুধু সেই তথ্য গুলোকে নতুন করে সাজিয়ে নতুন তথ্যে রূপান্তরিত করা হয়।
তো, কি বুঝলেন? কম্পিউটারে দুই ধরনের মেমোরি চিপ লাগানো থাকে। একটি সাময়িকভাবে তথ্য মনে রাখতে পারে, মানে যতোক্ষণ কম্পিউটার অন আছে, ততোক্ষণ—সেটি হলো র্যাম। আর আরেকটি পার্মানেন্ট ভাবে কোন তথ্য মনে রাখতে পারে, কম্পিউটার অফ থাকলেও—সেটি হলো রম।
র্যান্ডম অ্যাক্সেস কি?
বিস্তারিত পড়ুন এখানে
Comments (No)