ব্যবসায়িক দুনিয়ায় আপনার মূল সফলতা নির্ভর করে বিক্রির উপর। বিক্রি যত বেশি হবে স্বাভাবিক ভাবেই আপনার লাভ ততো বাড়তে থাকবে। তাই সবাই চায় যে কোন উপায়েই হোক তাদের বিক্রি বৃদ্ধি করতে।
বিক্রি বৃদ্ধির জন্য অনেকেই অনেক কথা বলে থাকে। অনলাইনে ঘাটাঘাটি করলেও এমন অনেক উপায় পাবেন যার মাধ্যমে আপনার বিক্রি দ্বিগুন, পাঁচগুন কিংবা দশগুন বৃদ্ধি করার উপায় বলা আছে। কিন্তু বাস্তবেই কি তাই? আসলেই এমনটা কখনও হয় না। বিক্রি বৃদ্ধির এসব উপায়ের অধিকাংশই তাই আষাঢ়ে গল্প ছাড়া আর কিছু না।
আসলে বিক্রি বৃদ্ধির কাজটা এতটা সহজ নয় যতটা আমরা ভেবে থাকি। বিক্রি বৃদ্ধি করার মূল হাতিয়ার হলো আপনার সৃজনশীলতা ও কৌশল। এ দুটোকে সঠিকভাবে কাজে লাগাতে পারলে আপনার বিক্রি অবশ্যই বাড়বে। এখানে আমি আপনার বিক্রি দ্বিগুন করার সেরা কয়েকটি উপায় বর্ণণা করেছি।
বিক্রি দ্বিগুন করার জন্য আপনাকে যা করতে হবে
আপনার অডিয়েন্স এনগেজমেন্ট বৃদ্ধি করুন
আপনার ব্যবসারপ্রাণহলো আপনার অডিয়েন্স। কারণ আপনার অডিয়েন্সই আপনার সম্ভাব্য ক্রেতা। তাই আপনার বিক্রি দ্বিগুন করার জন্য প্রথমেই আপনার অডিয়েন্স বাড়ানোর দিকে নজর দিন।
অডিয়েন্স বাড়ানোর জন্য আপনার পোস্ট বা বিজ্ঞাপণের কনটেন্টের উপর নজর দিন। অডিয়েন্সকে সহজেই আকৃষ্ট করা যায় এমন পোস্ট বা বিজ্ঞাপণ তৈরি করুন এবং প্রচার করুন। এছাড়াও আপনার পোস্টগুলোতেছবি,ভিডিও,প্রশ্নইত্যাদি যুক্ত করার মাধ্যমে আরও আর্কষণীয় করতে পারবেন।
কিন্তু এক্ষেত্রে আপনার ব্যবসায়ের সাথে সম্পর্কিত অডিয়েন্স এনগেজমেন্ট করার চেষ্টা করুন। এজন্য আপনিAudience Insigstsব্যবহার করে খুব সহজেই আপনার টার্গেট অডিয়েন্স বাছাই করে নিতে পারেন।
আপনার টার্গেট অডিয়েন্স বাছাই করার জন্য আপনাকে শুধু আপনার অডিয়েন্সের বয়স, লোকেশন, ইন্টারেস্ট ইত্যাদির মত সাধারণ কিছু তথ্য দিতে হবে।
আপনার টার্গেট অডিয়েন্সের কাছে আপনার বিজ্ঞাপণ বা পোস্ট পৌছালে স্বাভাবিকভাবে আপনার এনগেজমেন্ট ও বাড়বে। এনগেজমেন্ট বাড়ার অর্থ হলো আপনার বিক্রি বেড়ে যাওয়া।
এখন একবার কল্পনা করে দেখুন, যেহেতু টার্গেট অডিয়েন্সই আপনার সম্ভাব্য ক্রেতা। তাই আপনি যদি অডিয়েন্স এনগেজমেন্ট দ্বিগুন বাড়াতে পারেন তাহলে এর অর্থ হলো আপনার বিক্রিও দ্বিগুন বাড়বে। তাই আপনার অডিয়েন্স বাড়ানোর চেষ্টা করুন।
আপনার লক্ষ্যে পৌঁছাতে ফেসবুক পেইড বিজ্ঞাপণ দিন
ফেসবুকে আপনার দেয়া পোস্ট বা বিজ্ঞাপণ দুইটি মাধ্যমে অডিয়েন্সের কাছে পৌঁছায়-অর্গানিকওপেইড।
বর্তমানে ফেসবুক তাদের অর্গানিক রিচের পরিমাণ অনেক কমিয়ে দিয়েছে। অনেক বড় বড় কোম্পানিগুলোও ফেসবুকে সর্বোচ্চমাত্র ৬%অর্গানিক রিচ পেয়ে থাকে। তাই সবাই বর্তমানে পেইড বিজ্ঞাপণের দিকেই ঝুকছে।
তাই আপনার বিজ্ঞাপণগুলো অডিয়েন্সের কাছে পৌঁছানোর জন্য পেইড বিজ্ঞাপণের কোনো বিকল্প নেই। তাই আপনার টার্গেট অডিয়েন্স বাছাই করা হয়ে গেলে পেইড বিজ্ঞাপণ দিতে পারেন।
এজন্য আপনার পোস্ট বা বিজ্ঞাপণের নিচের দিকে থাকা নীল রঙেরBoost Postবাটনে ক্লিক করে আপনার পছন্দ্মতোDuration,Audience,Locationসিলেক্ট করে আপনার বিজ্ঞাপণ বুস্ট দিন।
আপনার বিজ্ঞাপণ যদি আপনি আগের চেয়ে যত বেশি মানুষের কাছে পৌঁছাতে পারবেন আপনার বিক্রি ততো বেড়ে যাবে। এখন সে সংখ্যাটা যদি দ্বিগুন হয় তাহলে আপনার বিক্রিও দ্বিগুন বেড়ে যাবে।
আপনার পণ্যের উপর সীমিত সময়ের জন্য আর্কষণীয় অফার দিন
বিক্রি বাড়ানোর একটি সেরা উপায় হলো আপনার পণ্যের উপর একটি সীমিত সময়ের অফার দেয়া। আপনার আর্কষণীয় এমন অফার আপনার বিক্রি মূহুর্তেই বাড়িয়ে দিবে।
এজন্য আপনার পেজেরEventঅপশনে গিয়েCreate Eventএ ক্লিক করে এখান থেকে একটি নতুন ইভেন্ট তৈরি করুন। এখানে আপনার কাছ থেকে চাওয়া তথ্যগুলো দিয়ে আপনি নতুন একটি ইভেন্ট তৈরি করতে পারবেন।
আপনার ইভেন্টের জন্য একটিPhotoদিন ও নাম নির্ধারণ করুন। সবচেয়ে গুরুত্বপুর্ন বিষয় হলো আপনার ইভেন্টের সময়সীমা। আপনার ইভেন্টটি কত সময় পর্যন্ত চালাতে চান তাScheduleঅপশন থেকে নির্ধারণ করে নিন।
আপনি কতটুকু অফার দিচ্ছেন তা ভালোভাবে জানিয়ে দিন। আপনি চাইলে ১০% বা ২৫% মূল্যছাড় এভাবে অফার দিতে পারবেন। অফারের ব্যপারটি আপনার মেধা খাটিয়ে সাজিয়ে নিন।
আপনার পণ্যের সীমিত সময়ের অফারে অডিয়েন্সরা খুব দ্রুত সাড়া দিবে। অফারের সময়টিতে আপনার বিক্রি দ্বিগুন থেকে কয়েকগুন পর্যন্ত বৃদ্ধি পেতে পারে।
বিজ্ঞাপণের জন্য ছবির পাশাপাশি ভিডিও দিন
অনেক সময় শুধুমাত্র একটি ছবি অডিয়েন্সের অনেক কৌতুহল মেটাতে পারে না। তাই এসব ক্ষেত্রে আপনি ভিডিও ব্যবহার করলে অডিয়েন্স আকৃষ্ট হয় বেশি।
তাই আপনার কনটেন্ট বড় হয়ে থাকলে অবশ্যই ভিডিও ব্যবহার করে বিজ্ঞাপণ দিন। তবে আবার যেমন-তেমন ভিডিও পোস্ট দিলে চলবে না। এজন্য অবশ্যইপ্রফেশনালমানের ভিডিও ব্যবহার করবেন।
আপনার ভিডিওতে আপনার পণ্যের ডিটেইলস খুব সহজেই ফুটিয়ে তুলতে পারবেন। এর সাথে বিজ্ঞাপণ হিসেবে ভিডিও দেয়ার কারণে অ্যাডভান্টেজ হিসেবে আপনার অডিয়েন্স আর্কষণ বাড়বে। আপনার পণ্যের উপর অডিয়েন্সের বিশ্বস্ততা বাড়বে এবং তারা আপনার পণ্য কিনতে আগ্রহী হবে।
এভাবে ভিডিও বিজ্ঞাপণ দিয়ে আপনার বিক্রি বাড়াতে পারবেন।
আয়ের উপর নির্ভর করে টার্গেট করুন
আপনি যদি একটু বেশি দামি পণ্য নিয়ে কাজ করেন তাহলে এমন লোকজনকেই টার্গেট করুন যাদের তা ক্রয় করার সার্ম্থ্য আছে।
এটা না করলে আপনি এমন সব লোকদের বিজ্ঞাপণ দিবেন যারা আপনার পন্য কেনার সার্ম্থ্যই রাখে না। তাই আপনি আয়ের উপর ভিত্তি করে লোকজনকে টার্গেট করা শুরু করে দিন।
এর ফলে আপনার বিজ্ঞাপণ সেই সব লোকজনের কাছেই পৌঁছাবে যারা আপনার পণ্য কেনার ক্ষমতা রাখে। তারাই আপনার পণ্যের ভবিষ্যত ক্রেতা। তাই তাদের টার্গেট করে আপনার বিজ্ঞাপণ চালিয়ে যান। এতে আপনার বিক্রি অবশ্যই বাড়বে।
আপনার বিজ্ঞাপণ অন্যান্য সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমগুলোতে ছড়িয়ে দিন
শুধু কি ফেসবুকে বিজ্ঞাপণ দিলেই চলবে? তাই ফেসবুকের পাশাপাশি আপনাকে অন্যান্য সামাজিক মাধ্যগুলোতেও বিজ্ঞাপণ দিতে হবে।
আমাদের সবাই কিন্তু ফেসবুক ব্যবহার করে না। অনেকেইInstagram,Twitter,LinkedInও ব্যবহার করে। আবার অনেকে আছে যারা একাধিক সামাজিক অ্যাপের সাথে যুক্ত।
আপনার পণ্য কেনার মত অনেক গ্রাহক এসব সাইটেও রয়েছে। তাই আপনি যদি ফেসবুকের পাশাপাশি এসব যোগাযোগ মাধ্যগুলোতে বিজ্ঞাপণ দিতে পারেন তাহলে আপনার বিক্রির সম্ভাবনা অনেক বেড়ে যাবে। এমনকি আপনার বিক্রি দ্বিগুন বেড়ে যেতে পারে।
তাই শুধু ফেসবুক নয়, সম্ভাবনাময় সব সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমকে কাজে লাগান।
আপনার ব্রান্ডের পরিচিতি তৈরি করুন
আপনার বিক্রি না বাড়ার অন্যতম কারণ হতে পারে আপানার পরিচিতির অভাব। আপনি হয়তো লক্ষ্য করে থাকবেন যে আপনার আশেপাশের পপুলার ব্রান্ডগুলোতে প্রচুর বিক্রি হচ্ছে।
এর একটাই কারণ জনপ্রিয়তা। তাই আপনার ব্রান্ডকে জনপ্রিয় করে তুলুন। নাহলে আপনার ভালো পণ্য বা সার্ভিস কোনোটাই কাজে আসবে না। কারণ মানুষ যদি আপনার ব্রান্ড সমন্ধে না-ই জানে তাহলে কেনার তো কোনো প্রশ্নই আসে না।
তাই আপনার ব্রান্ডের পরিচিতি অর্জন করুন। লোকজনকে আপনার ব্রান্ড সম্পর্কে জানান। পরিচিতি থাকলে এমনিতেই আপনার প্রচুর বিক্রি হবে।
আপনার পণ্যের একটি আর্কষণীয় দাম নির্ধারণ করুন
পণ্যের আবার আর্কষণীয় দাম? হ্যাঁ, এটাই বর্তমান সময়ের পণ্য বিক্রির একটি সেরা ট্রিকস।
আপনি নিশ্চই দেখে থাকবেন বিভিন্ন কোম্পানি তাদের পণ্যের দাম নির্ধারণের সময় একটি ভিন্ন স্টাইল ফলো করে। এজন্য কোনো পণ্যের দাম প্রায় সময়ই হয় ৯৯৯, ৩৯৯, ১৫৯৯৯ এরকম। কিন্তু ভেবে দেখেছেন কি কেন এরকম করা হয়?
আসলে কোনো পন্যের দাম ২০০০ টাকার বদলে তা ১৯৯৯ টাকা করা হলে আমাদের মস্তিষ্ক টাকার পরিমাণকে ১০০০ এর মধ্যেই সীমাবদ্ধ করে ফেলে। যার ফলে দামের অংকটা কম মনে হয়। আর এটিকে কাজে লাগিয়েই বিক্রেতারা এমন দাম নির্ধারণ করে থাকে।
তাই আপনার পণ্যের দাম নির্ধারণের ক্ষেত্রে সবসময় তা ৯ এর ঘরের মধ্যেই সীমাবদ্ধ রাখুন। এতে করে আপনার বিক্রি প্রচুর বেড়ে যাবে।
আপনি যদি বিক্রি নিয়ে কোন প্রকার চিন্তায় থাকেন তাহলে উপরের টিপসগুলো অনুসরণ করুন। আপনি এসব পদ্ধতিগুলো অনুসরণ করে খুব সহজেই আপনার বিক্রিকে দ্বিগুন বাড়াতে পারবেন।