সবচেয়ে বেশি উপার্জন যে ফুটবল খেলোয়াড়দের

বেতন-ভাতা নিয়ে ক্রিস্তিয়ানো রোনালদোর ক্ষোভ-হতাশা-অসন্তুষ্টি এখন প্রকাশ্য। মেসি-নেইমারদের তুলনায় অনেক কম বেতন বা পারিশ্রমিক পান, এ নিয়ে বেশ কয়েকবারই মনের ক্ষোভ উগড়ে দিয়েছেন রিয়াল মাদ্রিদের পর্তুগিজ সুপারস্টার। মৌসুমের শুরু থেকেই তাই ক্লাব কর্তাদের কাছে বেতন-ভাতা বাড়ানোর দাবি জানিয়ে আসছেন। বেতন-ভাতা নিয়ে রোনালদোর এই ক্ষোভ-অসন্তুষ্টিটা যুক্তি সংগতও। কতটা যৌক্তিক, সেটা বিশ্বের সর্বোচ্চ পারিশ্রমিক পাওয়া শীর্ষ ফুটবল খেলোয়ারদের তালিকাতেই স্পষ্ট।

সবচেয়ে বেশি উপার্জন যে ফুটবল খেলোয়াড়দের 1

সর্বোচ্চ পারিশ্রমিক পাওয়া শীর্ষ ১০ ফুটবলারের তালিকা প্রকাশ করেছে স্প্যানিশ ক্রীড়া দৈনিক মার্কা। তাতে দেখা যাচ্ছে, রোনালদোর জায়গা হয়েছে ৬ নম্বরে। ৫ বারের ব্যালন ডি’অর জয়ী। সময়ের অন্যতম সেরা তো বটেই; ৩২ বছর বয়সী রোনালদো জায়গা করে নিয়েছেন সর্বকালের সেরাদের ছোট্ট তালিকাতেই। সেই রোনালদো সর্বোচ্চ বেতনধারীদের তালিকার ৬ নম্বরে। মানে তার চেয়েও বেশি বেতন পান ৫ জন।

মেসি-নেইমার তো বটেই; অস্কার, এজেকুয়েল লাভেজ্জির মতো গড়পড়তা মানের খেলোয়াড়েরাও রোনালদোর চেয়ে বেশি পারিশ্রমিক পান! হ্যাঁ, মার্কার প্রকাশিত তালিকা নিশ্চিত করল সেটাই।

তালিকার এক নম্বর নামি লিওনেল মেসির। বার্সেলোনার সঙ্গে নতুন চুক্তির পরই আর্জেন্টাইন খুদে জাদকুর বনে গেছেন বিশ্বের সর্বোচ্চ পারিশ্রমিক পাওয়া ফুটবলার। দুইয়ে মেসিরই স্বদেশি কার্লোস তেভেজ। তিনে নেইমার। চারে অস্কার, পাঁচে লাভেজ্জি, ছয়ে রোনালদো।

বিশ্বের সর্বোচ্চ পারিশ্রমিক পাওয়া শীর্ষ ১০ ফুটবলাররা বছরে কে কত বেতন পান, পরিবর্তন পাঠকদের জন্য তা তুলে ধরা হলো।

১. লিওনেল মেসি, ৫০ মিলিয়ন ইউরো

সবচেয়ে বেশি উপার্জন যে ফুটবল খেলোয়াড়দের 2

গত মাসেই বার্সেলোনার সঙ্গে নতুন চুক্তিতে স্বাক্ষর করেছেন মেসি। যে চুক্তি তাকে বানিয়েছে বিশ্বের সর্বোচ্চ পারিশ্রমিক পাওয়া ফুটবলার। নতুন চুক্তি অনুযায়ী মেসির বছরে নেট বেতনই ৫০ মিলিয়ন ইউরো। বাংলাদেশি মুদ্রায় অঙ্কটা ৫০৪ কোটি ৮৬ লাখ ৮০ হাজার ৭০০ টাকা মাত্র!

২. কার্লোস তেভেজ, ৩৮ মিলিয়ন ইউরো

সবচেয়ে বেশি উপার্জন যে ফুটবল খেলোয়াড়দের 3

তেভেজের নামটি দুই নম্বরে থাকা নিয়ে অবশ্য একটা কিন্তু আছে। আর্জেন্টাইন ফরোয়ার্ড কদিন আগেই চীনা ক্লাব সাংহাই শেনহুয়া ছেড়ে নামি লিখিয়েছেন শৈশবের ক্লাব বোকা জুনিয়র্সে। আর্জেন্টাইন ক্লাবটিতে কত বেতন পাবেন, অঙ্কটা ঠিক জানা যায়নি।

তবে যতই পান, তাতে শীর্ষ ১০-এ জায়গা পাওয়া দূরের কথা, শীর্ষ ৫০০-তেও থাকতে পারবেন কিনা সন্দেহ। তবে গত ডিসেম্বরে মেসির নতুন চুক্তিতে স্বাক্ষরের আগ পর্যন্ত তিনিই ছিলেন বিশ্বের সর্বোচ্চ পারিশ্রমিক পাওয়া ফুটবলার।

নতুন চুক্তির পর মেসি তাকে ঠেলে দেন দুই নম্বরে। সাংহাই ছাড়লেও বেতনের হিসেবে চীনা ক্লাবটিতে বেতনের ভিত্তিতে তেভেজকেই এখনো দুই নম্বরে দেখানো হচ্ছে। চীনা ক্লাবটিতে ৩৩ বছর বয়সী তেভেজের বার্ষিক বেতন ছিল ৩৮ মিলিয়ন ইউরো! বাংলাদেশি মুদ্রায় ৩৮৩ কোটি ৬৯ লাখ ৯৭ হাজার ৩৩২ টাকা মাত্র।

৩. নেইমার, ৩৬ মিলিয়ন ইউরো

সবচেয়ে বেশি উপার্জন যে ফুটবল খেলোয়াড়দের 4

গত আগস্টে বার্সেলোনা থেকে রেকর্ড ২২২ মিলিয়ন ইউরোর ট্রান্সফার ফিতে নেইমারকে দলে ভেড়ায় পিএসজি। শুধু বিশাল অঙ্কের চুক্তিই নয়, পাশাপাশি ব্রাজিলিয়ান তারকাকে বিশাল অঙ্কের বেতনও দয় পিএসজি। ফরাসি ক্লাবটিতে নেইমারের বার্ষিক বেতন ধরা হয়েছে ৩৬ মিলিয়ন ইউরো। বা ৩৬৩ কোটি ৫০ লাখ ৫০ হাজার ১০৪ টাকা মাত্র।

৪. অস্কার, ২৪ মিলিয়ন ইউরো

সবচেয়ে বেশি উপার্জন যে ফুটবল খেলোয়াড়দের 5

সর্বোচ্চ বেতনধারীদের তালিকার ৪ নম্বরে অস্কারের নাম থাকাটা রীতিমতো বিস্ময়কর। ২০১৭ সালের জানুয়ারিতে ব্রাজিলিয়ান মিডফিল্ডারকে দলে ভিড়িয়ে এই চমক উপহার দেয় সাংহাই এসআইপিজি। চীনা ক্লাবটি ২৬ বছর বয়সী অস্কারকে ইংলিশ ক্লাব চেলসিকে থেকে দলে ভেড়ায় ৬০ মিলিয়ন ইউরোর চুক্তিতে। পাশাপাশি দিচ্ছে উচ্চ বেতনও। চীনা ক্লাবটিতে অস্কারের বার্ষিক বেতন ২৪ মিলিয়ন ইউরো। বাংলাদেশি মুদ্রায় ২৪২ কোটি ৩৩ লাখ ৬৬ হাজার ৭৩৬ টাকা।

৫. এজেকুয়েল লাভেজ্জি, ২৩ মিলিয়ন ইউরো

সবচেয়ে বেশি উপার্জন যে ফুটবল খেলোয়াড়দের 6

আর্জেন্টাইন ফরোয়ার্ডের নামটি ৫ নম্বরে থাকাটা আরও বেশি বিস্ময়কর। এই লাভেজ্জি চমকও বিশ্বকে উপহার দিয়েছে একটি চীনা ক্লাব। ২০১৬ সালে ৩২ বছর বয়সী আর্জেন্টাইন এই ফরোয়ার্ডকে কিনে নিয়েছে হেবেই চীনা ফর্চুন। চুক্তির অঙ্কটা কত, সেটা এখনো জানা যায়নি। তবে চীনা ক্লাবটিতে লাভেজ্জি বার্ষিক বেতন পাচ্ছেন ২৩ মিলিয়ন ইউরো বা ২৩২ কোটি ২৩ লাখ ৯৩ হাজার ১২২ টাকা।

৬. ক্রিস্তিয়ানো রোনালদো, ২১ মিলিয়ন ইউরো

অস্কার, লাভেজ্জিদের ৪-৫ নম্বরে থাকাটা যেমন বিস্ময়ের, ক্রিস্তিয়ানো রোনালদোর ৬ নম্বরে থাকাটা তার চেয়েও বেশি বিস্ময়ের। সময়ের অন্যতম সেরাই শুধু নয়, জাদুকরী পারফরম্যান্স রিয়াল মাদ্রিদের পর্তুগিজ ফরোয়ার্ড নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করেছেন অন্য উচ্চতায়। সেই রোনালদোর বার্ষিক বেতন কিনা প্রতিদ্বন্দ্বী মেসির অর্ধেকেরও কম! মাত্র ২১ মিলিয়ন ইউরো। ৫ বারের ব্যালন ডি’অর জয়ী’র ক্ষোভের কারণটা বোঝাই যাচ্ছে।

৭. হাল্ক, ২০ মিলিয়ন ইউরো

বিশ্ব ফুটবল ইতিহাসে যতজন ভাগ্যবান ফুটবলার আছেন, হাল্ক তাদের উপরের দিকেই থাকবেন। প্রতিভা-পারফরম্যান্স, কোনোটা দিয়েই ব্রাজিলিয়ান ফরোয়ার্ড ফুটবলবোদ্ধাদের মন জয় করতে পারেননি কখনো। এমনকি দর্শকদেরও নয়। অথচ তার ভাগ্য এতোই ভালো যে, সব সময়ই কোচদের কৃপা দৃষ্টি পেয়েছেন। গড়পড়তা মানের হয়েও নিয়মিত খেলেছেন ব্রাজিল জাতীয় দলে! শুধু কোচদের নয়, মহাভাগ্যবান হাল্ক কোন জাদুতে যেন ক্লাব কর্তাদের দৃষ্টিতেও মুগ্ধতার আবেশ ছিটাতে পারেন! আর সেই জাদুর জোরে কামিয়েও নিচ্ছেন মোটা দাগে।

হাল্কের মানের ফরোয়ার্ড বিশ্বে কত হাজার আছেন, সংখ্যানটা জানতে রীীতমতো জরিপ চালাতে হবে। তবে পারিশ্রমিক প্রাপ্তিতে তিনি ৭ নম্বরে! ক্রিস্তিয়ানো রেনালদোর ঠিক পরেই। ২০১৬ সালে রাশান ক্লাব জেনিত সেন্ট পিটার্সবার্গ থেকে ৩১ বছর বয়সী এই ব্রাজিলিয়ানকে দলে ভিড়িয়েছে চীনা ক্লাব সাংহাই এসআইপিজি।

যেখানে তিনি এখন জুটি বেঁধে খেলছেন স্বদেশি অস্কারের সঙ্গে। চীনা ক্লাবটি অস্কারের মতো এই হাল্ককেও বিশাল অঙ্কের বেতন দিচ্ছে। তার বার্ষিক বেতন ২০ মিলিয়ন ইউরো। মানে সর্বকালের অন্যতম সেরা রোনালদোর চেয়ে মাত্র ১ মিলিয়ন ইউরো কম!

Comments (No)

Leave a Reply

এই সাইটের কোন লেখা কপি করা সম্পুর্ন নিষেধ