বাংলাদেশের মন্ত্রী-এমপিদের বেতন কত?

সদ্য অনুষ্ঠিত হয়েছে বহুল আলোচিত একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন। দেশের অভ্যন্তরীণ দিক ছাড়িয়েও আন্তর্জাতিক অঙ্গনেও আলোচনায় ছিল এ নির্বাচন। এই নির্বাচন দিয়ে সংসদে নেতৃত্বে এসেছে ২৯৮ জনপ্রতিনিধি। এদের মধ্য থেকে মন্ত্রী, প্রতিমন্ত্রী ও উপমন্ত্রীর দায়িত্ব পেয়েছেন ৪৪ সংসদ সদস্য। বাংলাদেশের মন্ত্রী-এমপিদের বেতন কত?

বাংলাদেশের মন্ত্রী-এমপিদের বেতন কত? 1

কিন্তু দেশের একজন মন্ত্রী, প্রতিমন্ত্রী বা উপমন্ত্রীর বেতন কেমন ভাতা পান? এর বাইরে কি কি সুযোগ সুবিধা পান তারা? তা নিয়ে জনসাধারণের কৌতূহলের শেষ নেই। কারণ জীবন ধারণের তাগিদে অর্থের দিকে মানুষের যে দৌড় রয়েছে সেখানে একইভাবে বেতন-ভাতার লাইনেও দাঁড়িয়ে রয়েছেন দেশের মন্ত্রী-এমপিরাও।

চলুন জেনে নিই ২০১৫ সালে অনুমোদিত অষ্টম জাতীয় বেতন কাঠামো অনুযায়ী, রাষ্টপতি, প্রধানমন্ত্রী, মন্ত্রী ও উচ্চপদস্থদের বেতন ভাতার পরিমাণ-

রাষ্ট্রপতি

বর্তমানে বাংলাদেশে রাষ্ট্রপতির মূল বেতন মাসে এক লাখ ২০ হাজার টাকা।

প্রধানমন্ত্রী

প্রধানমন্ত্রীর বেতন মাসে এক লাখ ১৫ হাজার। মাসিক বাড়ি ভাড়া এক লাখ টাকা, প্রধানমন্ত্রীর দৈনিক ভাতা তিন হাজার টাকা।

স্পিকার

পার্লামেন্ট স্পিকার বেতন পান ১ লাখ ১২ হাজার টাকা।

প্রধান বিচারপতি

প্রধান বিচারপতি বর্তমানে বেতন পান ১ লাখ ১০ হাজার টাকা।

হাইকোর্টের বিচারক

উচ্চ আদালতের বিচারকরা মাসে বেতন পান ৯৫ হাজার টাকা।

মন্ত্রী

বর্তমানে বাংলাদেশের মন্ত্রীদের বেতন ১ লাখ ৫ হাজার। এ ছাড়া ডেপুটি স্পিকার, বিরোধী দলের নেতা, চিফ হুইপ একই বেতন পান। প্রতিমন্ত্রীর বেতন ৯২ হাজার এবং উপমন্ত্রীর বেতন ৮৬ হাজার ৫০০ টাকা।

তিন বাহিনীর প্রধান

সেনা, নৌ ও বিমানবাহিনী প্রধানের নির্ধারিত বেতন বর্তমানে ৮৬ হাজার টাকা। সর্বোচ্চ স্কেলের মূল বেতন ৭৮ হাজার টাকা হলেও মন্ত্রিপরিষদসচিব ও প্রধানমন্ত্রীর মুখ্যসচিব এবং তিন বাহিনীপ্রধানের মূল বেতন ৮৬ হাজার টাকা এবং জ্যেষ্ঠ সচিবদের ক্ষেত্রে ৮২ হাজার টাকা।

মন্ত্রী, প্রতিমন্ত্রী বা উপমন্ত্রী কাউকেই তাদের বেতনের জন্য কোন কর দিতে হয় না।

এছাড়া একজন মন্ত্রী আরো যেসব সুবিধা পান:

দৈনিক ভাতা: দুই হাজার টাকা

নিয়ামক ভাতা: মাসিক ১০ হাজার টাকা

স্বেচ্ছাধীন তহবিল: ১০ লাখ টাকা

বাংলাদেশের মন্ত্রী-এমপিদের বেতন কত? 2

মোবাইল ফোন কেনার জন্য ৭৫ হাজার টাকা। এছাড়া সরকারি খরচে সার্বক্ষণিক গাড়ি। ঢাকার বাইরে অফিসিয়াল ট্যুরের জন্য অতিরিক্ত একটি জিপ গাড়ি পাবেন, যার যাবতীয় খরচ সরকার বহন করবে। সরকারি খরচে রেল ভ্রমণ ও বিদেশ ভ্রমণ। বিনা ভাড়ায় সরকারি বাসভবন: গ্যাস, বিদ্যুৎ, পানি, টেলিফোনসহ ভবনটির যাবতীয় রক্ষণাবেক্ষণ সরকার বহন করবে। বিমান ভ্রমণের জন্য বীমা সুবিধা আট লাখ টাকা। সার্বক্ষণিক নিরাপত্তা প্রহরী।

আসবাবপত্র: সরকারি বাসায় সর্বোচ্চ পাঁচ লাখ টাকা মূল্যের আসবাবপত্র

সরকারি বাসায় না থাকলে: বাড়ি ভাড়া বাবদ ৮০ হাজার টাকা, সেই সঙ্গে বাড়ি ব্যবস্থাপনা খরচ ও সব ধরণের সেবা খাতের বিল

একজন প্রতিমন্ত্রী যেসব সুবিধা পান:

দৈনিক ভাতা: দেড় হাজার টাকা

প্রতিমন্ত্রীর নিয়ামক ভাতা: ৭ হাজার ৫০০ টাকা

স্বেচ্ছাধীন তহবিল: সাড়ে ৭ লাখ টাকা

মোবাইল ফোন কেনার জন্য ৭৫ হাজার টাকা

বিনা ভাড়ায় সরকারি বাসভবন: গ্যাস, বিদ্যুৎ, পানি, টেলিফোনসহ ভবনটির যাবতীয় রক্ষণাবেক্ষণ সরকার বহন করবে

আসবাবপত্র: সরকারি বাসায় সর্বোচ্চ চার লাখ টাকা মূল্যের আসবাবপত্র

সরকারি বাসায় না থাকলে: বাড়ি ভাড়া বাবদ ৭০ হাজার টাকা, সেই সঙ্গে গ্যাস, বিদ্যুৎ, পানি, টেলিফোনসহ সব ধরণের সেবা খাতের বিল ও বাড়ি ব্যবস্থাপনা খরচ।

একজন উপমন্ত্রী​​​​​​​ যেসব সুবিধা পান:

দৈনিক ভাতা: দেড় হাজার টাকা

নিয়ামক ভাতা: পাঁচ হাজার টাকা

স্বেচ্ছাধীন তহবিল: সাড়ে ৫ লাখ টাকা

মোবাইল ফোন কেনার জন্য ৭৫ হাজার টাকা

বিনা ভাড়ায় সরকারি বাসভবন: গ্যাস, বিদ্যুৎ, পানি, টেলিফোনসহ ভবনটির যাবতীয় রক্ষণাবেক্ষণ সরকার বহন করবে

আসবাবপত্র: সরকারি বাসায় সর্বোচ্চ চার লাখ টাকা মূল্যের আসবাবপত্র

সরকারি বাসায় না থাকলে: বাড়ি ভাড়া বাবদ ৭০ হাজার টাকা, সেই সঙ্গে বাড়ি ব্যবস্থাপনা খরচ ও সব ধরণের সেবা খাতের বিল

প্রসঙ্গত, অষ্টম বেতন কাঠামো বিল পাস হওয়ার আগ পর্যন্ত আগে রাষ্ট্রপতি বেতন পেতেন ৬১ হাজার ২০০ টাকা। সেই বেতন ৫৮ হাজার ৮০০ টাকা বাড়িয়ে করা হয়েছে এক লাখ ২০ হাজার টাকা। প্রধানমন্ত্রী পেতেন ৫৮ হাজার ৬০০ টাকা। এখন থেকে তিনি পাবেন এক লাখ ১৫ হাজার টাকা। অর্থাৎ প্রধানমন্ত্রীর বেতন বেড়েছে ৫৬ হাজার ৪০০ টাকা।

এ ছাড়া স্পিকারের বেতন ৫৪ হাজার ৮০০ টাকা বেড়ে দাঁড়িয়েছে এক লাখ ১২ হাজার টাকা। প্রধান বিচারপতির বেতন ৫৬ হাজার টাকা থেকে বেড়ে হয়েছে এক লাখ ১০ হাজার টাকা। জাতীয় সংসদের মন্ত্রীদের বেতন ৫১ হাজার ৯০০ টাকা বেড়ে হয়েছে এক লাখ পাঁচ হাজার টাকা। একই সমান বেড়েছে ডেপুটি স্পিকার, বিরোধীদলীয় নেতা, চিফ হুইপ ও আপিল বিভাগের বিচারকদের বেতন। এই পদমর্যাদার ব্যক্তিরা আগে পেতেন ৫৩ হাজার ১০০ টাকা, যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে এক লাখ পাঁচ হাজার টাকা।

হাইকোর্ট বিভাগের বিচারকরা আগে পেতেন ৪৯ হাজার টাকা। তা বেড়ে এখন দাঁড়িয়েছে ৯৫ হাজার টাকা। প্রতিমন্ত্রী, বিরোধীদলীয় উপনেতা ও হুইপরা আগে পেতেন ৪৭ হাজার ৮০০ টাকা, এখন তাঁরা পাবেন ৯২ হাজার টাকা।

উপমন্ত্রীদের বেতন ৪১ হাজার ৩৫০ টাকা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৮৬ হাজার ৫০০ টাকা। এ ছাড়া সাধারণ সংসদ সদস্যদের বেতন পুরোপুরি দ্বিগুণ হয়েছে। আগে তারা পেতেন ২৭ হাজার ৫০০ টাকা আর এখন তারা পাবেন ৫৫ হাজার টাকা।

এদিকে দলের সবুজ সংকেত নিয়ে একাদশ সংসদ নির্বাচনে মনোয়ন পেয়েছিলন ১৮৪৮ জন; তন্মধ্মে বিজয়ী হয়েছেন সংসদ সদস্য হোন ২৯৮ জন। বাংলাদেশে একজন সংসদ সদস্য বেতন-ভাতাসহ নানা ধরনের সুযোগ-সুবিধা ভোগ করেন।

বাংলাদেশের আইন অনুযায়ী একজন সংসদ সদস্য যেসব সুযোগ-সুবিধা পান সেগুলো হচ্ছে—

১. সংসদ সদস্যদের মাসিক বেতন ৫৫,০০০ টাকা

২. নির্বাচনি এলাকার ভাতা প্রতি মাসে ১২,৫০০ টাকা

৩. সম্মানী ভাতা প্রতি মাসে ৫,০০০ টাকা

৪. শুল্কমুক্তভাবে গাড়ি আমদানির সুবিধা

৫. মাসিক পরিবহন ভাতা ৭০,০০০ টাকা

৬. নির্বাচনি এলাকায় অফিস খরচের জন্য প্রতি মাসে ১৫,০০০ টাকা

৭. প্রতি মাসে লন্ড্রি ভাতা ১,৫০০ টাকা

৮. মাসিক ক্রোকারিজ, টয়লেট্রিজ কেনার জন্য ভাতা ৬,০০০ টাকা

৯. দেশের অভ্যন্তরে বার্ষিক ভ্রমণ খরচ ১,২০,০০০ টাকা

১০. স্বেচ্ছাধীন তহবিল বার্ষিক পাঁচ লাখ টাকা

১১. বাসায় টেলিফোন ভাতা বাবদ প্রতি মাসে ৭,৮০০ টাকা

১২. সংসদ সদস্যদের জন্য সংসদ ভবন এলাকায় এমপি হোস্টেল আছে।

এ ছাড়া ২০১৫-২০১৯ সাল পর্যন্ত একজন সংসদ সদস্য প্রতি বছর চার কোটি টাকা করে থোক বরাদ্দ পাবেন। এই থোক বরাদ্দের পরিমাণ আগে ছিল দুই কোটি টাকা।

উল্লেখ্য, ২০১৫ সালে সংসদ সদস্যদের বেতন-ভাতা দ্বিগুণ করে জাতীয় সংসদে বিল পাস হয়েছে। বিলের বিধান মতে, বেতন ১ জুলাই ২০১৫ এবং অন্যান্য ভাতা ১ জুলাই ২০১৬ থেকে কার্যকর হবে। এতে এমপিদের বর্তমান বেতন ২৭ হাজার ৫০০ টাকা থেকে বাড়িয়ে ৫৫ হাজার ‍টাকা করা হয়েছে। বেতনের পাশাপাশি অন্যান্য ভাতাও বাড়ানো হয়েছে।

বিলে সংসদ সদস্যদের ব্যয় নিয়ামক ভাতা তিন হাজার থেকে বাড়িয়ে পাঁচ হাজার টাকা, দৈনিক ভাতা ৩০০ টাকা থেকে বাড়িয়ে ৭৫০ টাকা, স্বেচ্ছাধীন তহবিল তিন লাখ থেকে বাড়িয়ে পাঁচ লাখ টাকা, নির্বাচনী এলাকার মাসিক খরচ সাড়ে সাত হাজার টাকা থেকে বাড়িয়ে ১২ হাজার ৫০০ টাকা, পরিবহন খরচের মাসিক ভাতা ৪০ হাজার টাকা থেকে বাড়িয়ে ৭০ হাজার টাকা, বার্ষিক ভ্রমণ খরচ ৭৫ হাজার টাকা থেকে বাড়িয়ে ১ লাখ ২০ হাজার টাকা, মাসিক লন্ড্রি ভাতা ১ হাজার থেকে বাড়িয়ে দেড় হাজার টাকা এবং মাসিক ক্রোকারিজ ভাতা ৪ হাজার থেকে বাড়িয়ে ৬ হাজার টাকা করা হয়েছে।

সংশোধনীর মাধ্যমে বেতন-ভাতা বাড়ানো হলেও আন্তর্জাতিক মহলে কি অবস্থা? প্রতিবেশি দেশ এবং আলোচিত দেশগুলোর প্রধানমন্ত্রীরা কে কত বেতন পেয়ে থাকেন বাৎসরিক!

শেখ হাসিনা

বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার মাসিক বেতন ২০১৫ সালে ৫৮ হাজার ৬০০ টাকা থেকে বাড়িয়ে এক লাখ ১৫ হাজার টাকা করা হয়েছে৷ ২০১৫ সালের মে মাসে এ সংক্রান্ত একটি বিল পাস হয়৷ বেতন বাড়ার পর বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীর বছরে মোট বেতন দাঁড়িয়েছে ১৩ লাখ ৮০ হাজার টাকা বা ১৭ হাজার ৫০০ মার্কিন ডলার৷

নরেন্দ্র মোদি

ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি বছরে ৩০ হাজার ৩০০ মার্কিন ডলার বেতন পান৷

ডোনাল্ড ট্রাম্প

মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের বেতন বছরে চার লাখ ডলার৷

আঙ্গেলা ম্যার্কেল

জার্মানির চ্যান্সেলর আঙ্গেলা ম্যার্কেল বছরে বেতন হিসেবে পান ২ লাখ ৩৪ হাজার ৪০০ মার্কিন ডলার৷

থেরেসা মে

যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রী থেরেসা মে বছরে বেতন পান ১ লাখ ৭৮ হাজার ২৫০ ডলার

জাস্টিন ট্রুডো

ক্যানাডার প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডো বছরে বেতন পান ২ লাখ ৬০ হাজার ডলার৷

রেচেপ তাইয়েপ এর্দোয়ান

তুরস্কের প্রেসিডেন্টের বছরে বেতন ১ লাখ ৯৭ হাজার ডলার৷

এমানুয়েল মাক্রোঁ

ফ্রান্সের প্রেসিডেন্টের বেতন বছরে ১ লাখ ৯৪ হাজার মার্কিন ডলার৷

ব্লাদিমির পুতিন

রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ব্লাদিমির পুতিনের বেতন অন্যদের তুলনায় খুব একটা বেশি নয়৷ বছরে তিনি পান ১ লাখ ৩৬ হাজার মার্কিন ডলার৷

Comments (No)

Leave a Reply

এই সাইটের কোন লেখা কপি করা সম্পুর্ন নিষেধ