ফেসবুক থেকে আয় ২০২৪
ফেসবুক থেকে আয় করার সকল উপায় ২০২৪(পূর্ণাঙ্গ গাইডলাইন) ) আমরা অনেকেই সোশ্যাল মিডিয়াতে অযথা নিজেদের মূল্যবান সময় নষ্ট করে থাকে। সারাদিন চ্যাট করা, পোস্ট দেখা, ভিডিও দেখা ইত্যাদি দেখে আমরা আমাদের মূল্যবান সময় অপচয় করে থাকি।
অপরদিকে, অনেক মানুষ চেষ্টা করে কিভাবে ফেসবুকে ব্যবহার করে অনলাইনে টাকা ইনকাম করা যায়। বা ফেসবুকে ব্যবহার করে কিভাবে লাভবান হওয়া যায়। আপনি যদি ভেবে থাকেন তাহলে আপনি একজন জিনিয়াস ব্যক্তি।
যেহেতু, আপনি গুগলে সার্চ দিয়ে এই আর্টিকেলটি পেয়েছেন এবং বিপুল আগ্রহের সঙ্গে পড়াও শুরু করে দিয়েছেন, তাই অবশ্যই আপনি অসাধারণদের দলেরই কেউ একজন।
ফেসবুক থেকে আয়
এই পোষ্টের মাধ্যমে আমরা সরাসরি Facebook থেকে টাকা আয় করার ফেসবুকের নিজস্ব কিছু সিস্টেম (যেমন: ফেসবুক মনিটাইজেশন বা In Stream Ads, Instant Article এবং Brand Collabs Manager প্রোগ্রাম) সম্পর্কে জানবো। পাশাপাশি বুদ্ধি খাটিয়ে কিভাবে ফেসবুক থেকে আয় এর পথ প্রশস্ত করা যায়, সেসব নিয়েও আলোচনা করব।
ফেসবুকে কিভাবে টাকা আয় করা যায় (Earn From Facebook)
আপনি যদি ফেসবুকে নতুন হয়ে থাকেন, তাহলে প্রথমেই আপনাকে পার্সোনাল এ্যাকাউন্ট এবং ফেসবুক পেজের মধ্যে পার্থক্য বুঝতে হবে। নতুনরা এই দুইটি টার্ম প্রায়ই গুলিয়ে ফেলে।
আপনি যদি ফেসবুকে রেজিস্ট্রেশন করে একটা এ্যাকাউন্ট খোলেন, তবে সেটাই হবে আপনার ফেসবুক এ্যাকাউন্ট। আর ফেসবুক এ্যাকাউন্ট সবসময়ই আপনার নিজের ব্যক্তিত্বের প্রতিনিধিত্ব করে।
অন্যদিকে ফেসবুক এ্যাকাউন্ট থেকে নিজের ব্যবসা বা শখের জন্য তৈরী করা প্রোফাইলগুলো হলো ফেসবুক পেজ। এসব পেজ সাধারণত ব্যবসায়ীক কাজে ব্যবহার করা হয়।
ফেসবুকে পার্সোনাল এ্যাকাউন্ট থেকে টাকা আয় করার বিশেষ কোনো সুযোগ নেই। ফেসবুক থেকে টাকা ইনকাম করার সকল উপায়ই মূলত ফেসবুক পেজ নির্ভর।
ফেসবুক এ্যাকাউন্ট দিয়ে টাকা ইনকাম
বর্তমানে কিছু ওয়েবসাইট ফেসবুকে পোস্ট শেয়ার করিয়ে টাকা ইনকামের সুযোগ করে দিয়েছে। OrdinaryIt সেইসব ওয়েবসাইটের মধ্যে অন্যতম একটি। এটি একটি বাংলাদেশি আইটি কোম্পানী। এখানকার আর্টিকেলগুলো প্রতিদিন ফেসবুক আইডি দিয়ে শেয়ার করলে তারা মাস শেষে সাধারণত ৬ শত থেকে ১ হাজার টাকা করে দেয়।
OrdinaryIT এর ওয়েবসাইটের পোস্ট শেয়ার করে টাকা ইনকাম করার ক্ষেত্রে আপনার ফেসবুক আইডিটিকে অবশ্যই জেনুয়িন হতে হবে, ফেইক হলে চলবে না। ফেসবুক ফ্রেন্ড সংখ্যা মিনিমাম ৫০০ হতে হবে এবং সকল পোস্টের প্রাইভেসী পাবলিক করা থাকতে হবে। প্রোফাইল লক রাখা যাবে না।
বাংলাদেশী সাইট হওয়ায় OrdinaryIT থেকে পেমেন্ট পাওয়া খুবই সহজ। বিকাশ বা রকেট দিয়েই মাস শেষে পেমেন্ট নেয়া যায়।
ফেসবুক পেজ দিয়ে টাকা আয় ২০২৪
ফেসবুক থেকে আয় করার বিষয়ে সিরিয়াস থাকলে এবং স্বপ্নের পরিধি অনেক বড় হলে, ফেসবুক পেজের মাধ্যমে আপনি তা পূরণ করতে পারবেন। নিচে ফেসবুক থেকে আয় করার উপায়গুলো সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করা হলো।
#১ In Stream Ads এর মাধ্যমে ফেসবুক থেকে আয়
আপনি নিশ্চয়ই ফেসবুকে ভিডিও দেখার সময় খেয়াল করেছেন, কিছু ভিডিও এর শুরুতে, মাঝখানে কিংবা শেষের দিকে ছোট ছোট বিজ্ঞাপন প্রদর্শিত হয়। এসব বিজ্ঞাপনগুলোকেই In Stream Ads বলা হয়ে থাকে।
ফেসবুক থেকে টাকা ইনকাম করার ক্ষেত্রে In Stream Ads ব্যবহার করা বেশ লাভজনক একটি উপায়। বর্তমানে যারা ভিডিও আপলোড করে ফেসবুক থেকে টাকা আয় করতে চাচ্ছে, তাদের মুল টার্গেটই থাকে এধরণের বিজ্ঞাপনের জন্য ফেসবুকের কাছ থেকে এ্যাপ্রুভাল আদায় করা।
In stream ads ব্যবহার করে ফেসবুক মনিটাইজেশন করার শর্তসমূহ
ফেসবুকে পেজ খুলে ইচ্ছেমতো ভিডিও আপলোড করা শুরু করে দিলেই আপনার ভিডিওতে ln Stream Ads প্রদর্শিত হবে না। ভিডিওতে In Stream Ads পেতে হলে ফেসবুকের কিছু শর্ত পূরণ করতে হবে। শর্তগুলো নিচে উল্লেখ করা হলো।
- একটা ফেসবুক পেজ থাকতে হবে।
- ফেসবুক পেজের ফলোয়ার সংখ্যা ১০,০০০ বা এর বেশি হতে হবে।
- পেজটির ভিডিওগুলোতে বিগত ৬০ দিনে কমপক্ষে (১ মিনিটের বেশি সময় যাবৎ দেখা হয়েছে এমন) ৩০,০০০ ভিউ থাকতে হবে। যেসকল ভিডিও ৩ মিনিটের বেশি সময়ের, শুধুমাত্র সেগুলোই এক্ষেত্রে কাউন্টের মধ্যে পড়বে।
শর্তগুলো দেখে ফেসবুক পেজ থেকে আয় করা খুব কঠিন মনে হলেও প্রকৃতপক্ষে এটা কঠিন কিছু নয়। ৩০-৩৫ টা ভিডিও আগেই বানিয়ে নিয়ে সেগুলো একসাথে ফেসবুকে আপলোড করলে সবগুলো ভিডিও মিলিয়ে ২ মাসে ৩০ হাজার ভিউ পাওয়া খুব কঠিন বিষয় নয়। কেননা, ফেসবুকে ব্যবহারকারীর সংখ্যা অনেক বেশি এবং তারা সবসময়ই নতুন ও মানসম্মত কিছু দেখার জন্য আগ্রহী হয়ে থাকে।
ফেসবুক In-Stream Ads প্রদর্শনের জন্য আপনার পেজটি উপযুক্ত কিনা জানার উপায়
আপনার ফেসবুক পেজ বিজ্ঞাপন প্রদর্শন করার জন্য যোগ্য হয়ে উঠেছে কিনা বা আপনার ফেসবুক পেজের ভিডিওগুলোতে ফেসবুক In-Stream Ads প্রদর্শন করতে পারবেন কিনা তা জানতে প্রথমেই আপনার পার্সোনাল ফেসবুক আইডিতে লগইন করুন। তারপর এই লিংকে ক্লিক করে “Go to creator studio” বাটনে চাপ দিন।
যদি আপনার ফেসবুক পেজ বিজ্ঞাপন প্রদর্শন করে আয় করার জন্য উপযুক্ত হয়ে থাকে, তবে সেখানে সবুজ রঙে “Eligible” লেখা থাকবে। আর যদি উপযুক্ত না হয়ে থাকে, তবে লাল রঙে “Not Eligible” লেখা ভেসে উঠবে।
শর্ত পূরণের চেষ্টা করা সত্ত্বেও লাল কালিতে “Not Eligible” লেখা ভেসে উঠলে ফেসবুকের উপরোক্ত শর্তগুলো ভালোভাবে লক্ষ্য করুন এবং সেগুলোর মাঝে কোন শর্তটি পূরণ হয়নি, সেটা বোঝার চেষ্টা করুন।
যদি আপনি ফেসবুকের শর্তসমূহ পূরণ করে ফেলেন এবং এখানে “Eligible” লেখা প্রদর্শিত হয়, তবে Creator Studio থেকেই In Stream Ads চালু করা যাবে। এক্ষেত্রে ফেসবুক আপনার নির্দিষ্ট কিছু ভিডিওতে স্বয়ংক্রিয়ভাবে কিংবা ম্যানুয়ালি In Stream Ads যুক্ত করতে দেবে।
জেনে রাখা ভালো, বিজ্ঞাপনের ধরণ এবং প্রদর্শন করার সময়ের ভিত্তিতে In Stream ads কে তিনভাগে ভাগ করা যায়। সেগুলো হলো:
- Pre roll ads: ফেসবুকে কোনো ভিডিও শুরু হওয়ার ঠিক আগ মূহুর্তে যেসব বিজ্ঞাপন প্রদর্শিত হয়, সেগুলোকে বলে Pre roll ads। এ ধরণের বিজ্ঞাপন সাধারণত কম সময়ের হয়ে থাকে।
- নতুন অবস্থায় Pre roll ads ব্যবহার না করাই ভালো। কারণ, অনেক ভিউয়ার শুরুতেই বিজ্ঞাপন দেখলে মূল ভিডিও শুরু হওয়ার আগেই ধৈর্য্য হাড়িয়ে ফেলে। কিন্তু, পরবর্তীতে যখন মানুষ আপনাকে চিনবে, তখন এ ধরণের বিজ্ঞাপন ব্যবহার করলে ভিউয়ারদের ধৈর্যের বিচ্যুতি ঘটার সম্ভাবনা থাকবে না।
- Mid-roll ads: ভিডিও চলাকালীন সময়ে যেসব বিজ্ঞাপন প্রদর্শিত হয়, সেগুলোকেই Mid roll ads বলা হয়ে থাকে। এসব বিজ্ঞাপন অনেকটাই টিভির বিজ্ঞাপনের মতো হুট করে চলে আসে।
- Image ads: এধরনের বিজ্ঞাপন ছবিকেন্দ্রিক। এক্ষেত্রে মূল ভিডিও এর নিচে বিজ্ঞাপনের একটি ছবি বা ব্যানার প্রদর্শিত হয়। আপনি যদি আপনার ভিডিও এর শুরুতে কিংবা মাঝখানে বিজ্ঞাপন ভিডিও প্রদর্শন করতে না চান, তবে এ ধরণের ছবি ভিত্তিক ফেসবুক বিজ্ঞাপন ব্যবহার করতে পারেন।
আপনি আপনার ভিডিওতে কোন ধরণের বিজ্ঞাপন প্রদর্শন করিয়ে ফেসবুক থেকে আয় করবেন, সেটা সম্পূর্ণভাবেই আপনার ব্যাপার। বিজ্ঞাপন প্রদর্শনের ক্ষেত্রে স্বাধীনতার এই ব্যাপারটি ভিডিও মেকারদের অনুপ্রেরণা বাড়িয়ে দেয়।
ভিডিও আপলোড করে আয় করার জন্য ইউটিউব বেশি ভালো? নাকি ফেসবুক?
অভিজ্ঞদের মতে, ইউটিউবের তুলনায় ফেসবুকের In Stream Ads ভিডিও আপলোড করে আয় করার জন্য বেশি লাভজনক। কারণ, ইউটিউবে প্রদর্শিত বিজ্ঞাপনসমূহ ২-৩ সেকেন্ড দেখে স্কিপ করা যায়। এতে ভিডিও মেকাররা বিজ্ঞাপনের পুরো টাকাটা পায় না। কিন্তু ফেসবুকে এরকম বিজ্ঞাপন স্কিপ করার কোনো সিস্টেম নেই। তাই ভিউয়ারকে বাধ্য হয়েই পুরো ভিডিওটা দেখতে হয় এবং ভিডিও মেকার বিজ্ঞাপনের পুরো টাকাটাই অর্জন করতে পারে।
এছাড়াও, ফেসবুক অনেক বেশি মানুষের আবাসস্থল হওয়ায় এখানে ভিডিও আপলোডের পর প্রচারণা চালানোও অনেক বেশি সহজ। তাই ভিডিওতে দর্শক আনতে খুব বেশি পরিশ্রম করতে হয় না।
অন্যদিকে ইউটিউবে ভিডিও পাবলিশ করলেও সেটি মানুষের কাছে পৌছে দেয়ার জন্য ফেসবুকে এসেই লিংক শেয়ার করতে হয়। তাই অবশ্যই ইউটিউবের তুলনায় ফেসবুকে ভিডিও আপলোড করে আয় বেশি সহজ।
ইউটিউবে পাবলিশ করা ভিডিও কি ফেসবুকে পাবলিশ করা যাবে?
ফেসবুকের বর্তমান পলিসি অনুযায়ী, ইউটিউবে পাবলিশ করা ভিডিও ফেসবুকে পাবলিশ করা যাবে, কিন্তু সেক্ষেত্রে ভিডিওটি অবশ্যই আপনার নিজের তৈরী হতে হবে।
ইউটিউবে থাকা অন্যের ভিডিও আপনার পেজে পাবলিশ করলে সঙ্গে সঙ্গেই ফেসবুক সেটা সড়িয়ে ফেলবে না। কারণ, আপনার ভিডিওটি অন্য প্লাটফর্ম থেকে কপি করা কিনা সেটা বোঝার ক্ষমতা ফেসবুক রোবটের নেই।
কিন্তু, কেউ একজন যদি সেই ভিডিওতে রিপোর্ট মারে, তবে সেটা যাচাইয়ের আওতায় চলে যাবে এবং অভিযোগ প্রমাণিত হলে আপনার পেজটি পরবর্তী কয়েক মাস কিংবা সারাজিবনের জন্য মনিটাইজেশন বা In Stream Ads এর সুবিধা হাড়িয়ে ফেলবে।
শুধু তাই নয়, ঐ ফেসবুক পেজে In Stream ads দ্বারা অর্জিত জমা থাকা আগের টাকা পয়সাও বাজেয়াপ্ত হওয়ার বিপুল সম্ভাবনা রয়েছে।
Comments (No)