“Without the online platform, I would not have been able to reach the customers,” says entrepreneur Tamanna Ruba
‘Digit All-এ আত্মনির্ভরশীল’ তামান্না রুবার গল্প
‘অনলাইন প্ল্যাটফর্ম না থাকলে আমি কাস্টমার পর্যন্ত পৌঁছাতে পারতাম না’ উদ্যোক্তা তামান্না রুবা/”Without the online platform, I would not have been able t0 reach the customers,” ‘আমার কাছে মনে হয়েছিল, আসলে জীবনে বলার মতো কিছুই করা হয়নি। আমার নিজের কোনো পরিচয় নেই। ওই ভাবনা থেকেই একদিন দুপুরে বাসার সদস্যদের সঙ্গে কথা বলতে বলতেই মূলত আমার এই উদ্যোগের শুরু।’
ফেসবুকভিত্তিক উদ্যোগ ‘সখের রান্না’ নিয়ে বলছিলেন উদ্যোক্তা তামান্না রুবা। নিজের পরিচয়ে পরিচিত হওয়ার স্বপ্ন নিয়ে শুরুটা করেছিলেন ২০২০ সালের জুন মাসে। আচার, পিঠা, ডেজার্টই ‘সখের রান্না’র নিয়মিত পণ্য। গ্রাহকদের চাহিদার ভিত্তিতে বিভিন্ন অনুষ্ঠানের খাবারও তৈরি ও সরবরাহ করেন তিনি।
যেদিন থেকে নিজের মধ্যে কিছু একটা করার প্রবল ইচ্ছা জাগে তামান্না রুবার, সেদিনই নিজের সক্ষমতা ও দক্ষতার জায়গাগুলো সামনে আনা শুরু করলেন। যেহেতু তিনি রান্না ভালো করেন, সবাই তাঁর খাবারের প্রশংসাও করেন, তাই সিদ্ধান্ত নিলেন, এটাকে নিয়েই এগোবেন।
কিন্তু খাবার রান্না করাটা নাহয় হলো, সেগুলো গ্রাহকদের কাছে পৌঁছাবেন কীভাবে? গ্রাহকরাই–বা কীভাবে জানবেন তিনি খাবার সরবরাহ করতে চান?
এ রকম নানান প্রশ্নের সমাধান করতেই রুবা বেছে নিলেন ডিজিটাল প্ল্যাটফর্মকে। রুবা বলেন, ‘অনলাইন প্ল্যাটফর্ম না থাকলে আমি কাস্টমার পর্যন্ত খাবার পৌঁছাতে পারতাম না।’
রুবার শুরুটা হয়েছিল ঐতিহ্যবাহী আচার আর পিঠা তৈরির মাধ্যমে। পাশাপাশি খাবার সরবরাহকারী বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের খোঁজ নেওয়া শুরু করেন। তারপর একে একে সেই প্রতিষ্ঠানগুলোয় নিবন্ধিত করে নেন ‘সখের রান্না’কে।
নিজস্ব কিছু জনবলও রাখেন গ্রাহকের কাছে খাবার পৌঁছে দিতে। শুরুটা পরিচিতজনদের মাধ্যমে হলেও ধীরে ধীরে ছড়িয়ে যেতে থাকে ‘সখের রান্না’র বিভিন্ন আইটেমের সুনাম। ফেসবুক পেজের মাধ্যমে খাদ্যরসিকদের কাছ থেকে আসতে থাকে অর্ডার, বাড়তে থাকে রুবার ব্যস্ততা।
নতুন কিছু শুরু করলে সেখানে প্রতিবন্ধকতা থাকবেই, থাকবে অনিশ্চয়তাও। কিন্তু আত্মনির্ভরশীল হওয়ার স্বপ্ন সফল করতে হলে পাড়ি দিতে হয় নানা প্রতিকূলতা।
‘শুরুতে আমি অনেক বুলিংয়ের শিকার হয়েছিলাম। যখন ফেসবুকে পেজটা খুলে বন্ধু আর পরিচিতদের আমন্ত্রণ (ইনভাইট) জানালাম, অনেকেই এটাকে ভালোভাবে নেয়নি। অনেকেই বলেছে, “মাস্টার্স পাস করে এগুলো কী শুরু করলে? এভাবে রান্না করে বাড়ি বাড়ি সাপ্লাই দেওয়া শিক্ষিত মানুষের কাজ নাকি? ভাত পাচ্ছে না, তাই এগুলো করছে!
”’ আত্মপ্রত্যয়ী রুবা বলতে থাকেন, ‘শুরুর দিকে আমি এসব কথা শুনে খুব লজ্জা পেতাম। যেহেতু তখন করোনাকাল, প্রায় সারা দিনই বাসায়ই থাকা হয়, তাই নিজেকে সাহস দিতে শুরু করলাম, কিছু একটা করবই। হাল ছাড়া যাবে না। তারপর ধীরে ধীরে আমার পেজটা সবার কাছে আস্থা অর্জন করল। সাহস বেড়ে গেল।’
গত তিন বছরে প্রাপ্তি বা ভালো লাগা কী? রুবা বলেন, ‘আমার দেখাদেখি পরিচিত-অপরিচিত অনেকেই এ রকম উদ্যোগ শুরু করেছে। এটা নিঃসন্দেহে আমার ও “সখের রান্না”র অন্যতম প্রাপ্তি। আর গ্রাহকদের কাছ থেকে যখন আমার রান্নার ইতিবাচক প্রতিক্রিয়া পাই, তখন অন্য রকম এক ভালো লাগা কাজ করে।’
একজন গৃহিণী বাসায় সব সময়ই কোনো না কোনো কাজের মধ্যে থাকেন, তার ফাঁকে আলাদা করে সময় বের করা খুব কঠিন। এ ব্যাপারে রুবা বলেন, ‘পরিবারের সদস্যদের সহযোগিতা ছাড়া আমার পক্ষে এটা বাস্তবায়ন করা সম্ভব হতো না। আমার বাচ্চারা প্রথম দিন থেকেই পেজ গোছানো, লোগো তৈরি থেকে শুরু করে সব কাজে খুব সাহায্য করেছে।’
পথচলার এ পর্যায়ে এসে সন্তানরা তাই মায়ের ব্যবসাকে আরও বড় দেখতে চাচ্ছে। তাই ভবিষ্যতের পরিকল্পনাও রয়েছে তামান্না রুবার। তিনি বলেন, ‘আমার “সখের রান্না”কে দেশের বাইরে নিয়ে যাওয়ার স্বপ্ন দেখি। এর মধ্যে স্বল্প পরিসরে ইতালি, কানাডা, আমেরিকা ও অস্ট্রেলিয়ায় আচার ও পিঠা পাঠিয়েছি। যদিও এটা ছিল ব্যক্তিভিত্তিক, ভবিষ্যতে ইচ্ছা, আমার মাধ্যমেই বিভিন্ন দেশের খাবারপ্রেমীরা বাংলাদেশের ঐতিহ্যবাহী খাবারগুলোর স্বাদ ও স্বাতন্ত্র্য বুঝতে পারবেন।’
বিশ্ব নারী দিবস উপলক্ষে তামান্না রুবার মতো ডিজিটাল প্ল্যাটফর্ম ব্যবহার করে বিভিন্ন ক্ষেত্রে আত্মনির্ভরশীল হওয়া নারীদের গল্প নিয়ে নির্মিত হয়েছে বিশেষ ভিডিও চিত্র। প্রথম আলো ডটকম ও শীর্ষস্থানীয় ফার্নিচার ব্র্যান্ড হাতিলের যৌথ আয়োজনে ‘DigitAll-এ আত্মনির্ভরশীল’ শিরোনামের ভিডিওগুলো প্রকাশিত হয়েছে প্রথম আলো ডটকম, প্রথম আলোর ফেসবুক পেজ ও ইউটিউব চ্যানেলে।