ফুটপাতে করা যাবে এই লাভজনক ব্যবসা গুলো – (সেরা ৮টি ব্যবসা 2022 )ফুটপাতে লাভজনক ব্যবসা: ভারতের মতো দেশে প্রচুর জনসংখ্যা ও সেই অনুপাতে চাকুরির সুযোগ বেশিভাগই প্রায় নিম্নমুখী থাকাই কিংবা ব্যক্তিগত কারণে বহু মানুষই ব্যবসাকেই নিজের পেশা হিসেবে বেছে নিতে চাইছেন।
আর, ব্যবসা একটি সম্মানীয় পেশা হওয়ার পাশাপাশি এখানে যথেষ্ট পুঁজিরও দরকার থাকে।
কিন্তু, আমাদের সবার কাছে সেই উল্লেখযোগ্য পরিমাণ মূলধনের জোগানের ক্ষমতা থাকে না।
তাই, সেক্ষেত্রে আমরা কম মূলধন নিয়েই ফুটপাথের ব্যবসার দিকে ঝুঁকতে পারি।
আজকে আমাদের এই আর্টিকেলে আমরা আলোচনা করবো, ফুটপাতে করা যাবে এমন কিছু লাভজনক ব্যবসাগুলোর সম্পর্কে।
এই ফুটপাতের ব্যবসা কি ?
দিল্লি, কলকাতা, মুম্বাই থেকে শুরু করে ভারতের প্রতিটা ব্যস্ত শহরের রাস্তাতেই বহু মানুষ ফুটপাথের ধারে নিজেদের পণ্য পথচলতি মানুষের কাছে বিক্রি করে নিজেদের জীবিকা নির্বাহ করে।
আমাদের দেশে ফুটপাথের ব্যবসা যথেষ্ট জনপ্রিয় এবং বহু মানুষই রাস্তার ধারের দোকানগুলো থেকে পণ্য বা পরিষেবা নিতে ভালোবাসে। কম পুঁজিতে পুষ্টিকর ব্যবসা করার অন্যতম সেরা উপায় হল এই ফুটপাথের ব্যবসা।
এই ধরণের ব্যবসা থেকে শুরু করে বহু মানুষই সফলতা পেয়ে নিজের ব্যবসাকে বাড়িয়ে যথেষ্ট উন্নতি করতে পেরেছে।
তাই, আপনার হাতে যদি সীমিত মূলধন থাকে, তবে সেক্ষেত্রে ফুটপাথে ব্যবসা করার অপশনটা কিন্তু, আপনার কাছে লাভজনক হতে পারে।
আর, আমরা জানিই যে, এই দুনিয়াতে কোনো কাজই ছোট নয়, তাই ফুটপাতের ব্যবসা করা নিয়ে দোনামোনা করার কোনো চান্সই নেই।
এছাড়াও,
ফুটপাতে ব্যবসা করার পিছনে বেশ কতগুলো সুবিধাজনক দৃষ্টিভঙ্গি রয়েছে:
– এই ব্যবসার ক্ষেত্রে পুঁজির চাহিদা বহু ব্যবসার তুলনায় অনেকটাই কম হয়ে থাকে।
– কোনো স্থায়ী দোকান, জমি ভাড়া করা বা কেনার প্রয়োজন লাগে না।
– এই ব্যবসাতে একাধিক লোকবলের প্রয়োজনও খুবই কম থাকে।
– এখানে সিকিউরিটি ডিপোজিট দেওয়ার কোনো দরকার লাগে না।
– লাভের ক্ষেত্রে পুরো লাভটাই নিজের পকেটে আসে।
তাই বোঝাই যাচ্ছে যে, তুলনামূলভাবে ফুটপাথের ব্যবসা কিন্তু আসলেই হল সস্তায় লাভজনক ব্যবসা।
আমরা কেন ফুটপাতের ব্যবসাকে বেছে নেবো ?
ফুটপাতে ব্যবসা শুরু করার প্রধান কারণ হিসেবে বলা যায় যে, যথার্থ পরিমাণ মূলধনের অভাব।
আমাদের মধ্যে অনেক মানুষের কাছেই বড় দোকান খুলে ব্যবসা শুরু করার মতো সামর্থ্য বা সাহস, কোনোটাই থাকে না।
অথচ, সেইভাবে দেখতে গেলে, ফুটপাতের ব্যবসাতে পুঁজি অনেকটাই কম লাগে।
তবে, সেক্ষেত্রে আপনাকে মাসিক, সাপ্তাহিক কিংবা দৈনিক চাঁদা দিতে হতে পারে।
আর, আপনার প্রোডাক্ট বা কাঁচামাল অথবা আপনার অস্থায়ী দোকান নির্মাণের যেটুকু খরচ, শুধু সেইটুকুই আপনাকে দিতে হয়।
অন্যদিকে, দেখতে গেলে ফুটপাথের ব্যবসার ক্ষেত্রে পুঁজি কম লাগায়, ব্যর্থ হলেও সেখানে ঝুঁকির সম্ভাবনা তুলনামূলকভাবে কম থাকে।
সত্যি কথা বলতে, পথচলতি রাস্তায় বিক্রিবাটা যেকোনো বড় মার্কেটের দোকানের তুলনায় অনেকটাই বেশি হয়ে থাকে।
তাই, রাস্তায় ব্যবসা করে বলে কাউকে ছোট করে দেখা অনুচিত, কারণ এখান থেকে মানুষ প্রচুর কাঁচা টাকা রোজগার করতে সক্ষম।
এছাড়াও, ফুটপাতে ব্যবসা করার ভালো আইডিয়া থাকলেই এই বিসনেস একচেটিয়াভাবে চালিয়ে যাওয়া সম্ভব।
ফুটপাতের লাভজনক ব্যবসা গুলোর তালিকা
১. গার্মেন্টেসের বিজনেস:
আপনি নিজেই ভেবে দেখুন, আমরা কম-বেশি সবাই ফুটপাথের জামা কিনতে ভালোবাসি, কিংবা যখন সেল চলে তখন একরকম হামলে পড়েই একটার দামে দুটো জামা প্রায় কিনেই ফেলি।
তাই, দিল্লি, কলকাতা ও আরও অন্যান্য শহরের ফুটপাথে গার্মেন্টেসের ব্যবসা কিন্তু বেশ জনপ্রিয়।
বিশেষ করে, মেয়েদের স্কুল-কলেজ বা অফিসপাড়ার এলাকাতে রমরম করে চলে জামাকাপড়ের ব্যবসা।
এই কারণেই, কম পুঁজিতে আপনি এই ব্যবসা আরামসে শুরু করার কথা ভাবতে পারেন।
আপনি প্রথমে ১০০টার মতো টপ-কুর্তি-শাড়ী কিংবা টি-শার্ট কিনে বিক্রি করে বাজারটাকে যাচাই করে নিন।
তারপর দেখুন, কোন ধরনের পণ্য বিক্রিতে আপনার সবথেকে বেশি লাভ হচ্ছে।
তবে, দাম কম রাখার পাশাপাশি কাপড়ের মানও যথেষ্ট ভালো রাখার চেষ্টা করবেন, নাহলে লোকসান হতে পারে।
২. ফুটওয়ারের বিজনেস:
এসপ্ল্যানেড বা গড়িয়াহাটের মতো ব্যস্ত ফুটপাথে জুতোর দোকান তো আমরা হামেশাই দেখে থাকি।
আরও দেখি, বহু মানুষকে সেই জুতোর দোকানে ভিড় করে জুতো কিনতে।
কম দামে স্টাইলিশ জুতো কেনার নেশা আমাদের অনেকের মধ্যেই রয়েছে।
দোকানের জুতো যতই টেকসই হোক না কেন, ফ্যান্সি জুতোর কম দামে বেশি কালেকশন অনেককেই ব্যাপকভাবে আকর্ষণ করে।
এই কারণে, ফুটপাথে জুতোর সেল সবথেকে বেশি।
আপনার জুতোর দোকানে ভালো লাইটিংয়ের ব্যবস্থা করে ফ্যান্সি জুতোর কলেক্শন কিনে দোকান সাজালে কাস্টোমারকে সহজেই টেনে আনতে পারবেন।
আর, এই ব্যবসার শুরুতে খরচও খুব বেশি হয় না।
৩. কসমেটিক্সের বিজনেস:
যতই লিপস্টিক-নেইলপলিশ-মাস্কারা বা সাজার জিনিস থাকুক না কেন, মেয়েদের মেকআপ অ্যাক্সেসসারি কেনার নেশা কোনোদিনও যাবে না।
তাই, সাধ থাকলেও সাধ্যের বাইরে অনেক মেকআপের অ্যাক্সেসসারির দাম থাকায় বহু মহিলাই ফুটপাথ থেকে কসমেটিক্স কিনতে ভালোবাসেন।
কলকাতার এসপ্ল্যানেড এই ফুটপাথ কসমেটিক্সের বিজনেসের সেরা জায়গা।
ফুটপাথ ছাড়াও ভ্যান বা মুভিং ভেহিকেল থেকেও কসমেটিক্স ব্যবসা চালিয়ে যাওয়া সম্ভব।
আর, এখানে পুঁজির পরিমাণও কম লাগে।
৪. চা-কফি-পকোড়ার:
শুনতে কেমন-কেমন লাগলেও, চা-কফির ব্যবসাতে লোকসান করেছে এরকম মানুষ খুঁজে পাওয়া মুশকিল।
বর্তমানে, চা-কফি নিয়ে বহু তরুণ উদ্যোগপতিই এই ব্যবসাকে বিশেষ জনপ্রিয় করে তুলছে।
কোনো পাড়ায় চায়ের দোকান কিংবা কলেজ-অফিসের বাইরের এলাকার চা-কফির দোকান খোলা হচ্ছে সবথেকে সেরা অপশন।
এছাড়াও, আপনি আপনার ফুটপাথের দোকান থেকে আর্ল গ্রেই, মাল্টা, টার্কি, ইরানিয়ান, ও আরও নানান ধরণের অভিনব চায়ের ব্যবসাও চালাতে পারেন।
চেষ্টা করবেন, মেইন রোড, মার্কেট বা অফিস এলাকাতে দোকান রাখার, কারণ এইসব এলাকাতে এই ব্যবসায় সফলতার সম্ভাবনা বেশি।
রকমারি চায়ের দোকান খুলতে চাইলে আপনি ২০,০০০ থেকে ৫০,০০০ টাকা বিনিয়োগ করলেই চলবে।
আর, সাধারণ চা-কফির দোকান এর থেকে আরও কম দামে খোলা সম্ভব।
হ্যাঁ, অবশ্যই এর জন্যে আপনাকে জবরদস্ত চা বা কফি বানাতে জানতেই হবে!
৫. স্ন্যাক্সের বিজনেস:
এগ রোল, চাউমিন, মোমো, ভেলপুরি, পাও ভাজি, ও আরও জনপ্রিয় স্ন্যাক্সের আড্ডাখানা হল ফুটপাথ।
যতই বড় দোকান থেকেই খান না কেন, ফুটপাথের দোকানে খাবারের যে স্বাদ, সে স্বাদের কোনো ভাগ হয় না।
আমাদের মতো এরকম অনেক মানুষই এই একই রকমের ধারণা নিয়ে চলে।
তাই, ব্যস্ত ফুটপাথে আপনার একটা সুস্বাদু স্ন্যাক্স কর্নার থাকলে, সেটার জিভে-জল-আনা ঘ্রাণে মানুষকে আকৃষ্ট করাই যায়।
তবে, সবার আগে, এই ব্যবসাতে প্রয়োজন ভালো করে রান্না করতে শেখা।
আর, স্ট্রিট-সাইড দোকান হলেও দোকানের হাইজিন ও খাবারের মান বজায় রাখার পাশাপাশি সময়মতো খাবারের যোগান দেওয়া অতি প্রয়োজনীয়।
শুরুতে ২০,০০০ থেকে ৩০,০০০ টাকার মধ্যেই স্ন্যাক্সের ব্যবসা করা সম্ভব।
সেরকম বাজেট না থাকলে পকোড়া, চপ বা স্যান্ডউইচের দোকানও খুলতে পারেন।
৬. কাঁচাবাজারের বিজনেস:
ফুটপাথে বিজনেসের আরেকটা ভালো আইডিয়া হল কাঁচাবাজারের ব্যবসা।
চলতি-ফিরতি পথে, বহু মানুষই রাস্তা থেকেই মাসকাবারি মশলাপাতি, রান্নার নানান উপকরণের বাজার করে নেওয়া পছন্দ করেন।
এই ব্যবসা আপনি বাজার-সংক্রান্ত এলাকা বা স্টেশন এলাকার ফুটপাথ থেকে শুরু করলে লাভ করতে পারবেন।
তবে, এক্ষেত্রে, আপনার ফুটের দোকানের পরিষ্কার-পরিছন্নতার ব্যাপারে বিশেষ খেয়াল রাখবেন আর দাম অনুযায়ী মানও ভালো রাখার চেষ্টা করবেন।
এই ব্যবসাতেও খুব সামান্য পুঁজিই যথেষ্ট।
৭. মোবাইল অ্যাক্সেসরিজ ও ইলেক্ট্রনিক পণ্যের বিজনেস:
এই দেশে কটা লোক দামি হেডফোন ব্যবহার করেন?
ঠিকই ধরেছেন, খুব কম মানুষই এখানে দামি হেডফোন ব্যবহার করেন।
আর, বাকিরা সস্তায় চায়না হেডসেটেই দিন কাটায়।
যার ফলে, একটা আজকে খারাপ, তো পরশু আরেটা- তা সত্ত্বেও সস্তা হেডফোনের চাহিদার কোনো শেষ নেই।
আর, এই হেডফোন কিংবা অন্যান্য মোবাইল ইলেক্ট্রনিক্সের বিক্রি-বাটার সেরা জায়গা হল ফুটপাথ।
এখানে, হেডফোন, মোবাইল কভার, রাউটার, সাউন্ড বক্স, স্পিকার- সবরকমের ইলেক্ট্রনিক সামগ্রীই পাওয়া সম্ভব।
কলকাতার চাঁদনীচক হল এই সব মোবাইল অ্যাক্সেসরিজ ও ইলেক্ট্রনিক পণ্যের বিজনেসের মূল ঘাঁটি।
আপনার হাতে গোটা কুড়ি হাজার থাকলেই এই ব্যবসা শুরু করা যায়।
তবে, আপনি, ঘড়ির দোকানও দিয়ে দেখতে পারেন।
৮. ফলের বিজনেস:
সারা বছর ধরে মানুষের মধ্যে ফলের চাহিদা থাকেই।
আর, আমাদের দেশে ফলের দোকান বেশিরভাগ রাস্তাতেই বসে।
সেক্ষেত্রে, আপনি ফল বিক্রির ব্যবসার শুরু করতে পারেন।
আর, এই ব্যবসাতে পুঁজিও বেশ কমই লাগে।
এছাড়াও, আপনি বাদাম কিংবা পপকর্নের ব্যবসাতেও ফুটপাথকে বেছে নিতে পারেন
আপনি যদি ফুটপাথে নিজের ব্যবসা শুরু করেন, তবে প্রথম দিকে বেশ কিছু অসুবিধা হতে পারে।
আপনি দালালের খপ্পরে পড়তে পারেন, বেআইনিভাবে দোকান চালানোর অভিযোগে পুলিশের চোখে পড়তে পারেন কিংবা আপনার আগে থেকেই যারা ফুটপাথ বিজনেস চালাচ্ছে, তাদের থেকে বাধাও পেতে পারেন।
সহজ এফিলিয়েটস ডট কম Sohojaffiliates.com
আর আপনি যদি একেবারে নতুন হন তাহলে আপনার জন্য ভাল হবে সহজ এফিলিয়েট। এখানে মাত্র ৫ টা ভিডিও টিউটোরিয়াল দেখেই কাজ করতে পারবেন। ৫০০ টাকা হলেই উইথড্র দিতে পারবেন। ১ থেকে ২ ঘন্টায় পেমেন্ট দিয়ে দেয়। সাইটের লিংক সহজ এফিলিয়েটস।
তবে, আপনি আমার পণ্যের মান বজায় রেখে যদি সঠিক স্থানে দোকান দিতে পারেন- তবে এই ব্যবসায় লাভ নিশ্চিত।
প্রথমে ছোট করে এই ব্যবসা শুরু করুন আর ধীরে-ধীরে নিজের ব্যবসার সুযোগ বাড়ান।
আর, ব্যবসায়িক কৌশলগুলো ক্রমাগত শিখতে থাকলে, এই ফুটপাথের ব্যবসার সুযোগও অনেকটা বেড়ে যায়।
আমাদের আজকের ফুটপাতে লাভজনক ব্যবসা নিয়ে লেখা আর্টিকেলটি এখানেই শেষ হল।
লেখাটি পছন্দ হলে অবশ্যই তা কমেন্টের মাধ্যমে জানাবেন।
Comments (No)