ডোমেইন কি? ডোমেইন কত প্রকার? বিস্তারিত জানুন

ডোমেইন কি এবং ডোমেইন (Domain) সম্পর্কে  বিস্তারিত আলোচনা করা হয়েছে। আপনি যদি ডোমেইন কি তা জেনে না থাকেন কিংবা ডোমেইন সম্পর্কে বিস্তারিত জানার আগ্রহ বোধ করেন, তবে মনোযোগ দিয়ে পড়ুন।

ডোমেইন কি:

যেকোনো ওয়েবসাইটেরও একটি নির্দিষ্ট নাম রাখতে হয়। আর এই নির্দিষ্ট নামটাই হলো কোনো ওয়েবসাইটের ডোমেইন।

আরো সহজভাবে বলতে গেলে, কোনো নির্দিষ্ট ব্যক্তি বা প্রাণীর পরিচয়কে অল্প সময়ে ফুটিয়ে তুলতে আমরা নির্দিষ্ট শব্দ ব্যবহার করে থাকি। বাঙ্গালীরা বাংলা ভাষায় এই নির্দিষ্ট শব্দকে ‘নাম’ বলে সম্বোধন করে। অন্যদিকে, ইংরেজরা ইংরেজি ভাষায় একে বলে থাকে ‘নেম (Name)’ । আর এভাবেই, পৃথিবীর সব মানুষ ওয়েবসাইটের ভাষায় যেকোনো ওয়েবসাইটের নির্দিষ্ট নামকে সম্বোধন করে থাকে ‘ডোমেইন’ বলে।

যেমনঃ আপনি এখন এই লিখাটি যে ওয়েবসাইটে পড়ছেন, সেটার নাম হলো https://www.eshoaykori.com

https://www.eshoaykori.com এই ওয়েবসাইটের নাম। আর ওয়েবসাইটের নাম মানেই ডোমেইন।

ডোমেইনকে একটি ওয়েবসাইটের ঠিকানাও বলা হয়ে থাকে। কারণ ব্রাউজারে কোনো ওয়েবসাইটের ডোমেইনের নাম লিখলেই  ব্রাউজার আপনাকে সেই নির্দিষ্ট ওয়েবসাইটে নির্বিঘ্নে পৌছে দেয়।

আপনি নিশ্চয়ই জানেন, facebook.com জনপ্রিয় একটি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম। ব্রাউজারের Url ফর্মে সঠিকভাবে facebook.com লিখলে ব্রাউজার আপনাকে ফেসবুকের ওয়েবসাইটে পাঠিয়ে দেয়। withbangla.com সহ যেকোনো ওয়েবসাইটের ক্ষেত্রেও একই ব্যাপারটি ঘটে থাকে। কারণ একটি ডোমেইন একটি ওয়েবসাইটের শুধুমাত্র নাম নয়, ঠিকানাও বটে।

একটি ওয়েবসাইট বা ব্লগ তৈরীর সময় প্রথমেই একটি ডোমেইনের প্রয়োজন পড়ে। ডোমেইনই একটি ওয়েবসাইটকে অন্য যেকোনো ওয়েবসাইটের থেকে আলাদা হিসেবে পরিচয় করিয়ে দেয়।

ডোমেইন ও হোস্টিং কি একই জিনিস?

ডোমেইন ও হোস্টিং এক জিনিস নয়। কিন্তু এরা একটি অন্যটির সাথে ওতপ্রোতভাবে জড়িত।

ডোমেইন হচ্ছে একটি ওয়েবসাইটের নাম ও ঠিকানা। আর হোস্টিং হলো সেই ওয়েবসাইটের স্টোরেজ বা সকল তথ্য জমা রাখার জায়গা।

ওয়েবসাইট তৈরীর সময় ডোমেইন ও হোস্টিং আলাদা আলাদা ভাবে কিনে নিতে হয়।

ডোমেইন যে প্রতিষ্ঠান থেকেই কেনা হোক না কেন,  মূল্যের তারতম্য থাকলেও এর সুযোগ সুবিধা একই রকম থাকে৷

অন্য দিকে হোস্টিং এর ক্ষেত্রে ব্যাপারটি সম্পূর্ণ আলাদা। হোস্টিং এর একেকটি প্রতিষ্ঠান একেক রকম মূল্যে ভিন্ন ভিন্ন সুযোগ সুবিধা প্রদান করে।

এছাড়াও একটি ডোমেইন কেউ একজন কিনে নিলে, ওই ডোমেইনটি আগের মালিকের অধিনে থাকা অবস্থায় অন্য কেউ আর কিনতে পারে না। সারা পৃথিবীতে একেকটি ডোমেইন হয় সম্পূর্ণভাবে  অনন্য। কিন্তু হোস্টিং তা নয়।

তবে ডোমেইন ও হোস্টিং এর মধ্যকার একটি বড় মিল হলো, এদের দুটোকেই একমেয়াদি হিসেবে সাধারণত কেনা যায় না। আমাদের বলা ‘ডোমেইন কিনলাম’ কথাটা ভুল। ‘ডোমেইন ভাড়া নিলাম’ কথাটা বলা উচিৎ। কারণ ডোমেইন ১ বছর ও হোস্টিং ১ মাস কিংবা ১ বছরের জন্য ভাড়া করতে হয়। ভাড়ার মেয়াদ ফুরিয়ে গেলে অগ্রিম টাকা দিয়ে পুনরায় ভাড়া করতে হয়, যেটাকে বলা হয় ‘রিনিউ (Renew) করা’।

ডোমেইনের অংশসমূহ:

প্রতিটি ডোমেইনের দুইটি অংশ থাকে। অংশ দুইটির একটি হলো নাম এবং অন্যটি এক্সটেনশন।

https://www.eshoaykori.com/  ডোমেইনটির ডট(.) চিহ্নের বাম দিকের অংশটুকু হচ্ছে নাম এবং ডট(.) চিহ্নের ডান পাশের অংশটুকুকে বলা হয় এক্সটেনশন।

একটি ডোমেইনের ‘নাম’ অংশে ইচ্ছেমতো শব্দ ব্যবহার করা যায়, যদি সেটা ইতিমধ্যেই অন্যকেউ না নিয়ে থাকে। আর এক্সটেনশন অংশে আগে থেকেই ঠিক করে রাখা বেশ কয়েকটি ইলিমেন্ট আছে, যেগুলোর যেকোনো একটি ব্যবহার করা যায়। যেমনঃ .com, .net, .info, .me, .blog, .org, .bd, .us ইত্যাদী।একেকটি এক্সটেনশন একেক ধরণের ওয়েবসাইটের জন্য রাখা হয়েছে। যেমন: .com এক্সটেনশনটি রাখা হয়েছে কমার্শিয়াল ওয়েবসাইটে ব্যবহার করার জন্য। .org এক্সটেনশনটি রাখা হয়েছে বিভিন্ন সংস্থার ওয়েবসাইটে ব্যবহার জন্য।

ডোমেইনের প্রকারভেদ:

ডোমেইন কি? ডোমেইন কত প্রকার? বিস্তারিত জানুন 1

ডোমেইন বিভিন্ন প্রকারের হয়ে থাকে। সাধারণত এক্সটেনশনের ওপর ভিত্তি করে ডোমেইনকে ৪ ভাগে ভাগ করা হয়। যেমন-

  1. টপ লেভেল ডোমেইন
  2. কান্ট্রি লেভেল ডোমেইন
  3. ফ্রি ডোমেইন
  4. সাব ডোমেইন

টপ লেভেল ডোমেইন

যে এক্সটেনশনওয়ালা ডোমেইনগুলোর ডিমান্ড সবচেয়ে বেশি, সেই এক্সটেনশনওয়ালা ডোমেইনগুলোকে বলা হয় টপ লেভেল ডোমেইন। টপ লেভেল ডোমেইনগুলো টাকার বিনিময়ে কিনে নিতে হয়। সার্চ ইঞ্জিনগুলো এধরণের ডোমেইনকে বেশি গুরুত্ব দিয়ে থাকে এবং ভিজিটররাও টপ লেভেল ডোমেইন দেখলে আলাদা সমীহ করে।

টপ লেভেল ডোমেইনের মধ্যে আছে .com, .net, .info, .org সহ ইত্যাদী এক্সটেনশন।

বর্তমানে ব্লগ ও সাধারণ ওয়েবসাইটের ক্ষেত্রে .com এক্সটেনশনটি সবচেয়ে বেশি জনপ্রিয়তা পাচ্ছে।

কান্ট্রি লেভেল ডোমেইন

যে এক্সটেনশনওয়ালা ডোমেইনগুলো নির্দিষ্ট দেশকে ইঙ্গিত করে, সেগুলোকে কান্ট্রি লেভেল ডোমেইন বলা হয়। কান্ট্রি লেভেল ডোমেইনের মাধ্যমে নির্দিষ্ট দেশের মানুষকে টার্গেট করা হয়ে থাকে। কান্ট্রি লেভেল ডোমেইনওয়ালা ওয়েবসাইট নির্দিষ্ট দেশ হতে অন্য যেকোনো টপ লেভেল ডোমেইনওয়ালা ওয়েবসাইট অপেক্ষা বেশি ভিজিটর আনতে সক্ষম।

কান্ট্রি লেভেল ডোমেইনের মধ্যে রয়েছে বাংলাদেশের জন্য .bd, ইন্ডিয়ার জন্য .in, মালয়েশিয়ার জন্য .my, যুক্তরাজ্যের জন্য .uk, যুক্তরাষ্ট্রের জন্য .us এক্সটেনশনসহ ইত্যাদী। আপনার ওয়েবসাইটটি যদি একাধিক দেশের মানুষের জন্য প্রযোজ্য হয়ে থাকে, তবে কান্ট্রি লেভেল ডোমেইন ব্যবহার না করাই ভালো।

ফ্রি ডোমেইন:

যে সকল এক্সটেনশনওয়ালা ডোমেইন ফ্রিতে পাওয়া যায়, সেগুলোকে ফ্রি ডোমেইন বলে। এধরণের ডোমেইনকে লো লেভেল ডোমেইনও বলা হয়ে থাকে।

লো লেভেল ডোমেইনের মধ্যে আছে .tk, .cf, .gq, .ml সহ ইত্যাদী।

Freenom.Com থেকে খুব সহজেই এধরণের ডোমেইন আপনি নিজের করে নিতে পারেন। তবে সিরিয়াস টাইপ ওয়েবসাইটের জন্য ফ্রি ডোমেইন ব্যবহার না করাই বুদ্ধিমানের কাজ। কারণ এগুলোর ব্যবহার পুরোপুরি অনিরাপদ।

কেন অনিরাপদ, সেটা বলি। যেকোনো টপ লেভেল ডোমেইন আপনি যদি ১০ থেকে ১৫ ডলার দিয়ে কিনে নেন, তাহলে ঐ ডোমেইনটি  আপনার নিয়ন্ত্রণে থাকা অবস্থায় অন্য কেউ ডোমেইন বিক্রির প্রতিষ্ঠানকে হাজার ডলার দিতে চাইলেও প্রতিষ্ঠানটি এতে রাজি হতে পারবে না। অথচ ফ্রি ডোমেইনের ক্ষেত্রে বিষয়টি হতাশাজনক।

আপনি যদি Freenom থেকে কোনো ফ্রি ডোমেইন মাংনা কেনেন, আর আপনার ডোমেইনটি যদি অন্য কারো পছন্দ হয়ে যায়, তবে মাত্র ৮ থেকে ১৫ ডলার দিয়ে সে আপনার ডোমেইনটি কিনে বা কেড়ে নিতে পারবে। যেহেতু আপনি ডোমেইনটি নিয়েছিলেন একদম ফ্রিতে, তাই আপনার কিছু বলার অধিকারও থাকবে না।

সাব ডোমেইন

সাবডোমেইন আলাদাভাবে কোনো প্রতিষ্ঠান থেকে নিতে হয়না। কোনো একটি ডোমেইন কিনে নিলে, সেই ডোমেইনের মাধ্যমেই একাধিক সাব ডোমেইন তৈরী করা যায়।

যেমনঃ মনে করুন, আপনি কোনো ডোমেইন বিক্রির প্রতিষ্ঠান হতে amarwebsite.com নামে একটি ডোমেইন কিনে ফেললেন। এবার এই একটা ডোমেইনের মাধ্যমেই আপনি আরো ডোমেইন তৈরী করতে পারবেন এবং সেগুলো ব্যবহার করে ভিন্ন ভিন্ন ওয়েবসাইট তৈরী করতেও সক্ষম হবেন।

এক্ষেত্রে প্রতিটি নতুন ডোমেইনের এক্সটেনশন অংশে .com এর পরিবর্তে থাকবে .eshoaykori.com অংশটি। যেমনঃ
www.eshoaykori.com
www.username.eshoaykori.com ইত্যাদী।

প্রোমো ও প্রিমিয়াম ডোমেইন:

বিভিন্ন জায়গায় আজকাল এই দুই প্রকার ডোমেইনের নাম চোখে পড়ছে। অনেকেই জানে না এই দুইটি শব্দ দ্বারা আসলে কি ধরণের ডোমেইনকে বোঝানো হয়ে থাকে।

প্রোমো ডোমেইন:

প্রোমো ডোমেইন নামে আদৌ কোনো কিছু নেই। এই শব্দটি ডোমেইন সম্পর্কে অজ্ঞ কিছু ব্যক্তি তৈরী করেছে।

ডোমেইন বিক্রির ইন্টারন্যাশনাল বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান বিভিন্ন উপলক্ষে মাঝে মাঝে বিশেষ ছাড়ে (প্রায় ১-৩ ডলারে) ডোমেইন বিক্রি করে থাকে। বাংলাদেশী কিছু ছোট প্রতিষ্ঠান সেই ছাড়ওয়ালা ডোমেইন ১-৩ ডলার দিয়ে কিনে গ্রাহকের কাছে ৪-৫ ডলারে বিক্রি করে দেয়৷ আর নাম দেয় প্রোমো ডোমেইন!

সবচেয়ে খারাপ ব্যাপার হলো, প্রোমো ডোমেইন সরবরাহ করা এসব দেশীয় ছোট ছোট প্রতিষ্ঠান ডোমেইনের পুরো কন্ট্রোল আপনাকে দেবে না। মানে, ডোমেইনের মালিক আপনি হবেন না। হবে তারা। এছাড়া বছর শেষে ডোমেইন রিনিউ করতে গেলে পড়তে হবে বিশাল বিপাকে।

তাই অবশ্যই অনির্ভর‍যোগ্য কোনো ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানের কাছ থেকে প্রোমো ডোমেইন কিনতে যাবেন না। যদি কিনতেই হয়, সরাসরি ঐসব ইন্টারন্যাশনাল প্রতিষ্ঠানের কাছ থেকেই কিনবেন, কোনো মাধ্যমের সহায়তায় নয়।

প্রিমিয়াম ডোমেইন:

প্রিমিয়াম ডোমেইন হচ্ছে হাই রেটিংওয়ালা ডিমেন্ডিং ডোমেইন। বিভিন্ন ডোমেইনের মালিকরা তাদের পরিশ্রম ও মেধাকে কাজে লাগিয়ে একটি সাধারণ ডোমেইনকে প্রিমিয়াম লেভেলে নিয়ে যায়। তারপর ইচ্ছেমতো দামে বিক্রির জন্য প্রচার করে।

প্রচুর ব্যাকলিংক তৈরী থাকায় একটি প্রিমিয়াম  ডোমেইন ব্যবহার করে সার্চ ইঞ্জিনে দ্রুত র‍্যাংক ও প্রচুর ভিজিটর পাওয়া সহজ ব্যাপার। এজন্য বাজারে প্রিমিয়াম ডোমেইনের প্রচুর চাহিদা রয়েছে।প্রিমিয়াম ডোমেইনের একটি বড় ভালো দিক হলো, এগুলো কেনার জন্য প্রচুর ডলার লেগে গেলেও পরবর্তী বছর রিনিউ করার সময় সাধারণ রেট বা ১০-১৫ ডলারই দিতে হয়, কেনার মূল্য দিতে হয়না।

আমাদের শেষ কথা :-

ডোমেইন কিভাবে কিনতে হয়, কেনার আগে কি কি জানতে হয়- সেসব বোঝার পূর্বে ডোমেইন কি ও এর প্রকারভেদ সম্পর্কে বিস্তারিত জানা প্রয়োজন। তাই এই আলোচনায় ডোমেইন কি ও ডোমেইন সম্পর্কে মোটামুটি বিস্তারিত আলোচনা করা হয়েছে। আশা করি এই লেখাটি ধৈর্য্য সহকারে পড়ে আপনি ডোমেইন সম্পর্কে অনেককিছু জানতে পেরেছেন।

Comments (No)

Leave a Reply

এই সাইটের কোন লেখা কপি করা সম্পুর্ন নিষেধ