ইন্টারনেটে ঘন্টার পর ঘন্টা সোস্যাল মিডিয়াতে ব্যয় না করে আপনি চাইলেই বাড়তি কিছু আয়-রোজগারের ব্যবস্থাও করতে পারেন। এর জন্য প্রয়োজন শুধু আপনার ইচ্ছা শক্তি। খুব বেশি কিছু জানা লাগবে এর জন্য তেমনটাও না। সবচেয়ে মজার ব্যাপার হলো, বেশিরভাগ ক্ষেত্রে কেবলমাত্র ইন্টারনেট সংযোগ বাদে খরচ করতে হয় না বাড়তি কোনো টাকা। টাকা ছাড়াই আয় করতে পারবেন যে ১০ ব্যবসা। অনলাইনে টাকা উপার্জন করা যায় এমন দশটি কাজ নিয়েই আজকের এই প্রতিবেদন।
১.ভার্চুয়াল এসিসটেন্ট:
বর্তমান তথ্যপ্রযুক্তির এই যুগে অনেক প্রতিষ্ঠান আছে যেগুলি পুরোপুরি অনলাইন নির্ভর। এদের কোনো ফিস নেই। সব কাজ অনলাইনের মাধ্যমেই করা হয়। এই অনলাইন নির্ভর প্রতিষ্ঠানগুলির বিভিন্ন কাজ যেমন ক্রেতাদের বিভিন্ন সেবা সম্পর্কে তথ্য দেওয়া, ফোনকল রিসিভ করা, অ্যাপয়নমেন্ট ঠিক করা ও ইমেইল লেখার জন্যে দরকার হয় ভার্চুয়াল এসিসটেন্টের। প্রাথমিকভাবে দুই-একজন ক্লায়েন্টকে দিয়ে কাজটা শুরু করে পরবর্তীতে হাত পেঁকে গেলে একাধিক ক্লায়েন্টের সাথে কাজ করা সম্ভব।
২.বিজনেস কোচ:
আপনি কোনো একটি বিশেষ ক্ষেত্রে অভিজ্ঞ হলে সেই অভিজ্ঞতাটাকে ব্যবহার করতে পারেন উপার্জনের পথ হিসেবে। অনলাইনে বিশ্বের নানান দেশের মানুষজনকে শেখাতে পারেন আপনি যা জানেন। অনলাইনে বিভিন্ন টিউটোরিয়াল তৈরি করেও চাইলে উপার্জন করতে পারেন।
৩.ফ্রিল্যান্স কন্টেন্ট ক্রিয়েটর:
ভার্চুয়াল জগতে বর্তমানে কন্টেন্ট দিয়ে মার্কেটিং করার ব্যাপারটা খুবই জনপ্রিয়। সবাই নিজেদের পণ্যটা জনপ্রিয় হোক তা চায়। আপনি যদি একজন ভালো লেখক হন তাহলে চাইলেই বিভিন্ন পণ্য নিয়ে লেখালেখি করে উপার্জনের একটি পথ করতে পারেন।
৪.ইবে স্টোর মালিক:
অনলাইনে কেনাকাটার ওয়েবসাইটগুলির মধ্যে ইবে খুবই জনপ্রিয়। ভাবছেন সেখান থেকে কেমন করে আয় করা সম্ভব! আসলেই একটু খোঁজ খবর করলেই আপনিও ইবে স্টোর মালিক বনে যেতে পারেন। এটা হবে সম্পূর্ণই ভার্চুয়ালি । আপনাকে মনে রাখতে হবে, প্রায়ই বিভিন্ন পণ্য বিশাল ছাড়ে বিক্রি করে ইবে। মূল বুদ্ধিটা হলো, কম দামে পণ্য কিনে পরবর্তীতে বেশি দামে বিক্রি করা।
এজন্যে খুব বেশি ঝামেলা পোহাতে হবে যে তা নয়। সবসময় ইবে-তে নজর রাখতে হবে আর যেকোন প্রকার মূল্যহ্রাস আসলেই পণ্যটি কিনে ফেলতে হবে। পরবর্তীতে মূল্যহ্রাস শেষ হয়ে গেলে জিনিসটার স্বাভাবিক যে দাম তাতেই তা বিক্রি করে দিতে পারবেন।
৫.টি-শার্টের অনলাইন স্টোর:
বর্তমানে টি-শার্টের ব্যবসা করার ব্যাপারটা খুবই সহজলভ্য হয়ে গিয়েছে। আর অনলাইনে বিক্রির ব্যবস্থা করতে পারলেতো কথাই নেই! একটা সময় ছিলো যখন বিশাল পরিমাণে অর্ডার না করলে কোনো প্রতিষ্ঠান টি-শার্ট তৈরি করে দিতো না। কিন্তু বর্তমানে অল্প খরচে কম পরিমাণে টিশার্ট তৈরি করানো সম্ভব। ফেসবুকে একটি পেইজ খুলে বিভিন্ন ডিজাইনের ভালো মানের টি-শার্ট বিক্রি শুরু করলে সহজেই ক্রেতাদেরকে আকৃষ্ট করা সম্ভব।
৬.অনলাইন কনসালটেন্ট:
কনসালটেন্সি বা পরামর্শক হিসেবেও অনলাইনে একটি ভালো পেশা গড়া সম্ভব। তার আগে আপনাকে অবশ্যই কোন একটি বিষয়ে বিশেষজ্ঞ না হলেও সেই বিষয় সম্পর্কে ভালো জ্ঞান থাকতে হবে। একজন পরামর্শদাতা সবসময়ই জানে যে সে কী নিয়ে কথা বলছে। অনলাইনে এবং অনলাইনের বাইরের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান প্রায়ই বিভিন্ন পরিস্থিতিতে ব্যবসায়িক সিদ্ধান্ত গ্রহণে অনলাইনে জনপ্রিয় পরামর্শদাতাদের স্মরণাপন্ন হয়।
৭.অ্যাফিলিয়েট মার্কেটার:
অ্যাফিলিয়েট মার্কেটিংয়ের কাজটি এই তালিকায় থাকা অন্য কাজগুলির চেয়ে একটু বেশি খরচসাপেক্ষ। কারণ, এক্ষেত্রে আপনার বিভিন্ন পণ্য ও সেবা গ্রহণ করতে হবে। অ্যাফিলিয়েট মার্কেটিংয়ে মূলত যা হয় তা হলো আপনি অনলাইনে একটি সেবা গ্রহণ করেন এবং তা আপনার পরিচিতজনদের কাছে প্রোমোট করেন। আপনি যাদের কাছে প্রোমোট করেছেন তারা যদি আপনার কথায় সন্তুষ্ট হয়ে সেবাটি গ্রহণ করে তবে সেই প্রতিষ্ঠান লাভ থেকে একটা অংশ আপনাকে প্রদান করে।
৮.সোস্যাল মিডিয়া ইনফ্লুয়েন্সার:
সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে যদি আপনার অনেক ফলোয়ার থাকে তাহলে সেটাও আপনার সামনে উপার্জনের একটি পথ খুলে দিতে পারে। আর এক্ষেত্রে উপার্জনের পরিমাণটাও বেশ বড়! অবাক হচ্ছেন? অবাক করা হলেও এটি আসলেই সম্ভব। আপনার ফেসবুক প্রোফাইলে একটি পণ্য প্রোমোট করে প্রতিদিন কয়েক শত এমনকি হাজার ডলার করেও উপার্জন করা সম্ভব! তবে এক্ষেত্রে বেশ বড়সড় পরিমাণে ফলোয়ারের পাশাপাশি আপনাকে এটাও নিশ্চিত করতে হবে যে আপনার ফলোয়াররা আপনি যা বলেন তা গুরুত্ব সহকারে নেয়।
৯.ভিডিও ব্লগিং:
আপনি যদি অবসরে ইউটিউবে পরে থাকেন তাহলে ভি-ব্লগ শব্দটির সাথে আপনার পরিচিতি থাকার কথা। ভিডিও ব্লগ হলো প্রতিদিনের জীবনে ঘটে যাওয়া বিভিন্ন ঘটনাকে ভিডিও করে অনলাইনে পোস্ট করা। বর্তমানে ভিডিও ব্লগিংয়ের মূল কনসেপ্টটা বিপুল মাত্রায় জনপ্রিয় এবং ইউটিউবে ভিডিও ব্লগ আপলোড করে বেশ ভালো পরিমাণে অর্থ উপার্জন করছেন অসংখ্য ইউটিউবার।
১০.গ্রাফিক্স ডিজাইনার/ওয়েব ডেভেলপার:
অনলাইনে কেউ কোনোকিছু করতে গেলে শুরুতেই তাদের যা দরকার হয় তা হলো একটি ওয়েবসাইট ও নিজেদের একটি লোগো। আপনি গ্রাফিক্স ডিজাইনিং বা ওয়েবসাইট ডেভেলপিং-এ অভিজ্ঞ হলে ইন্টারনেটের জগতে আপনার কাজের অভাব হবে না। এই তালিকায় থাকা অন্যান্য কাজগুলির চেয়ে সবচেয়ে বেশি সহজলভ্য কাজ এই দুটিই। না পারলেও সমস্যা নেই।
বর্তমানে দেশে অসংখ্য প্রতিষ্ঠান কোর্স করায় গ্রাফিক্স ডিজাইনিং বা ওয়েবসাইট ডেভেলপিংয়ের উপর। ইচ্ছাশক্তি থাকলে আর সেই ইচ্ছাশক্তিটির প্রয়োগ ঘটাতে পারলে কেবলমাত্র কয়েক মাসের মধ্যেই আপনি একজন গ্রাফিক্স ডিজাইনার বা ওয়েব ডেভেলপারে পরিণত হতে পারবেন! আর বাড়তি সাহায্য হিসেবে ইউটিউবে রয়েছে এসবের উপর অসংখ্য টিউটোরিয়াল।
Comments (No)