মানুষের আর্থিক সক্ষমতা বাড়ার সাথে সাথে পাল্লা দিয়ে বাড়ছে গাড়ির চাহিদা। এই অবস্থায় বিভিন্ন ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান এগিয়ে আসছে গ্রাহকদের গাড়ি কেনার ঋণ দিতে। সব মিলিয়ে গাড়িকেন্দ্রিক বিভিন্ন ব্যবসায়ের বিকাশ ঘটছে। গাড়ি কিনতে ঋণ পাওয়া এখন আর কঠিন কিছুই নয়। সহজ শর্ত ও প্রতিযোগিতামূলক সুদ হার—এ দুটো মিলেই গাড়ি এখন সচ্ছল গ্রাহকদের হাতের মুঠোয়। গাড়ি ঋণ এখন নিন সহজে
সহজ শর্ত ও প্রতিযোগিতামূলক সুদ হার—এ দুটো মিলেই গাড়ি এখন সচ্ছল গ্রাহকদের হাতের মুঠোয়। গ্রাহক নয়, ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোই এখন ঋণ দিতে গ্রাহকের পেছনে ছুটছে। গাড়ি কিনতে দামের অর্ধেক জোগান দিচ্ছে ব্যাংক। আর আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলো ৮৫ শতাংশ পর্যন্ত ঋণসুবিধা দিচ্ছে গ্রাহকদের। তাই নিজের প্রয়োজনে গাড়ি কেনা এখন কোনো স্বপ্ন নয়।
গ্রাহকদের সুবিধা দিতে ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলো এখন নিজেরাই গাড়িবিক্রেতা প্রতিষ্ঠানগুলোর সঙ্গে চুক্তিবদ্ধ হচ্ছে। পুরোনো গাড়ি কিনতেও পাওয়া যাচ্ছে ঋণ।
২০১৪ সালের আগস্টে ব্যক্তিপর্যায়ে গাড়ি কেনায় ব্যাংকঋণের সীমা দ্বিগুণ করে বাংলাদেশ ব্যাংক। গাড়ি কিনতে আগে ব্যাংকের ২০ লাখ টাকা ঋণ দেওয়ার সুযোগ ছিল, ২০১৪ সালে তা বাড়িয়ে ৪০ লাখ টাকা করা হয়। একই সঙ্গে গাড়ি কেনায় ঋণ ও নিজস্ব অর্থের অনুপাতে পরিবর্তন এনে ৫০: ৫০ করা হয়। আগে গাড়ির দামের সর্বোচ্চ ৩০ শতাংশ ঋণ দিতে পারত ব্যাংক। গাড়ি ব্যবসায়ীদের সংগঠন বাংলাদেশ রিকন্ডিশন্ড ভেহিকলস ইমপোর্টার্স অ্যান্ড ডিলারস অ্যাসোসিয়েশনের (বারভিডা) চাপেই এ পরিবর্তন আনে বাংলাদেশ ব্যাংক। তবে আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলো এক কোটি টাকা পর্যন্ত ঋণসুবিধা দিচ্ছে।
আর্থিক প্রতিষ্ঠান ইন্ডাস্ট্রিয়াল প্রমোশন অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট কোম্পানি অব বাংলাদেশ লিমিটেড (আইপিডিসি) পুরোনো গাড়ি কিনতেও ঋণ দিচ্ছে। এক দিনে অনুমোদনের পাশাপাশি ৮৫ শতাংশ পর্যন্ত ঋণ দেয় প্রতিষ্ঠানটি। সুদের হার ধরা হচ্ছে ১০ দশমিক ৯০ শতাংশ। শিক্ষক, চিকিৎসক, নারী উদ্যোক্তা ও তরুণ নির্বাহীরা পাচ্ছেন বিশেষ সুবিধা। ৫-১০ লাখ টাকায় পুরোনো গাড়ি, ২৫-৩০ লাখ টাকায় রিকন্ডিশন্ড গাড়ি এবং ১ কোটি টাকায় বিলাসবহুল সব ধরনের ঋণসুবিধা দিচ্ছে। ঘোষণা দিয়ে কোনো ধরনের গোপন মাশুল রাখছে না আইপিডিসি। থাকছে ছয় বছর পর্যন্ত ঋণ পরিশোধের সুযোগও। ফলে গ্রাহকের পছন্দের নাম এখন আইপিডিসি।
আইপিডিসির অটো ঋণ বিভাগের প্রধান এইচ এম পারভেজ খান প্রথম আলোকে বলেন, ‘পুরোনো গাড়ি কিনতেও আমরা ৮৫ শতাংশ পর্যন্ত ঋণ প্রদান করছি। আর ঋণ অনুমোদন হচ্ছে এক দিনেই। ঋণের মেয়াদও দেওয়া হচ্ছে অন্যদের তুলনায় বেশি। সাড়াও ভালো পাওয়া যাচ্ছে।’
বেসরকারি খাতের ব্র্যাক ব্যাংকও এখন এক দিনেই গাড়ির ঋণের আবেদনে অনুমোদন দিচ্ছে। গাড়ির দামের অর্ধেক অথবা সর্বোচ্চ ৪০ লাখ টাকা পর্যন্ত ঋণ দেয় ব্যাংকটি। সুদের হার ধরা হচ্ছে ১০ দশমিক ৭৫ শতাংশ। ঋণ পরিশোধের মেয়াদ এক বছর থেকে সর্বোচ্চ পাঁচ বছর। ২৫ থেকে ৩৫ হাজার টাকা মাসিক আয়, এমন যে কেউ এই ঋণের জন্য আবেদন করতে পারেন।
ব্র্যাক ব্যাংকের হেড অব রিটেইল সেলস কায়সার হামিদ বলেন, ‘সহজ শর্ত ও কম সুদ হওয়ায় গাড়ির ঋণের গ্রাহকেরা আগের চেয়ে অনেক বেশি আগ্রহী। আমরাও চেষ্টা করছি কীভাবে সহজেই গ্রাহকদের সেবা দেওয়া যায়। নথিপত্র ঠিক থাকলে আমরা এক দিনেই ঋণ অনুমোদন করে গাড়িবিক্রেতা প্রতিষ্ঠানের কাছে পাঠিয়ে দিচ্ছি।’
ব্যাংকের ঋণসীমা প্রযোজ্য না হওয়ায় লঙ্কাবাংলা ফিন্যান্স একজন গ্রাহককে গাড়ির দামের ৮০ শতাংশ অথবা সর্বোচ্চ দেড় কোটি টাকা পর্যন্ত ঋণসুবিধা দিচ্ছে। ১২ থেকে ৭২ মাসের মধ্যে পরিশোধ করতে হবে এই ঋণ। ঋণের সুদ হার ১২ থেকে সাড়ে ১২ শতাংশ। ১১-১২ শতাংশ সুদে আর্থিক প্রতিষ্ঠান আইডিএলসিও ৪০ হাজার টাকার বেশি মাসিক আয়ধারী ব্যক্তিদের গাড়ির ঋণসুবিধা দিচ্ছে। ইউনাইটেড ফিন্যান্সও গাড়ি ঋণে সুদ নিচ্ছে ১৩ শতাংশ।
জানা গেছে, গাড়ি ঋণে ইস্টার্ণ ব্যাংক সাড়ে ১৩ শতাংশ, ডাচ্-বাংলা ব্যাংক ১৪ শতাংশ সুদে, স্ট্যান্ডার্ড চার্টার্ড ব্যাংক সাড়ে ১১ শতাংশ সুদ নিচ্ছে। এ ছাড়া প্রতিযোগিতামূলক সুদে মিউচুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংকও ঋণসুবিধা দিচ্ছে। মাসিক আয় ৩০ হাজার টাকা হলেই গাড়ি ঋণ দিচ্ছে ব্যাংকটি।
ঢাকা ব্যাংক গাড়ির ঋণের ক্ষেত্রে ১২ শতাংশ সুদ নিচ্ছে। গাড়ির দামের অর্ধেক ঋণ দিচ্ছে ব্যাংক, তবে তা কোনোভাবেই ৪০ লাখ টাকার বেশি নয়। গ্রাহকদের সহজ শর্তে ঋণ দিতে গাড়িবিক্রেতা বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে চুক্তিও করছে ব্যাংকটি।
Comments (No)