অনেকদিন কোথাও যাওয়া হয় না। তাই লকডাউন উপেক্ষা করেই একটু বাইরে বের হলাম এই মনে করেন খুশিতে, ঠেলায়, ঘোরতে। না, আজকে বাসে বসে গল্প লিখতেছি না, আজকে গল্প লিখতেছি অটো রিক্সাতে বসে। গল্পটা হলো: অটোরিকশাতে করে ঘোরার সময় দেখলাম একটা ATM বুথের সামনে বেশ বড় সড় লাইন। অনেকেই সিরিয়াল ধরে দাড়িয়ে আছে। তখন আমার মাথায় আসলো….এই ডিজিটাল যুগে আমরা সবাই মোটামুটি ক্রেডিট/ডেবিট কার্ড ব্যবহার করি। আবার যারা ফ্রিল্যান্সিং এর সাথে জড়িত, তাদের তো ডূয়েল কারেন্সি কার্ড নিত্যসঙ্গী। তবে আমরা অনেকেই এই কার্ডের মারপ্যাঁচ গুলো ধরতে পারিনা, যে কোনটা কি কার্ড। সেটি নিয়েই আজকের লেখা। আজকের লেখাটি বেশ বড় হতে যাচ্ছে। সো, সময় নিয়ে পড়ার অনুরোধ রইল।
মাস্টার কার্ড বা ভিসা কার্ডঃ এই দিয়ে অনলাইনে আন্তর্জাতিক লেনদেন সম্পন্ন করা যায়। মূলত মাস্টার কার্ড, ভিসা কার্ড এগুলা হচ্ছে আন্তর্জাতিক লেনদেন সম্পন্ন করার নেটওয়ার্ক। ভিসা এবং মাস্টারকার্ড এর তেমন পার্থক্য নাই,শুধু আলাদা দুইটি কোম্পানি।যেমনঃ আইফোন এবং সামসাং।তবে ভিসা এবং মাস্টারকার্ড দুইটিই ইউএসএ এর কোম্পানি এবং মাস্টারকার্ড এর চাইতে ভিসাকার্ড এর ব্যাবহারকারী বেশী।যেখানে ভিসা কার্ড ব্যাবহার করার সুযোগ রয়েছে সেখানে মাস্টারকার্ডও ব্যাবহার করা যায়। আমাদের দেশের ব্যাংক গুলো যারা ডেবিট ও ক্রেডিট এ আন্তর্জাতিক লেনদেন সুযোগ দেয়, তারা মূলত এই নেটওয়ার্ক গুলো ব্যবহার করে লেনদেন সম্পন্ন করে। তাই আমদের দেশের যে কোন ডেবিট বা ক্রেডিট কার্ডকেই মাস্টার কার্ড অথবা ভিসা কার্ড বলা হয় কোনো কোনো ক্ষেত্রে। আবার কোনো কোনো ব্যাংক এই দুইটা নেটওয়ার্কই ব্যবহার করে। ভিসা বা মাস্টার কার্ড দিয়ে নিশ্চিন্তেই ফেসবুকে এড দিতে পারবেন তবে অবশ্যই সেটা ব্যাংক থেকে ডুয়েল কারেন্সি এনাবল করে পাসপোর্ট দিয়ে ডলার এন্ডোর্স করে নিতে হবে। Online Income Site
ক্রেডিট কার্ডঃ আধুনিক বিশ্বে ক্রেডিট কার্ডকে বলা হয় প্লাস্টিক মানি। এটি এমন একটি ব্যবস্থা যার সাহায্যে আপনি একটি ব্যাংক থেকে টাকা ধার করেন খরচ করার জন্য। আপনার মাসিক ইনকাম এর ওপরে বেজ করে আপনাকে ব্যাংক একটি লিমিট দিয়ে থাজে যেটাকে ক্রেডিট লিমিট বলা হয়ে থাকে। আপনি চাকুরী করেন ২০০০০ টাকা বেতন এর,এখন আপনি ব্যাংক থেকে হয়ত ক্রেডিট কার্ড নিলেন যার লিমিত ৪০০০০ টাকা সময়সীমা ৪৫ দিন এবং ১.৫% সুদ। অর্থাৎ,আপনি চাইলে প্রতিমাসে ৪০০০০ টাকা এই ক্রেডিট কার্ড ব্যাবহার করে খরচ করতে পারবেন এবং ৪৫ দিনের মধ্য পরিশোধ করলে কোন সুদ দিতে হবে না এবং ৪৫ দিন অতিক্রম করলে ১.৫% হারে সুদ প্রদান করতে হবে। আর যেহেতু ক্রেডিট লিমিটটি আপনি প্রতি মাসে যেমন স্যালারি পান, তার ওপরে ভিত্তি করেই দেওয়া হয়ে থাকে,তাই সাধারনত আপনি যদি একজন হ্যান্ডসাম স্যালারীর চাকুরিজীবী না হন, তাহলে ব্যাংক আপনাকে ক্রেডিট কার্ডের জন্য এলিজিবল করবে না। এখানেও আপনি আপনার কার্ডটি ডুয়েল কারেন্সি এনাবল করে ইন্টারন্যাশনাল ট্রাঞ্জিকশন করতে পারবেন এবং ফেসবুক,গুগল,ইউটিউব এড দিতে পারবেন।
বিদ্রঃ সিকিউরিটি ইস্যুর জন্য আমাদের দেশে গুগল প্রিপেইড কার্ড (পেপাল, পেওনিয়ার, স্ক্রিল) গ্রহণ করে না। গুগল এবং ইউটিউব এডের জন্য শুধুমাত্র ডুয়েল কারেন্সি ক্রেডিট কার্ড গ্রহণযোগ্য।
ডেবিট কার্ডঃ আমরা যখন একটা বাংক অ্যাকাউন্ট করি এবং বাংক অ্যাকাউন্টে থাকা টাকা খরচ করার জন্য আমাদেরকে যে ATM কার্ড দেওয়া হয়, সেটাই মুলত একটি ডেবিট কার্ড যা অনেক ক্ষেত্রে “ব্যাংক কার্ড” নামেও পরিচিত। ডেবিট কার্ড থেকে টাকা খরচ করার জন্য আপনার কাছে বা আপনার ব্যাংক অ্যাকাউন্টে আগে থেকেই টাকা থাকতে হবে। এখানে আপনার মাসিক ইনকাম বা জব বা আপনার ক্রেডিট লিমিট এই ধরনের কোন ব্যাপার নেই। ব্যাপারটা শুধুই এইটুকুই যে, আপনার কাছে টাকা আছে এবং সেই টাকা আপনি ইলেকট্রনিক পেমেন্ট সিস্টেমের মাধ্যমে পেমেন্ট করছেন বা খরচ করছেন।
ধরুন আপনার ব্যাংক অ্যাকাউন্টে ১ লক্ষ টাকা আছে। তাহলে ব্যাংক থেকে আপনার অ্যাকাউন্টের বিপরীতে আপনাকে যে ডেবিট কার্ডটি দেওয়া হবে, সেটিতেও আপনার ওই ১ লক্ষ টাকাই থাকবে। আপনি যখনই ডেবিট কার্ডটির সাহায্যে কোথাও পেমেন্ট করবেন বা ক্যাশ উইথড্র করবেন, তখন আপনি যতটুকু টাকা খরচ করেছেন সেটা ইনস্ট্যান্টলি আপনার ব্যাংক হিসাব থেকেই কেটে নেওয়া হবে। মুলত পেমেন্টটি করা হবে আপনার ব্যাংক অ্যাকাউন্ট থেকেই। তাছাড়াও ডেবিট কার্ড মূলত আপনার চেক বই এর বিকল্প হিসাবে কাজ করে। ধরুন আপনার ব্যাংক অ্যাকাউন্ট ৫০০০০ টাকা আছে এবং এর বিপরীতে চেক বই এবং ডেবিট কার্ড ইস্যু করা আছে।আপনি হয়ত চেক বই দিয়ে দিনের বেলা টাকা উত্তোলন করতে পারবেন কিন্তু আপনার যদি রাতের বেলা টাকার প্রয়োজন হয় তাহলে কি করবেন?এটার একটাই সমাধান আর তা হল ডেবিট কার্ড। ডেবিট কার্ড ব্যবহার করে আপনি এটিএম নেটওয়ার্ক ব্যাবহার করে যেকোনো সময় টাকা উত্তোলন করতে পারবেন। অর্থাৎ ডেবিট কার্ড পকেটে রাখা মানে বলতে পারেন আপনার ব্যাংক অ্যাকাউন্টটিকেই তার সম্পূর্ণ ব্যালেন্সসহ আপনার পকেটে রাখা। আর এইজন্যই ব্যাংক অ্যাকাউন্ট ক্রিয়েট করলে সাধারনত অ্যাকাউন্টের সাথেই একটি ডেবিট কার্ড ইস্যু করে দেওয়া হয়।
বিদ্রঃ ডেবিট কার্ড সাধারণত ইন্টারন্যাশনাল ট্রাঞ্জিকশন করে না, তাই ডেবিট কার্ড দিয়ে ফেসবুক/গুগল এড দেয়া যায় না। তবে হ্যা,কিছু কিছু ব্যাংক শর্ত সাপেক্ষে ইন্টারন্যাশনাল ডেবিট কার্ড ব্যবহারের সুযোগ দিচ্ছে। সেগুলো নিয়ে নিচে আলোচনা করা হয়েছে।
প্রিপেইড ডেবিট কার্ডঃ বর্তমানে বাংলাদেশের কয়েকটি ব্যাংক একটি বিশেষ ধরনের ইন্টারন্যাশনাল ডেবিট কার্ড ইস্যু করে থাকে যাকে সাধারনত প্রিপেইড কার্ড বলা হয়। এগুলোর মধ্যে ইস্টার্ণ ব্যাংকের “একুয়া কার্ড” সবচেয়ে বেশি জনপ্রিয়। এই ডেবিট কার্ড ব্যাবহার করার জন্য আপনার কোন ব্যাংক অ্যাকাউন্টও থাকার দরকার পড়বে না এবং আপনাকে চাকুরিজীবীও হতে হবে না। এই কার্ডগুলাতে আপনাকে আগে থেকেই কার্ডের বিপরীতে টাকা ডিপোজিট করতে হবে এবং ডিপোজিট করার পরেই এই কার্ডটি আপনি ব্যাবহার করতে পারবেন। আর এই ডেবিট কার্ড দিয়ে ইন্টারন্যাশনাল ট্রাঞ্জিকশন,ফেসবুক এড,গুগল প্লে স্টোর থেকে কোন অ্যাপ/গেমস পারচেজ করতে পারবেন।
বিদ্রঃ এখন তাহলে জাতির কাছে প্রশ্নঃ ইবিএল-এর একুয়া কার্ড তাহলে কি? স্কাইব্যাংকিং অ্যাপে লগিন করলে লেখা আসে “প্রিপেইড কার্ড”। ফেসবুক এড ম্যানেজারের পেমেন্ট মেথডে এড করলে আসে “মাস্টারকার্ড”। আবার বিল পে করলে ট্রাঞ্জিকশন লিস্টে চলে আসে “ক্রেডিট কার্ড”। তাহলে বলুন একুয়া কার্ড আসলে কোনটা?
উত্তরঃ এক কথায় বলতে গেলে একুয়া কার্ড আসলে “প্রিপেইড মাস্টারকার্ড”। অনেকে আবার এটিকে মশলা মিশিয়ে “ডুয়েল কারেন্সি মাস্টার ডেবিটকার্ড” ও বলে। কেন বলা হয় আশা করি এখন বুঝতে পেরেছেন। না বুঝলেও সমস্যা নেই, লেখাটা আরেকবার পড়লেই সব পানির মত সহজ হয়ে যাবে।
পেওনিয়ার কার্ডঃ পেওনিয়ার কার্ড বাংলাদেশে বেশ জনপ্রিয়। বিশেষত ফ্রিল্যান্সারদের প্রথম পছন্দই থাকে পেওনিয়ার কার্ড। পেওনিয়ার ও একটি প্রিপেইড মাস্টারকার্ড যার মাধ্যমে আপনি যেকোন দেশের মূদ্রা আপনার এই এ্যাকাউন্টে নিয়ে আসতে পারেন এবং বাংলাদেশের যেকোনো এটিএম (ATM) বুথ থেকে এই কার্ডের সাহায্যে টাকা উত্তোলন করতে পারেন। এই কার্ড দিয়ে যেকোনো ধরনের ইন্টারন্যাশনাল ট্রাঞ্জিকশন, ফেসবুক এডস, গুগল এডস দিতে পারবেন।পেওনিয়ার কার্ড ইউজ করলে ১৫% ভ্যাট দেওয়া লাগে না। তবে এই কার্ড পেতে হলে আপনার পেওনিয়ার একাউন্টে ১০০ ডলার থাকতে হবে। এই ১০০ ডলার আপনি অন্য যেকোনো একটি পেওনিয়ার এ্যাকাউন্ট থেকে নিতে পারেন। তবে সবচেয়ে ভালো হয় যদি আপনি ডলারটি কোনো মার্কেটপ্লেস থেকে কাজ করে লোড করেন। তবে পেওনিয়ার কার্ড ব্যবহারে বেশ কিছু ফাক-ফোকর ও রয়েছে। যেমন কার্ড এক্টিভেশনে ২৯ ডলার চার্জ কেটে নেয়, এটা অনেকেই জানে না। আবার কোন লোকাল ব্যাংক থেকে ডলার লোড করা যায় না। যারা ফ্রিল্যান্সিং করে ডলার আয় করেন তারা সেসব ডলার পেওনিয়ারের মাধ্যমে খরচ করতে পারবেন, কিংবা অন্য কোন ফ্রিল্যান্সারের থেকে ডলার কিনতে পারবেন। তবে ফ্রিল্যান্সাররা আয়ের ৫০% এর বেশি বিক্রি করাটা উচিত নয়। সেক্ষেত্রে একাউন্ট ব্লক হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। আবার পেওনিয়ার কার্ড সাধারণত ইস্যু করা হয় ইন্টারন্যাশনাল ট্রাঞ্জিকশন এর জন্য। বেশি লোকাল ট্রাঞ্জিকশন করলেও কার্ডে সমস্যা দেখা দেয়।
পেপাল কার্ডঃ পেওনিয়ার কার্ড বাংলাদেশে বৈধ হলেও পেপাল কার্ড এক কথায় সম্পূর্ণরূপে অবৈধ। এই মুহুর্তে আপনি বাংলাদেশের ঠিকানা ব্যবহার করে পেপাল একাউন্ট খুলতে পারবেন না। তবে পেপাল সাপোর্ট করে এমন অন্য কোনো দেশ, যেমন যুক্তরাষ্ট্রের ঠিকানা ব্যবহার করে পেপাল একাউন্ট ওপেন করা সম্ভব। অনেকে ফেইক ঠিকানা ব্যবহার করে ভার্চুয়াল ব্যাংক একাউন্ট ও ডেবিট/ক্রেডিট কার্ডের সাহায্যে পেপাল একাউন্ট খুলে থাকেন। এসব পেপাল একাউন্ট পুরোপুরি ভেরিফাই করাও সম্ভব, তবে ঝুঁকি থেকেই যায়। পেপাল এখনো পর্যন্ত বিশ্বব্যপী সর্বাধিক পেমেন্ট গেটওয়ে। এই কার্ড দিয়েও যেকোনো ধরনের ইন্টারন্যাশনাল ট্রাঞ্জিকশন, ফেসবুক এডস, গুগল এডস দিতে পারবেন। আবার এই কার্ড ব্যবহার করে কোন ধরনের ভ্যাট দিতে হয় না সরকারকে। আবার পেপালের ডলার রেটও অনেক কম। তাই অনেকে বাড়তি লাভের আশায় বাইরের দেশের কাউকে দিয়ে পেপাল ভেরিফাই করিয়ে ইউজ করেন। কিন্তু একটি কথা মাথায় রাখা দরকার-পেপাল একাউন্ট খোলা সহজ, কিন্তু একাউন্টটি টিকিয়ে রাখা কঠিন। যেহেতু বাংলাদেশ এখনও অফিসিয়ালভাবে পেপালের লেনদেন তালিকায় নেই, তাই এখানকার আইপি এড্রেস ব্যবহার করে বেশ কয়েকবার পেপালে লগইন বা এর মাধ্যমে লেনদেন করলে তা আমলে নেয় সার্ভিসটি। আপনার একাউন্টটি সত্যিই বৈধভাবে খোলা কিনা তা যাচাই করার জন্য পেপাল আপনার একাউন্ট সম্পর্কিত বাড়তি তথ্য চাইতে পারে। যেমন এটি আপনার ব্যাংক স্টেটমেন্ট বা ইউটিলিটি বিলের স্ক্যান করা কপি চাইবে। সেগুলো না দিয়ে পারলে একাউন্ট লিমিটেড (সীমিত) হয়ে যাবে। এত কষ্ট করে খোলা একাউন্টটি টাকা পয়সা সমেত ব্লক করে দিলেও অবাক হওয়ার কিছু নেই।
যাক, অনেক কিছু লিখলাম। এতক্ষণ ধৈর্য নিয়ে পড়ার জন্য ধন্যবাদ। আরেকটি জিনিস নিয়ে লিখার ইচ্ছা ছিল যেটাকে বলে NFT (Non-Fungible Token). আজকের লেখা টা বড় হয়ে যাওয়ায় এটা নিয়ে আর লিখলাম না। কেনা-বেচার এই ডিজিটাল মাধ্যম NFT নিয়ে আগামী সপ্তাহে হাজির হব ইনশাআল্লাহ।
এখন তবে যাই। আশা করি কার্ড সংক্রান্ত যে সংশয় বা দ্বিধা-দ্বন্দ্ব ছিল,সেগুলো অনেকাংশেই দূর হয়েছে। কারো কোনো প্রশ্ন থাকলে কমেন্টে জানাতে পারেন। আর হ্যাঁ,লেখাটা আমার ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতা থেকে শেয়ার করা,তবে কিছু উপাত্ত সংগ্রহের খাতিরে কার্ডগুলোর অফিশিয়াল ওয়েবসাইট এবং কিছু বিশ্বস্ত তথ্যসূত্র থেকে তথ্য নেয়া হয়েছে।
Comments (No)