কোন ব্যাংকের ক্রেডিট কার্ড এ কত সুদ? 1

আধুনিক জীবনের, বিশেষ করে শহুরে মানুষের জীবনযাত্রার অপরিহার্য অঙ্গ হয়ে উঠছে এখন ক্রেডিট কার্ড। ‘প্লাস্টিক মানি’ খ্যাত এই কার্ড জীবনকে সহজ, ঝামেলাহীন ও স্বাচ্ছন্দ্যময় করে তুলছে। মানুষ যদিও ক্রেডিট কার্ড দিয়ে পণ্য কেনেন, কিন্তু ব্যাংকের দিক থেকে ক্রেডিট কার্ডই একটি পণ্য। ব্যাংক এই পণ্য বিক্রি করে গ্রাহকের কাছ থেকে বার্ষিক মাশুল (চার্জ) নেয়। বিনিময়ে কার্ডের মাধ্যমে কেনাকাটা বা নগদ টাকা তোলার সুযোগ দেয়। নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে গ্রাহককে অবশ্য ব্যাংকের টাকা পরিশোধ করতে হয়। পরিশোধে ব্যর্থ হলেই আসে সুদের প্রশ্ন। সাধারণত মাসিক ভিত্তিতে ২ থেকে ২ দশমিক ৫০ শতাংশ পর্যন্ত সুদ নিয়ে থাকে ব্যাংকগুলো।

কোন ব্যাংকের ক্রেডিট কার্ডে কত সুদ?


বাংলাদেশ ব্যাংকের ওয়েবসাইটে ২৯টি ব্যাংকের ক্রেডিট কার্ডের বার্ষিক সুদের হার উল্লেখ রয়েছে। রাষ্ট্রমালিকানাধীন বাণিজ্যিক ও বিশেষায়িত আটটি ব্যাংকের মধ্যে ক্রেডিট কার্ড রয়েছে শুধু সোনালী ও জনতা ব্যাংকের। গত সেপ্টেম্বর পর্যন্ত পরিসংখ্যান অনুযায়ী, বেসরকারি বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোর মধ্যে ২৫টির ক্রেডিট কার্ড রয়েছে। আর বিদেশি নয়টি ব্যাংকের মধ্যে ক্রেডিট কার্ড রয়েছে স্ট্যান্ডার্ড চার্টার্ড ব্যাংক, এইচএসবিসি ও ব্যাংক আল ফালাহর। এসব কার্ড ব্যবহার করলে গ্রাহকদের সুদ দিতে হয় ১৮ থেকে ৩৬ শতাংশ পর্যন্ত। তবে বেশির ভাগ ব্যাংকই ৩০ শতাংশ সুদ নিয়ে থাকে। Online Income Site


সবচেয়ে কম ১৮ শতাংশ সুদ নিচ্ছে মাত্র তিনটি ব্যাংক—বাংলাদেশ কমার্স ব্যাংক, যমুনা ও ডাচ্-বাংলা ব্যাংক (ডিবিবিএল)। এরপরই কম সুদ এইচএসবিসির ১৯ দশমিক ৫০ শতাংশ। ব্যাংক আল ফালাহর সুদের হার ২১ থেকে ২৪ শতাংশ। পাঁচটি ব্যাংকের সুদ নির্ধারিত ২৪ শতাংশ। ব্যাংকগুলো হচ্ছে জনতা, ঢাকা, আইএফআইসি, স্ট্যান্ডার্ড ও সাউথইস্ট ব্যাংক। এ ছাড়া ন্যাশনাল ব্যাংকের সুদ ২৭, ব্র্যাক ব্যাংকের ২৭ থেকে ৩০, এনআরবি ব্যাংকের ২৮ এবং ওয়ান ব্যাংকের ২৮ দশমিক ৫০ থেকে ৩১ দশমিক ৫০ শতাংশ।
১৩টি ব্যাংক সুদ নিচ্ছে ৩০ শতাংশ। ব্যাংকগুলো হচ্ছে এবি, ব্যাংক এশিয়া, ইস্টার্ন (ইবিএল), এক্সিম, মিডল্যান্ড, প্রিমিয়ার, মার্কেন্টাইল, মিউচুয়াল ট্রাস্ট, এনসিসি, ফারমারস, সাউথ বাংলা, শাহজালাল ও ট্রাস্ট ব্যাংক। এর বাইরে ৩০ থেকে ৩৩ শতাংশ সুদ নিচ্ছে স্ট্যান্ডার্ড চার্টার্ড। আর দি সিটি ব্যাংকের সুদ হার ৩৬ শতাংশ।


সাধারণত ব্যবসায়ী, চাকরিজীবী বা অন্য পেশাজীবী, যাঁদের আয় আছে এবং যাঁরা বৈধ কর শনাক্তকরণ নম্বরধারী (টিআইএন), তাঁরাই ক্রেডিট কার্ড পাওয়ার জন্য আবেদন করতে পারেন। বাংলাদেশ ব্যাংকের নিয়ম অনুযায়ী, একটি ক্রেডিট কার্ডের লিমিট বা টাকা খরচ করার সর্বোচ্চ সীমা পাঁচ লাখ টাকা। গ্রাহকের মাসিক আয়ের ভিত্তিতে এ সীমা নির্ধারিত হয়।


সোনালী ব্যাংকের ক্রেডিট কার্ড পেতে চাইলে ওই ব্যাংকের কর্মকর্তা হতে হবে। ব্যাংকটি এর বাইরে সরকারি স্কুল, কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ও কর্মকর্তা এবং সরকারি, আধা-সরকারি ও স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা যাঁদের বেতন সোনালী ব্যাংকের কোনো শাখা থেকে হয়ে থাকে, তাঁদেরকে ক্রেডিট কার্ড দেয়।


সোনালী ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা প্রদীপ কুমার দত্ত প্রথম আলোকে জানান, ‘গত ৫ অক্টোবর পর্যন্ত এ ব্যাংকের ক্রেডিট কার্ড রয়েছে ১ হাজার ১২৬টি। শিগগিরই আমরা এ সংখ্যা বাড়ানোর পদক্ষেপ নিচ্ছি।’
গত জুন পর্যন্ত কেন্দ্রীয় ব্যাংকের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, সব ব্যাংক মিলিয়ে ক্রেডিট কার্ড রয়েছে ৫ লাখ ৬৪ হাজার ৪৫৯টি (সচল গ্রাহক)। এই তথ্য হালনাগাদ করলে এই সংখ্যা ১০ লাখ ছাড়িয়ে যাবে বলে ব্যাংকাররা মনে করছেন। এর মধ্যে ব্র্যাক ব্যাংক ৬৫ হাজার ৫৭২, ইবিএল ৬৩ হাজার ৪৩, প্রাইম ৪৫ হাজার ৭১ এবং সাউথইস্ট ব্যাংক ২৬ হাজার ৮৭৫ জন গ্রাহককে ক্রেডিট কার্ড দিয়েছে। তবে সর্বশেষ হিসাবে সিটি ব্যাংকের একারই রয়েছে ১ লাখ ৭৩ হাজার ৫৩২টি কার্ড।


সুদের হার বেশি হওয়া সত্ত্বেও গ্রাহকের সংখ্যা সব ব্যাংকের চেয়ে বেশি—রহস্য কী, জানতে চাইলে দি সিটি ব্যাংকের অতিরিক্ত ব্যবস্থাপনা পরিচালক এস এম মাসরুর আরেফিন প্রথম আলোকে বলেন, ক্রেডিট কার্ডকে বলা হয় প্লাস্টিক মানি। কিন্তু তাঁদের ক্রেডিট কার্ড এর চেয়েও বেশি, কেনাকাটার বাইরেও নানা ধরনের সুযোগ-সুবিধা দেওয়া হয়। এ কারণে সুদ বেশি হলেও তাঁদেরই গ্রাহক অনেক বেশি।

Leave a Reply

You missed

এই সাইটের কোন লেখা কপি করা সম্পুর্ন নিষেধ