ইউটিউব থেকে এখন বাংলাদেশের হাজার হাজার ছেলে মেয়ে মাসে লাখ লাখ টাকা আয় করছে। আপনিও চাইলে শুরু করতে পারেন। ইউটিউব চ্যানেল খোলা একদম সহজ। চলুন জেনে নেয়া যাক, কম্পিউটার ও মোবাইল থেকে ইউটিউব চ্যানেল খোলার সহজ উপায়।
ইউটিউব কি? ইউটিউবের মালিক কে?
ইউটিউব হলো একটি আমেরিকান অনলাইন-ভিডিও শেয়ারিং প্ল্যাটফর্ম। তিনজন প্রাক্তন পেপাল কর্মচারী – চেড হার্লি, স্টিভ চেন ও বাংলাদেশী বংশোদ্ভূত জাওয়েদ করিম মিলে ২০০৫ সালে ইউটিউব তৈরী করেন।
ডেটিং সার্ভিস হিসেবে শুরু করলেও পরবর্তীতে ভিডিও শেয়ারিং প্ল্যাটফর্ম এ রূপ নেয় ইউটিউব। ইউটিউব এর জনপ্রিয়তা ও ভিডিও শেয়ারিং এর জনপ্রিয়তা বাড়তে দেখে ২০০৬ সালের নভেম্বর মাসে ১.৬৫ বিলিয়ন ডলারের বিনিময়ে ইউটিউবকে কিনে নেয় গুগল।
ইউটিউব চ্যানেল কি?
ইউটিউবে যদি আপনি ভিডিও আপলোড করতে চান তাহলে সেখানে আপনার একটি একাউন্ট খুলে প্রোফাইল তৈরি করতে হবে। ফেসবুকে যেমন আপনার একটি প্রোফাইল আছে, কিছুটা সেরকম। ইউটিউবে ভিডিও আপলোড করার জন্য যে প্রোফাইল তৈরি করা হয় সেগুলোকেই ইউটিউব চ্যানেল বলা হয়।
ইউটিউব চ্যানেল খুলতে কি কি লাগে
ইউটিউব চ্যানেল খুলতে কি কি লাগে – এই প্রশ্নের উত্তর অত্যন্ত সহজ। আপনার ডিভাইসে ইন্টারনেট সংযোগ থাকলে খুব সহজেই কয়েক ধাপেই খুলতে পারবেন ইউটিউব চ্যানেল। ইউটিউব চ্যানেল খুলতে একটি জিমেইল বা গুগল একাউন্ট লাগে।
ইউটিউব চ্যানেল খোলার পর চ্যানেল ভেরিফাই করে আরো ফিচার পেতে গেলে ফোন নাম্বার ব্যবহার করতে হয়। সেক্ষেত্রে বলা যায় ইউটিউব খুলতে লাগেঃ
- ইন্টারনেট সংযোগ
- জিমেইল অর্থাৎ গুগল একাউন্ট
- মোবাইল নাম্বার
ইউটিউব একাউন্ট এর প্রকারভেদ
ইউটিউব একাউন্ট দুই প্রকার, একটি পারসোনাল চ্যানেল ও অন্যটি ব্র্যান্ড চ্যানেল। পারসোনাল চ্যানেল হলো সেসব চ্যানেল যেগুলো বেশিরভাগ সময়ে শুধুমাত্র একজন ব্যক্তি নিয়ন্ত্রণ করে থাকে। অন্যদিকে ব্রান্ড চ্যানেল মূলত কোনো প্রতিষ্ঠান বা টিম এর অধীনে থাকে। যার ফলে পারসোনাল চ্যানেল এর চেয়ে ব্র্যান্ড চ্যানেলগুলো দেখতে বেশি প্রফেশনাল হয়ে থাকে।
ধরুন, আপনার চ্যানেলে আপনি আপনার পোষা বিড়ালের ভিডিও পোস্ট করলেন, তাহলে সেটি আপনার পারসোনাল চ্যানেল। অন্যদিকে যে চানেল বিড়ালের খাবার ও সেই সম্পর্কিত অন্যান্য বিষয় ভিডিও এর মাধ্যমে বিক্রির লক্ষে চ্যানেলে প্রদর্শন করে, তারা হলো ব্র্যান্ড একাউন্ট।
তবে আপনি যে ধরনের ইউটিউব চ্যানেলই খুলুন না কেনো, দিনশেষে উভয় ইউটিউব একাউন্ট এর কার্যক্রম কিন্তু অন্য সব ইউটিউব চ্যানেলের মতো একই। ভিডিও পোস্ট করাই মূলত ইউটিউব চ্যানেল তৈরির মূল উদ্দেশ্য।
মোবাইল দিয়ে ইউটিউব চ্যানেল খোলার নিয়ম
আপনার ফোনে যদি ইউটিউব অ্যাপ ও জিমেইল একাউন্ট থাকে আর ওই জিমেইল একাউন্টে ইতিমধ্যে ইউটিউব চ্যানেল খোলা না থাকে, সেক্ষেত্রে মোবাইল থেকে ইউটিউব চ্যানেল খোলা অত্যন্ত সহজ। মোবাইল থেকে ইউটিউব চ্যানেল খুলতেঃ
- প্রথমে ইউটিউব অ্যাপ ডাউনলোড করুন
- ইউটিউব অ্যাপে প্রবেশ করুন
- টপ মেন্যু এর টপ রাইট কর্নার থেকে আপনার প্রোফাইল পিকচার ক্লিক করুন
- এরপর My Channel সিলেক্ট করুন
- আপনার চ্যানেল এর নাম দিয়ে Create Channel চাপুন
- ব্যাস! আপনার ইউটিউব চ্যানেল তৈরী হয়ে যাবে
আবার আপনার মোবাইলে যদি ইতিমধ্যে ইউটিউব চ্যানেল খোলা থাকে আর আপনি মোবাইল থেকেই নতুন একটি ইউটিউব চ্যানেল খুলতে চান, সেটাও করতে পারবেন। মোবাইলে ইউটিউব চ্যানেল খুলতেঃ
- Chrome ব্রাউজার ওপেন করুন
- এরপর youtube.com/account এ প্রবেশ করুন
- থ্রি-ডট মেন্যু থেকে Desktop Mode চালু করুন
- সাইন-ইন করা না থাকলে জিমেইল একাউন্টে সাইন-ইন করুন
- Add or manage your channel(s) লিংক সিলেক্ট করুন
- Create a channel লিংক সিলেক্ট করুন
- যে নামে চ্যানেল খুলতে চান, সেই নাম লিখে Create চাপুন
উপরোক্ত পদ্ধতি সঠিকভাবে অনুসরণ করলে আপনার নতুন ইউটিউব চ্যানেল তৈরী হয়ে যাবে।
কম্পিউটার থেকে ইউটিউব চ্যানেল খোলার নিয়ম
ইতিমধ্যে যদি আপনার জিমেইলে একাউন্ট এ ইউটিউব চ্যানেল খোলা না থাকে, সেক্ষেত্রে কম্পিউটার থেকে ইউটিউব চ্যানেল খুলতেঃ
- ব্রাউজার থেকে YouTube.com এ প্রবেশ করুন
- জিমেইল একাউন্টে সাইন-ইন করা না থাকলে সাইন-ইন করুন
- টপ রাইট কর্নারে থাকা প্রোফাইল আইকনে ক্লিক করুন
- My Channel এ ক্লিক করুন
- এরপর আপনার চ্যানেলের নাম লিখে Create এ ক্লিক করুন
- উপরোক্ত পদ্ধতি সঠিকভাবে অনুসরণ করলে আপনার ইউটিউব চ্যানেল খুলে যাবে।
আপনার ইতিমধ্যে ইউটিউব চ্যানেল আছে ও নতুন একটি ইউটিউব চ্যানেল খুলতে চান, সেক্ষেত্রে কম্পিউটার থেকে ইউটিউব চ্যানেল খুলতেঃ
- যেকোনো ব্রাউজার থেকে youtube.com/account এ প্রবেশ করুন
- সাইন-ইন করা না থাকলে জিমেইল একাউন্টে সাইন-ইন করুন
- Add or manage your channel(s) এ ক্লিক করুন
- Create a channel এ ক্লিক করুন করুন
- যে নামে চ্যানেল খুলতে চান, সেই নাম লিখে Create এ ক্লিক করু
- উপরোক্ত পদ্ধতি সঠিকভাবে অনুসরণ করলে কম্পিউটারে আপনার নতুন ইউটিউব চ্যানেল তৈরী হয়ে যাবে।
ইউটিউব চ্যানেল ভেরিফাই করার নিয়ম
ইউটিউব চ্যানেল খোলা তো শিখে গেলাম। এবার পালা ইউটিউব চ্যানেল ভেরিফাই করার। ইউটিউব চ্যানেল খোলার পর ফোন নাম্বার দিয়ে ভেরিফাই না করার পর্যন্ত কিছু ফিচার লক করা থাকে। যেমনঃ
- ১৫মিনিটের চেয়ে বড় ভিডিও আপলোড
- কাস্টম থাম্বনেইল
- লাইভস্ট্রিমিং
- কনটেন্ট আইডি ক্লেইম আপিল
ইউটিউব চ্যানেল ভেরিফাই করতে একটি একটিভ মোবাইল নাম্বারের প্রয়োজন হবে। ইউটিউব চ্যানেল ভেরিফাই করার নিয়মঃ
- ব্রাউজার থেকে studio.youtube.com এ প্রবেশ করুন
- ইউটিউব চ্যানেলে লগিন করা না থাকলে জিমেইল আইডি দিয়ে লগিন করুন
- বামদিকের মেন্যু থেকে Settings এ ক্লিক করুন
- Channel ট্যাব সিলেক্ট করুন
- Verify Phone Number এ ক্লিক করুন
- এরপর Text me the verification code সিলেক্ট করুন
- Select your country থেকে দেশ সিলেক্ট করুন
- এরপর নিচের ফোন নাম্বার বক্সে ফোন নাম্বার দিয়ে Get Code এ ক্লিক করুন
- এরপর আপনার ফোনে ৬ডিজিটের একটি কোড আসবে, সেটি প্রদান করে Submit চাপুন
উপরোক্ত প্রক্রিয়া সঠিকভাবে অনুসরণ করলে আপনার ইউটিউব চ্যানেল ভেরিফাই হয়ে যাবে ও আপনি ভেরিফাইড চ্যানেল এর ফিচারগুলো উপভোগ করতে পারবেন।
ইউটিউবে ভিডিও আপলোড করার নিয়ম
ইউটিউব চ্যানেল খোলার পর এবার পালা ইউটিউব ভিডিও আপলোড করার৷ মোবাইল থেকে ইউটিউব ভিডিও আপলোড করতেঃ
- ইউটিউব অ্যাপে প্রবেশ করুন
- বোটম মেন্যু থেকে প্লাস চিন্হিত আইকন চাপুন
- Upload A Video সিলেক্ট করুন
- যেই ভিডিও আপলোড করতে চান, সেটি সিলেক্ট করুন
- এরপর ভিডিও এর টাইটেল, ডেসক্রিপশন ইত্যাদি তথ্য প্রদান করুন
- এরপর Upload চাপুন
- কিছু সময়ের মধ্যেই আপনার ইউটিউব চ্যানেলে ভিডিও আপলোড হয়ে যাবে।
কম্পিউটার থেকে ইউটিউব চ্যানেলে ভিডিও আপলোড করার প্রক্রিয়াটিও অনেকটা একই ধরনের। কম্পিউটার থেকে ইউটিউব ভিডিও আপলোড করতেঃ
- youtube.com এ প্রবেশ করুন
- আপনার ইউটিউব চ্যানেলে লফিন করা না থাকলে জিমেইল আইডি দিয়ে সাইন-ইন করুন
- এরপর টপ বারে থাকা ভিডিও আইকনে ক্লিক করুন
- Upload Video তে ক্লিক করুন
- এরপর select files to upload অপশন ব্যবহার করে যে ভিডিও আপলোড করতে চান, সেটি সিলেক্ট করুন
- আপনার ভিডিও সম্পর্কিত তথ্য, যেমনঃ টাইটেল, ক্যাটাগরি, ট্যাগ, ইত্যাদি লিখে Next চাপুন
- এরপর ভিডিও তে কোনো এন্ড কার্ড বা ওভারলে দিতে চাইলে তা সিলেক্ট করে Next চাপুন
- এরপর ভিডিও এর প্রাইভেসি সেটিংস সিলেক্ট করে Next চাপুন
- এরপর আপনার আপলোডকৃত ভিডিও এর কপিরাইট সংক্রান্ত কোনো ইস্যু থাকলে তা দেখানো হবে
বর্ণিত সকল ধাপ সফলভাবে সম্পন্ন হলে আপনার ভিডিও ইউটিউবে আপলোড হবে ও আপনাকে একটি ভিডিও শেয়ার এর লিংক দেওয়া হবে।
ইউটিউব চ্যানেল এ ভিউ ও সাবস্ক্রাইবার বাড়ানোর টিপস
আপনি যদি ইউটিউব চ্যানেল সবেমাত্র শুরু করে থাকেন, সেক্ষেত্রে চ্যানেলে ভিউ ও সাবস্ক্রাইবার পেতে কিছুটা সময় লাগতে পারে। ইউটিউব চ্যানেল এ ভিউ ও সাবস্ক্রাইবার বাড়াতেঃ
- শুরুতে সহজে এডিট করা যায় এমন ভিডিও এডিটিং সফটওয়্যার ব্যবহার করুন যাতে আপনার এডিটিং প্রসেস দ্রুত হয়
- আপনার কয়েকটি কনটেন্ট আগাম প্ল্যান করে রাখুন, যাতে নিয়মিত ভিডিও আপলোড করতে পারেন
- আপনি যে ধরনের কনটেন্ট তৈরী করছেন, একই ধরনের কনটেন্ট তৈরী করছে, এমন ক্রিয়েটরগণ থেকে অনুপ্রেরণা নিতে পারেন
- সার্চ ও এসইও এর জন্য আপনার ভিডিও এর টাইটেল ও ডেসক্রিপশন অপটিমাইজ করুন
- সোশ্যাল মিডিয়া ব্যবহার করে আপনার নেটওয়ার্ক তৈরী করে ধীরেধীরে তা বাড়াতে থাকুন
- যারা আপনার ভিডিও দেখে অর্থাৎ ভিউয়ারদের সাথে সুসম্পর্ক স্থাপনে নিয়মিত কমেন্ট পড়ুন ও রিপ্লাই দিন
- এছাড়াও বিভিন্ন কনটেস্ট বা ভিউয়ার-কেন্দ্রিক কনটেন্ট ও বানাতে পারেন সোশ্যাল মিডিয়ার সাহায্য নিয়ে
- কমেন্টসমুহের মধ্যে গুরুত্বপূর্ণ কমেন্টগুলোর দিকে নজর দিন ও সে অনুযায়ী উন্নতি করার চেষ্টা করুন
- খারাপ কমেন্টের জন্য ভেংগে না পড়ে নিয়মিত কনটেন্ট আপলোড করতে থাকুন
- নিয়মিত ইউটিউবে ভিডিও আপলোড করুন
Comments (No)