ব্যাংক ঋণ পাওয়ার উপায়

Bank ঋণ পাওয়ার উপায় ক্ষুদ্র ও মাঝারি উদ্যোক্তাদের কাছ থেকে প্রতিনিয়ত একটা অভিযোগ শোনাযায়— Bank বা আর্থিকপ্রতিষ্ঠান তাদের ঋণ দেয় না। অর্থসংকটে অনেক প্রতিশ্রুতিশীল ক্ষুদ্র ও মাঝারি উদ্যোগ অঙ্কুরেই বিনষ্ট হয়ে যাচ্ছে বা গেছে। আমি ১০ বছর এসএমই ব্যাংকিংয়ে যুক্ত ছিলাম। বর্তমানে অর্থায়নের অন্যএকটা উপায়— ভেঞ্চার ক্যাপিটালেরমাধ্যমে এসএমই অর্থায়ন করছি। উল্টো দিকে Bank বা আর্থিক প্রতিষ্ঠানের পক্ষ থেকে নিয়মিত আফসোস শোনা যায়, অর্থ দেয়ার মতো উপযুক্ত উদ্যোগ পাওয়া যায়না। Bank একটি লাভজনক ও মুনাফাপ্রত্যাশী প্রতিষ্ঠান। ভালো গ্রাহকের সন্ধান তারা নিজস্ব তাগিদেই করে। বিপণনের জন্য তারা প্রচুর খরচ করে। উদ্দেশ্য একটাই— ভালো এবং নতুন গ্রাহক পাওয়া।
ব্যাংক ঋণ পাওয়ার উপায়
ব্যাংক ঋণ পাওয়ার উপায়

কেন এই ধাঁধা ?

Bank ভালো এসএমই গ্রাহক পায় না আর স্বল্প ও মাঝারি উদ্যোক্তরাপ্রত্যাশিত ঋণ পায় না? এ যেন ‘এই পারে আমি, ওই পারে তুমি, মাঝখানে নদী ওই বয়ে চলে যায়’। কেন এই ‘মাঝখানে নদী’ দূরত্ব? কেন এ পার্থক্য? একজন ব্যাংকারের চোখ দিয়ে দেখা যাক, কেন বা কী কীকারণে স্বল্প ও মাঝারি উদ্যোক্তরা ঋণ পায় না—

১. আর্থিক ব্যবস্থাপনা ও আর্থিক হিসাব বিবরণী: উদ্যোক্তারা ব্যবসা নিয়ে ব্যস্ত থাকেন।ভাবেন, পণ্য উত্পাদন ও বিক্রি করলেই ব্যবসায় সাফল্য আসবে। আসলেই কি তাই? ব্যবসার মূল মাপকাঠি অর্থ। উত্পাদন যত ভালো হোক— বিক্রি না করলে যেমন লাভ নেই, তেমনি বিক্রি করে যদি অর্থ পাওয়া না যায় অথবা সেটি যদি সঠিকভাবে ব্যবহারকরা না হয়, তাহলে সব চেষ্টা বিফলে যাবে।

তাই ‘আর্থিক ব্যবস্থাপনা’ ব্যবসার জন্য অতি গুরুত্বপূর্ণ। আর্থিক ব্যবস্থাপনার প্রথম ভিত্তি হলো আর্থিকহিসাব। বাংলাদেশের অধিকাংশ ক্ষুদ্র ও মাঝারি ব্যবসা হিসাব ব্যবস্থাপনায় গুরুত্ব দেয় না। অথচ হিসাব ব্যবস্থাপনায় গুরুত্ব না দিয়ে কোনো ব্যবসা বড় হতে পারে না। Bank পক্ষে একটি ব্যবসা যাচাই-বাছাই করা বা তার আর্থিকস্বাস্থ্য বোঝার জন্য আর্থিক হিসাব বিবরণী একটিপ্রাথমিক দলিল।

উদ্যোক্তাকে যদি জিজ্ঞেস করা হয়, আপনার ব্যবসা কেমন চলছে? তিনি যদি বলেন ‘ভালো’, তা দিয়ে নিশ্চয়ই কারো ২৫ লাখ টাকার ঋণ আবেদনের সিদ্ধান্ত নেয়া যাবে না। ব্যাংকারদেখতে চাইবেন— কত টাকার বিক্রিহয়েছে, লাভ কত হয়েছে, এ বিক্রয় বা লাভ ধারাবাহিক (না ঝড়ে বক মরার মতো কোনো ব্যাপার) কিনা, কত টাকা পুঁজি খাটিয়ে এ লাভ এসেছে, লাভের টাকাটা কোথায় আছে, অন্য কোনো দেনা আছে কিনা ইত্যাদি। এসবপ্রশ্নের উত্তর নৈর্ব্যক্তিক এবং নিরপেক্ষভাবে আর্থিক বিবরণী ব্যতিরেকে আর কে দিতে পারে?

২. জামানত বিক্রিকরে টাকা আদায় করা ব্যাংকের উদ্দেশ্য নয়: আমি যখন ব্যাংকে কর্মরত ছিলাম, অনেকে প্রস্তাব নিয়ে আসতেন— ‘আমার উত্তরায় বা বাড্ডায় একটা জমি আছে। ওটা বন্ধক রেখে Bank থেকে ঋণ নিতে চাই।’

আমি জানতে চাইতাম, টাকাটা দিয়ে কী করবেন? তারা আমতা আমতা করতেন অথবা জানতে চাইতেন, কী করলে Bank ঋণ পাওয়া যাবে? আসলে অর্থ ব্যবহারে তাদের নির্দিষ্ট পরিকল্পনা ছিল নাঅথবা সেটি আয়করি কোনো কাজে আদৌ প্রয়োজনছিল না। তাই তারা সঠিক উত্তর দিতে পারতেন না। ব্যাংকের মূল কাজ আমানত নেয়া এবং ঋণ দেয়া। গ্রাহক ঋণ নেবেন এবং তার আয় থেকে ঋণ শোধ করবেন।

গ্রাহকের যদি আয় না থাকে তাহলে ঋণকীভাবে শোধ করবেন? জমি বিক্রি করে ঋণ আদায়— সেটা ব্যাংক কখনো চায় না।হ্যাঁ, মাঝে মধ্যে তা করে বটে, তবে বাধ্য হয়ে। সেটা Bank জন্য শেষ উপায় বা সম্বল। সুতরাং কারো যদি কোনো আয়ের উত্স না থাকে, তাকে তার জমি জামানতরেখে ঋণ দিলে পরে Bank রিয়েল এস্টেট ব্যবসায়নামতে হবে। একটা কথা মনে রাখতে হবে, ব্যাংক নিজে সরাসরি ব্যবসা করতে পারেনা।

ব্যাংক কোম্পানি আইন ১৯৯৪-এ অনুমোদিত ব্যবসা ব্যতীত অন্য ব্যবসায় ব্যাংক নিয়োজিত হতে পারেনা। আমদানি-রফতানি, রিয়েল এস্টেট অথবা অন্য যেকোনো সরাসরি ব্যবসা Bank জন্য নিষিদ্ধ।

৩. বিনিয়োগে উদ্যোক্তাদের অংশ কতটুকু: ব্যবসা চালাবেনউদ্যোক্তা। কখন কী সুযোগ আসে সে ব্যাপারেচোখ-কান খোলা রাখা, সুযোগের সদ্ব্যবহার করা, ঝুঁকি দেখলে প্রতিরোধব্যবস্থা নেয়া সবই উদ্যোক্তার কাজ।

এসব তিনিস্বতঃপ্রণোদিত হয়ে করবেন। কারণ ব্যবসাটা তার। কিন্তু ব্যবসায় যদি তার বিনিয়োগবেশি না থাকে, যদি মনে হয় ভূতের বেগার খাটছেন, আয় করছেন আর তা ভোগ করছে অন্যজন অথবা মুনাফা আনছেন অন্যের ভোগের জন্য, তাহলে তিনি উদ্দীপনা হারিয়ে ফেলবেন।

পক্ষান্তরে, ঝুঁকির ক্ষেত্রে তার ক্ষতি কোম্পানি বা ব্যবসার সার্বিকক্ষতির তুলনায় বেশি না হওয়ায় তিনি অদরকারি ও অযাচিত কিছু ঝুঁকিনিয়ে ফেলতে পারেন। কারণ ক্ষতি হলেতার গায়ে তো বেশি লাগবে না! সুতরাং ব্যাংক নির্দিষ্ট ব্যবসায় উদ্যোক্তার বিনিয়োগের পরিমাণ কত তা দেখতে চায়।

ইংরেজিতে একটা কথা আছে— Put your money where your mouth is’; বাংলায় যার অর্থ হতে পারে— যেখানে আপনার সত্তা সেখানেই বুনুন টাকা। অর্থাত্ যে ব্যবসারজন্য টাকা চাওয়া হচ্ছে, সেটি উদ্যোক্তার কতটুকু বিশ্বাস বা আস্থার এর প্রমাণ পাওয়া যাবে তারবিনিয়োগের পরিমাণ দেখে। উদ্যোক্তা নিজেই যে ব্যবসায় বিনিয়োগে আগ্রহী নন— Bank তো বাইরের, তারা কেন বিনিয়োগ করবে?

৪. ব্যবসায় উদ্যোক্তার আগ্রহ: উদ্যোক্তার কাছে কোনো কোনো ব্যবসা নেশার মতো। যেকোনো মূল্যে তিনি সেটা বাস্তবায়ন করবেন। টাকা লাগলে তা জোগাড় করবেন। প্রয়োজনে জমি বিক্রি করেদেবেন।

লাইসেন্স পারমিটের জন্য ঘুরে ঘুরে জুতারতলা ক্ষয় করে ফেলবেন। ব্যবসাটা হয়ে যায় তার ধ্যান-জ্ঞান। রাত-দিন, শয়নে-স্বপনে ওই ব্যবসা নিয়ে ভাবেন। এ ধরনের ব্যবসায় সাফল্য উদ্যোক্তা নিজের সাফল্য এবং ব্যর্থতা নিজের ব্যর্থতা হিসেবে গণ্য করেন।

আন্তরিকতা অথবা সময় ব্যয়ের বিচারে এ ধরনেরব্যবসায় উদ্যোক্তা অনেক বেশি সংশ্লিষ্ট।উদ্যোক্তা ব্যবসায় আগ্রহী না হলে ফল হবে উল্টো। অবশ্য উদ্যোক্তার আগ্রহের একটি মাপকাঠি তার বিনিয়োগের পরিমাণ, যেটা আগে উল্লেখ করা হয়েছে।পক্ষান্তরে, উদ্যোক্তা অনেক সময় শখের বশে কোনোব্যবসা হাতে নেন।

সফল হলে ভালো, না হলেও অসুবিধা নেই। এসএসসি পরীক্ষারচতুর্থ বিষয়ের মতো। পাস করলে বাড়তি কিছু নম্বর পাওয়া যাবে, ফেল করলে অসুবিধা নেই। এ ধরনের মনোভাব থাকলে এবং ব্যাংক তা বুঝলে পিছিয়ে যাওয়ার শঙ্কা আছে।

৫. প্রকৃতপক্ষে ‘কত অর্থ’ প্রয়োজন: Bank থেকে ঋণ নেয়ার প্রয়োজন পড়ুক বা না-পড়ুক ব্যবসা পরিচালনার জন্যউদ্যোক্তাদের বিজনেস প্ল্যান করা উচিত, যার একটা গুরুত্বপূর্ণ অংশ তিন বা পাঁচ বছরের ভবিষ্যত্ পরিকল্পনা। এতেআয়-ব্যয়ের হিসাব, ক্যাশ ফ্লোয়ের প্রজেকশন থাকবে।

ব্যবসার জন্য কত অর্থ প্রয়োজন তা এসব প্রজেকশনে ফুটে উঠবে।পরিকল্পনা বাস্তবভিত্তিক হওয়া উচিত। আকাশকুসুম কল্পনা উদ্যোক্তারযোগ্যতা বা সততা সম্পর্কে প্রশ্ন তুলবে। একটা কথা মনে রাখতে হবে, প্রজেকশন হাতে পাওয়ার পর ব্যাংক অভিজ্ঞ লোক দিয়ে তা পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে দেখবে। যেমন— পরিকল্পনায় কেউ দেখালেন, প্রতি বছর বিক্রয় ১০০ শতাংশ হারে বাড়বে।

ব্যবসার প্রাথমিক পর্যায়ে উচ্চ প্রবৃদ্ধি হতে পারে, তবে তা যুক্তিসঙ্গত হতে হবে। ওই পর্যায়ে খরচও অনেক বেশি। যেমন বিপণন ব্যয়। প্লান্ট ক্ষমতা আংশিকব্যবহারের ফলে প্রশাসনিক ব্যয়ের হার তুলনামূলক অতিউচ্চ। পরিকল্পনার বাইরেঅযৌক্তিকভাবে কোনো অর্থ চাওয়া উচিত নয়। উপরন্তু যেসব জিনিসের জন্য অর্থচাওয়া হচ্ছে, বাজারে সেগুলোর দাম কেমন যাচাই করে নেয়া উচিত। বাজারের চেয়েঅযৌক্তিকভাবে বেশি দাম চাইলে বিশ্বাসযোগ্যতা নষ্ট হবে।

৬. লেনদেনে সততা: ব্যাংকের প্রত্যাশা— উদ্যোক্তা লেনদেনে সত্ হবেন। কেবল তাহলেই ব্যাংক আশা করতে পারে, ওই ব্যক্তি ঋণফেরত দেবেন। সততা যাচাই করা কঠিন। তবে যতক্ষণ পর্যন্ত কেউ অসত্ নয় বা তার অসততার প্রমাণ পাওয়া না যায়, ততক্ষণ ওই ব্যক্তিকে সত্ বলাযায়। সাধারণত Bank সিআইবি রিপোর্টের মাধ্যমে কারো ক্রেডিট রেকর্ড বা ঋণ আচরণ জানতে পারে।

কিন্তু এসএমই উদ্যোক্তাদের অনেকেই ব্যাংক থেকে আগেঋণ নেননি। তাই তাদের সিআইবি রিপোর্ট পাওয়া যায় না। সেক্ষেত্রে বিকল্প মাপকাঠি যেমন— বাড়িভাড়া, বিদ্যুত্, পানি বা টেলিফোন বিল নিয়মিত শোধ করা হয় কিনা, তা দেখে। যে ব্যক্তি বাড়িভাড়া শোধ করেন না, ইউটিলিটি বিল পরিশোধ করেন না— ব্যাংকঋণ শোধ করার তাগিদ তার থাকবে না।

৭. উদ্যোক্তা ব্যবসা বোঝেন কিনা: অনেক উদ্যোক্তা কোনো একটা ব্যবসায় জ্ঞান-অভিজ্ঞতা বা দক্ষতা না থাকা সত্ত্বেও টাকা আছেবলেই তিনি ব্যবসা শুরু করেন। ভাবেন, অন্যরা লাভ করছে তাই তিনিও লাভবানহবেন।

সেক্ষেত্রে তার প্রয়োজনীয়প্রশিক্ষণ নেয়া প্রয়োজন। সম্প্রতি বাংলাদেশব্যাংক নারী উদ্যোক্তাদের জন্য স্বল্প সুদে ঋণ দেয়ার ব্যবস্থা করায় এমন অনেকের আবেদন পাওয়া গেছে, যারা আবেদনকৃত ব্যবসা সম্পর্কে ওয়াকিবহাল নন। এক্ষেত্রে ঋণ দেয়া ব্যাংকেরজন্য ঝুঁকিপূর্ণ।

অনেক অঞ্চলে সম্পদশালীবাবার পুত্র ‘কী করে’ পরিচয়ের জন্য একটা দোকান খুলে বসে, কিন্তু দোকান বা ব্যবসার খুঁটিনাটি সম্পর্কে সে তেমন জানে না। প্রত্যেক ব্যবসায়আলাদা ‘গোমর’ আছে। তা না জানলে বা না বুঝলে সহজ ব্যবসায়ও লোকসান দিতে হয়। তাই Bank দেখে উদ্যোক্তা ব্যবসা বোঝেন কিনা।

৮. বিনিয়োগকৃতব্যবসার খাতের ভবিষ্যত্: বর্তমানে চালুএকটা ব্যবসা ভবিষ্যতে খারাপ হয়ে যেতে পারে। Bank মাঝারি বা দীর্ঘমেয়াদে যে এসএমই ঋণ দেয়, তার বর্তমান রমরমা অবস্থা দেখে সন্তুষ্ট হলেই চলে না— ভবিষ্যত্ চাহিদা এবং বিকল্প পণ্যের সম্ভাবনা বিবেচনায় নিতে হবে। একসময় চালু ভিসিডিক্যাসেটের দোকান নতুন প্রযুক্তি আবিষ্কারের সঙ্গে সঙ্গে অচল হয়ে এখন বিলুপ্ত হয়ে গেছে।

৯. Bank অলিখিত ঋণাত্মক তালিকায় আপনি বাআপনার ব্যবসা খাতটি আছে কি?: প্রত্যেক Bank নিজস্ব কিছু অগ্রাধিকার খাত আছে। তেমনি আছে ঋণাত্মক খাত, যে খাতে তারা ঋণ দেয় না।

কোনো Bank দ্বারস্থ হওয়ার আগে জেনে নিতে হবে— উদ্যোক্তার প্রকল্পটি কোন তালিকায় আছে। যদি তার প্রকল্পটি ঋণাত্মক তালিকায় থাকে, তাহলে ওই Bank পেছনে অযথা ঘুরেসময় নষ্ট করে লাভ নেই। কিছু কিছু পেশারব্যাপারে ব্যাংকের ‘শুচিবায়ু’ থাকে। তাদেরকেজামানতকারী হিসেবে নিলে ব্যাংক ঋণ দিতে ইতস্তত করে বা করতে পারে।

১০. ব্যাংকেরমাধ্যমে লেনদেন: অনেক ব্যবসায়ী ব্যাংকের মাধ্যমে লেনদেন করতে স্বচ্ছন্দ বোধ করেন না। ভাবেন, (কোনো একটা ব্যয় মেটানোরজন্য) টাকাটা সহসাই লাগবে। শুধু শুধু Bank জমা দেয়া আবার তোলা! কী দরকার এত ঝামেলার? অনেকে ভাবেন, নিজের টাকা ব্যাংকে জমা দিয়ে আবার ব্যাংকের কাছে হাত পাতব?

তবে মনে রাখতে হবে, গ্রাহকের আয় বা বিক্রয় হিসাব করার জন্য Bank কিছু পদ্ধতি আছে। ব্যাংকে জমানো টাকা এক্ষেত্রেএকটা শক্তিশালী ভূমিকা রাখে। কেউযদি বলেন, ২০১২ সালে তার বিক্রি হয়েছিল ১ কোটি টাকা। সেক্ষেত্রে ১০ লাখ টাকা জমা দেখলে Bank ‘১ কোটি টাকা বিক্রির’ পরিমাণ বিশ্বাস করবে না।গ্রাহক সাধারণত বলেন, ‘নগদে বিক্রি করেছি।’

সেক্ষেত্রে বিক্রির পরিমাণ বড়জোর ২০ লাখ টাকা পর্যন্ত মেনে নিতে পারে।আর কে না জানে, বিক্রি কমে গেলে মুনাফা কমে যাবে। ফলে কমবে গ্রাহকের ঋণ পরিশোধক্ষমতা। আর সেটা কমিয়ে দেবেতার ঋণ নেয়ার যোগ্যতা। অর্থাত্ গ্রাহকের ১ কোটি টাকা বিক্রি হলে যদি ১০ লাখ টাকা ঋণ পেতেন, ২০ লাখ টাকার বিক্রি হলে ২ লাখ টাকার বেশি বরাদ্দ হবে না।

১১. কখনো Bank ফাঁকি দেয়ার চেষ্টা করবেন না: ব্যাংক যেসব কাগজপত্র চায়, অনেক গ্রাহকের তা থাকে না। সেক্ষেত্রে ব্যাংকের কাছে এটি স্বীকার করা উত্তম। ব্যাংক দেখবে বিকল্প কোনো কাগজপত্র দিয়ে কাজচলে কিনা। নতুবা জানিয়ে দেবে, ঋণ দেয়া যাবে নাঅথবা কিছুদিন পরে নেয়ার পরামর্শ দেবে।

অনেক উদ্যোক্তা এ রকম পরিস্থিতিতে অতি চালাকি অথবা অসত্সঙ্গে পড়ে জাল কাগজপত্র তৈরি করেন। চোরের দশ দিনগেরস্থের একদিন। ব্যাংক যদি বুঝতে পারে, জমা দেয়া কাগজপত্র, লাইসেন্স বা দলিল জাল, তাহলে গ্রাহক সম্পর্কে বিশ্বাস হারাবে এবং ঋণ না দেয়ার শঙ্কা বেড়ে যাবে। মনে রাখবেন, Bank সঙ্গে সম্পর্ক আস্থার। আস্থা থাকলে আজ না হলেও আগামীকালসম্ভাবনার দরজা খুলে যেতে পারে। আর আস্থা নেই তো কিছুই নেই।

ব্যাংক লোন প্রসঙ্গে কিছু কথাঃ-
অনেকেই ব্যাংক লোন নিয়ে হতাশাগ্রস্থ মন্তব্য করেন যা দিন দিন বাড়ছে। এর একটা কারন ব্যাবসা ঠিকমত না গুছিয়ে লোন এর আবেদন করা। ব্যাংক কিন্তু একটা ব্যাবসা প্রতিষ্ঠান; কোন দাতব্য সংস্থা নয়।

আপনার যদি ঋন পরিশোধের যোগ্যতা না থাকে ব্যাংক আপনাকে কিভাবে ঋন দেবে? আপনি বলতে পারেন ঋন পেয়ে ব্যাবসা বড় করে ব্যাংকের টাকা দেবেন। এটা আবেগের কথা, ব্যাবসায়িক কথা নয়। এভাবে ঋন পাওয়া গেলে দেশের সব উদ্যোক্তা ঋন পেত। আগে প্লানিংটা এভাবে করুন যেন ব্যাবসা শুরু করে অন্তত ২ বছর নিজে চালু রাখতে পারেন। সব লেনদেন Bank মাধ্যমে করুন। মনে রাখবেন আপনি ১ টাকা বিনিয়োগ করলে ব্যাংক ও সব্বোচ্চ ১ টাকা দেবে।


এই বেসিক বিষয়টা অনেকেই বোঝে না। আমি অনেক ক্ষুদ্র উদ্যোক্তাকে জানি যারা শুরুতে অনেক কাঠখড় পুড়িয়েছে। নিজেকে ৩/৪ টা বছর চালিয়ে নিতে কি পরিমান কষ্ট করেছে বলার মত না। এখন ব্যাংক তাদের কাছে যায়। অনুরোধ করে – কিছূ লোন নেন। ব্যবসা আরো বড় করেন।

তারা বলে – ধুরু মিয়া, আসছেন, চা খান এরপরে যানগা। লোন লাগতো না। আবার অনেককে জানি যারা ব্যাংকে আবেদন করার ২ মাসের মধ্যেই লোন পেয়ে যাচ্ছে। কারন কি ? কারন তারা নিজেদেরকে সামর্থ্যবান করে তুলেছেন। Bank লোনে জন্যে যোগ্য করে গড়ে তুলেছেন। Bank তাদের উপর এবং তাদের ব্যবসার উপর ভরসা করতে পারেন।

Comments (No)

Leave a Reply

এই সাইটের কোন লেখা কপি করা সম্পুর্ন নিষেধ