Online এ আয় করার আগে জেনে নিন কিছু বাস্তব কথা

শুরুটা হয়েছিল পিটিসি সাইট থেকে। সবাই খেয়ে না খেয়ে উঠে পড়ে লাগলো পিটিসি সাইটে সাইনআপ করে ক্লিকবাজি তে। সাথে রেফারেল লিঙ্ক শেয়ার আর সাইন আপ করানোর মিশন। টেকি ব্লগগুলোতে ঢুকাই যেতো না পিটিসি’র পোস্টের জ্বালায়। কিছুদিন পর বেশির ভাগ মানুষই ধরা খেয়ে অবশেষে পিটিসি অধ্যায় শেষ হল।

এরপর সাথে সাথেই এসে পড়ল ডু-ল্যান্সার আর ইউনিপে-২ ইউ ! আহা! সেই কি ট্রেন্ড!! মানুষ কিছু টাকা ইনকামের আশায় এবার ঝাঁপিয়ে পড়ল ইউনিপে-২ ইউ/ ডু-ল্যান্সারের উপরে। কিন্তু আফসোস! এবারো মানুষ গুলো ধরা খেলো। :

ফ্রিল্যান্সিং এ তখন বাংলাদেশীদের অবস্থান বেশ ভালো। মার্কেটপ্লেসে অহরহ কাজ পাচ্ছে। বেশ শান্তিতেই ছিল ফ্রীলাঞ্চাররা। কিন্তু বিধি বাম! এখানেও কিছুসংখ্যক “অতি উৎসাহি” লোক এসে পড়ল। শুরু করল সাইন আপ আর বিডিং! যে কাজ অভিজ্ঞ ফ্রীলাঞ্চাররা ১০০/২০০ ডলারে বিড করত, সেই কাজেই এই “নব্য ফ্রী-লাঞ্চাররা” ২০/৩০ ডলারে বিড করা শুরু করল। তাদের উদ্দেশ্য কাজ নেয়া। সেটা সঠিক ভাবে ডেলিভারী দেয়ার মুরোদ আছে কিনা সেটা ভাবা’র কি দরকার?? বেশ কিছুদিন ধরে মার্কেটপ্লেস তোলপাড় করে ফেলল তারা। একটা সময় পর বাধ্য হয়েই বায়াররা তাদের জব পোস্ট করার সময় লিখে দেয়া শুরু করল ” প্রিয় বাংলাদেশী বন্ধুরা, অনুগ্রহপূর্বক বিড করা থেকে বিরত থাকুন”। আহা! সে কি বিরাট সম্মান!!!

তারা সেখানেও ব্যর্থ হয়ে এবার একটু অন্য প্ল্যাটফর্মের দিকে ঝুঁকল। সোশ্যাল মিডিয়া’র ট্রেন্ড চলছে। সুতরাং, ফেসবুক লাইক ব্যবসায় ঢুকে পড়ল। একের পর এক ফেইক আইডি খুলে, স্প্যামিং করে লাইক সেল করা শুরু। এখানেও উপরওয়ালা মুখ ফিরিয়ে নিলেন। যুক্তরাজ্যের বিখ্যাত নিউজপেপার The Guardian “ঢাকাকে ক্লিক ফার্ম আর ফেইক লাইকের আতুরঘর” দেখিয়ে একদিন নিউজ করে বসল। আর আমাদের দেশে সেই সব লাইক-ওয়ার্কারদের পুরস্কৃত করা হল। আহা! সে কি বিশাল ব্যাপার-স্যাপার! সত্যিকারের ফ্রীলাঞ্চারদের কেউই খুঁজে না পেয়ে অবশেষে লাইকারদের কেই পুরস্কার দেয়া হল!!! সর্বনাশের শেষ পেরেকটা ঠুকে দিল ফেসবুক নিজেই, তাদের বেশ কিছু আপডেটে ফিচারের মাধ্যমে।

এখন কি করবে??

এবার শুরু হল ব্লগিং আর গুগল এ্যাডসেন্স অধ্যায়। কপি-পেস্ট আর রিরাইট কন্টেন্ট দিয়ে সকাল-বিকাল এ্যাডসেন্স এ্যাকাউন্ট খোলার ধুম পড়ে গেল। যে সাইট দিয়েই এ্যাপ্লাই করছে সেটাতেই এ্যাপ্রুভ পাচ্ছে। শুরু হল নিজেদের মধ্যে ক্লিকাক্লিকি। একটা পোস্টে কন্টেন্ট ছাড়া ইমেজ বসিয়ে আর পপ-আপ এবং ক্লিক-জ্যাকিং কোড বসিয়ে ইনকাম শুরু করে দিল। আহা! সে কি নয়নাভিরাম দৃশ্য! Adsense Dashboard রিলোড দিলেই ডলার বেড়ে দ্বিগুণ হয়ে যাচ্ছে! সে সময়ে সম্ভবত সবচেয়ে সহজ ইনকামের পথ ছিল এটাই। কিন্তু এখানেও বিধি বাম! হঠাৎ একদিন গুগল গণহারে এ্যাডসেন্স ব্যান করা শুরু করল। একই সাথে একের পর এক এ্যালগরিদম আপডেট এনে তাহাদের কে আছোলা বাঁশ দিয়ে দিল। আর সেই বাঁশের ব্যথা এখন নতুনরাও হারে হারে টের পাচ্ছে। 🙁

এবার শুরু হল এ্যাফিলিয়েশনের ট্রেন্ড। ক্লিকব্যাঙ্ক, ম্যাক্স-বাউন্টি থেকে শুরু করে এ্যামাজন। “তারা” ঝাঁপিয়ে পড়ল শর্টকার্টে ইনকামের আশায়। আফসোস, এখানেও তারা ব্যর্থ হল। মাঝখানে এ্যামাজনের জঙ্গলে হারিয়ে গেল বেশ কিছু চেনা মুখও! পকেট ভারীও করলো কিছু মানুষ।

ট্রেন্ড শুরু হল, Teespring এর। কপি-পেস্ট ডিজাইন দিয়েই ইনকামের আশায় তারা Teespring এর উপরে ক্র্যাশ খেয়ে বসল। কিন্তু, আফসোস। তারা এখানেও ব্যর্থ হল।

রইল বাকি Youtube!

হে বাঙ্গালী, কথাটা লিখে রাখতে পারেন। খুব তারাতারি ইউটিউব নিয়েও তাহার ব্যর্থ হইয়া দেয়ালের সহিত মাথা ঠুকর দেয়া শুরু করিয়া দিবেন। খুব খেয়াল করে সিদ্ধান্ত নিন।

প্রশ্ন হচ্ছে, “তাহাদের” ব্যর্থ হওয়ার পিছনে কারণ গুলো কি? এমন তো নয় যে উপরে উল্লেখিত প্ল্যাটফর্ম গুলো থেকে মানুষ ইনকাম করছে না, বরং অনেক বেশি করছে। আমাদের সম্মানিত Mashiur Rahman ভাই, Jakir ভাই আর Rasel ভাই তো গাড়িই কিনে ফেললো 😀 Al-Amin Kabir ভাই শুধু দেশেই নয়, দেশের বাইরেও একজন সফল এ্যাফিলিয়েট মারকেটার হিসেবে বেশ জনপ্রিয়। Sharif Muhammed Shahjahan ভাইও ইচ্ছা পোষণ করেছে এটলিস্ট শো-অফ করার জন্যে হলেও উনি গাড়ি একটা কিনবেনই। এসব বলে আমি আসলে এটাই বুঝাতে চাচ্ছি, প্ল্যাটফর্ম গুলো কিন্তু ঠিকই আছে (ক্লিকবাজি গুলো বাদে)। আমি কোনভাবেই প্ল্যাটফর্ম গুলোকে দোষ দিচ্ছি না। তাহলে দোষটা কার আর ব্যর্থতাই বা কেন???

১। পিটিসি, ডু-ল্যান্সার, ইউনি পে ২ ইউ এই সব গুলো প্ল্যাটফর্মে মানুষ ঢুকেছিল “অল্প পরিশ্রমে ইনকাম” এর আশায়। ফলাফল- ব্যর্থতা।

২। ফ্রিল্যান্সিং এ তারা ব্যর্থ হয়েছে সঠিক ভাবে কাজ না শিখেই ইনকাম করার ধান্দার কারণে। শুধু কাজ পেলেও যে ইনকাম হবে, এমন একটা ভুল ধারণাই তাদের কে ব্যর্থতা’র গ্লানিতে ডুবিয়ে দিয়েছে।

৩। সোশ্যাল মিডিয়া’য় “মার” খেয়েছে মার্কেটিং এর ব্যাপারে পর্যাপ্ত জ্ঞানের অভাবে। এখানেও শর্টকার্ট ইনকামের একটা টেন্ডেন্সি কাজ করেছে।

৪। ব্লগিং আর এ্যাডসেন্সে ব্যর্থ হয়েছে পর্যাপ্ত জ্ঞানের অভাব আর গুগলের নিয়ম-নীতিকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখানোর কারণে।

৫। এ্যাফিলিয়েশনের ব্যাপারে ভুল ধারণা আর পর্যাপ্ত জ্ঞানের অভাব তাদের কে হতাশ করার পিছনে অন্যতম কারণ।

৬। টিস্প্রিং এর ব্যাপারেও উপরের বিষয়গুলোই দায়ী।

৭। আর Youtube এ ব্যর্থতার পিছনের কারণ গুলো নিয়ে একদিন পোস্ট করবো। তবে প্রাথমিক কারণ হিসেবে “ঝোঁক” আর “গুজব” কেই দায়ী করতে পারেন।

আমাদের বাঙ্গালি’র একটা স্বভাব “সফল হবেন কিভাবে” এই ধরনের পোস্ট/কেস স্টাডি গুলোই বেশি বেশি পড়ি। কিন্তু, কখনো কি উল্টোটা করেছেন? কোনদিন কি পড়েছেন “কেন আপনি ব্লগিং এ ব্যর্থ হবেন” কিংবা “যে সব কাজ করলে আপনি মার্কেটিং এ ব্যর্থ হবেন” এই টাইপের পোস্ট??? উপরে যে সব সিনিয়র ভাইদের ট্যাগ করেছি তাদের প্রতি অনুরোধ থাকল অন্তত একটা বার হলেও এমন কিছু পোস্ট করুন, যেগুলো পড়ে নতুনরা অন্তত এটা যেন উপলব্ধি করতে পারে যে তার কোন কোন কারণে ব্যর্থ হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।

বিঃদ্রঃ
টিস্প্রিং এর ব্যাপারে অনেকেই ভুল বুঝছেন এবং মন্তব্যও করছেন । এখানে টিস্প্রিং কে হেয় করে কোন কথা বলা হয়নি। অনুগ্রহপূর্বক পোস্টের উদ্দেশ্য বুঝুন, প্লীজ।

অন্যরকম মানুষ থেকে আর্টিকেল টি সংগৃহিত

Comments (No)

Leave a Reply

এই সাইটের কোন লেখা কপি করা সম্পুর্ন নিষেধ