অল্প পুঁজিতে লাভজনক business আইডিয়া (১০ হাজার টাকায় ব্যবসা শুরু) অল্প পুঁজিতে লাভজনক ব্যবসার আইডিয়া; একটা সময় ধারণা করা হতো ব্যবসা করতে হলে অনেক মূলধনের প্রয়োজন। আসলে কিন্তু এমনটা নয়। যেকেউ চাইলেই খুব অল্প পুঁজিতে অনেক ভালো ব্যবসা করতে পারবে। তবে এক্ষেত্রে প্রয়োজন পরবে নিজের প্রচন্ড ইচ্ছাশক্তি, পরিশ্রম করার মানুষিকতা, উদ্ভাবনী শক্তি এবং দক্ষতা। অনেকেই ১০ হাজার টাকায় ব্যবসা শুরু করে নিজের পরিশ্রম আর মেধা দিয়ে বিজনেস বড় করে তুলেছেন। আপনার মনে হয়তো এখনো প্রশ্ন রয়েছে, অল্প পুঁজিতে কি আসলেই কোনো ব্যবসা করা সম্ভব? এবং যদি সম্ভব হয় তাহলে তা থেকে লাভবান হওয়ার সম্ভাবনা কতোটুকু?
আপনার মনে যদি এখনও এই ধরনের প্রশ্ন ঘুরপাক খায়, তবে জেনে রাখুন এমন অনেক ব্যবসা রয়েছে যেগুলো খুব অল্প বিনিয়োগ করেও শুরু করা যায়।
তবে পুঁজির পরিমাণ অল্প মানে এই না যে এ থেকে লাভবান হওয়ার সম্ভাবনা নেই! এমন অনেক ব্যবসায়ী আছেন যারা অল্প মূলধনে ব্যবসা শুরু করে পরবর্তীতে তা থেকেই অনেক বড় কিছু করতে সক্ষম হয়েছেন।
তবে এটা ডিপেন্ড করবে সম্পূর্ণ আপনার পরিশ্রম, ডেডিকেশন লেভেল, এবং দক্ষতার উপর। আপনি যদি এই ব্যবসাগুলোতে আনন্দের সহিত লেগে থাকতে পারেন তবে দিনশেষে একটা মোটা অঙ্কের আয় হবে আপনার।
অল্প পুঁজিতে লাভজনক ব্যবসার আইডিয়া
আপনাদের সুবিধার্থে এই আর্টিকেলে অল্প পুঁজিতে ব্যবসার আইডিয়া তুলে ধরবো। এখানে এমন কয়েকটি ব্যবসার কথা তুলে ধরবো যা আপনি খুব অল্প বিনিয়োগ করে বিজনেস শুরু করতে পারবেন এবং এ থেকে অবশ্যই লাভবান হবেন।
তাহলে চলুন দেরি না করে এখনই জেনে নেয়া যাক অল্প পুঁজিতে করা যায় এমনই কিছু বিজনেস সম্পর্কে।
১. চায়ের দোকান
অধিকাংশ বাঙালির দিনটা কি করে শুরু হয় বলুন তো? ঠিক ধরেছেন, চায়ের কাপে চুমুক দিয়েই কর্মক্ষেত্রে ছুটে চলেন অনেকে। ঘুরতে-ফিরতে, কাজের ফাঁকে, আড্ডায় সবকিছুতে চা লাগবেই।
এতো এতো চা প্রেমীদের জন্য যদি খোলা যায় একটা চায়ের দোকান, তবে কেমন হবে ভাবুন তো একবার?
একটা চায়ের স্টল বানাতে খুব একটা পুঁজিরও প্রয়োজন পরবে না আপনার। ছোট একটা ঘরে বসার জন্য কয়েকটা চেয়ার/বেঞ্চ আর টেবিল দিয়ে সাজিয়ে নিতে পারেন আপনার টি স্টল টা।
লোকদের নজড় কাড়ে এমন কয়েকটা ছবি দিয়ে সুন্দর করে সাজিয়ে নিতে পারেন দোকানটা। সাথে রাখতে পারেন চায়ের সাথে খাওয়া যায় এমন কিছু স্ন্যাকস কিংবা মুখরোচক খাবার।
তবে এতো কিছুর পর আপনাকে চায়ের স্বাদের কথাটা মাথায় রাখতে হবে কিন্তু।
২. মোবাইল রিচার্জ / লোডের দোকান
খুব অল্প পুঁজিতে দারুণ লাভজনক একটা ব্যবসার আইডিয়া এই মোবাইল রিচার্জের দোকান। বর্তমানে প্রায় সব মানুষের হাতেই একটা করে মোবাইল থাকে। আর মোবাইল থাকা মানে নিত্যদিনের যোগাযোগের জন্য রিচার্জের প্রয়োজন পরবেই।
তাই অল্প পুঁজিতে এই ডিমান্ডেবল ব্যবসাটির কথা ভেবে দেখতেই পারেন। ছোট একটা দোকান খুব অল্প বিনিয়োগেই ভাড়া করে নিতে পারবেন।
মোবাইল রিচার্জের পাশাপাশি বিকাশের (Bkash) ব্যবস্থাও রাখতে পারেন।
এছাড়া মোবাইলের কাভার, এয়ারফোন/হেডফোন ও রাখতে পারেন আপনার দোকানটিতে।
৩. মোবাইল রিপেয়ারিংয়ের (Repairing) ব্যবসা
বর্তমানে মোবাইল ফোন নেই এমন মানুষ লাখে একজনও হবে কি না সন্দেহ আছে। আর মোবাইল ফোন যেহেতু একটা electronic device তাই ব্যবহারের ফলে এটি নষ্ট হতে বাধ্য। তাই খুব অল্প পুঁজিতে মোবাইল রিপেয়ারিংয়ের ব্যবসাটি খুবই লাভজনক।
তবে আপনার যদি মোবাইল রিপেয়ারিংয়ের দক্ষতা না থাকে তাহলে খুব অল্প টাকায় ৩-৪ মাসেই এর কোর্সটি করে শিখে ফেলতে পারবেন এই কাজটি।
আর এর জন্য আপনার খুব বড় দোকানের প্রয়োজন পরবেনা। খুব ছোট একটা দোকান হলেই এই কাজ চলে যাবে। দুই-তিন হাজারের মধ্যে মোবাইল রিপেয়ারিংয়ের সরঞ্জাম/যন্ত্রপাতি ও কিনে ফেলতে পারবেন। Online Income Tunes
মোট কথা দশ হাজারের ভেতরেই আপনি এই ব্যবসাটি করে ফেলতে পারবেন।
৪. ফুচকার দোকান
ফুচকা পছন্দ করে না এমন মানুষও আছে নাকি? বর্তমানে খুবই চাহিদাসম্পন্ন একটা খাবার এই ফুচকা। ক্রেতার অভাব হবেই না। সবচেয়ে বড় কথা খুব অল্প পুঁজিতেই করতে পারবেন এই ব্যবসা।
শুরুর দিকে একটা ভ্যানে করে বিক্রি করতে পারেন ফুচকা। হাজার টাকার মধ্যেই ভাড়া করে নিতে পারেন একটা ভ্যান। নিজেই তৈরি করে নিন ফুচকা। মনে রাখবেন এক্ষেত্রে ফুচকার স্বাদ খুব গুরুত্বপূর্ণ একটা ব্যাপার। আপনার ফুচকা খেতে যতো ভালো হবে, ক্রেতাও ততোই বাড়বে।
স্কুল-কলেজ, পার্ক কিংবা পর্যটন স্থানগুলোর আশেপাশে থাকার চেষ্টা করবেন। পরবর্তীতে কিছু টাকা জমিয়ে একটা ছোট দোকানের ব্যবস্থা করতে পারেন।
৫. ফুলের দোকানের business
বর্তমানে খুবই জনপ্রিয় এবং লাভজনক business এটি। মানুষের কাছে এর চাহিদা (Demand) খুব বেশি। যেকোনো অনুষ্ঠান, বিয়ে, জন্মদিন কিংবা কোনো বিশেষ উপলক্ষে মানুষ ফুল কিংবা ফুলের তোড়া উপহার দিতে বেশি পছন্দ করে।
আরেকটা আশার কথা হলো ফুলের দোকানের এতো চাহিদা থাকার পরও ফুলের দোকানের সংখ্যা খুব একটা দেখা যায় না। এই সুযোগটাকেই কাজে লাগাতে পারেন আপনি।
খুব একটা পুঁজিরও প্রয়োজন পরবে না আপনার। একটা দোকান লাগবে এই businessকরার জন্য। নিজের ফুল গাছ থাকলে সেখান থেকেই সংগ্রহ করুন ফুল কিংবা অল্প টাকায় কিনে আনুন ফুল।
তারপর নিজের দক্ষতা দিয়ে তৈরি করুন সুন্দর ফুলের তোড়া (bouquet)।
৬. আইসক্রিমের business (ভ্যানগাড়িতে)
আইসক্রিম ছোট-বড় প্রায় সবারই প্রিয় একটা খাবার। এর জন্য খুব একটা পুঁজির ও প্রয়োজন পরবে না আপনার। হাজারের মধ্যে একটা ভ্যানগাড়ি ভাড়া করে নিতে পারেন।
সুস্বাদু সব আইসক্রিম দিয়ে ভরে নিতে পারেন আপনার ভ্যানটি। স্কুল, কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয় সংলগ্ন এলাকা বেছে নিতে পারেন আইসক্রিম বিক্রির জন্য।
৭. খাতা–কলমের দোকান
শিক্ষার্থীদের নিত্যপ্রয়োজনীয় একটি সরঞ্জাম হচ্ছে খাতা-কলম। মাত্র দশ হাজার পুঁজি বিনিয়োগের মাধ্যমেই করে ফেলতে পারেন এই লাভজনক business।
তবে এর জন্য আপনাকে স্কুল, কলেজ সংলগ্ন একটি দোকান ভাড়া করে নিতে হবে। এরপর পাইকারি মূল্যে খাতা-কলম কিনে শুরু করে দিতে পারেন আপনার ব্যবসাটি। সাথে রাখতে পারেন রাবার, পেন্সিল, রং-পেন্সিল, কাটার, স্কেল এর মতো শিক্ষার উপকরণগুলো।
৮. ইভেন্ট ম্যানেজমেন্ট (Event management)
এটি খুব অল্প টাকায় শুরু করা যায় এমন একটি business। প্রতিদিন ছোট-বড় বিভিন্ন সংস্থা তাদের নানা অনুষ্ঠান আয়োজনের দায়ভার দিয়ে থাকে ইভেন্ট ম্যানেজমেন্ট কোম্পানিগুলোকে।
তবে এই business জন্য আপনার প্রয়োজন পরবে দক্ষতা, পরিশ্রম, বুদ্ধি আর যোগাযোগ তৈরির ক্ষমতা। শুরুটা ছোট ইভেন্ট দিয়েই করুন, ধীরে ধীরে অভিজ্ঞতা বৃদ্ধির সাথে সাথে নতুন নতুন যোগাযোগ তৈরি করে ব্যবসা বাড়ান।
তবে এক্ষেত্রে আপনি কোন ধরনের ইভেন্ট আয়োজন করতে বেশি সাচ্ছন্দবোধ করেন তা চিহ্নিত করে সে ধরনের সংস্থার সাথে যোগাযোগ করার চেষ্টা করুন।
৯. ট্যুর গাইড
ভ্রমণ পিপাসু বাঙালীরা প্রায় সময়ই নির্ভর করে থাকে ট্যুর গাইডের ওপর। ফ্লাইট, ট্রেনের টিকিট বুকিং, হোটেল বুকিং থেকে শুরু করে সম্পূর্ণ ট্যুর প্ল্যান করা আপনার দায়িত্ব।
এটি খুব অল্প পুঁজির এবং একটি লাভজনক business। তবে এর জন্য আপনার প্রয়োজন পরবে একটি ওয়েবসাইটের, যোগাযোগ তৈরি করতে হবে বিভিন্ন জায়গার হোটেলের সঙ্গে এবং জেনে নিতে হবে তাদের ট্র্যাভেল এজেন্ট কমিশনের রেট।
সুন্দর এবং নতুন জায়গা বের করুন ট্যুরের জন্য।
১০. ঠেলাগাড়ি / ভ্যানগাড়িতে শুকনো খাবার বিক্রি
খুব অল্প টাকায় যদি business খুঁজে থাকেন, তবে এটি হতে পারে একটা লাভজনক ব্যবসা। এর জন্য আপনার প্রয়োজন পরবে একটি ঠেলাগাড়ি কিংবা ভ্যানগাড়ির। আপনার নিজেরই যদি একটি ঠেলাগাড়ি থাকে তাহলে তো আর কোনো কথাই নেই। তবে না থাকলেও সমস্যা নেই।
অল্প টাকাতেই মাস হিসেবে ভাড়া করা যায় ঠেলাগাড়ি। ব্যস, এরপর এমন কিছু শুকনো খাবার কিনে আনুন যা খেতে মানুষ পছন্দ করে।তা হতে পারে বুট, চানাচুর, মুড়ি কিংবা প্যাকেটজাত বিস্কুট।
খুব অল্প বিনিয়োগেই আপনি করে ফেলতে পারেন এই business ।
শেষ কথা
উপরে আমরা ১০ টি অল্প পুঁজিতে লাভজনক business আইডিয়া তুলে ধরেছি। এই আইডিয়াগুলো নিয়ে মাত্র ১০ হাজার টাকায় ব্যবসা শুরু করতে পারবেন।
তবে বর্তমানে অনলাইনের মাধ্যমেও খুব অল্প মূলধনে অনেক business করা যায়। অনলাইন বিজনেস আইডিয়া নিয়ে আমাদের সাইটে ইতোপূর্বে গাইডলাইন দেয়া হয়েছে। আপনি চাইলে সেটিও পড়ে নিতে পারেন।
আমরা এই আর্টিকেলে খুব অল্প মূলধন বিনিয়োগ করে যেসব লাভজনক ব্যবসা করা যায় তাই তুলে ধরেছি। এখন আপনি আপনার পছন্দমতো যেকোনো ব্যবসা বাছাই করে নিজের উদ্ভাবনী শক্তি আর পরিশ্রম দিয়ে শুরু করে দিন আপনার বিজনেস।
Comments (No)