ওয়ার্ডপ্রেস শেখার ও উপকারিতা বর্তমানে বাংলাদেশে “ঘরে বসে অনলাইনে আয়” একটি অন্যতম আলোচ্য বিষয়। বিশেষ করে তরুণদের মাঝে এই বিষয়ে আগ্রহ অনেক বেশি পরিলক্ষিত হচ্ছে। এর মূল কারণ আত্মনির্ভরশীল এবং স্বাবলম্বী হওয়া। প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা শেষে চাকরির বাজারে প্রবেশ করার ক্ষেত্রে যে সকল আমলাতান্ত্রিক জটিলতা এবং দুর্ভোগ পোহাতে হয় তাতে অনেকেই চাকরি করার আগ্রহ হারিয়ে ফেলেন। পাশাপাশি যোগ্যতা অনুযায়ী চাকরি পাওয়া বর্তমানে কঠিন বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে।
যারা চাকরিজীবী তারাও চাকরির পাশাপাশি কিছু করার চিন্তা করে থাকেন। এই ধারা অনেক আগে থেকেই চলে আসছে। চাকরিজীবীদের জন্য চাকরির পাশাপাশি কিছু করার জন্য ঘরে বসে অনলাইনে আয় একটি যুগোপযোগী সুযোগ। এই কারণেই অনলাইন জগতে আমার পদার্পণ। আমি নিজেও একজন চাকরিজীবী। প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা শেষে আমি বর্তমানে বাংলাদেশের একটি প্রাইভেট প্রতিষ্ঠানে কর্মরত আছি। প্রায় দেড় বছর যাবত আমি অনলাইনে আয় এবং এতদসংক্রান্ত বিষয়াবলীর উপর অনলাইনে পড়াশোনা করছি। আমি আপনাদের কাছে আমার নিজের কিছু অভিজ্ঞতা আজ তুলে ধরব।
আমি যখন প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা সম্পন্ন করি তখন দেখতে পাই যে পৃথিবী আস্তে আস্তে ডিজিটাল হচ্ছে। উন্নত বিশ্বের মানুষ ঘরে বসে অফিস করছে, দৈনন্দিন কার্যক্রম ঘরে বসেই সম্পাদন করছে। ছাত্র-ছাত্রীরা কাগজের বইয়ের পরিবর্তে ইবুক পড়ছে। বড় বড় কোম্পানির উচ্চপদস্থ কর্মকর্তাবৃন্দ পৃথিবীর বিভিন্ন স্থানে থাকা সত্ত্বেও অনলাইনে ভিডিও কনফারেন্সের মাধম্যে মিটিং করে বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ সিধান্ত গ্রহণ করছেন ইত্যাদি। তখন আমি অনলাইনের অপার সম্ভাবনার প্রতি আগ্রহ অনুভব করি। বর্তমান জগতের সবজান্তা সমশের গুগলের শরণাপন্ন হই বিভিন্ন অজানা বিষয়ে জ্ঞান অর্জনের জন্য। বলে রাখা ভাল যে আমার অনেক দিনের শখ আমি একজন প্রফেশনাল ওয়েব ডেভেলপার হব। তখন ওয়েব-ডিজাইন এবং ডেভেলপমেন্টের ব্যাপারে গুগলে ঘাটাঘাটি করতে গিয়ে আমি সর্বপ্রথম ওয়ার্ডপ্রেসের ব্যাপারে জানতে পারি। আপনারা হয়ত অনেকেই জানেন যে বর্তমানে ওয়ার্ডপ্রেস পৃথিবীর বিখ্যাত একটি ওপেন সোর্স কনটেন্ট ম্যানেজমেন্ট সিস্টেম (CMS)। এটি এমন একটি মাধ্যম যার দ্বারা আপনি অতি সহজেই খুব অল্প সময়ে একটি ওয়েবসাইট তৈরি করতে পারবেন। আসুন ওয়ার্ডপ্রেস সম্পর্কে আমার অভিজ্ঞতা জেনে নিই।
যখন আমি ওয়েব ডেভেলপার হওয়ার আগ্রহ প্রকাশ করলাম, তখন জানলাম আমাকে ২টি প্রধান ওয়েব ল্যাংগুয়েজ জানতে হবে। ল্যাংগুয়েজ দু’টি হল এইচটিএমএল এবং সিএসএস। এইচটিএমএল হল হাইপার টেক্সট মার্কআপ ল্যাংগুয়েজ এবং সিএসএস হল ক্যাসকেডিং স্টাইল শিট। ওয়েবের আলাদা ল্যাংগুয়েজ তথা ভাষা আছে। ওয়েব বোঝে মার্কআপ ল্যাংগুয়েজ। এইচটিএমএল দ্বারা আপনি আপনার ওয়েবসাইটকে ওয়েবের ভাষায় রূপান্তরিত করবেন। আর সিএসএস দ্বারা আপনি আপনার এইচটিএমএল-কে বিভিন্ন আঙ্গিকে সাজাবেন এবং প্রদর্শন করবেন। এইচটিএমএল এবং সিএসএস শিখা খুবই সহজ এবং শুধুমাত্র এইচটিএমএল এবং সিএসএস দ্বারা আপনি একটি ওয়েবসাইট বানাতে পারেন। কিন্তু সেটা ওয়েবসাইট হবে ঠিকই, কিন্তু যুগোপযোগী হবে না।
ওয়েবসাইট সাধারণত দুই ধরণের হয়ে থাকে যেমন স্ট্যাটিক ওয়েবসাইট এবং ডায়নামিক ওয়েবসাইট। শুধুমাত্র এইচটিএমএল এবং সিএসএস দ্বারা যদি আপনি একটি ওয়েবসাইট তৈরি করেন সেটা হবে স্ট্যাটিক ওয়েবসাইট। স্ট্যাটিক ওয়েবসাইটের অন্যতম বড় বাধা হল আপনাকে প্রত্যেকটি ওয়েবপেজ তৈরি করার জন্য আলাদা আলাদা এইচটিএমএল এবং সিএসএস কোডিং করতে হবে যা অত্যন্ত সময়সাপেক্ষ ব্যাপার। পাশাপাশি আপনি যখন আপনার ওয়েবসাইটকে সার্চ ইঞ্জিন অপটিমাইজেশন (এসইও) করবেন, তখন ডায়নামিক সাইটগুলির সাথে প্রতিযোগিতায় টিকতে পারবেন না। কারণ, ডায়নামিক সাইটগুলি আরো বিভিন্ন ওয়েব ল্যাংগুয়েজ দ্বারা তৈরি যা সার্চ ইঞ্জিন ফ্রেন্ডলি। স্ট্যাটিক ওয়েবসাইট কেবল ভিজিটরের দৃষ্টিগোচর হবে, কিন্তু তারা কমেন্ট তথা মতামত প্রকাশ করতে পারবে না। কিন্তু ডায়নামিক ওয়েবসাইটগুলিতে ভিজিটর মতামত প্রকাশ করতে পারবে। ফলে ডায়নামিক সাইটগুলির ভিজিটর রিটেনশন রেট অর্থাৎ ভিজিটর ধরে রাখার ক্ষমতা বেশি।
আপনি হয়ত ভাবছেন তাহলে ডায়নামিক সাইট বানানো অনেক কষ্ট। আপনার অবগতির জন্য জানাচ্ছি যে ডায়নামিক ওয়েবসাইট তৈরি করা মোটেই কষ্টের নয়। কারণ, ওয়ার্ডপ্রেস নিজেই একটি ওপেন সোর্স ডায়নামিক কনটেন্ট ম্যানেজমেন্ট সিস্টেম যেখানে মৌলিক ওয়েব ল্যাংগুয়েজগুলি বিল্টইন থাকে। আপনি এখন আপনার চাহিদা মোতাবেক মোডিফিকেশন করবেন। অর্থাৎ সোর্স কোড চেঞ্জ করবেন।
আগেই বলেছি আমি গুগল সার্চ করে বিভিন্ন বিষয় জানার চেষ্টা করেছি। সেই সুবাদে আমি মৌলিক এইচটিএমএল এবং সিএসএস শিখেছি। কিন্তু যখন ওয়ার্ডপ্রেস শিখতে গেলাম তখন জানলাম যে আমাকে আরো কিছু বিষয়ে জ্ঞান অর্জন করতে হবে যেমন জাভাস্ক্রিপ্ট, পিএইচপি, মাইএসকিউএল ইত্যাদি। এইসব বিষয় জানার জন্য আমাকে অনলাইনে অনেক সময় ব্যয় করতে হচ্ছে। আর অনলাইনে আপনি এই জিনিসগুলির ব্যাপারে বেসিক জানবেন, কিন্তু এডভান্সড লার্নিং-এর জন্য আপনাকে হাতে কলমে প্রশিক্ষণ নিতে হবে এবং প্র্যাকটিক্যালি কাজ করতে হবে।
এডভান্সড ওয়ার্ডপ্রেস কোর্স কেন করব? কারণসমূহ নিন্মরুপঃ
১) একজন সফল প্রফেশনাল ওয়েব ডেভেলপার হওয়া;
২) নিজের ব্লগ নিজে তৈরি করে এফিলিয়েট মার্কেটিং করা;
৩) অনলাইন আউটসোর্সিং প্লাটফর্ম যেমন ওডেস্ক, ইল্যান্স, ফ্রিল্যান্সার ইত্যাদিতে প্রফেশনাল ওয়েব ডেভেলপমেন্ট সার্ভিস প্রভাইড করে আয় করা;
৪) ভবিষ্যতে উদীয়মান তরুণদের ওয়েব ডেভেলপমেন্টের উপর প্রশিক্ষণ দেয়া; এবং
৫) সর্বোপরি অর্জিত জ্ঞান দ্বারা নিজের, দেশের এবং বিশ্বের উন্নতি সাধন করা।
আসলে অল্প কথায় এডভান্সড ওয়ার্ডপ্রেস শিখার উপকারিতার কথা বলে শেষ করা যাবে না। পরিশেষে এতটুকু বলতে পারি, যদি আপনি একজন সফল প্রফেশনাল ওয়ার্ডপ্রেস ডেভেলপার হন তখন আপনার জন্য স্কাই ইজ দ্যা লিমিট। তাই প্রফেশনাল ওয়ার্ডপ্রেস ডেভেলপার হয়ে নিজের হাতে গড়ে তুলুন নিজের ভবিষ্যৎ
.
Muhibul Haque
ব্যস্ততার জন্য পোষ্ট দিতে পারতেসিনা , আপনারা পোষ্ট করলে ত অন্তত কমেন্ট করে পয়েন্ট নিতে পারি