বিশ্বের সবচেয়ে সফল ব্যক্তিদের কাছ থেকে শিখে নিন ৫টি বিষয়

রত্যেক সফল মানুষের জীবনী থেকে অনেক কিছু শিখার আছে। এইসব সফল মানুষের জীবনী অধ্যায়ন ও বিশ্লেষণ করলে আপনি জানতে পারবেন কোন কোন পদক্ষেপ গুলো তাদের খ্যাতি অর্জন ও কোটি কোটি টাকা আয় করতে সাহায্য করেছে। এছাড়া আপনি আরও জানতে পারবেন একজন সফল উদ্যোক্তা হওয়ার জন্য তাদের নিকট থেকে আপনার মধ্যে কোন কোন বৈশিষ্ট গুলো অর্জন করাটা জরুরি।

সুতরাং আজকে আমরা স্টিভ জবস, জ্যাক মা ছাড়াও আরো কয়েক জন বিখ্যাত মানুষের নিকট থেকে শিখার মত কয়েকটি বিষয় আপনাদের সামনে উপস্থাপন করবো।

স্টিভ জবস :

স্টিভ জবস আমাদের শিখিয়েছেন সমস্যা সমাধানের জন্য গ্রাহক কেন্দ্রিক পদ্ধতির প্রয়োজন ও নান্দনিকতার চেয়ে গুরুত্বপূর্ণ আর কিছু নেই।

প্রযুক্তি জগতে স্টিভ জবস বিতর্কিত ব্যক্তিত্ব হওয়া সত্ত্বেও, সত্যিকারের একজন স্বপ্নদর্শী হওয়ার কারণে তাকে সবাই সম্মান করে। অ্যাপল যখন দেউলিয়া হওয়ার উপক্রম, তখন ১৯৯৭ সালে স্টিভ জবস অ্যাপলের সিইও হন। সিইও হওয়ার পর স্টিভ জবস অ্যাপলকে আবার পুনরুজ্জীবিত করেন।

স্টিভ জবস তার প্রযুক্তি পণ্য দিয়ে পপ সংস্কৃতির উপর শক্তিশালী প্রভাব ফেলেছিলেন। কেননা তিনি ছিলেন সমস্যা সমাধান কারী ও গ্রাহক কেন্দ্রিক পদ্ধতিতে বিশ্বাসী। তিনিই প্রথম স্মার্টফোনে ফুলস্ক্রিন ডিসপ্লে টাচ সিস্টেম চালু করেন।

আইফোন যখন তৈরি হচ্ছিলো, তখন স্টিভ জবস তার দলটিকে একটা ট্যাবলেট ডিভাইসের জন্য ভার্চুয়াল কীবোর্ড তৈরি করার জন্য কাজ করতে বলেছিলেন। ডিজাইন দলটি যখন একটি প্রোটোটাইপ নিয়ে আসে, স্টিভ জবস তখন এটি অনেক পছন্দ করেছিলেন এবং পরে সেটা আইফোনে যুক্ত করেন। পরবর্তীতে এই আইফোন হয়ে উঠে গ্রাহকদের জন্য সহজ ও জনপ্রিয় স্মার্টফোন। আইফোন অ্যাপলকে নিয়ে যায় সাফল্যের এক উচ্চ পর্যায়ে।

জ্যাক মা :

জ্যাক মা হলো একটি নিখুঁত উদাহরণ, যিনি বুঝিয়ে দিয়েছেন বড় ও সফল হতে হলে সিলিকন ভ্যালিতে থাকা খুব বেশী জরুরি বিষয় নয়।

যুবক বয়সে জ্যাক মা ৩০টি ভিন্ন ভিন্ন চাকরীর জন্য আবেদন করেছিলেন কিন্তু প্রত্যেকের নিকট থেকে তিনি প্রত্যাখ্যাত হন। শুধুমাত্র হার্ভার্ড থেকে জ্যাক মার আবেদন ১০ বার প্রত্যাখ্যাত হয়েছিল। কিন্তু এইসব বাধা তাকে পৃথিবীর ক্ষমতাবান ব্যবসায়ী হওয়াটা থামাতে পারেনি।

১৯৯৯ সালে জ্যাক মা ইকমার্স ওয়েবসাইট Alibaba.com সহ ইন্টারনেট ভিত্তিক ব্যবসায়ের সংস্থা আলিবাবা গ্রুপ চালু করার পর থেকে তাকে আর পিছনে ফিরে তাকাতে হয়নি। আলিবাবাতে ৫০ হাজারের বেশি লোক কাজ করে এবং আলিবাবা বর্তমানে বিশ্বের সপ্তম বৃহত্তম কোম্পানি।

জে কে রাউলিং :

জে কে রাউলিং আমাদের শিখায়, কখনও হাল ছাড়া যাবে না, হোক সেটা সব চাইতে কঠিন পরিস্থিতি।

চরম দারিদ্র্য থেকে জে কে রাউলিং উঠে এসে পৃথিবীর সবচেয়ে জনপ্রিয় লেখকদের একজন হয়েছেন। ১৯৯০ সালে তিনি যখন একজন গবেষক ও দ্বিভাষিক হিসেবে কাজ করছিলেন, তার মাথায় তখন হ্যারি পটার সিরিজের আইডিয়াটা এসেছিল।

তবে এর মধ্যে এই ৭ বৎসর জে কে রাউলিংকে অনেক ব্যক্তিগত আতংক আর কষ্টের ভিতর দিয়ে যেতে হয়েছিল। তার মা মারা যান এবং স্বামীর কাছ থেকে তালাক প্রাপ্ত হন। অবস্থা এমন হয়েছিল যে, জে কে রাউলিং কয়েক বার আত্মহত্যা করতে চেয়েছিলেন।

কিন্তু এরপরও জে কে রাউলিং তার হ্যারি পটারের আইডিয়াটা ছেড়ে দেননি। যদিও বেশ কয়েক জন প্রকাশক প্রাথমিক ভাবে তার বই বাতিল করেছিলেন। অবশেষে বুলমসবারি এটি প্রকাশ করে এবং এটিই পরে আন্তর্জাতিক খ্যাতি অর্জন করে।

জে কে রাউলিং প্রথম বই লেখার মাধ্যমেই কোটিপতি হয়ে উঠেছেন। তবে তিনি তার বেশির ভাগ অর্থ দাতব্য প্রতিষ্ঠানকে দিয়েছেন এবং এখন তার কাছে মোট ৬৫০ মিলিয়ন ডলার রয়েছে।

সুন্দর পিচাই :

পিচাই এর অসাধারণ কর্ম জীবন থেকে আপনি শিখতে পারেন, প্রভাবশালী ব্যক্তি হওয়ার জন্য সবসময় প্রতিষ্ঠানের প্রতিষ্ঠাতা হওয়া জরুরি নয়।

ভারত থেকে মৌলিক শিক্ষা নেওয়ার পর, উচ্চ শিক্ষা ও ভালো কর্ম জীবনের জন্য সুন্দর পিচাই মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে চলে যান। গুগলে যোগদান করার পূর্বে তিনি ম্যাককিনসে অ্যান্ড কো. তে কাজ করেন। ২০০৪ সালে গুগলে যোগ দেওয়ার পর সিইও হিসাবে নির্বাচিত হওয়ার আগে, তিনি গুগলের প্রোডাক্ট চিফ ও গুগল আইও ইভেন্টের নেতৃত্ব দেন।

যখন সের্গেই ব্রিন ও ল্যারি পেজ পদত্যাগ করেছিল, তখন থেকে গুগলের সিইও হিসেবে নির্বাচিত হয়ে সুন্দর পিচাই প্রযুক্তি জগতে এক নতুন ঢেউ তৈরি করেছেন।

জেফ বেজোস :

জেফ বেজোস একটি অসাধারণ বিষয় আপনাকে শিক্ষা দিতে পারে! তাহল আপনার যতো ছোট আইডিয়াই হোক, আপনি যদি তা সঠিক সময়ে শুরু করতে পারেন, তবে আপনি সফল হবেন।

১৯৯৫ সালে জেফ বেজোস অনলাইনে অ্যামাজনের যাত্রা শুরু করেন। ৯০ এর দশকে তিনি ডট কম বুম ব্যবহার করে অ্যামাজন ওয়েবসাইটটি চালু করেন। যা প্রথমে কেবলমাত্র একটি বইয়ের দোকান ছিল। মাত্র এক বছরে জেফ বেজোস আমেরিকা ও ৪৫টি দেশে বই বিক্রি করে প্রতি সপ্তাহে ২০,০০০ মার্কিন ডলার আয় করেছিলেন।

পরবর্তী ১০ বছরে, অ্যামাজন তার ওয়েবসাইটে পোশাক, সিডি ও ইলেকট্রনিক আইটেম বিক্রি করা শুরু করেন। ২০০৪ সালে অ্যামাজনের ৬.৯ বিলিয়ন ডলার আয় হয় ও ২০০৫ সালে ৮.৫ বিলিয়ন ডলারে উন্নীত হয়।

অ্যামাজন বর্তমানে অসংখ্য সহায়ক ব্যবসার সাথে বিশাল একটি অনলাইন ব্যবসায় রূপান্তরিত হয়েছে। ১৯৯৪ সালে বই বিক্রি শুরু থেকে অ্যামাজন এখন নিজস্ব ইলেকট্রনিক্স পণ্য তৈরি করে, নিজস্ব ক্লাউড কম্পিউটিং সফটওয়্যার আছে, যা AWS (অ্যামাজন ওয়েব সার্ভিসেস) নামে পরিচিত। গত বছর অ্যামাজনের আয় ১৩৫.৯৮ বিলিয়ন মার্কিন ডলারে দাঁড়িয়েছে। যা জেফ জেফ বেজোসকে পৃথিবীর সবচেয়ে ধনী ব্যক্তি হিসাবে পরিণত করেছে।

Comments (No)

Leave a Reply

এই সাইটের কোন লেখা কপি করা সম্পুর্ন নিষেধ