এ বছরের শুরুর দিকে সম্ভবত Facebook কতৃপক্ষ বিশেষ মানুষ আর প্রতিষ্ঠানের ফেসবুক পেজগুলোকে একটি অফিশিয়াল বা ভিআইপি স্বীকৃতি দেয়া শুরু করেছিল। কয়েক মিলিয়ন পেজের মধ্যে হাতে গোনা কিছু কিছু পেজকেই এই ভেরিফাইড স্ট্যাটাস দিয়ে আসছে Facebook যেমন নামকরা কোন ব্যক্তিত্ব (গায়ক, অভিনেতা, মিউজিক ব্যান্ড, খেলোয়াড়, সাংবাদিক, চিত্রনির্মাতা, বড় কোন প্রতিষ্ঠান) ইত্যাদি।
ভেরিফাইড পেজের কিছু আলাদা ফিচার থাকে তবে পেজের টাইপ ভেদে ভিন্ন হতে পারে। কিন্তু প্রধান সুবিধা হলো স্যোশাল নেটওয়ার্কে সেই মানুষটির বা প্রতিষ্ঠানটির ভ্যালিডিটি। একজন নামকরা গায়কের নাম দিয়ে অনেকেই অনেক পেজ খুলে বসতে পারেন আর তাঁর মাঝে ঠিক কোনটা আসল সেটা বোঝা আসলেই দুরুহ ছিল কিন্তু এখন ভেরিফাইড পেজের কল্যানে সেলিব্রিটিদের প্রোফাইল পেজগুলো বেশ নিরাপদেই থাকে আর Facebook তাদের পোস্টগুলোর প্রসারও আগের তুলনায় বেশী হয়। শুধু পেজ না, প্রোফাইলও ভেরিফাইড করা হচ্ছে এখন।
Facebook একটা পেজ খোলা কোন ব্যাপারই না – সময় লাগে কয়েক সেকেন্ড। আর যাদের একটু বড় পেজ আছে, তারা সবাই চান নিজেদের পেজগুলো যেন একটু ভেরিফাই হয়ে যায়। তো, কিভাবে করবেন আপনার ফেসবুক পেজকে ভেরিফাইড।
সত্যি কথা বলতে Facebook পেজ ভেরিফাই করার জন্য সত্যিকারের কোন উপায় নেই বা কোন বিশেষ সাইট নেই যেখানে গিয়ে আপনি ভেরিফাই করার জন্য আবেদন করতে পারেন। কেউ যদি আপনাকে সেই কথা বলেও, সেগুলো বিশ্বাস না করাটাই ভাল। ফেসবুক পেজ ভেরিফাই সম্পুর্ন ফেসবুক কতৃপক্ষের উপর নির্ভর করে, কোন ইউজারের উপরে না। ইনফ্লুয়েন্সিয়াল পেজগুলোরই বেছে বেছে ভেরিফাই করা হয় শুধু।
আমাদেরও দু-একটা ফেসবুক পেজ ভেরিফাই করা হয়েছিল একেব্রে শুরুর দিকে যখন ভিরিফিকেশন প্রসেস শুরু হয়েছিল। এবং আমরা কিছুই করিনি। হঠাত করেই ফেসবুক থেকে একটা ইমেইল আসল আর পেজের উপরের দিকে “Your page is eligible for verification. Click here to apply” এরকম একটা টেক্সট এসেছিল। লিঙ্কে ক্লিক করার পর অনেক ধরনের ডকুমেন্টস সাবমিট করতে বলা হয়েছিল। আর সেগুলো সাবমিশন করার ১ সপ্তাহের মধ্যেই পেজ ভেরিফাই হয়ে গিয়েছিল।
যদিও তেমন বিশেষ কোন উপায় নেই ফেসবুক পেজ ভেরিফাই করানোর। তবে কিছু কিছু ব্যাপার আছে যেগুলো মেইন্টেন করলে আপনার ফেসবুক পেজ ভেরিফাই হবার সম্ভাবনা বেড়ে যায়। কিন্তু এই ব্যাপারগুলো সম্পর্ন আমাদের নিজস্ব মতামত। কোন ধরা বাধা নিয়ম না।
প্রথমেই, আপনার ফেসবুক পেজটি কি ক্যাটাগরীর এটা একটু গুরুত্বপূর্ন ব্যাপার। এটি যদি একটি প্রতিষ্ঠান হিসেবে হয়ে থাকে তাহলে সেক্ষেত্রে ভেরিফাই হতে অনেক সময় লাগতে পারে অথবা কখনও ভেরিফাই নাও হতে পারে। লক্ষ লক্ষ ফ্যান থাকলেও ভেরিফাই নাও হতে পারে। আর ফেসবুক পেজটির ক্যাটাগরী যদি হয় People অথবা কোন ওয়েবসাইট তাহলে ভেরিফাই একটু তাড়াতাড়ি হতে পারে। তবে সেখানেও বেশ কিছু ফ্যাক্টর থাকতে পারে। মাঝখানে রেডিও ক্যাটাগরী দিয়ে বেশ কয়েকটা পেজ ভেরিফাই হয়েছিল কিন্তু এখন সেটা বন্ধ করে দেয়া হয়েছে। যেসব পেজ রেডিও হিসেবে ভেরিফাই হয়েছিল সেগুলো বেশীরভাগই আসলে রেডিও ছিলনা। ফেসবুক কতৃপক্ষ সেটা বুঝতে পেরে পরে সেই কার্যক্রম বন্ধ করে দেয়। আপাতত বাংলাদেশে ভেরিফাইড পেজ দেয়া খুব ধীর গতি হয়ে গিয়েছে কোন একটা কারনে।
যাই হোক, পজ ভেরিফিকেশনের ক্ষেত্রে অবশ্যই আপনাকে বিশেষ কোন ব্যাক্তি হতে হবে অথবা বিশেষ কোন প্রতিষ্ঠান। আপনার বা আপনার প্রতিষ্ঠানের থাকতে হবে একটি অফিশিয়াল ওয়েবসাইট যেখানে আপনার ফেসবুক পেজটি লিঙ্ক করা থাকবে। এরপরে উইকিপিডিয়া বা এধরনের রেফারেন্সিং ওয়েবসাইটগুলোতে আপনাকে বা আপনার প্রতিষ্ঠানকে নিয়ে একটা উইকি পেজ থাকতে হবে এবং সম্ভবত ফেসবুক এই ব্যাপারটাকে বেশ গুরুত্ব দেয়। তবে অনেকেই এই ব্যাপারে ছাড়ও পেয়ে যান।
এছাড়াও ভুয়া কোন তথ্য থেকে থাকলে সেই পেজ ভেরিফাই হবে না কোনদিন। আর আপনি যদি বিশেষ ব্যক্তিত্ব হয়ে থাকেন আর আপনাকে নিয়ে যদি পত্রিকায় কোন লেখালেখি বা ছবি ছাপা হয়, সেগুলো পেজে নিয়মিত পোস্ট করুন। যে ওয়েবসাইটের ঠিকানা পেজে দেয়া আছে সেই ওয়েবসাইট থেকে নিয়মিত কিছু না কিছু পোস্ট করা উচিৎ। আপনার পেজের কাভার পেজ খুব গুরুত্বপূর্ণ এক্ষেত্রে। বাছাই করা নিজের ডিজাইনের কাভার পেজ বাছাই করুন যেখানে আপনার বা প্রতিষ্ঠানের ব্র্যান্ডিং থাকবে এবং অফিশিয়াল ওয়েবসাইটটি টেক্সট আকারে উল্ল্যেখ থাকবে। একই সাথে টুইটার একাউন্টের ঠিকানাও কাভার ছবিতে দিয়ে দিতে পারেন।
ভেরিফিকেশনেরে ক্ষেত্রে যেসব পেজের ক্যাটাগরীতে হয়তো একটু সুবিধা পেতে পারেন তা হলো – যদি আপনার পেজটি হয় কোন মানুষের পেজ যেমন Public Figure, Actor, Actress ইত্যাদি এবং আপনার পেজে আপনাকে নিয়ে সে ধরনের পোস্টও থাকতে হবে। এরপরে আরেকটি ক্যাটাগরী হয়তো খুব সহজে ভেরিফাই হতে পারে; আর সেটা হলো – Website ক্যাটাগরী।
এছাড়াও অন্যান্য ক্যাটাগরীও আছে। তবে আপনাকে অবশ্যই বিশেষ কেউ হতে হবে যেখানে আপনার ব্যাপারে লেজিটিমেট তথ্য পাওয়া যাবে। মানে একজন সেলিব্রিটি, রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব বা পাবলিক ফিগার বা আলোচিত কোন প্রতিষ্ঠান। আপনার পেজটার বয়স কত সেটাও একটা গুরুত্বপূর্ন ব্যাপার। যদি মাস খানেক আগে খুলে থাকেন তাহলে হয়তো ভেরিফাই হতে অনেক সময় লাগতে পারে। তবে আমার এক পরিচিত ব্যাক্তি যিনি ইংল্যান্ডে একজন রাজনীতিবীদ এবং পার্লামেন্টের সদস্য – তিনি তাঁর পেজ খুলার ৪ দিনের মধ্যেই ভেরিফিকেশন পেয়েছিলেন। সেসময় উনার ফ্যান সংখ্যা ছিল ২০০++ আর এখনও তাঁর ফ্যান সংখ্যা বেশি হলে ১৫০০।
তাই বলা যায়, ফেসবুক পেজ ভেরিফিকেশনে কত ফ্যান আছে সেটা কোন ব্যাপার না কিন্তু আপনি আসলেই সেই ভেরিফাইড স্ট্যাটাস পাবার এলিজিবিলিট রাখেন কিনা Facebook কাছে সেটাই দেখার বিষয়। আপনি যদি আপনার পেজের কন্টেন্ট, আউটলুক, About ঠিক মত তথ্য,ঠিকানা, ফোন এসব দিয়ে গুছিয়ে রাখতে পারেন তাহলে ফেসবুক অফিস আপনাকে ভেরিফাই করবার জন্য লিঙ্ক পাঠাতে পারে। মনে রাখবেন পেজের তথ্যগুলো নির্ভুল হতে হবে আর সত্যিকারের প্রতিষ্ঠান বা ব্যাক্তিত্ব হতে হবে। পেপার কাটিং টাইপের নিউজগুলো এক্ষেত্রে বেশ কাজ দিতে পারে।
তবে ভেরিফাইড পেজের রিচেবিলিটি সাধারন পেজ থেকে খুব একটা যে বেশী তা বলা যায় না। উনিব আর বিশের তফাত থাকে। আমার মতে এটা কোন ব্যাপারই না। ভেরিফাইড হওয়াটাও আমার মতে কোন মস্ত বড় ব্যাপার না। আপনার ফেসবুক পেজ দিয়ে যদি সবার মন কাড়তে পারেন তাহলে হাজারটা ভেরিফাই পেজের চাইতেও একটা পেজ ভাল যেখানে ফ্যানরা নিজ থেকে আসবে আর এনগেজ থাকবে পেজের কন্টেন্টের সাথে। আর সেটা একমাত্র আপনিঈ জানেন কিভাবে করবেন।
যাই হোক আশা করি পোস্টটা একটু হলেও কাজে আসবে আবার কখনও কাজে নাও আসতে পারে। কিন্তু অনেকেই আমাকে জিজ্ঞেস করেছিলেন আমার ফেসবুক পেজটি ভেরিফাই কিভাবে হয়েছিল। কখনও জবাব দেয়া হয়নি। আজ দিচ্ছি – আসলে আমি নিজেও জানিনা। হঠাত করে একদিন ইমেইল আসল। ডুকুমেন্টস পাঠালাম – বিশেষ করে আমার বিদেশী আইডি যা ছিল – ড্রাইভিং লাইসেন্স, পাসপোর্ট, স্যোশাল কার্ড, মেডিক্যাল ইন্সুরেন্স কার্ড, ফিল্ম সোসাইটি মেম্বারশিপ, ডিরেক্টরশিপ লাইসেন্স, ট্রেড লাইসেন্স, টিআইএন – হেন কিছু নেই বাদ নেই। এটাই ছিল মুল কাহিনী আর কিছু না। হ্যা, আমার নামে কয়েকটা ম্যাগাজিনে অনেক আগে হয়তো লেখালেখি হয়েছিল – বিদেশী কোন একটা ম্যাগাজিনে আর উইকিপিডিয়াতে আর আইএমডিবিতে আমার নাম ছিল সে কারনে হয়তো হয়েছিল।
আমার YouTube চ্যানেল অনেক আগে থেকেই ভেরিফাইড পার্টনার হিসেবেই ছিল আর গুগল পেজ কিছুদিন আগে ভেরফাইড হয়েছে। এগুলো করতে আমাকে কছু করতে হয়নি বা কেউ আমাকে কিছু জিজ্ঞেসও করেনি। যাই হোক, এটা আসলেই আমার কাছে বড় কোন ব্যাপার না। আর তাই এটা নিয়ে খুব একটা কথা কোনদিন বলিনি।
ভাল থাকুন। আশা করি ভেরিফাইড হয়ে যাবেন। Facebook না হলেও মানুষ হিসেবে, বাংলাদেশী হিসেবে আমরা সবসময় ভেরিফাইড
Comments (No)