Freelancing নিয়ে প্রচলিত কিছু ভুল ধারণাগুলো নিয়ে আজকের পর্বটি সাজিয়েছি।
এ ভুল ধারণাগুলোর বিষয়ে সবার ধারণা পরিস্কার করলে আরো অনেক ফ্রিল্যান্সার তৈরি হবে আমাদের দেশে।
Freelancing বিষয়ে প্রচলিত কয়েকটি ভুল ধারণা:
– সবজায়গাতে ব্যর্থ, শেষ গন্তব্য Freelancing ।
– Freelancing মানেই আপওয়ার্ক, ইল্যান্স ইত্যাদি জায়গাতে কাজ করা।
– Freelancing করার জন্য খুব বেশি যোগ্যতার দরকার নাই।
– Freelancing করার জন্য অসাধারণ গুণের অধিকারী হতে হয়।
– Freelancing চাকুরি কিংবা পড়ালেখার পাশাপাশি পার্টটাইম চাকুরি হতে পারে, ফুলটাইম না।
– চাকুরিতে সবসময় টাকা আসার নিশ্চয়তা থাকলেও Freelancing ক্ষেত্রে বিষয়টা অনিশ্চিত।
– বিদেশীদের মত ইংরেজি না জানলে ফ্রিল্যান্সার হওয়া যাবেনা।
– পড়ালেখা না জেনেও Freelancing করা যাবে।
– Freelancing শুরু করার জন্য ৭দিন কিংবা ১মাসের প্রস্তুতি যথেষ্ট।
– Freelancing শুরু করার জন্য নিজের নামে পেপাল অ্যাকাউন্ট থাকতে হবে।
– Freelancing শিখতে হলে ট্রেনিং সেন্টারে যেতে হবে।
– সায়েন্সের স্টুডেন্ট না হলে Freelancing মাধ্যমে আয় করা যায়না।
সব জায়গাতে ব্যর্থ, শেষ গন্তব্য ফ্রিল্যান্সিং:
এ ধারণাটি সমাজে অনেক বেশি প্রচলিত।
পড়ালেখা কিংবা কোন কিছুতেই কিছু করতে ব্যর্থ হচ্ছেন। কোন কিছু করার ব্যাপারে খুবই অলস, এ অলসতার কারনেই নিজের ক্যারিয়ার সাজাতে পারছেননা।
এরকম মানুষজনের ভাবনাতেও থাকে Freelancing সফল হওয়ার চিন্তা।
অনেক সময় এ চিন্তাটা আরো ভয়াবহ হয়।
তারা ভেবে থাকে, কোন কিছুই আমাকে দিয়ে হবেনা। ফ্রিল্যান্সিংটাতো আছেই, সেটা দিয়েই অনেক অনেক টাকা আয় করব।
আসল সত্য:
ফ্রিল্যান্সিংয়ের ক্ষেত্রে অযোগ্যদের জায়গা নাই।
যতবেশি যোগ্যতা অর্জন করবেন, অনলাইনে আপনার আয় তত বৃদ্ধি পাবে।
যোগ্যতা ছাড়া হয়ত পাঁচ-দশ হাজার টাকা আয় করতে পারবেন।
কিন্তু সেটি অবশ্যই সাময়িক আয়।
ফ্রিল্যান্সিং যখন করবেন, স্বপ্নটা পাঁচ-দশ হাজার টাকার মধ্যে সীমাবদ্ধ রাখাটা বোকামী।
২) ফ্রিল্যান্সিং মানেই আপওয়ার্কে (পুরাতন নাম: ওডেস্ক) কাজ করা:
আমাদের দেশের একটা ধারণা প্রতিষ্ঠা পেয়ে গেছে, অনলাইনে আয় করতে হলে আপওয়ার্কেই বিড করে কাজ যোগাড় করতে হবে।
আর যখন কাজ না পায়, তখন হতাশ হয়ে কাজ ছেড়ে দেয়।
অনেকক্ষেত্রে আপওয়ার্কে কাজ পেতে ব্যর্থ হয়ে কাজ পাওয়ার জন্য স্পামিং করছে, কাজের রেট কমিয়ে বিড করছে।
যার কারনে আমাদের দেশের ব্যাপারে বিদেশী ক্রেতাদের কাছে একটা বাজে অবস্থান তৈরি হচ্ছে।
আসল সত্য:
পৃথিবীতে যত কাজ আউটসোর্স হচ্ছে, তার মধ্যে মাত্র ৭% কাজ মার্কেটপ্লেসগুলোতে পাওয়া যায়।
মার্কেটপ্লেস ছাড়াও আর কিভাবে কাজ পাওয়া যায়, সেটি জানার জন্য সকল পর্বে চোখ রাখুন।
সে বিষয়ে এ ধারাবাহিকের কোন একটা পর্বে আলোচনা করা হবে।
৩) ফ্রিল্যান্সিং করার জন্য খুব বেশি যোগ্যতার দরকার নাই:
ফ্রিল্যান্সিং করার জন্য অনেকের ভাবনাতে থাকে, পত্রিকাতে অল্প কিছু পড়লাম, কিংবা সেমিনারে গিয়ে কিছু বিষয় জানা হয়েছে, এখন চাইলেই শুরু করে দেওয়া যাবে ফ্রিল্যান্সিং।
১মাস- দুই মাসের প্রস্তুতিতেই অনেকে ফ্রিল্যান্সিংয়ের মাধ্যমে হাজার হাজার টাকা আয় করার স্বপ্ন দেখে। আবার প্রস্তুতির জন্য প্রতিদিন ৪-৫ ঘন্টা সময় দেওয়াটোকেও গুরুত্বপূর্ণ মনে করছেননা।
কম পরিশ্রমেই অনলাইন সেক্টরের স্বপ্নটা একসময় খুব বড় হতাশা সৃষ্টি করে এবং সেই সাথে অনলাইন জগত সম্পর্কে বাজে একটি ধারণা তার মনে তৈরি হয়।
আসল সত্য:
ফ্রিল্যান্সিং জায়গাটা শুধুমাত্র যোগ্যদের জন্য।
কারণ কোন ক্রেতা তার কাজ করানোর জন্য সারা বিশ্বের অনেকজন ফ্রিল্যান্সার মধ্য থেকে সেরা কাউকে বাছাই করে নেওয়ার সুযোগ পাচ্ছে।
সুতরাং যাদের যোগ্যতা কম তাদের তখন কাজ না পাওয়ার সম্ভাবনাটা থাকে।
শুরুতে প্রচুর সময় এবং পরিশ্রম করে নিজেকে যোগ্য হিসেবে প্রতিষ্ঠা করতে হবে। তারপর ফ্রিল্যান্সিংয়ের কাজের চেষ্টা করা উচিত।
৪) ফ্রিল্যান্সিং করার জন্য অসাধারণ গুণের অধিকারী হতে হয়:
যারা অনলাইনে আয় করছেন তাদের মত আমার যোগ্যতা নাই।
আমি সে জায়গাতে আমার পক্ষে পৌছানো সম্ভবনা, এধারণা থেকে অনেকেই পিছিয়ে পড়েন।
আসল সত্য:
মাথাতে রাখা উচিত, যারা এমুহূর্তে সফলভাবে অনলাইনে আয় করছেন, তারা একসময় খুবই সাধারণ ছিল। পরিশ্রম এবং প্রশিক্ষণ তাদেরকে আজকের এ অবস্থানে নিয়ে এসেছে।
যে কেউ যদি কাজ শিখে নেয় এবং প্রচুর পরিশ্রম করে, তাহলে যে কেউ অনলাইনে সফল হতে পারে।
৫) ফ্রিল্যান্সিং পার্টটাইম চাকুরি, ফুলটাইম না:
এখনও আমাদের দেশে ফ্রিল্যান্সিং বিষয়টা নতুন দেখে বেশিরভাগই ফ্রিল্যান্সিংটাকে চাকুরির বিকল্প ভাবতে পারছেনা।
চাকুরি কিংবা পড়ালেখার পাশাপাশি পার্টটাইম হিসেবেই ফ্রিল্যান্সিংকে এখনও সবাই ভাবছে।
আর সেজন্য ফ্রিল্যান্সিংয়ের মাধ্যমে আমাদের দেশে যে পরিমান আয় করা সম্ভব, সেটি বাস্তব হচ্ছেনা।
আসল সত্য:
ফ্রিল্যান্সিং শুধুমাত্র অতিরিক্ত টাকা আয়ের মাধ্যম না। এটিকে ক্যারিয়ার হিসেবে নেওয়া সম্ভব।
কারণ ফ্রিল্যান্সার হিসেবে মূলত উন্নত দেশের কোন কোম্পানীর হয়ে কাজ করা হচ্ছে।
অনেকেই আবার এখানে বসে অন্য কোম্পানীর নিয়মিত কর্মচারী হিসেবে এদেশে বসে চাকুরিও করছে।
৬) চাকুরিতে মাস শেষে নিশ্চিত টাকা, ফ্রিল্যান্সিংয়ের ক্ষেত্রে অনিশ্চিত:
ফ্রিল্যান্সিংয়ের ক্ষেত্রে চাকুরির বেতনের ৫-১০গুণ আয় হওয়ার পরও এদেশের পরিবারগুলো থেকে ফ্রিল্যান্সিং করতে বাধা দেওয়া হয়।
কারণ চাকুরির ক্ষেত্রে কম টাকা হলেও মাস শেষে নিশ্চিতভাবে হাতে টাকা আসবে।
ফ্রিল্যান্সিংয়ের ক্ষেত্রে সাময়িক আয়, একসময় সে আয় বন্ধ হয়ে যেতে পারে এ ধারণাটি এখনও অনেকের মধ্যেই আছে। আবার সব মাসেই আয় হবে কিনা সেটি নিয়েও সন্দেহটা রয়েই যায়।
আসল সত্য:
ধরি, কেউ একজন মার্কেটিংয়ের কাজ করে অনলাইনে আয় করে।
তাহলে তার একসময় কোন কাজ থাকবেনা, সেটার মানে দাড়ায়, পৃথিবীতে আর কোন প্রতিষ্ঠানের মার্কেটিংয়ের প্রয়োজন নাই।
সেটি যদি হয়ে থাকে, তাহলেতো দেশের ভিতরেও যারা মার্কেটিংয়ের চাকুরি করে, তারাও বেকার হয়ে পড়বে। কোন সেক্টর হিসেব করলে লোকাল পযায়ে যদি চাকুরির সুযোগ থাকে ১০০ প্রতিষ্ঠানে, তাহলে অনলাইনে চাকুরির সুযোগটা থাকবে ১লাখ প্রতিষ্ঠানে।
কারণ অনলাইনে সারাবিশ্বের সব প্রতিষ্ঠানেই আপনার চাকুরি করার সুযোগ থাকছে
৭) বিদেশীদের মত ইংরেজি না জানলে ফ্রিল্যান্সার হওয়া যাবেনা:
অনেকে কাজের ক্ষেত্রে ভাল দক্ষতা থাকার পরও ইংরেজিতে দুর্বল হওয়ার কারনে অনলাইনে আয়ের চিন্তা সম্পূর্ণরুপে মাথা থেকে বাদ দিয়ে দেয়।
আসল সত্য:
অনলাইনে কাজের ক্ষেত্রে দক্ষতাটাকে সবচাইতে বেশি গুরুত্ব দেয় বায়াররা।
তবে বায়ার কাজ বুঝিয়ে দেওয়ার সময় যদি দেখে ফ্রিল্যান্সারটি ভাষার দুর্বলতার কারনে কাজ সঠিকভাবে বুঝে নিতে পারছে না, কিংবা ফ্রিল্যান্সার বায়ারকে কাজ বুঝিয়ে দেওয়ার ক্ষেত্রে তার ভাষা বুঝতে বায়ারের জন্য কষ্টসাধ্য হয়, তখন বায়ার কিছুটা বিরক্তবোধ করে। সেক্ষেত্রে কাজে দক্ষ থাকলে অনেক সময় বায়ার তার ভাষার দুর্বলতাকে কনসিডার করে।
তবে এক্ষেত্রে যে ইংরেজিতে দক্ষ এমন কাউকে সংগী করে একসাথে ফ্রিল্যান্সিং করা যেতে পারে।
৮) পড়ালেখা না জেনেও ফ্রিল্যান্সিং করা যাবে:
ফ্রিল্যান্সিংয়ের জোয়ারের কারনে অনেকের ধারণা অ্যাকাডেমিকভাবে শিক্ষিত না হয়েও শুধুমাত্র বিভিন্ন আইটি বিষয়ক বিষয়ে ট্রেনিং নিয়েই ফ্রিল্যান্সিং করা যাবে।
আর সেজন্য পড়ালেখাকে সম্পন্ন করার আগ্রহ হারিয়ে ফেলে।
আসল সত্য:
সবকিছুর জন্যই পড়ালেখার দরকার আছে।
শিক্ষিত ব্যক্তি জ্ঞানের পরিধি একজন অশিক্ষিত ব্যক্তির চাইতে অবশ্যই অনেক বেশি উন্নত হবে।
যদিও শুধুমাত্র চাকুরি করার জন্য পড়ালেখা করতে হয়, এরকম একটি ভুল ধারণা আমাদের দেশে প্রচলিত রয়েছে।
৯) ফ্রিল্যান্সিং করার জন্য ৭দিন কিংবা ১মাসের প্রস্তুতি যথেষ্ট:
অনেকেই কম্পিউটার কিনেই চিন্তা শুরু করে কিছুদিনের মধ্যেই অনলাইনে আয় শুরু করতে পারবে।
ফ্রিল্যান্সিং বিষয়ক বিভিন্ন সেমিনার কিংবা পত্রপত্রিকা এবং ব্লগ থেকে এ সম্পর্ক লেখা পড়েই অতি স্বল্প সময়ে অনলাইনে আয় শুরু করব।
আসল সত্য:
ফ্রিল্যান্সিং করার জন্য যে বিষয়টিকে আপনি বেছি নিয়েছেন, সেটিতে খুব ভালভাবে দক্ষ হওয়া ছাড়া কাজ করে প্রচুর পরিমানে আয় করার সম্ভাবনাটা কম থাকে। আর খুব ভালভাবে দক্ষ হওয়ার জন্য অবশ্যই ট্রেনিং নেওয়ার পাশাপাশি সেটিতে প্রচুর পরিমানে প্রাকটিস করার জন্য সময় দেওয়া দরকার।
অভিজ্ঞরা বলেন, মাসে ২০হাজার টাকার চাকুরির জন্য যদি ২০ বছরের মত সময় স্কুল, কলেজ, ভার্সিটিতে ব্যয় করতে হয়, তাহলে অনলাইনে ৭০হাজার -১লাখ টাকা আয় করার জন্যতো কমপক্ষে ৩মাস -১বছর সময় ব্যয় করার মত ধৈয্য থাকাটা উচিত।
১০) ফ্রিল্যান্সিং করার জন্য নিজের পেপাল অ্যাকাউন্ট লাগবে:
অনেকে ফ্র্রিল্যান্সিংয়ের কাজ শিখার শুরুতেই টেনশনে পড়ে যায়, পেপালতো নাই তার।
অনলাইনে আয় শুরু করলে কিভাবে সে টাকা বাংলাদেশে নিয়ে আসবে।
খরচ করে কাজ শিখব, পরে কষ্ট করে কাজ করে আয় করার পর যদি সেই টাকা পেপাল না থাকার কারনে নিজের কাছে আনতে না পারে, তাহলেতো শুরুতেই থেমে যাওয়া উচিত, এরকম ভাবনাও অনেকের মধ্যে কাজ করে।
আসল সত্য:
কাজ করার পর ডলার গ্রহণ করতে কেউ এখন পযন্ত ব্যর্থ হয়নি।
এমনকি আমাদের দেশের অনেকেই আছে, যারা এখনও এস.এস.সি পাশ করেনি, যাদের এখনও বাংলাদেশের কোন ব্যাংকেই অ্যাকাউন্ট খোলার বয়স হয়নি।
তারাও অনলাইনে আয় করে সেই ডলার রিসিভও করতেছে।
তবে এটা ঠিক পেপাল সুবিধা না থাকার কারনে ডলার দেশে নিয়ে আসাটা অনেকক্ষেত্রে একটু ঝামেলাপূর্ণ হচ্ছে। তবে ঝামেলাপূর্ণ হলেও কোন না কোন ভাবেই গ্রহণ করা যাচ্ছে।
১১) ট্রেনিং সেন্টারে কোর্স না করলে ফ্রিল্যান্সার হওয়া যায়না:
অনেকের আফসোস দেখেছি, তারা টাকার অভাবে ট্রেনিং সেন্টারে ভর্তি হতে পারছেনা দেখে ফ্রিল্যান্সার হতে পারছেনা দেখে আফসোস করে। ধারণা তৈরি হয়ে গেছে ট্রেনিং সেন্টারে না গেলে অনলাইন হতে আয় করা সম্ভবনা।
আসল সত্য:
অনলাইনে বিভিন্ন ব্লগে, ইউটিউবে এখন প্রচুর রিসোর্স আছে যা দেখে চাইলে ঘরে বসেই খুব ভালভাবেই সব কিছু শিখে অনলাইনে ক্যারিয়ার গড়া সম্ভব।
বর্তমানে বাংলাতেই অনেক ভাল রিসোর্স পাওয়া যায়, যা কাজ শুরু করার জন্য যথেষ্ট।
তবে এটা সত্য নিজে নিজে রিসোর্স পড়ে শিখতে গেলে পরিশ্রম এবং সময় বেশি লাগে।
১২) সায়েন্সের স্টুডেন্ট না হলে ফ্রিল্যান্সিং করা যায়না:
অনেক সময় কমার্সের স্টুডেন্ট কিংবা মানবিক বিভাগের স্টুডেন্টরা মনে ধারণা পোষণ করে, তারা অনলাইন হতে আয় সম্ভব না।
যেহেতু কাজটি কম্পিউটারে বসে করতে হয়, তাই শুধুমাত্র কম্পিউটার সায়েন্সের স্টুডেন্টরাই কাজটি করতে পারবে, এরকম ভুল ধারণাও সমাজে প্রচলিত আছে।
আসল সত্য:
অনলাইনে ক্যারিয়ারের সাথে অ্যাকাডেমিক ব্যাকগ্রাউন্ডের কোনধরনের সম্পর্ক নাই। মানবিক কিংবা বাণিজ্য কিংবা সায়েন্স যেকোন বিভাগের যে কেউ অনলাইনে কাজের দক্ষতা অর্জন করে সেগুলোর মাধ্যমে ফ্রিল্যান্সিং করে সফল হতে পারে।
Comments (No)