গার্মেন্টস Buying House ব্যবসার করা ইচ্ছা অনেকেরই থাকে। কিন্তু সঠিক দিক নির্দেশনা না পাওয়ার কারণে অনেকে গার্মেন্টস বায়িং হাউস ব্যবসা শুরু করতে পারেনা। বাংলাদেশ গার্মেন্টস শিল্পে যথেষ্ট অগ্রগামী। আপনি যদি এই ব্যবসা শুরু করার চিন্তা করে থাকেন তাহলে, এই লেখাটি আপনার জন্য।
এই লেখায় আমরা গার্মেন্টস বায়িং হাউস কি এবং গার্মেন্টস Buying House ব্যবসা কিভাবে শুরু করবেন তা নিয়ে আলোচনা করবো। গার্মেন্টস বাইং হাউস ব্যবসা শুরু করার জন্য অভিজ্ঞতা অনেক প্রয়োজন। আপনার যদি অভিজ্ঞতা শূন্যের কোটায় থাকে তাহলে অভিজ্ঞ ব্যক্তির শরণাপন্ন হতে পারেন। আর পাশাপাশি আমাদের এই লেখাটি মনোযোগ সহকারে পড়তে পারেন।
গার্মেন্টস বায়িং হাউস কি? বায়িং শব্দের মধ্যে এর সংজ্ঞা বিদ্যমান। ইংরেজি Buying কেই বায়িং বলা হয়। Buying অর্থ মূলত কেনা বা ক্রয় করা। আর বায়িং হাউজ মানে ক্রয় করার ঘর। এখন কথা হল বায়িং হাউজ কি ক্রয় করে! আসলে, বায়িং হাউজ অর্ডার ক্রয় করে। বিদেশের বিভিন্ন কোম্পানি বা প্রতিষ্ঠান প্রথমে মূলত এই বায়িং হাউজগুলোতে যোগাযোগ করে কিংবা বায়িং হাউজ তাদের সাথে যোগাযোগ করে।
তারপর বায়িং হাউজগুলো তাদের নিকট থেকে অর্ডার সংগ্রহ করে তা গার্মেন্টসকে প্রদান করে। ক্ষেত্র বিশেষ অনেক বায়িং হাউজের নিজস্ব গার্মেন্টস থাকে আবার অনেক বায়িং হাউজের নিজস্ব গার্মেন্টস থাকে না। তবে আপনি যদি প্রাথমিকভাবে গার্মেন্টস বায়িং হাউজ ব্যবসা শুরু করতে চান তাহলে, গার্মেন্টস না থাকলেও চলবে।
গার্মেন্টস বায়িং হাউস ব্যবসার জন্য যা যা জানতে হবে? ইংরেজি ভাষা ও কাঙ্ক্ষিত দেশের সংস্কৃতি: বায়িং হাউজের মূল কাজ হচ্ছে বিদেশি বায়ার খোঁজা। এখন, আপনি যদি ইংরেজি না জানেন তাহলে, বায়ারের সাথে কথা বলবেন কিভাবে? বায়ারের সাথে কথা বলতে না পারলে বায়ার মেনেজও করতে পারবেন না। সুতরাং, বায়িং হাউজ ব্যবসা করতে চাইলে প্রথমেই আপনাকে ইংরেজি জানা থাকা লাগবে।
সংস্কৃতি বলতে মূলত সে দেশের খুঁটিনাটি জানা। ধরুন আপনি ইউরোপে ব্যবসা করবেন, এখন ইউরোপের শীতকাল আমাদের দেশের শীতকালের মত না, এখন আপনি যদি শীতের পোশাক তৈরি করেন তাহলে, অবশ্যই ঐ-দেশের শীতের তীব্রতার উপর ভিত্তি করে তৈরি করতে হবে। এছাড়া, সংস্কৃতি সম্পর্কে ধারণা থাকলে, তাদের দেশে কোন ধরনের পোশাকের চাহিদা বেশি সেটাও বুঝতে সহজ হবে। বায়িং হাউজ কোর্স: আপনার যদি বায়িং হাউজ ব্যবসায় আগ্রহ থাকে কিন্তু ধারণা না থাকে তাহলে, কোর্স করার জরুরি। কোর্স করার দ্বারা বায়িং হাউজ সম্পর্কে ভাল ধারণা এবং জ্ঞান হবে।
মার্চেন্ডাইজিং কোর্স: সত্যিকার অর্থে বায়িং হাউজ মূল কাজ মার্চেন্ডাইজিং। অর্ডার মোতাবেক পোশাকের মান ও বায়ের চাহিদামত পোশাক তৈরি হয়েছে কিনা সেটা যে দেখে তাকে মার্চেন্ডাইজার বলা হয়। প্রাথমিকভাবে আপনার নিজের এই জ্ঞানটি থাকা জরুরি। কারণ, এর উপর ভিত্তি করছে পরবর্তীতে বায়ার পাওয়া বা বায়ার ধরের রাখার নিশ্চয়তা।
গার্মেন্টস বায়িং হাউস: মার্চেন্ডাইজিংয়ের উপর স্বল্প ও দীর্ঘমেয়াদী অনেক কোর্স রয়েছে। বর্তমানে মার্চেন্ডাইজিং কোর্সের দুটি প্রতিষ্ঠান হল: BKMEA ( iArt ) BGMEA ( BUFT) এছাড়া, কারিগরির শিক্ষা বোর্ডের অধীন বিভিন্ন মেয়েদের কোর্স রয়েছে। যেহেতু, আপনার চাকরি করার উদ্দেশ্য নয়। তাই, স্বল্প মেয়াদী কোর্সগুলোও করতে পারেন। এসব কোর্স করার দ্বারা আপনি টেক্সটাইলেরর বিস্তারিত জানতে পারবেন। এছাড়া, উৎপদান ও বিপণনের বিস্তারিত জানতে পারবেন।
অভিজ্ঞতা: প্রত্যেক কাজে অভিজ্ঞতা জরুরি। কাজ করতে করতে যদিও অভিজ্ঞতা বৃদ্ধি পাবে। কিন্তু, বুদ্ধিমানের কাজ হল, এই কাজের সাথে জড়িত ব্যক্তিদের সাথে মেশা এবং তাদের থেকে জ্ঞান নেয়া। প্রয়োজনে কোন বায়িং হাউজে চাকরি করা। গার্মেন্টস বায়িং হাউস ব্যবসা শুরু করার জন্য যা যা করতে হবে? ট্রেড লাইসেন্স: বাংলাদেশে যেকোনো ব্যবসা শুরু করতে ট্রেড লাইসেন্স প্রয়োজন হয়। গার্মেন্টস ক্ষেত্রেও এর ব্যতিক্রম নয়।
বিজিএমইএর BGMEA সদস্যপদ: বিজিএমইএ হল বাংলাদেশের গার্মেন্টেসের সংগঠন। এর সদস্যপদ থাকলে আপনার জন্য গার্মেন্টস বায়ার খোঁজা অনেক বেশি সহজ হয়ে যাবে। Associate Membership হতে ৫৫ হাজার টাকা দিতে হবে এবং বাৎসরিক ফি ২৫ হাজার মোট ৮০ হাজার টাকা ব্যাংকের মাধ্যমে দিতে হবে।
সাথে যা যা সংযুক্ত করতে হবে তা উক্ত ফরমে উল্লেখ আছে। তবে, আমরা কিছু উল্লেখ করছি: ২ কপি পাসপোর্ট সাইজ ছবি।
ট্রেড লাইসেন্সের ফটোকপি। জাতীয় পরিচয় পত্র/ পাসপোর্ট এর ফটোকপি। টিন সার্টিফিকেটের ফটোকপি। অংশীদারি দলিলের কপি।
বিনিয়োগ বোর্ডের ওয়ার্ক পারমিট। বায়িং অফিসের ভাড়ার চুক্তিপত্র। ইত্যাদি সব কিছু দিয়ে আবেদন করা হলে, বিজিএমএ আপনার সব কিছু তদন্ত ও যাচাই করে সনদপত্র দিবে।
অফিস ভাড়া: উপরে বিজিএমই সনদ নেয়ার সময় যেহেতু আফিস দেখাতে হয়। সুতরাং, ছোট সাইজের হলেও একটি অফিস ভাড়া নিতে হবে। ভাড়া নেয়ার সময় অবশ্যই চুক্তি করে নিবেন। কর্মচারী নিয়োগ: যেহেতু কাজ এক করা সম্ভব নয়। তাই, অবশ্যই চেষ্টা করবেন অভিজ্ঞ, সৎ ও পরিশ্রমী লোক নিয়োগ দেয়ার।
পরবর্তী কাজ: উপরের কাজ সমাপ্ত হলে পরবর্তী কাজ হল বায়ার খোঁজা। বায়ার কিভাবে খুঁজবে, এ নিয়ে আমাদের একটি লেখা বাংলাদেশ থেকে সহজে গার্মেন্টস বায়ার পাওয়ার উপায় এটা পড়ে নিন। বায়ার পাওয়ার পর অবশ্যই ভাল গার্মেন্টস থেকে পোশাক তৈরি করুন। আজে-বাজে গার্মেন্টস থেকে পোশাক তৈরি করলে আপনার সুনাম এবং বায়ার হারাতে হবে। সঠিক সময়, সঠিক পণ্য ডেলিভারি দেয়ার চেষ্টা করুন।
পরিশেষে: এই ছিল আজকে গার্মেন্টস ব্যবসা নিয়ে সংক্ষিপ্ত আলোচনা। গার্মেন্টস ব্যবসা করে অনেকেই এখন কোটিপতি আবার অনেকে ব্যর্থ। তাই, যেকোনো ব্যবসা শুরু করার পূর্বে অবশ্যই সঠিকভাবে প্লান করে নিন। তথ্যসূত্র: প্রিয় ক্যারিয়ার।
Comments (No)