Blogging করে আয় করার উপায় জেনে নিন ধাপে ধাপে অনলাইন Income Course

Blogging করে আয় করার উপায় জেনে নিন ধাপে ধাপে
আপনি চাইলে লেখালেখি করে আয় করতে পারেন। অনলাইনে আয় করার যতগুলো উপায় আছে তার মধ্যে ব্লগিং করে আয় তৃতীয় জনপ্রিয়। অনলাইনে লেখালেখি করাকেই অনলাইন ব্লগিং বলে। অনলাইনে ব্লগিং করে ইনকাম করা খুব সহজ না হলেও যারা লেখালেখিতে অভ্যস্ত তাদের জন্য ব্লগিং করে আয় করাটা একটা প্যাশন বলা যায়।

ছাত্রছাত্রীদের অনেকের লেখালেখির অভিজ্ঞতা থাকে এমনকি এরকম অনেকেই আছেন যারা কোন জব করছেন কিন্তু লিখতে ভালোবাসেন; তাদের জন্য ব্লগিং করে আয় একদিকে যেমন বাড়তি ইনকামের সুযোগ তেমনি সমাজে কিংবা দেশে একজন নামকরা লেখক হওয়ার সুযোগ তো থাকছেই।

Blogging করে আয় করার উপায় জেনে নিন ধাপে ধাপে  অনলাইন Income Course

একটি ব্লগ থেকে বিভিন্ন উপায়ে ইনকাম করা যায়। ব্লগ থেকে ইনকামের যতগুলো পদ্ধতি আছে তার মধ্যে নিচের পদ্ধতিগুলো বেশি সমাদৃত যেমন-
ব্লগে বিজ্ঞাপন দিয়ে টাকা ইনকাম।
ব্লগে প্রোডাক্ট ব্রান্ডিং করে অর্থ আয়।
ব্লগ দিয়ে এফিলিয়েট মার্কেটিং করে আয় করা।


অন্যকারো ব্যাক্তিগত বা প্রতিষ্ঠানে ব্লগ লিখে আয়।
উপরোক্ত চারটি পদ্ধতির মধ্যে “ব্লগে বিজ্ঞাপন দিয়ে টাকা ইনকাম” পদ্ধতিটি সবচেয়ে জনপ্রিয়। ব্লগে বিজ্ঞাপন দিয়ে কিভাবে টাকা ইনকাম করা যায় সেটি ধাপে ধাপে এই লেখাতেই আলোচনা করা হয়েছে। প্রতিটি ধাপ অনুসরণ করলে; আজ থেকেই কাজে নেমে যেতে পারবেন। প্রতিটি ধাপ শুরু করার আগে; ব্লগ লিখে কিভাবে আয় করা যায় তা নিয়ে আরও বিস্তারিত আলোচনা করা যাক।

ব্লগে বিজ্ঞাপন দিয়ে আয় করার ক্ষেত্রে আপনাকে একটি ব্লগসাইট খুলতে হবে। ব্লগসাইট হলো একটি ওয়েবসাইট যেখানে আপনি আপনার লেখাগুলো পাবলিশ করবেন। এজন্য এটিকে ওয়েবসাইট থেকে আয় করাও বলা হয়ে থাকে। ওয়েবসাইট থেকে আয় করতে হলে- লেখা পাবলিশ করার পর মোটামুটি আপনার ওয়েবসাইটটি জনপ্রিয় হলে; গুগল এডসেন্সে আবেদন করতে হবে। গুগল এডসেন্সে এপ্রুভাল পেলে তারপর আপনার ব্লগে বা ওয়েবসাইটে বিজ্ঞাপন দিয়ে টাকা ইনকাম করতে পারবেন।

ব্লগ দিয়ে প্রোডাক্ট ব্রান্ডিং করে অর্থ ইনকাম করতে চাইলে আপনার ওয়েবসাইটের ভিজিটর অনেক বেশি হতে হবে। প্রোডাক্ট ব্রান্ডিং মূলত: কোন প্রোডাক্ট বা সেবা সম্পর্কে পজিটিভ লেখালেখি করে সেটির পাবলিসিটি বা রিভিউ করা। আপনার ওয়েবসাইটে ভিজিটর সংখ্যা অনেক বেশি হলে যেকোন কোম্পানির মার্কেটিং সেকশনে যোগাযোগ করতে পারেন৷ একটি ভালো অর্থের বিনিময়ে কোম্পানির নির্দিষ্ট একটি প্রোডাক্ট সম্পর্কে লেখা পাবলিশ করে নগদ অর্থ আয় করাই হলো মূলত প্রোডাক্ট ব্রান্ডিং করে আয় করা। এক্ষেত্রে ভালো অংকের অর্থ পাওয়ার নিশ্চয়তা যেমন থাকে তেমনি নগদ অর্থ পাওয়ায় সফলতা কিংবা কাজটি ভালো লাগার অনূভুতিটা গভীর হয়।

ব্লগ দিয়ে এফিলিয়েট মার্কেটিং করে আয় করা অনেকটাই বর্জনীয়। আগে অনেকেই ব্লগসাইট দিয়ে এফিলিয়েট মার্কেটিং করতো কিন্তু পরিশ্রমের তুলনায় আয় কম হওয়ায় এখন ওয়েবসাইট দিয়ে এফিলিয়েট মার্কেটিং আর তেমন চোখে পড়ে না। তবে আপনি ইচ্ছা করলে; আপনার ব্লগসাইট কিংবা ওয়েবসাইট দিয়ে এফিলিয়েট মার্কেটিং করে ইনকাম করতে পারেন। এফিলিয়েট মার্কেটিং হচ্ছে অনেকটাই অনলাইন সেলসম্যান বা বিক্রয়কর্মীদের মতো। যেকোন কোম্পানির পণ্য নিজের ওয়েবসাইট দিয়ে বিক্রি করে দিলে; ঐ প্রোডাক্টের লাভ্যাংশের কিছু অংশ আপনাকে দেওয়া হবে- এটিকেই মূলতঃ এফিলিয়েট মার্কেটিং বলা হয়। আপনি চাইলে আমাজন, ইবাই কিংবা আলিবাবার মতো স্বনামধন্য প্রতিষ্ঠানের পণ্য নিজের ওয়েবসাইটে বিক্রি করে দিতে পারেন। এক্ষেত্রে মূল্যবান প্রোডাক্টের বেশি সংখ্যক কাস্টমার পেলে প্রতিমাসে লাখ টাকা ইনকাম করাও তেমন কঠিন কাজ নয়।

এফিলিয়েট মার্কেটিং করে আয় করার উপায় জেনে নিন ধাপে ধাপে

কি ধরনের লেখা লিখে আয় করবেন?
যেকোন ধরনের লিখা আপনি ওয়েবসাইটে প্রকাশ করতে পারেন। ওয়েবসাইটে টাকা আয় করার ক্ষেত্রে আপনি আপনার প্যাশন অনুসরণ করতে পারেন। আপনি যা কিছু নিয়ে লিখতে পছন্দ করেন সেগুলো নিয়ে লিখাই সবচেয়ে ভালো। এক্ষেত্রে কয়েকটি বিষয় আমি আপনাকে দেখাতে পারি যেমন-


খেলাধুলার ব্লগ লিখে আয় করতে পারেন।
রাজনৈতিক ব্লগ লিখে আয় করতে পারেন।
এডিটরিয়াল ব্লগ লিখে আয় করতে পারেন।
টেকনোলজি ব্লগ লিখেও অর্থ আয় করতে পারেন।
শিক্ষামূলক ওয়েবসাইট খোলেও আয় করতে পারেন।
ক্যারিয়ার বিষয়ক ওয়েবসাইট খোলেও ইনকাম করতে পারেন।
ফ্যাশন রিলেটেড ওয়েবসাইট খোলেও আয় করতে পারেন।
এরকম আরও বহু লেখার অপশন আছে যেগুলো নিয়ে লিখলে আপনি সহজেই ইনকাম করতে পারবেন। তবে নিজের ইচ্ছাকে গুরুত্ব দিতে হবে। কেবল ভিজিটর পাওয়াই উদ্দ্যেশ্য নয় বরং ওয়েবসাইট থেকে একটি ভালো এমাউন্ট আয় করাই উদ্দ্যেশ্য।

বাংলাদেশে ক্যারিয়ার বিষয়ক এবং রাজনৈতিক বিষয়ক ওয়েবসাইটের কদর সব থেকে বেশি। আপনি চাইলে উপরোক্ত যেকোন একটি বিষয় নিয়ে লিখে আয় করতে পারেন অথবা একাধিক বিষয় নিয়েও লিখতে পারেন৷ ব্লগ রাইটিং করে ইনকামের ক্ষেত্রে দুই তিনজন মিলে শুরু করলে সফলতা পাওয়ার ক্ষেত্রে সম্ভাবনা অনেক বেড়ে যায়।

ব্লগ লিখে আয় করার সুবিধা
ব্লগ লিখে আয় করার নানাবিধ সুবিধা আছে৷ ওয়েবসাইট থেকে আয় করার সবথেকে বড় যে সুবিধা সেটি হলো, এই পদ্ধতিটি অনেকটা লাক্সারি টাইপের। লেখালেখির অভ্যাস সবার থাকেনা; যাদের লেখালেখির অভ্যাস আছে কেবল তারাই ওয়েবসাইট থেকে ইনকামের স্বপ্ন দেখেন৷ ব্লগসাইটে লেখালেখি করে ইনকামের চাইতেও অনেকসময় প্যাশনটা আমাদের অনেক বড় হয়ে উঠে। তারপরও ব্লগ লিখে আয় করার ক্ষেত্রে যেসকল সুবধা পাওয়া যায়-


ব্লগ লিখে বড় অংকের অর্থ উপার্জন করা যায়।
ব্লগ লিখে আয় করতে বেশি সময়ের প্রয়োজন পড়ে না৷
নামকরা ব্লগার বা লেখক হয়ে উঠা যায়।
একটি ওয়েবসাইটের মালিক হওয়া যায়।
ব্লগ থেকে নগদ অর্থ উপার্জন করা যায়।
এছাড়াও যারা ব্লগ লিখেন; সমাজে কিংবা দেশের উচ্চ লেভেলে তাদের আলাদা একটি কদর সবসময় ই থাকে; ফলে কেবল অর্থ উপার্জনই নয় বরং সফলতার চূড়ায় যেতে চাইলে ব্লগিং একটি ভালো উপায়।

ব্লগ লিখে আয় করার অসুবিধা
ব্লগ লিখে আয় করার ক্ষেত্রে তেমন অসুবিধার সম্মুখীন হতে হয়না তবে কিছু ক্ষেত্রে অসুবিধা হতে পারে যেমন: গুগল এডসেন্স এপ্রুভাল পেতে অনেক দীর্ঘ সময়ের প্রয়োজন হতে পারে (যদি ব্লগের মান ভালো না হয়)। এছাড়াও আরো ছোটখাটো সমস্যার সম্মুখীন হতে পারেন যেমন-


দীর্ঘ সময় ভিজিটর না পাওয়া।
গুগল এডসেন্স এপ্রুভাল পেতে দেরি হওয়া।
মাঝেমধ্যে ব্লগের ভিজিটর খুব কম হওয়া।
ওয়েবসাইট হ্যাকিং এর বিরম্বনায় পড়া (খুব কম ক্ষেত্রে)
এছাড়াও টুকটাক আরও সমস্যা হতে পারে তবে; লেখালেখি করে আয় করাকে প্যাশন হিসেবে নিলে উপরোক্ত সমস্যাগুলোকে তেমন সমস্যা মনে হবেনা৷ অনলাইনে আয় করার ক্ষেত্রে এগুলো সমস্যা প্রায় কমনই বলা চলে তবে ইনকাম শুরু করার পর ধীরে ধীরে সমস্যাগুলো কেটে যাবে।

ব্লগ থেকে আয় করুন ধাপে ধাপে
ব্লগ লিখে আয় করতে গেলে আপনার একটি কম্পিউটারের প্রয়োজন পড়বে এবং সেটিতে অবশ্যই নেট সংযোগ থাকতে হবে। ব্লগ লেখার জন্য অনেকগুলো প্লাটফর্ম আছে কিন্তু বাংলাদেশে ব্লগ লিখে আয়ের ক্ষেত্রে দুটি প্লাটফর্ম খুবই জনপ্রিয়। প্লাটফর্ম দুটি হলো-
ব্লগারে লেখালেখি করে আয়।


ওয়ার্ডপ্রেসে ব্লগ লিখে আয়।
প্রথম প্লাটফর্মটি অর্থাৎ Blogger সার্ভিসটি গুগলের। যাদের ওয়েবসাইট ডেভেলপমেন্টের তেমন জ্ঞান নেই তারা এই প্লাটফর্মটি থেকে সহজেই ব্লগিং করে আয় করা শুরু করতে পারেন। দ্বিতীয় প্লাটফর্মটি ওয়ার্ডপ্রেস যা Blogger এর চেয়েও অনেকটা আপডেটেড। যাদের ওয়েবসাইটের ভালো জ্ঞান আছে এবং যারা প্রফেশনাল ব্লগার হতে চান তাদের ক্ষেত্রে ওয়ার্ডপ্রেস বেশি উপযোগী। আমরা আমাদের এই লেখায় গুগলের সার্ভিস Blogger এ ব্লগিং করে কিভাবে অর্থ উপার্জন করা যায় তা নিয়ে আলোচনা করবো ধাপে ধাপে।

ধাপ ০১: ভাবুন কি নিয়ে ব্লগ লিখবেন এবং ব্লগসাইটের নাম ঠিক করুন
ব্লগ থেকে টাকা ইনকাম করতে হলে প্রথমেই আপনাকে সিদ্ধান্ত নিতে হবে কোন বিষয় নিয়ে লিখতে ভালো লাগে আপনার। বিষয়টা অনেক বড় ব্যাপার হয়ে দাঁড়াবে। আপনার লেখালেখির বিষয়ের উপরই আপনার সফলতা নির্ভর করবে। যে বিষয়ে আপনার জ্ঞান সুদৃঢ় সে বিষয়ে আপনার লেখার ভাষা হবে সুস্পষ্ট তাই আপনি আপনার পছন্দের বিষয়টি খোজে বের করুন।

লাগলে দুয়েকদিন সময় নিন। তাড়াহুড়ো না করে বরং নিজের ভালো লাগা খোজে বের করুন। প্রয়োজনে নোট করুন- কোন বিষয় নিয়ে ব্লগ লিখতে চান৷ বিষয় ফিক্সড করা হয়ে গেলে সে অনুযায়ী আপনার ওয়েবসাইটের একটি নাম ঠিক করুন। ব্লগসাইটের নাম নির্ধারণে অবশ্যই মনে রাখতে হবে-


ব্লগ থেকে আয়ের জন্য ওয়েবসাইটের নামটি হবে অর্থবহ।
ওয়েবসাইটের নামটি দুটি শব্দের মধ্যেই সীমাবদ্ধ রাখা শ্রেয়।
ওয়েবসাইটের নামে ডোমেইন এভেইলেবল কি না জানতে হবে।
নামটি পরিবর্তন করা যাবে না এই মর্মে ঠিক করতে হবে।


এছাড়া নাম নির্ধারণের ক্ষেত্রে বিভিন্ন নাম বের করে প্রয়োজনে নোট করে রাখতে হবে। নোট করে রাখা নামের মধ্য থেকে যে নামটি বেশি স্পষ্ট এবং প্রাসঙ্গিক সেটি সিলেক্ট করতে হবে।

ধাপ ০২: ব্লগসাইট খুলুন এবং ভালো মানের একটি থিম সিলেক্ট করুন
লেখালেখি করে ইনকামে করতে চাইলে অবশ্যই একটি “লেখালেখির প্লাটফর্ম” দরকার পড়বে যেখানে আপনি আপনার লেখাগুলো প্রকাশ করবেন। এই পোস্টেই ব্লগ লেখার দুটি প্লাটফর্মের কথা বলা হয়েছে। ব্লগসাইট খোলার জন্য গুগলের “ব্লগার” প্লাটফর্মটি বেছে নিতে পারেন অথবা আপনি চাইলে ওয়ার্ডপ্রেসও বেছে নিতে পারেন।

কিভাবে একটি ব্লগসাইট খোলবেন জেনে নিন ধাপে ধাপে

ব্লগসাইট তৈরি করার সময় অবশ্যই ওয়েবসাইটের ডোমেইন নামের দিকে খেয়াল করুন। ডোমেইন নামে যেন কোনভাবেই বানান ভুল না হয় সেদিকে লক্ষ্য রাখুন। ব্লগসাইট খোলা হয়ে গেলে; ভালো মানের একটি থিম সিলেক্ট করুন। ব্লগারের বিভিন্ন থিম রয়েছে সেগুলো ব্যাবহার করতে পারেন অথবা ব্লগারের জন্য বিভিন্ন ফ্রী থিম বিভিন্ন ওয়েবসাইটে এভেইলেবল; আপনি চাইলে সেগুলোও ডাইনলোড করে ব্যবহার করতে পারেন।

ব্লগসাইট খোলার সময় সতর্কতা অবলম্বনের বিকল্প নেই। ব্লগের নাম ও থিম সিলেক্টের ক্ষেত্রে মনে রাখবেন-
ব্লগের নাম অবশ্যই লেখার সাথে প্রাসঙ্গিক হবে।
এলোমেলো ব্লগ নেইম ব্যবহার করা যাবেনা।
ডোমেইন নেইম অবশ্যই ব্লগ নেইমের সাথে মিল থাকতে হবে।
থিম লেখার সাথে প্রাসঙ্গিক হতে হবে।
থিম বারবার পরিবর্তন করা যাবে না।
উপরোক্ত বিষয়গুলো মনে রাখার পাশাপাশি এটাও মনে রাখতে হবে যে- ব্লগের স্ট্রাকচার বা গঠন নিয়ে বেশি নড়াচড়া করা একদম বারণ; এক্ষেত্রে ট্রাফিক কমে যাওয়ার ঝুঁকি বেশি।

ধাপ ০৩: নিয়মিত লেখা পাবলিশ করতে থাকুন
এই ধাপটি আপনার প্রতিভার স্মারক। লিখে আয় করতে চাইলে লেখার কোয়ালিটি কতটা ভালো হতে হবে সেটি দেখানোর পালা এই ধাপে। আপনাকে নিয়মিত লিখতে হবে। কি লিখবেন সেটির একটি চার্ট করে রাখতে পারেন। চার্ট ধরে ধরে লিখতে থাকুন। লেখালেখির ক্ষেত্রে কিছু মৌলিক বিষয় তুলে ধরা হলো-

লেখার বিষয়বস্তুকে সুস্পষ্ট ফুটিয়ে তুলুন: লেখার বিষয়বস্তু সম্পর্কে আগে থেকেই পরিষ্কার ধারণা রাখুন। লেখার মধ্যে বিষয়বস্তুকে স্পষ্টভাবে ফুটিয়ে তোলার চেষ্টা করুন। একটি বিষয় মাথায় রাখবেন যেন; ব্লগ রিডাররা আপনার ব্লগ পড়ে কোন প্রশ্ন করার সুযোগ না পায়। বিষয়বস্তু যত সুদৃঢ় হবে, ভিজিটররা ততই আপনার ব্লগে আকৃষ্ট হবে। ব্লগ লিখে আয় করার ক্ষেত্রে এই বিষয়টি খুবই মুখ্য।

মৌলিক বিষয়কে প্রাধান্য দিন: লেখালেখি করে আয়ের ক্ষেত্রে ভিজিটর সংখ্যা বেশি হওয়া অত্যাবশকীয়। ভিজিটর সংখ্যা তখনই বেশি হবে যখন আপনার লেখনি হবে মৌলিক ধরণের। মৌলিক বিষয় হচ্ছে সেগুলো যেগুলো নিয়ে আগে কোন ব্লগার ব্লগ লিখেনি। সবসময় মৌলিক ব্লগ লিখতে হবে ব্যাপারটি এমনও নয়; আপনি চাইলে যেকোন বিষয় নিয়ে লিখতে পারেন সেক্ষেত্রে ব্লগের মান অনেক বড় ফ্যাক্টর হবে।

ব্লগ একটু দীর্ঘ হওয়া চাই: আর্টিকেল বা ব্লগ হচ্ছে মনের সুস্পষ্ট ভাষা। এটিকে খবরের মতো চিন্তা না করাই শ্রেয়। কোন কিছু নিয়ে সম্যক ধারণা কাউকে দিতে গেলে নিঃসন্দেহে সেটি অনেক বড় হবে। একটি ব্লগের ক্ষেত্রেও এই বিষয়টি মাথায় রাখতে হবে। আপনি ব্লগ লিখছেন অর্থাৎ কোন বিষয় নিয়ে আলোচনা করছেন; আলোচনা ছোট হওয়ার কোন মানে হয়না। আর্টিকেল লিখে আয় করতে চাইলে আর্টিকেলের আকার হবে অনেকটাই দীর্ঘ। ছোট কবিতার মতো কখনোই ব্লগ বা আর্টিকেল হয়না৷ আর্টিকেল বা ব্লগের স্বকীয়তা হচ্ছে; ঘটনার আদ্যোপান্ত বিশ্লেষণ। এটি মাথায় রাখা খুবই জুরুরী।

ব্লগে কপি পেস্ট করা থেকে বিরত থাকুন: অন্যের লেখা চুরি করা থেকে বিরত থাকতে হবে। নিজের জ্ঞান বুদ্ধি দিয়ে লিখুন। গুগল খুব সুন্দর করেই চুরিবিদ্যা ধরে ফেলতে পারে৷ অন্যকোন ওয়েবসাইট থেকে লেখা কপি করে আপনার ওয়েবসাইটে প্রকাশ করলে; গুগল এডসেন্স না পাওয়ার সম্ভাবনা বহুগুণ বেড়ে যায়। নিজের সামর্থ্য যতটুকু ততটুকু দিয়েই লেগে থাকুন।

প্রথম দিকে ভালো ভালো ব্লগ পাবলিশ করেও ভিজিটর তেমন একটা পাবেন না তবুও চালিয়ে যান। নিয়মিত ব্লগ পাবলিশ করতে হবে। নিজের লেখা বন্ধুদের মধ্যে ছড়িয়ে দিতে হবে।

প্রথমদিকে ভিজিটর না পাওয়ার একটি কারণ হলো, গুগল আপনাকে বিশ্বাস করতে কিছু সময় নেয়। গুগলের কাছে বিশ্বাসী হতে সর্বোত্তম লেখা পাবলিশ করুন এবং লেগে থাকুন।

ধাপ ০৪: ওয়েবসাইট মনেটাইজেশন করুন
ওয়েবসাইট থেকে ইনকাম করতে চাইলে আপনার ব্লগসাইটকে মনেটাইজেশন করতে হবে। মনেটাইজেশন করার অর্থ হচ্ছে; আপনার ওয়েবসাইটে বিজ্ঞাপন প্রদর্শনের অনুমতি নেওয়া। ওয়েবসাইটে আর্টিকেল পাবলিশের পর সকল ব্লগারের এটা একটি কমন চাহিদা। ওয়েবসাইট মনেটাইজেশনের জন্য অনেকগুলো প্লাটফর্ম আছে যেমন-
গুগল এডসেন্স দিয়ে ওয়েবসাইটে বিজ্ঞাপন দেওয়া।


ফেসবুক পাবলিশারের মাধ্যমে ওয়েবসাইটে বিজ্ঞাপন দেওয়া।
বিডভার্টাইজারের সাহায্যে ওয়েবসাইটে বিজ্ঞাপন দেওয়া।
পপেলারএডস এর মাধ্যমে ব্লগে বিজ্ঞাপন দেওয়া ইত্যাদি।
এছাড়া বাংলাদেশি কোম্পানি “গ্রীন এন্ড রেড” এর মাধ্যমেও বিজ্ঞাপন দেওয়া যায়। ব্লগার বা ওয়েবসাইটে গুগল এডসেন্সের বিজ্ঞাপন দিয়ে ইনকাম করা প্রায় সবারই ড্রীম থাকে কিন্তু গুগল এডসেন্স এপ্রুভাল পাওয়া অনেকটাই কঠিন কাজ।

গুগল এডসেন্স এপ্রুভাল পেতে করণীয় জেনে নিন

গুগল এডসেন্স এপ্রুভাল পেতে যাবতীয় সকল করণীয় উপরোক্ত লিংকে আমরা তুলে ধরেছি তাই সেটি নিয়ে কিছু লিখছি না৷ পূর্বে সাবডোমেইনে গুগল এডসেন্স এপ্রুভাল করতো না কিন্তু এখন সাবডোমেইনেও গুগল এডসেন্স এপ্রুভাল হয়। যদি কেউ গুগল এডসেন্স এপ্রুভাল না পান তবে ফেসবুকের পাবলিশারের অনুমোদন নিতে পারেন তবে সেক্ষেত্রে ফেসবুক পেজের ধকল পোহাতে হবে; সেক্ষেত্রে বাংলাদেশের গ্রীন এন্ড রেড কোম্পানির এপ্রুভাল সহজেই নিতে পারেন।

গুগল এডসেন্স এবং ফেসবুকের পাবলিশার্স ছাড়া বাকি সব প্লাটফর্ম থেকে গ্রীন এন্ড রেড বাংলাদেশের জন্য ভালো। গুগল এডসেন্সে আবেদন করার দুই একদিনের মধ্যেই আবেদনটি এপ্রুভাল পেয়ে যাবে যদি উপরোক্ত লিংক অনুযায়ী আপনার ব্লগসাইট টি খোলে থাকেন।

ধাপ ০৫: ওয়েবসাইটের বিভিন্ন যায়গায় এড কোড বসান
গুগল এডসেন্সের এপ্রোভাল পাওয়ার পর- আপনার ওয়েবসাইটের বিভিন্ন জায়গায় এড কোড বসাতে হবে। যেসব জায়গায় এড কোড বসাবেন সেসব জায়গায় গুগল বিজ্ঞাপন প্রদর্শণ করবে। বিজ্ঞাপণ প্রদর্শিত হওয়ার পর সেখানে ক্লিক করে কেউ বিজ্ঞাপণ দেখলে আপনি আয় করতে পারবেন। অতি লোভে পড়ে ওয়েবসাইটের সম্পূর্ণ অংশ এড দিয়ে ভরিয়ে তোলা যাবে না। এড কোড বসানোর ক্ষেত্রে মনে রাখতে হবে-

মাত্রাতিরিক্ত এড কোড বসানো যাবে না: মাত্রাতিরিক্ত বিজ্ঞাপণ প্রদর্শন করতে গেলে অনেক ভিজিটর বিরক্ত হয়ে ওয়েবসাইট থেকে বেড়িয়ে যাবেন ফলে লাভ তো হবেই না; বরং ভিজিটর কমে যাবে। এছাড়াও অতিরিক্ত বিজ্ঞাপণ প্রদর্শন করলে ওয়েবসাইটের সার্ফিং টাইম বেড়ে যায় অর্থাৎ পেজ লোড হতে অনেক সময়ের প্রয়োজন পড়বে। এরকম হলে গুগল পর্যন্ত আপনাকে উপেক্ষা করা শুরু করবে। ফলে সার্চ ইঞ্জিনে আপনি তলানিতে পড়ে যাবেন।

নিজের এডে নিজে ক্লিক নয়: গুগল এডসেন্স পাওয়া যতটা সহজ তার চেয়ে কঠিন এটি ধরে রাখা কারণ ওয়েবসাইটে চুন থেকে পান খসলেই গুগল তার এডসেন্স বাতিল করে দেয়। বিজ্ঞাপণে কে বা কারা অথবা কোত্থেকে ক্লিক পড়ছে এগুলো সম্পর্কে গুগল অবগত থাকে ফলে আপনি যদি নিজের এডে নিজেই ক্লিক করেন তবে সেটি গুগলের ধরতে তেমন সময়ের প্রয়োজন হবেনা। আর একবার ধরে ফেললে; এডসেন্স তো বাতিল হবেই সেই সাথে ওয়েবসাইটের জায়গাও হবে গুগলের একদম তলানিতে। সুতরাং নিজের বিজ্ঞাপণে নিজে ক্লিক করা থেকে বিরত থাকতে হবে। আপনার বিজ্ঞাপণে ক্লিক করতে কাউকে প্ররোচিতও করা যাবেনা। সৎ থেকে বিজ্ঞাপণের উপর ক্লিকের আশা করতে হবে।

সর্বোচ্চ ৩টি এড কোড বসান: যে কেউ এড কোড বসানোর ক্ষেত্রে গুগলের অটোমেটিক পদ্ধতি অনুসরণ করতে পারে। আপনিও প্রথম দিকে গুগলের স্বয়ংক্রিয় পদ্ধতি অনুসরণ করতে পারেন। যদি নিজে থেকে ওয়েবসাইটে এড কোড বসাতে চান সেক্ষেত্রে সর্বোচ্চ ৩টি এড কোড বসাতে পারেন। ৩টির অধিক বসাতে গেলে; সার্ফিং টাইম অনেক বেড়ে যাবে ফলে ভিজিটর কমে যেতে পারে।

এড কোড বসানোর ক্ষেত্রে একটি ব্যাপার মাথায় রাখতে হবে সেটি হলো- ঘন ঘন এড কোড পরিবর্তন করা যাবে না৷ একটি নির্দিষ্ট জায়গায় এড কোড বসালে সেখানে সবসময়ের জন্য বিজ্ঞাপণটি রাখুন। সার্চ ইঞ্জিনে সমস্যা হলে ব্লগের মান পড়ে যেতে পারে যেকারণে থিম বা এড কোড নিয়ে বেশি হাতাহাতি না করাই উত্তম।

ধাপ ০৬: ব্লগ পোস্ট চালিয়ে যান
আয়ের উপর নজর না দিয়ে ব্লগ লিখা চালিয়ে যান। পরিশ্রমই সফলতার চাবিকাঠি সুতরাং পরিশ্রমের কোন বিকল্প নেই। গুগল এডসেন্স এপ্রুভাল পাওয়ার পর প্রথমদিকে তেমন ইনকাম হবে না। দিন যত যাবে; ট্রাফিক তত বাড়তে থাকে। ট্রাফিক বাড়ার সাথে সাথে ওয়েবসাইট থেকে আয়ের পরিমানও বাড়তে থাকবে।

নতুন নতুন লেখা পাবলিশ করুন। বন্ধুবান্ধবীদের কাছে; কৌতুহলপূর্ণ বিষয় জানতে চান। তারা যেসকল বিষয় নিয়ে আগ্রহী সেগুলো আপনি আপনার ব্লগে তুলে ধরুন৷ বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে নিজের লেখা প্রচার করুন। বন্ধুদের লেখা শেয়ার করার জন্য অনুরোধ করুন। যেভাবে পারেন; যেকোন বৈধ উপায়ে ওয়েবসাইটের ট্রাফিক বাড়ান। চেষ্টা থামিয়ে দিলে; ব্লগ লিখে আর্নিং করা কঠিন হয়ে যাবে সুতরাং চেষ্টা থামানো যাবে না। কষ্ট মেনে নিয়ে এগিয়ে যেতে হবে।


ধাপ ০৭: গুগল এডসেন্স এর পেমেন্ট মেথড
প্রতিনিয়ত চেষ্টা চালিয়ে গেলে কয়েক মাসের মধ্যেই নিজের চেষ্টার ফল পাবেন। ওয়েবসাইটে আয় করা অর্থ গুগল এডসেন্স একাউন্টে জমা হবে। সেই একাউন্ট থেকে টাকা উত্তোলন করাকে সাধারণত পেমেন্ট রিসিভ বলা হয়। গুগল এডসেন্স থেকে পেমেন্ট রিসিভ করার চারটি মাধ্যম আছে যেমন-


পেপ্যালইন্টারন্যাশনাল মাস্টারকার্ড
ইন্টারন্যাশনাল ভিসা কার্ড
ব্যাংক ওয়ার
বাংলাদেশে পেপ্যাল এভেইলেবল নয় এমনকি সাধারণ মানুষের জন্য ইন্টারন্যাশনাল মাস্টারকার্ড বা ভিসা কার্ড পাওয়াও অন্তত জটিল; তাই সরাসরি বাংলাদেশের যেকোন ব্যাংকের একাউন্ট দিয়ে সরাসরি গুগল এডসেন্সের টাকা উত্তোলন করাই শ্রেয়। ব্লগ থেকে আয় করা অর্থ গুগল এডসেন্সে জমা হয়ে কমপক্ষে ১০০ ডলার হলে গুগল আপনাকে পেমেন্ট রিসিভ করার সুযোগ দিবে। ১০০ ডলারের কম হলে টাকা উত্তোলন করতে পারবেন না।

ব্লগ লিখে মাসে কত টাকা আয় করা যায়?
আর্টিকেল লিখে আয় করা যায়? আর্টিকেল লিখে প্রতিদিন ১০০ ডলার আয় করুন; এরকম চমকপ্রদ লেখায় অনেকেই বিভ্রান্ত হোন। আসলে আর্টিকেল বা ব্লগ লিখে দিনে কত টাকা আয় করা যায় সেটি নির্ভর করবে; ভিজিটর সংখ্যার উপর এবং ব্লগটিতে প্রদর্শিত বিজ্ঞাপনে কতজন ক্লিক করলো তার সংখ্যার উপর।

এমনও হতে পারে; প্রতিদিন ১ হাজার ভিজিটর এসে ২০টি ক্লিক করে গেল সেক্ষেত্রে আয়ের পরিমাণ ২/৩ ডলার; আবার দেখা গেল, ভিজিটর ৫০ হাজার কিন্তু ক্লিক পড়েছে মাত্র ৫টি! সেক্ষেত্রে আয় কমে হবে ১ ডলার। বাংলাদেশি কোন ভিজিটরের ১ ক্লিক মাত্র ১০ সেন্ট (কম বেশি হয়) কিন্তু আমেরিকান ভিজিটরের ১ ক্লিক ২/৩ডলার (কম বেশি) হয়। সুতরাং ভিজিটরের লোকেশনও অনেক বড় ফ্যাক্টর। আবার কি ধরণের বিজ্ঞাপন প্রদর্শিত হচ্ছে তার উপরেও আয় নির্ভর করবে৷ সুতরাং ব্লগসাইট থেকে ইনকাম কত হবে তা নির্ভর করছে-


ভিজিটর সংখ্যার উপর।
বিজ্ঞাপনে ক্লিক সংখ্যার উপর।
ভিজিটরের লোকেশনের উপর।
বিজ্ঞাপণের ধরনের উপর।
ব্লগসাইটের পপুলারিটির উপর।
ব্লগসাইটের বয়সের উপর।


অর্থাৎ আপনি ব্লগ থেকে কত টাকা আয় করতে পারবেন তা বলা কখনোই সম্ভব নয়। চেষ্টা চালিয়ে গেলে এবং মৌলিক লেখা পাবলিশ করতে থাকলে আপনি ভালো একটি ইনকামে পৌছাতে পারবেন; সেটি দৈনিক ১০০ ডলার হতে পারে আবার ১ হাজার ডলারও হতে পারে। মনে রাখতে হবে; ব্লগ সাইটে আয়ের ক্ষেত্রে কোন শর্টকাট টেকনিক নেই। পরিশ্রম করুন; সফল হবেন ই।

Comments (No)

Leave a Reply

এই সাইটের কোন লেখা কপি করা সম্পুর্ন নিষেধ