সেবার নামে প্রতারণায় জড়িয়ে পড়ছে Mobile ব্যাংকিং সেবাদাতা প্রতিষ্ঠান Bkash । সিম রিপ্লেস করে একাধিক এজেন্টের হিসাব থেকে টাকা হাতিয়ে নেয়ার ঘটনায় দেশের বিভিন্ন থানায় একাধিক অভিযোগ জমা পড়েছে। ইতিমধ্যে বাংলাদেশ মোবাইল ফোন রিচার্জ ব্যবসায়ী অ্যাসোসিয়েশেনের হস্তক্ষেপে কেউ কেউ কিছু টাকা ফেরত পেয়েছেন। আবার অনেকে টাকা উদ্ধার করতে না পেরে ব্যবসা ছেড়ে দিয়েছেন।
Bkash ও বিকাশের ডিস্ট্রিবিউটর হাউসের কর্মকর্তাদের যোগসাজশে এ ধরনের ঘটনা ঘটছে বলে অভিযোগ করছেন ভুক্তভোগীরা।
নির্ধারিত চার্জের চেয়ে গ্রাহকদের কাছ থেকে বেশি টাকা নেয়ারও অভিযোগ পাওয়া গেছে বিকাশ এজেন্টদের বিরুদ্ধে। এ ছাড়া সন্ত্রাসীরা বিকাশের মাধ্যমে মুক্তিপণও আদায় করছে বলে একাধিক অভিযোগ পাওয়া গেছে। আশঙ্কা করা হচ্ছে, দ্বিস্তর লেনদেন নিরাপত্তাব্যবস্থা না থাকায় জাতীয় নির্বাচন সামনে রেখে ভোট কেনাবেচাতেও ব্যবহৃত হবে বিকাশ।
মিরপুরের Bkash এজেন্ট রবিউজ্জামান বিপ্লব। তিনি অভিযোগ করেন, তার এজেন্ট নম্বর (০১৭৭৭৬৮৮৫৮৪) থেকে ৩১ মার্চ দুপুরে এক লাখ ১৬ হাজার ৮৪০ টাকা বিভিন্ন নম্বরে সরিয়ে নেয়া হয়েছে। তিনি কয়েক দফা Bkash কর্তৃপক্ষ ও ডিস্ট্রিবিউটর হাউসের সঙ্গে যোগাযোগ করেও কোনো সমাধান পাননি। পরে থানায় সাধারণ ডায়েরি করে সমিতির কাছে অভিযোগ করেছেন। Online earning tips
বিপ্লব বলেন, “আমাদের ব্যবসায়ী সমাজের পরামর্শে গ্রামীণফোন সেন্টারে গেলে আমাকে জানানো হয়, সিমটি রিপ্লেস (ডিস্ট্রিবিউটর হাউস সিমের কাগজপত্র জমা দিয়ে আরেকটি সিম তুলে নেয়) করে টাকা হাতিয়ে নিয়েছে কেউ। এ বিষয়ে মিরপুরের পল্লবী থানায় সাধারণ ডায়েরি (২১১৪/৩১-০৩-১৩) করেছি।”
বিপ্লব জানান, ডিস্ট্রিবিউটর হাউস (শুভ্র এন্টারপ্রাইজ, বাগবাড়ি, গাবতলী) তাকে বিকাশের এজেন্ট করার সময় মোবাইল ফোনের সিমটি তার নামে নিবন্ধন না করে ডিস্ট্রিবিউটর হাউসের নামে করেছে। ফলে নিবন্ধনের কাগজপত্র প্রতিষ্ঠানটির কাছে থাকায় সহজেই তারা বিকাশের যোগসাজশে তার টাকা হাতিয়ে নিয়েছে।
Bkash বিরুদ্ধে এ ধরনের অপকর্মের অভিযোগের অনুসন্ধানে বেরিয়ে আসে আরো ভয়াবহ সব তথ্য। এর আগেও ঘটেছে এ ধরনের একাধিক ঘটনা। বাংলাদেশ মোবাইল ফোন রিচার্জ ব্যবসায়ী অ্যাসোসিয়েশনের কাছেও প্রায়ই আসছে এমন অভিযোগ।
জানা গেছে, বিকাশের মোবাইল ব্যাংকিং এজেন্ট গ্লোবাল টেলিকমের ০১৭৭৫৫৫২১০০ নম্বর থেকে ১৮ হাজার ২০০ টাকা, সানা ইউটিলিটি কালেকশনের ০১৭৬২৬২০০১৯ নম্বর থেকে ২৪ হাজার এবং মিম টেলিকমের ০১৭৭৬২৯৪২৪৪ নম্বর থেকে ৫৬ হাজার টাকা হাতিয়ে নেয়া হয়েছে। শেষোক্ত সিমটি ১২ দিনে চারবার রিপ্লেস করা হয়েছে বলে গ্রামীণফোন সেন্টার থেকে জানা গেছে। অন্যদিকে সানা ইউটিলিটি কালেকশনের সূত্রে জানা গেছে, তাদের সরিয়ে ফেলা ২৪ হাজার টাকা তারা কুমিল্লা থেকে উদ্ধার করেছে। এ ছাড়া এজেন্টদের ব্যক্তিগত ০১৮২৭৭০১৯৯১, ০১৮৫০৮৫৫২১৯, ০১৭১৩২২৬৮৩৩ ও ০১৯১৬৭৭৩৬৮৭ ফোন নম্বর থেকে (এই নম্বরগুলো নিবন্ধন করে অর্থ লেনদেন করা হতো) টাকা হাতিয়ে নেয়ার অভিযোগ করেছেন ভুক্তভোগীরা।
বাংলাদেশ মোবাইল ফোন রিচার্জ ব্যবসায়ী অ্যাসোসিয়েশনের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি আবুল কালাম আজাদের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, “আমাদের কাছে প্রায়ই এ ধরনের অভিযোগ আসছে। এরই মধ্যে এভাবে পুঁজি হারিয়ে সংকটে পড়েছে কয়েকটি প্রতিষ্ঠান।”
আবুল কালাম আজাদ বলেন, “বিকাশের প্রধান নির্বাহী, হেড অব সেলস ডিস্ট্রিবিউশন, নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিটিআরসি, গ্রামীণফোনের প্রধান নির্বাহী, এফবিসিসিআইয়ের সভাপতি ও মোবাইল ফোন অপারেটরগুলোর সংগঠন অ্যামটবের কাছে চিঠি পাঠিয়েও অনেক ক্ষেত্রেই কোনো প্রতিকার পাওয়া যায় না। তবে আমরা চেষ্টা করে যাচ্ছি।”
বাংলাদেশ মোবাইল ফোন রিচার্জ ব্যবসায়ী অ্যাসোসিয়েশনের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি অভিযোগ করে বলেন, ‘এই অপকর্মের সঙ্গে ডিস্ট্রিবিউশন হাউস ও বিকাশের সংশ্লিষ্ট বিভাগের কর্মকর্তারা জড়িত।” Bkash কেউ জড়িত না থাকলে এটি করা সম্ভব নয় দাবি করে তিনি বলেন, “পিন নম্বর একটা বড় ফ্যাক্টর।’ তিনি আরো জানান, সিমের নিবন্ধন ডিস্ট্রিবিউটর হাউসের নামে না হয়ে এজেন্টের নামে হলে এ ধরনের ঘটনা ঘটত না।
একই সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক শফিকুর রহমান বলেন, “অ্যাসোসিয়েশনের সদস্য ও প্রতারণার শিকার বদিউজ্জামান বিপ্লব দীর্ঘ লড়াইয়ের পর কিছুদিন আগে পুরোটা না পেলেও কিছু টাকা আদায় করতে পেরেছেন। আমরা সর্বোচ্চ চেষ্টা করছি ভুক্তভোগীদের পক্ষে লড়াই চালিয়ে যেতে। আমরা চাই, অবিলম্বে বিকাশ-এর এই প্রতারণার ফাঁদ বন্ধ হোক।”
এসব বিষয়ে জানতে চাইলে Bkash প্রধান নির্বাহী কামাল কাদির বলেন, “সিম রিপ্লেস করা সম্ভব নয়। যারা অভিযোগ করেছেন, তাদের দোকানের কর্মচারীরাও টাকা সরিয়ে নিতে পারে।” অভিযোগকারীর দোকানে কোনো কর্মচারী নেই, জানানো হলে কামাল কাদির নিশ্চুপ থাকেন। গ্রামীণফোন সেন্টার থেকে সিম রিপ্লেস করার তথ্য নিশ্চিত করা হয়েছে জানানো হলে তিনি বলেন, “আমাদের কাছে এ ধরনের অভিযোগ আসেনি। তবে আমরা বিষয়টি খতিয়ে দেখব।”
কামাল কাদির জানান, সারা দেশে বিকাশের ৪২ হাজার এজেন্ট। প্রতিদিন গড়ে এক লাখ লেনদেন হয় (প্রায় ১৯ কোটি টাকার মতো). এর মধ্যে একটি-দুটি অভিযোগ বাংলাদেশ ব্যাংকের কাছে গেলেও যেতে পারে।
এদিকে Bkash এজেন্টদের বিরুদ্ধে টাকা পাঠানোর সময় চার্জ বেশি নেয়ারও অভিযোগ পাওয়া গেছে। শতকরা ১ দশমিক ৮৫ টাকা চার্জ নেয়ার কথা থাকলেও বেশির ভাগ ক্ষেত্রে নেয়া হচ্ছে দুই টাকা। এমনকি টাকা ডেলিভারি দেয়ার স্থানেও সার্ভিস চার্জ দাবি করা হয় হাজারে পাঁচ টাকা।
টাকা পাঠানোর সময় একাধিকবার এমন ঘটনা ঘটেছে উল্লেখ করলে কামাল কাদির বলেন, “এ ধরনের ঘটনা ঘটলে গ্রাহকরা যদি আমাদের কল সেন্টারে ফোন করেন, তাহলে আমরা এর প্রতিকার করতে পারব।” তবে এজেন্টদের চার্জ বেশি নেয়ার কথা নয় বলে তিনি জানান।
এ ব্যাপারে দেশের খ্যাতনামা একজন প্রযুক্তিবিশেষজ্ঞের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে নাম প্রকাশ না করার শর্তে তিনি বলেন, “ডিস্ট্রিবিউটর হাউস ও বিকাশের তথ্যপ্রযুক্তি বিভাগের কর্মকর্তারা এ কাজের সঙ্গে জড়িত থাকতে পারেন। কারণ, তথ্যপ্রযুক্তি বিভাগের লোকজন জানেন, কীভাবে পিন নম্বর বের করতে হয়।’
তথ্যসূত্র ফেসবুক
Comments (No)