কলাবতীর পর আসছে ব্যানানা সিল্কি শাড়িকলাগাছের সুতায় স্বাবলম্বী হওয়ার স্বপ্ন/After Kalavati comes the dream of becoming self-sufficient in banana silk sarees.2023 পরিত্যক্ত কলাগাছ থেকে উৎপাদিত তন্তু (সুতা) দিয়ে ‘কলাবতী’ শাড়ি তৈরির পর এবার তৈরি করা হচ্ছে ‘ব্যানানা সিল্কি শাড়ি’। আর এই সুতা থেকে শাড়িসহ বিভিন্ন দৃষ্টিনন্দন পণ্য তৈরি করে অর্থনৈতিকভাবে স্বাবলম্বী হওয়ার স্বপ্ন দেখছেন পাহাড়ে বসবাসরত নারীরা।
বান্দরবানের জেলা প্রশাসক ইয়াছমিন পারভীন তিবরীজির প্রচেষ্টায় প্রথমে কলাগাছের বাকল (খোসা) থেকে সুতা তৈরি করেন। সেই সুতা থেকে শাড়ি তৈরির মতো কঠিন কাজ করে তাক লাগান নারীরা। এছাড়া এই তন্তু থেকে বিভিন্ন হস্তশিল্পজাত পণ্য তৈরি করে আত্মনির্ভরশীল হয়ে উঠছেন পাহাড়ি নারীরা।
উদ্যোক্তাদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, বান্দরবানের জেলা প্রশাসক ইয়াছমিন পারভীন তিবরীজির প্রচেষ্টা ও সহযোগিতায় পাইলট প্রকল্পের মাধ্যমে স্থানীয় উদ্যোক্তা সংস্থা ‘পিস নারী কল্যাণ সংগঠন’র নির্বাহী পরিচালক সাইং সাইং উ তাঁতের শাড়ি বুননের কাজ হাতে নেন।
তার সঙ্গে স্থানীয় পাহাড়ি নারীদের পাশাপাশি কাজ করছেন প্রশিক্ষক ও মণিপুরি বুননশিল্পী (কারিগর) কবিতা দেবী। মণিপুরী শাড়ির কারিগর রাধাবতী দেবীর মাধ্যমে কলাবতী শাড়ি তৈরি করে সফলতার পর তারা নতুন ডিজাইনের ‘ব্যানানা সিল্কি শাড়ি’ বুননের কাজ হাতে নিয়েছেন।
তবে প্রথম কলাবতী শাড়ি বুননের মণিপুরী কারিগর রাধাবতী দেবী অসুস্থতার কারণে এবার আসতে পারেননি। বর্তমানে মৌলভীবাজারের কমলগঞ্জের দত্ত সিংহ নামের একজন পুরুষ কারিগর পাহাড়ি নারীদের প্রশিক্ষণ ও শাড়ি তৈরির কাজে সহযোগিতা করছেন।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, বান্দরবান শহরের কালাঘাটা ৩ নম্বর ওয়ার্ডের বড়ুয়ারটেক এলাকায় জেলা প্রশাসক ইয়াছমিন পারভীন তিবরীজির উদ্যোগে নারীদের দক্ষ ও স্বাবলম্বী করার লক্ষ্যে একটি পাইলট প্রকল্প গ্রহণ করা হয়েছে। এ প্রকল্পের আওতায় এ পর্যন্ত কয়েকটি ধাপে স্থানীয় প্রায় সাড়ে চারশো নারীকে সিলেটের মৌলভীবাজারের মণিপুরী শাড়ির প্রশিক্ষক এনে প্রশিক্ষণ দেওয়া হচ্ছে।
এছাড়াও তাদের প্রশিক্ষণের পাশাপাশি বিভিন্ন হস্তশিল্প পণ্য তৈরির কাজে লাগানো হয়। এসব কাজের বিনিময়ে প্রশিক্ষণার্থীদের জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে নিয়মিত ভাতা প্রদান করা হয়। ফলে পিছিয়ে পড়া পাহাড়ের নারীরা এরইমধ্যে অনেকটা এ কাজে আগ্রহী ও অর্থনৈতিকভাবে স্বাবলম্বী হয়ে উঠেছেন।
হস্তশিল্প প্রশিক্ষকদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, কলাগাছের তন্তুকে মণ্ডে (পাল্প) পরিণত করে স্পিনিং মেশিনে সূক্ষ্ম ও মসৃণ সুতা পাওয়া যায়। সেই সুতায় উন্নত মানের যেকোনো কাপড় বানানো সম্ভব বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা।
জেলা প্রশাসক ইয়াছমিন পারভীন তিবরীজির সেই স্বপ্ন বাস্তবায়নের লক্ষ্যে প্রথমে কলাগাছের তন্তু থেকে সুতা ও সেই সুতা থেকে ১৫ দিনের প্রচেষ্টায় সিলেটের মণিপূরী কারিগর রাধাবতী দেবী একটি শাড়ি তৈরি করেন। পরে সেই কলাগাছের সুতায় আরও একটি উন্নত মানের সিল্ক শাড়ি তৈরি করা হচ্ছে।
এজন্য নারী কারিগররা চরকায় সুতা কেটে শুরু করেছেন ‘ব্যানানা সিল্কি শাড়ি’ ও পাহাড়ি নারীদের পোশাক (থামি) বুননের কাজ। এ নিয়ে ভীষণ ব্যস্ত সময় কাটাচ্ছেন তারা। শাড়িটি বুনন শেষ হলে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে উপহার দেওয়ার চিন্তাভাবনা রয়েছে বলেও জানিয়েছেন তারা।
এদিকে শুক্রবার (১৬ জুন) যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয় থেকে অতিরিক্ত সচিব মোস্তফা কামাল মজুমদারের নেতৃত্বে একটি দল কলাগাছের তন্তু দিয়ে শাড়িসহ বিভিন্ন হস্তশিল্পজাত পণ্য উৎপাদন প্রক্রিয়া পরিদর্শন করেছেন। মোস্তফা কামাল মজুমদার ভবিষ্যতে যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়ের ঋণ ও প্রশিক্ষণ কর্মসূচিতে এই খাত অন্তর্ভুক্ত করা হবে বলেও আশ্বস্ত করেছেন।
এ বিষয়ে প্রশিক্ষণরত হস্তশিল্প প্রশিক্ষণার্থী উসিং ওঞাই ও মিথুই প্রু বলেন, আমরা লেখাপড়ার পাশাপাশি এই হস্তশিল্পের কাজ শিখছি। এতে করে আমরা একদিকে হাতের কাজ শিখতে পারছি। অন্যদিকে অর্থনৈতিকভাবে স্বাবলম্বী হচ্ছি এবং আমরা এরইমধ্যে হস্তশিল্পের অনেকগুলো পণ্য তৈরি করতে পারি।
এ কাজে সম্পৃক্ত উদ্যোক্তা সংস্থা পিস নারী কল্যাণ সংগঠনের নির্বাহী পরিচালক ও বান্দরবান বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রভাষক সাইং সাইং উ মারমা বলেন, জেলা প্রশাসক ইয়াছমিন পারভীন তিবরীজির দূরদর্শী চিন্তার ফসল এই কলাগাছের সুতা থেকে তৈরি দৃষ্টিনন্দন শাড়ি ও হস্তশিল্পজাত বিভিন্ন পণ্য।
এটি একটি উদ্ভাবনীমূলক প্রকল্প। জেলা প্রশাসকের উৎসাহ ও সহযোগিতায় কলাগাছের তন্তু দিয়ে পণ্য তৈরিতে পাহাড়ি নারীরা কাজ করছেন। হাতের তৈরি সুতায় প্রধানমন্ত্রীকে উপহার দেওয়ার জন্য একটি শাড়ি বুননের কাজ চলছে। জেলা প্রশাসক প্রায় সময় এসে খোঁজ খবর নিচ্ছেন।
ভবিষ্যতে স্পিনিং মেশিন (সুতা কাটার যন্ত্র) স্থাপনের পরিকল্পনা করা হচ্ছে। এ শাড়ি ও হস্তশিল্পজাত পণ্যগুলো তৈরির মাধ্যমে পাহাড়ের নারীরা আরও স্বাবলম্বী হবেন বলে
এ বিষয়ে বান্দরবানের জেলা প্রশাসক ইয়াছমিন পারভীন তিবরীজি বলেন, বান্দরবানের নারীরা কলাগাছের সুতা দিয়ে কলমদানি, ফাইল ফোল্ডার, টেবিল ম্যাট, পাপোশ, শোপিস, কানের দুলসহ বিভিন্ন পরিবেশবান্ধব পণ্য তৈরি করছেন। এছাড়াও আরও বিভিন্ন ধরনের সৌখিন জিনিসপত্র তৈরি করছেন নারীরা। এগুলো ভালো দামে বিক্রিও হচ্ছে।
জেলা প্রশাসক আরও বলেন, আমরা কলাগাছের সুতা থেকে একটি দৃষ্টিনন্দন শাড়ি তৈরি করতে পেরেছি। এটি দেখতে যেমন সুন্দর ও তেমন আকর্ষণীয়। এই শাড়িটি দেশে প্রথম কলাগাছের সুতা থেকে তৈরি হয়েছে।
আমরা কলাবতী শাড়ি তৈরির পর এবার তৈরি করছি নতুন ডিজাইনের ব্যানানা সিল্কি শাড়ি। বান্দরবান জেলার সাত উপজেলার হস্তশিল্পে আগ্রহী নারীদের প্রশিক্ষণের আওতায় আনার চেষ্টা চলছে বলেও জানান তিনি।