সাবেক ক্যামেরাই হোক আজকের ডিজিটাল রূপ। সন্তানের বড় হয়ে ওঠার বিভিন্ন মুহূর্ত ধরে রাখতে চান বাবা মায়েরা। বিভিন্ন উপায়ে মুহূর্তেদর বন্দি করতে চান তাঁরা। সেই তালিকায় নতুন সংযোজন হল স্তনদুগ্ধ থেকে গয়না তৈরি। এই ট্রেন্ডে গা ভাসিয়ে সারা বিশ্বেই জনপ্রিয় হচ্ছে ব্রেস্ট মিল্ক জুয়েলারি (Breast milk jewellery)।
গয়নার বৈচিত্রের শেষ নেই। আর দামি গয়নার কথা বললে প্রথমেই মাথায় আসে হিরে জহরতের কথা। কিন্তু মায়ের স্তন্য থেকে তৈরি বহুমূল্য গয়নার (Breast milk jewellery) কথা শুনেছেন কখনও? অদ্ভুত শোনালেও সত্যি। সাফিয়া ও অ্যাডম রিয়াধ নামের এক দম্পতি তৈরি করছেন এক বিশেষ ধরনের গয়না যা তৈরি হচ্ছে স্তন্যদায়িনী মায়ের স্তন্য থেকে।
ম্যাজেন্টা ফ্লাওয়ার’ হল সেরকমই এক সংস্থা, ২০১৯ সালে এই দম্পতি স্তন্য থেকে গয়না তৈরির একটি সংস্থা গড়েন। তাঁদের কর্ণধাররা জানিয়েছেন আগামী বছরের মধ্যে বার্ষিক টার্ন ওভার পৌঁছবে ভারতীয় মুদ্রায় প্রায় ১৫ কোটি টাকায়। সদ্যোজাত সন্তানকে স্তনদুগ্ধ পান করানোর স্মৃতি মনে রাখতে চান মায়েরা। তাই ব্রেস্ট মিল্ক থেকে তৈরি করা হচ্ছে দামী পাথর। সেই পাথরের তৈরি লকেট, কানের দুল, আংটি পরতে পারবেন মায়েরা।
ব্রেস্ট মিল্ক জুয়েলারি দিন দিন প্রসারিত হয়ে চলেছে৷ ম্যাজেন্টা ফ্লাওয়ারের এক জন কর্ণধার সফিয়া বলেছেন, ‘আমার মনে হয় ব্রেস্ট মিল্ক নিয়ে ট্যাবু দূর হচ্ছে ৷ মা ও শিশুর মধ্যে এটা একটা পবিত্র বন্ধন।’ তিনি আরও জানিয়েছেন স্তনদুগ্ধ সংরক্ষণ করে কী করে তার থেকে মেমেন্টো তৈরি করা যায়, তা নিয়ে একাধিক গবেষণা করা হয়েছে। গবেষণার মূল লক্ষ্য ছিল মেমেন্টো তৈরির পরও যেন ব্রেস্ট মিল্কের রং অপরিবর্তিত থাকে।
স্তনদুগ্ধ দিয়ে কোটি কোটি টাকার ব্যবসা, তৈরি হচ্ছে মায়ের দুধের গয়না
সফিয়া নিজে তিন সন্তানের মা। বলেছেন তিনি ভালাই জানেন যখন ব্রেস্টফিডিং পর্ব শেষ হয়ে আসে, তখন এক ধরনের শূন্যতা গ্রাস করে মেয়েদের। এটা একদিকে যেমন আনন্দদায়ক অভিজ্ঞতা, তেমনই সন্তানকে ঠিকমতো বড় করে তোলার চ্যালেঞ্জও থাকে এর মধ্যে। দু’ ধরনের অভিজ্ঞতার মেলবন্ধনে এই পর্ব স্মরণীয় প্রত্যেক মায়ের কাছে। তাই স্মরণ করে রাখার এত প্রয়াস।
স্তনদুগ্ধ থেকে তৈরি গয়না! ট্যাবু ভেঙে তাক লাগালেন দম্পতি
sohojbuy.com
গয়নাগাঁটি কার না প্রিয় বলুন তো! তাই বলে দুধ দিয়ে তৈরি! তাও আবার যে সে দুধ নয়। মায়ের বুকের দুধে দিয়ে তৈরি গয়না! অবাক হচ্ছেন? ভাবছেন, তেমন আবার হয় নাকি! তবে এমন গয়না বানিয়েই তাক লাগিয়ে দিয়েছেন এক দম্পতি। শুধু বানিয়েছেন তা-ই নয়। সেখান থেকে কোটি টাকা উপার্জনও করেছেন তাঁরা। কীভাবে সম্ভব হল ব্যাপারটা? আসুন শুনে নিই।
সদ্যোজাতের জন্য তাঁর মায়ের বুকের দুধের কোনও বিকল্প হয় না, এ কথা কে না জানে। শিশুর বেড়ে ওঠার পিছনে মস্ত বড় অবদান ওই স্তনদুগ্ধের। কিন্তু এই বুকের দুধ ঘিরে ট্যাবুরও অভাব নেই সমাজের। লোকসমাজে সন্তানকে দুধ খাওয়াতে গিয়ে কটাক্ষের শিকার হতে হয় অনেক মাকেই।
তবে সেইসব ট্যাবুকেই ভাঙতে চান তিন সন্তানের মা সাফিয়া। সদ্যোজাত সন্তান বহু ক্ষেত্রেই মায়ের বুকের দুধের সবটা খেয়ে উঠতে পারে না। সেক্ষেত্রে বুকের দুধের বড় একটা অংশই নষ্ট হয়। সেই অপচয় কী করে বন্ধ করা যায়, তা নিয়ে অনেক দিন ধরেই ভাবনা চিন্তা করছিলেন সাফিয়া রিয়াধ ও তাঁর স্বামী আদম রিয়াধ।
sohojbuy.com
sohojbuy.com
তাছাড়া স্তন্যপানের মাধ্যমে মা আর সন্তানের মধ্যে যে সুন্দর একটা সেতু গড়ে ওঠে, সেই মুহূর্তগুলোকে কী ভাবে স্মরণীয় করে রাখা যায়, সেটিও ছিল একটা ভাবনা চিন্তার একটা বিষয়।
সেখান থেকেই শুরু। মাতৃদুগ্ধ দিয়ে যে এমন লাভবান অথচ সৃজনশীল ব্যবসা যে করা যায়, তা সত্যিই প্রথমে ভাবেননি এই দম্পতি। প্রাথমিক ভাবে শুরুটা হয়েছিল শখের বশেই। তবে সেখান থেকেই আজ কোটি টাকা আমদানি করছেন সাফিয়া ও আদম।
বিষয়টা কী? গোড়া থেকেই বলি তবে। গয়নাগাঁটি এমন একটা জিনিস, যা পছন্দ করেন না এমন মহিলা খুঁজে পাওয়া কঠিন। তা এই গয়নাগাটির কিন্তু কম বৈচিত্র্য নেই। দামী গয়নাগাঁটি বলতেই মনে হয় দামী ধাতু, বহুমূল্য হিরে-জহরতের কথা। কমদামী ইমিটেশনেরও বাজারে চাহিদা বিস্তর। কিন্তু বুকের দুধ থেকে বানানো গয়না! ভেবেছেন কখনও। আর সেই ব্যাপারটা বানিয়েই তাক লাগিয়ে দিয়েছেন লন্ডনের এই দম্পতি।
লকডাউনের সময় অনেকেই নানা ধরনের সৃষ্টিশীল কাজে হাত পাকিয়েছেন। এই দম্পতি কিন্তু করে ফেলেছেন কোটি টাকার ব্যবসা। তা-ও আবার বুকের দুধ থেকে তৈরি গয়নাগাটি বানিয়ে। ২০১৯ সালে ‘ম্যাজেন্টা ফ্লাওয়ার্স’ নামে একটি সংস্থা খুলে ফেলেছিলেন তাঁরা।
ইতিমধ্যেই চার হাজারেরও বেশি অর্ডার তাঁরা ডেলিভারি করে ফেলেছেন। তাঁদের বানানো গয়না এতটাই জনপ্রিয় হয়ে গিয়েছে যে ব্যবসা সামলাতে হিমশিম খাচ্ছেন সফিয়া আর আদম। ২০২৩ সালের মধ্যে ই ব্যবসা থেকে তাঁরা কম করে হলেও ১৫ কোটি টাকার মুনাফা করতে পারবেন বলেই আশা দম্পতির।
বুকের দুধ দিয়ে কী ভাবে গয়না বানানো যায়, ভেবে অবাক হচ্ছেন তো! সেই রহস্য ভেঙেছেন সাফিয়া নিজেই। জানিয়েছেন, প্রথমে প্রযুক্তির মাধ্যমে দুধ থেকে অতিরিক্ত জল বের করে দেওয়া হয়। এর পরে সেটিকে আঠার সঙ্গে মিশিয়ে এক ধরনের পাথরের রূপ দেওয়া হয়। তবে খেয়াল রাখতে হয়, সেই আঠা যাতে হলদেটে না হয় এবং দুধ থেকে প্রস্তুত ওই শক্ত পদার্থটির ধবধবে সাদা ভাব যাতে নষ্ট না হয়। বহু নতুন মা-ই সাফিয়ার সংস্থার সঙ্গে যুক্ত হয়েছেন।
যাঁরা নিজেদের অতিরিক্ত দুধ সরবরাহ করছেন সাফিয়াকে। সাফিয়ার সংস্থা ইতিমধ্যেই সেই দুধ থেকে থেকে নেকলেস, কানের দুল, আংটির মতো নানা গয়নাগাটি বানিয়ে ফেলেছেন। আর সেসবের দামও নেহাত কম নয়।
বহু মা-ই নিজেদের মুহূর্তকে স্মরণীয় করে রাখতে শরনাপন্ন হচ্ছেন সাফিয়ার সংস্থার। বিস্তর বিক্রি হচ্ছে সাফিয়ার বানানো গয়নাগাটি। মাতৃস্তন্যকে নষ্ট না করে এ ভাবেও যে সেটাকে গ্রহণযোগ্য করে তোলা যায়, সেই ভাবনাকে কুর্নিশ জানিয়েছে নেটদুনিয়া।
Comments (No)