সুন্দরবনের বাওয়ালি থেকে সফল খামারি শাহাজান

সুন্দরবনের বাওয়ালি থেকে সফল খামারি শাহাজান সুন্দরবন থেকে যাঁরা গোলপাতা সংগ্রহ করেন, তাঁদের বাওয়ালি নামে ডাকা হয়। খুলনার কয়রা উপজেলার ৪ নম্বর কয়রা গ্রামের শাহাজান সিরাজ ছিলেন একজন বাওয়ালি। বহু বছর ধরে সুন্দরবনের গোলপাতা আহরণ করে সংসারের খরচ জুগিয়েছেন তিনি। স্বপ্ন ছিল গবাদিপশুর খামার গড়ার। সাত বছর আগে সেই স্বপ্নের পথে হাঁটা শুরু। এখন বাওয়ালির পেশা ছেড়ে তিনি পুরোপুরি সফল খামারি।

সুন্দরবনের বাওয়ালি থেকে সফল খামারি শাহাজান 1

২০১৬ সালে মাত্র দুটি গরু কিনে বাড়িতেই পালন শুরু করেছিলেন শাহাজান সিরাজ। অল্প অল্প করে ২টি গরু থেকে এখন প্রায় ২০ লাখ টাকার গরুর খামার গড়ে তুলেছেন। এর মধ্যে কয়েক লাখ টাকার গরু বিক্রিও করেছেন। এখন খামারে আছে ছোট-বড় মিলিয়ে উন্নত জাতের মোট ৮টি গরু।

প্রতিদিন গড়ে ৩২ কেজির বেশি দুধ বিক্রি হচ্ছে তাঁর খামারে। এতে প্রতিদিন আয় হচ্ছে প্রায় ১ হাজার ৭০০ টাকা। তাঁকে দেখে আশপাশের অনেকেই গরু পালন করছেন। তাঁর কাছে পরামর্শ নিতে আসছেন কেউ কেউ।

সুন্দরবনের বাওয়ালি থেকে সফল খামারি শাহাজান 2

কয়রা উপজেলা সদরের দেউলিয়া বাজার থেকে ৪ নম্বর কয়রা সড়ক ধরে তিন কিলোমিটার গেলেই শাহাজান সিরাজের বাড়ি। বাড়ির প্রবেশপথের ডান দিকে বসবাসের একটি ঘর। আর বাঁ দিকে লম্বালম্বিভাবে তৈরি করা গোয়ালঘর।

সম্প্রতি শাহাজান সিরাজের খামারে গিয়ে দেখা যায়, তিনি নিজেই তাঁর গাভি ও বাছুরের যত্ন নিচ্ছেন। ঝকঝকে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন খামার এলাকা। গোয়ালঘরটিতে ইটের গাঁথুনির প্রাচীর। বাতাস আসার জন্য রয়েছে জানালা। ওপরে টিন, মেঝে পাকা। আছে কয়েকটি বৈদ্যুতিক ফ্যান। ঘরের মধ্যে সারিবদ্ধভাবে দাঁড়িয়ে নির্দিষ্ট পাত্র থেকে খাবার খাচ্ছে গরুগুলো।

সুন্দরবনের বাওয়ালি থেকে সফল খামারি শাহাজান 3

সাফল্যের কথা জানাতে গিয়ে শাহাজান সিরাজ বলেন, ‘জীবনে অনেক কষ্ট করেছি। জীবনের ঝুঁকি নিয়ে সুন্দরবনের বাওয়ালির কাজ করেছি। একসময় গোলপাতার চাহিদা কমে যায়। আবার সুন্দরবনের মধ্যে বনরক্ষীদের কড়াকড়ির কারণে গোলপাতা কাটার জায়গাও সংকুচিত হয়ে পড়ে। তখনই মাথায় গরুর খামার করার ভাবনা আসে।

২০১৬ সালে ২টি গাভি কিনে বাড়িতে লালনপালন শুরু করি। পরে গরুর সংখ্যা বাড়ে। এখন দুধ বিক্রি করে প্রতিদিন আয় হচ্ছে। বাছুরগুলোর বয়স ৭ মাস হলে ৭০ থেকে ৮০ হাজার টাকায় বিক্রি করি। শুরুর সময় প্রথম গাভিটি বাছুরসহ কিনেছিলাম ১ লাখ ৪০ হাজার টাকা দিয়ে। এখন আমার খামারের মূলধন প্রায় ২০ লাখ টাকা।’

সুন্দরবনের বাওয়ালি থেকে সফল খামারি শাহাজান 4

কয়রা সদর ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) প্যানেল চেয়ারম্যান মো. লুৎফর রহমান বলেন, শাহাজান সিরাজ কয়রা সদরের একজন প্রতিষ্ঠিত খামারি হিসেবে পরিচিত। সুন্দরবনের ওপর নির্ভরশীল বাওয়ালি পেশা ছেড়ে তিনি তাঁর গরুর খামারের মাধ্যমে সফলতার মুখ দেখেছেন। তাঁকে দেখে উদ্বুদ্ধ হয়েছেন এলাকার অনেকেই। সুন্দরবনসংলগ্ন এই গ্রামীণ জনপদে সফল খামারি হিসেবে দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন তিনি।

Comments (No)

Leave a Reply

এই সাইটের কোন লেখা কপি করা সম্পুর্ন নিষেধ