সিটি এমেক্স কার্ড রিভিও| City Bank Amex Card Review আসসালামু আলাইকুম,আগে থেকেই মাস্টারকার্ড, ভিসাকার্ড ব্যবহারের খুব প্রয়োজন পড়তো। বিভিন্ন জনের কাছ থেকে অতিরিক্ত টাকা ব্যয় করে কাঙ্ক্ষিত জিনিস ক্রয় করতে হতো। মেইনলি ডোমেইন হোস্টিং ক্রয়ে এর প্রয়োজনীয়তা ছিল, কারণ এগুলো নিয়ে আমি কাজ করি।
কোনো পূর্ণাঙ্গ পোস্ট পেয়েছিলাম না এই কার্ড সম্পর্কে। তাই ভাবলাম, নিজের কিছু অভিজ্ঞতা শেয়ার করি। একাউন্ট খুলা থেকে শুরু করে সার্ভিস কেমন পাচ্ছি পুরোপুরি আলোচনা করবো। এই মতামত সম্পূর্ণ ব্যক্তিগত ও কোনো প্রমোশনাল নাহ।
একাউন্ট ওপেন করাঃ
প্রথমত আমি সিটিব্যাংক একাউন্ট খুলবো এমন চিন্তা করিনি। কারণ আমার জেলায় সিটিব্যাংকের কোনো শাখা নেই। কিন্তু আমার উপজেলা, জেলায় যথেষ্ট সিটি এজেন্ট ব্যাংক রয়েছে। তারপর City Ekhoni App এর সহায়তা নিলাম৷ স্মুথলি ইন্সটেন্ট একাউন্টও ওপেন হয়ে গেল। Account Types: General Savings দিয়েছিলাম।
যারা এখনি এপে একাউন্ট খুলতে চান তারা ইউটিউবে অনেক ভিডিও পেয়ে যাবেন।
এবার Citymaxx কার্ড নেয়ার পালাঃ
পার্শ্ববর্তী জেলায় সিটি ব্যাংক ছিল সেখানে একদিন যাই। কোনো বাড়তি কাগজপত্র লাগে নাই। শুধু গিয়ে একাউন্ট নম্বরটা বলেছি। ওনারা একটা ফর্ম দিলেন ও আমার সাইন নিয়েছে কয়েকটা।তারপর কিছু টাকা ডিপোজিট করি (১০০০ টাকা করলে বেশি ভালো)। কার্ডও পেয়ে যাই সাথে সাথে, কার্ডে নামও প্রিন্ট করা ছিল। কিন্তু অইদিন ওনারা পাসপোর্ট এন্ডোর্স করেননি কারণ কার্ড একটিভ হতে ২৪ ঘন্টা সময় লাগে। কল সেন্টারে ফোন দিয়ে কার্ড পিন সেটাপ করেছি ওইদিনই।
তারপরের দিন আবার ব্যাংকে যাই। ডুয়েল কারেন্সি এর জন্য পাসপোর্ট এন্ডোর্স করলাম। পাসপোর্টের মেয়াদ অবধি পর্যন্ত এন্ডোর্স করতে পারবেন। আমি ১০ বছরের জন্য ৫০০০$ এন্ডোর্স করেছিলাম। ব্যাস কাজ শেষ। এখন কাজ হচ্ছে কাংখিত কেনাকাটা করা।
ওইদিন সন্ধ্যায় কল সেন্টারে ফোন দিয়ে ফরেন ট্রাঞ্জেকশন, ইকমার্স অন করে এবং ডলার লিমিট সেট করে নিলাম। আপনার ইচ্ছামত ডলার লিমিট সেট করতে পারবেন (সর্বোচ্চ ৩০০ ডলার, এর বেশিও হবে এডুকেশন পার্পাস এ)। তারপর কার্ড দিয়ে ট্রান্সেকশন হয় কিনা তা চেক করার জন্য ডোমেইন কিনলাম (আমার একটা ডোমেইন রিনিও করার প্রয়োজন ছিল)।
স্মুথলি ট্রাঞ্জেকশন হলো, সাথে সাথেই। ডলার রেটও চেক করলাম। যত ততই কেটেছে, কোনো এক্সট্রা টাকা কাটে নাই।
তারপর ওইদিনই রাতে কার্ড ফি ৫৭৫ টাকা কেটে নিল। এবং তার পরের দিন ৩৪৫ টাকা এসএমএস চার্জ নিয়েছে। আর কোনো চার্জ কাটবেনা একবছরের জন্য।
বিভিন্ন সাইটে কার্ড এড ফিঃ
ফেসবুকে কার্ড এড করলে ১$ সমপরিমাণ টাকা কেটে নেয়।গুগলে কার্ড এড করলে ৮ টাকা কেটে নেয়।
এই ফি মূলত কার্ড ভেলিড অর্থাৎ ঠিক আছে কিনা তা টেস্ট করে। ফেসবুক ও গুগল সাপোর্টে যোগাযোগ করলাম তারা নাকি ৭/৮ দিন পর কার্ডে আবার রিফান্ড করে (যদিও ৪/৫ দিন হলো এখনো পাই নাই রিফান্ড, দেখা যাক কি হয়!)
ইকমার্স কেনাকাটাঃ
আলি-এক্সপ্রেস থেকে অর্ডার দিতে পেরেছি। নতুন ব্যবহারকারীদের জন্যে ৩$ এর কুপন আছে। (৫$ জিনিস ২$ কিনতে পেরেছি)। ট্রান্সেকশন স্মুথলি হয়েছে।
গুগলে কার্ড এড করায় ঝামেলা ও সমাধানঃ
গুগলে বাংলাদেশ রিজিওন এ এই কার্ড এড হয় না। কারণ Currency BDT এমেক্স কার্ড সাপোর্ট করে না। আপনার “গুগল পে” তে কার্ড এড করার সময় Country: United Sates দিবেন। এবং ঠিকানা Fakeadressgenerator থেকে USA এর একটা এড্রেস ও ফোন নম্বর দিয়ে দিবেন তাহলে হয়ে যাবে। আর কোথায় এমন সমস্যা হয় না গুগল ছাড়া।
৩% মার্ক আপ ফি কাহিনীঃ
এটার ভয়েই এই কার্ড নেওয়ার সাহস হয় নি। কিন্তু এখানে একটু বুঝার ভুল আছে আমাদের। এই মার্ক আপ ফি শুধুমাত্র ডলার ছাড়া অন্য কারেন্সিতে পেমেন্ট করলে প্রযোজ্য হবে।মনে করেন, টাকা থেকে ইউরো, রিয়েল এ পেমেন্ট করবেন তাহলে এমনটা চার্জ প্রযোজ্য হবে।
১৫% ভ্যাটঃ
এটা মূলত ফেসবুক, ইউটিউব এর জন্য প্রযোজ্য। বাংলাদেশ ব্যাংক কতৃক নিয়ম। বুস্টিং এ ব্যবহার করলে এই চার্জ গুনতে হবে।
সিটিটাচ এপসঃ
জাস্ট মাখন একটা এপস। বাংলাদেশের সেরা ব্যাংকিং অনলাইন একটা এপস, বলাই যায়। অনেক ফিচার আছে যেগুলো কল সেন্টারে ফোন না দিয়েই করা যায়।
ক্যাশব্যাকঃ
নির্দিষ্ট কয়েকমাস পর পর ইন্টারনেশনাল ট্রান্সেকশন উপর রয়েছে ক্যাশব্যাংক।
টাকায় টাকা উশুলঃ
যদি আপনি বেশি টাকা লেনদেন করেন বা একাউন্ট এ রাখেন। তাহলে হয়তো যে চার্জগুলো কাটবে (কার্ড ফি+ এসএমএস+ মেইনটেইনেন্স চার্জ) এগুলো আপনার সারা বছরে পাওয়া ক্যাশব্যাক ও মুনাফা এর সাথে কাটাকুটি হয়ে যাবে অনেকাংশে।
অনান্য ব্যাংক থেকে লেনদেনঃ
মোটামুটি সব ব্যাংক থেকে BEFTN, RTGS, NPSB এর মাধ্যমে টাকা আনতে বা পাঠাতে পারবেন ইন্সটান্ট।
বিকাশ সুবিধাঃ
বিকাশ টু সিটিব্যাংক, সিটিব্যাংক টু বিকাশ লেনদেন করতে পারবেন। (এতে ১০০০ টাকায় ২০ টাকার মত চার্জ যাবে) অনেক কথা বললাম। এতক্ষণ যা বললাম সবই সুবিধা। এখন অসুবিধা নিয়ে আলোচনা করবো।
অসুবিধাসমূহঃ
কলসেন্টার চার্জ একবার ফোন দিলে আপনাকে নিঃস করে ছাড়বে। চার্জ প্রায় ৩ টাকা/মিনিট। আরো কম হলে ভালো হতো।
অনলাইন ব্যাংকিং এর পুরো মজাটা পেতে সিটি ব্যাংক মনে করি সবার সেরা। বিভিন্ন ধরণের ফিচার প্রতিনিয়ত আসছে। Whatsapp Banking, Smart IVR আমার কাছে ভালই লেগেছে।
সবশেষে, আপনার যদি চার্জ মেজর কিছু না হয়, সিটি এমেক্স কার্ড নিতে পারেন। ডিসেন্ট একটা এক্সপিরিয়েন্স পাবেন আশা করি। বাকিটা আপনার উপর। সবাই ভালো থাকুন, সুস্থ থাকুন।
Comments (No)