লাভজনক উপায়ে গ্রামের ব্যবসা

গ্রামের ব্যবসায় সফল হওয়া যায় ১০০% এমনকি অনেকে আবার এটাও হয়ত খুজছেন টাকা ছাড়া ব্যবসা করা যায় কিনা! সেটা নিয়ে না হয় অন্যদিন আলোচনা করব। আপনি চাইলে গ্রামে বসে ছোট ব্যবসায়, মাঝারি ব্যবসা থেকে শুরু করে বড় ব্যবসায়ও করতে পারেন।

লাভজনক উপায়ে গ্রামের ব্যবসা 1

আপনি মাত্র ১০ হাজার টাকায় ব্যবসা করতে পারেন গ্রামে বসে। আপনি পুজি যদি বেশি হয় তাহলে ১ লাখ টাকায় ব্যবসা শ্ররু করতে পারেন। বর্তমানে সবচেয়ে লাভজনক ব্যবসা যে গুলো রয়েছে তা যদি আপনি জানতে পাররেন তাহলে আপনার জন্য অনেক সহজ হবে সিদ্ধান্ত নিতে।

কেননা সবার সব ব্যবসায় পছন্দ নয় আবার গ্রামে বসে সব ব্যবসায় করাও যায় না। তাই এমন কিছু লাভজনক ব্যবসার ধারণা নিয়ে কথা বলব যা গ্রামে বসে আপনি সহজেই করতে পারবেন। আজ আমি আপনাদের সাথে শেয়ার করব লাভজনক ব্যবসা আইডিয়া যা আপনি গ্রামে থেকে করতে পারবেন।

মাছ চাষের সাথে হাস-মুরগি পালন:পনি হয়ত এই ব্যবসায়ের আইডিয়াটা শুনেছেন কিন্তু আমি খুব কম মানুষকে দেখেছি যারা গ্রামে মাছ চাষের সাথে হাস-মুরগি পালন করেন। যারা মাছ চাষ করছেন শুধু মাছ চাষই করছেন। কিন্তু আপনি যদি একটু পরিশ্রম করে বাঁশ দিয়ে মাচা তৈরী করে সেখানে হাস-মুরগি পালন করেন তাহলে আপনি একই জায়গায় দুটি ব্যবসা করতে পারবেন। তাতে লাভ যেমন দ্বিগুন হবে পাশাপাশি মাছের খাবার পেয়ে যাবেন হাস-মরগি থেকে।

গ্রামে স্টেশনারি/ লাইব্রেরি: গ্রামে স্টেশনারি লাইব্রেরিগ্রামে স্টেশনারি বা লাইব্ররি এখনো খুব কম দেখা যায়। আর থাকলেও সেখানে চাহিদা মত সবকিছু পাওয়া যায় না। আপনাকে হয়ত অনেক দূরের ছোট শহরে যেতে হয় আপনার প্রয়োজনীয় স্টেশনারি জিনিস কেনার জন্য বা বই-খাতা কেনার জন্য।

একটি গ্রামে অন্তত একটি ভাল স্টেশনারি/ লাইব্রেরি দেয়া যেতে পারে। এখন প্রতিটি গ্রামেই রয়েছে কিন্ডার গার্টেন, প্রাইমারী স্কুল, মাদ্রাসা এবং অনেক গ্রামেই উচ্চ-মাধ্যমিক স্কুল রয়েছে। আপনার গ্রামে একটি ভাল মানের স্টেশনারি/ লাইব্রেরি থাকা মানে আশাপাশের গ্রাম থেকেও আপনি ক্রেতা পাবেন।

গ্রামে পোলট্রি খামার এর ব্যবসা: আপনি হয়ত চিন্তা করছেন গ্রামে পোলট্রি খামারের ব্যবসা এ আর নতুন কি। নতুন কিছু না কিন্তু আপনার গ্রামে কি একটি পোলট্রি খামার রয়েছে? পাশের বাজারে হয়ত রয়েছে। তবে একটি গ্রামে একটি পোলট্রি খামার সুন্দর করেই চলতে পারে।

দেখা যায় গ্রামের মানুষ এখন মাছের চেয়ে পোলট্রি মোরগ বেশি খায়। এবং সারা বছর পাওয়া যায়। তাই পাশের বাজারে একটি পোলট্রি খামার থাকলেও নিজের গ্রামে একটি পোলট্রি খামার এর ব্যবসা আপনি দিতে পারেন। আশাকরি লাভ নিয়ে আপনার চিন্তা করতে হবে না।

বিউটি পার্লার: আপনি যদি সৌখিন হন এবং গ্রামে একটি স্মার্ট ব্যবসা করতে চান তাহলে বিউটি পার্লার হতে পারে আপনার প্রথম পছন্দ। আমি দেখেছি গ্রামের বিয়েতে মেয়েরা অনেক দূর থেকে বিউটি পার্লারের কর্মী বাড়িতে এনে নিজেদের সৌন্দর্যের কাজ করে থাকে। সেক্ষেত্রে যিনি সাজিয়ে দিতে আসেন উনার আসা যাওয়ার ভাড়া পর্যন্ত দিয়ে দেয়া হয়। এবং উনার কাজের পারিশ্রমিক তো রয়েছেই।

একটু চিন্তা করুন আপনি যদি কয়েকটি গ্রাম টার্গেট করে আপনার গ্রামে একটি বিউটি পার্লার দিতে পারেন তাহলে কেমন হয়। সেবা এবং মান ঠিক রাখতে পারলে অল্পসময়ে আপনার ব্যবসা এর সুনাম ছড়িয়ে পড়বে সব দিকে।

গ্রামে ফ্লেক্সি-বিকাশ এর ব্যবসা: ফ্লেক্সি-বিকাশ এর ব্যবসাশহরে আপনি কয়েকটি দোকান পরপরই একটি ফ্লেক্সি-বিকাশের দোকান দেখতে পারবেন। কিন্তু অনেক গ্রাম রয়েছে যেখানে একটিও এমন দোকান নেই। আপনার গ্রামে যদি না থাকে তাহলে আজই শুরু করুন লাভ কেমন আপনি প্রতিদিনই বুঝতে পারবেন। একজন মানুষ ২-৩টা সিম ব্যবহার করে থাকে আজকাল। এর সাথে আপনি অতি দরকারী মোবাইল এক্সেসোরিস রাখতে পারেন। যেমনঃ মোবাইল এর কাভার, চার্জার, ব্যাটারি, হেডফোন ইত্যাদি।

গ্রামে কৃষি পণ্যের পাইকারী-খুচরা ব্যবসা: গ্রামে সবচেয়ে সহজে আপনি যে জিনিস পাবেন তা হলে কৃষি পণ্য। এই কৃষি পণ্য নিজে ফসলের মাঠ থেকে যদি কিনে নিতে পারেন পাইকারী দরে তাহলে আপনার নিকটস্ত মফস্বল শহরে ভাল দামে তা পাইকারী বিক্রয় করতে পারবেন। আর যদি একটু ভাল লাগবে বিক্রয় করতে চান তাহলে খুচরা বিক্রয় করতে পারেন। আপনার এলাকায় কোন না কোন দরকারী পণ্য রয়েছে যা ভাল উৎপাদন হয়। এমন কিছু পণ্যের তালিকা তৈরী করে শুরু করে দিন গ্রামে বসে সবচেয়ে সহজ ব্যবসা।

গ্রামে চা-পাতা এর ব্যবসা: একটা বিষয় খেয়াল করবেন গ্রামের প্রতিটা চা-স্টলে মানুষের সমাগম থাকে সবসময়। এবং দোকানি সবচেয়ে বেশি চা বিক্রয় করে থাকে। যারা দোকানে বসে অন্তত এক কাপ চা পান করে থাকে। আমি বলছি না আপনি চায়ের দোকান দেন। আমি বলছি ঐ সকল চায়ের দোকানে আপনি চা-পাতা বিক্রয় করবেন।

আপনি চা-পাতার প্যাকেট পাইকারী দামে কিনে যদি চা দোকানির কাছে গড়ে ১০টাকা কমেও দিতে পারেন অন্যদের চেয়ে উনারা তা কিনে নেবে সহজে। আপনি যদি এমন ২৫ দোকান খুজে বের করেন আশেপাশের কয়েকটা গ্রাম মিলে এবং প্রতি প্যাকেটে ২০টাকা লাভ করেন তাহলে প্রতিদিন হয় ৫০০ টাকা এবং মাসে ১৫০০০ টাকা আয়।

মোবাইল মেরামত এর ব্যবসা: আগেও বলেছি যে এখন জন প্রতি অন্তত একটা মোবাইল মানুষ ব্যবহার করে। আর যন্ত্র নষ্ট হবে এটাই স্বাভাবিক। হলে আমাদের কে টাউনে যেতে হয় মেরামত করানোর জন্য। আপনি চিন্তাও করতে পারবেন না এখানে কত কাজ রয়েছে। আপনি যদি একটা দোকান দিয়ে বসেন আশাকরি কাজ করে শেষ করতে পারবেন না। এবং লসের কোন সম্ভাবনাই নেই। কেননা এই ব্যবসা আপনি আপনার ঘরে বসেই করতে পারবেন।

গ্রামে ফার্মেসী ব্যবসা: ফার্মেসী ব্যবসাগ্রামে ফার্মেসী প্রায় প্রতি গ্রামেই রয়েছে। কিন্তু এখনো অনেক গ্রামে আছে যেখানে একটি ভাল ফার্মেসী নেই যেখানে প্রয়োজনীর সকল প্রকারের ঔষধ পাওয়া যাবে। ফার্মেসীর পাশাপাশি আপনি যদি একজন এম বি বি এস ডাঃ এর সাথে কন্টাক্ট করতে পারেন প্রতি সপ্তাহের জন্য তাহলে সেটা অনেক ভাল হবে। অথবা নিজে বেসিক চিকিৎসার একটি কোর্স করে নিতে পারেন। ব্যবসায়ে সফল হওয়ার কৌশল জানা থাকলে আপনি এই ব্যবসা করে অনেক সফল হতে পারবেন।

ভাল মানের মুদির দোকান: মুদির দোকান গ্রামে দেখা গেলেও এই আছে তো ঐ নেই। দরকারী অনেক জিনিসই পাওয়া যায় না। তাই একটি ভাল মানের মুদির দোকান প্রতি গ্রামেই চলবে। এটি এমন একটি ব্যবসা যা সবার কাছে পরিচিত এবং সবচেয়ে দরকারী।

গ্রামে বসে কোয়েল পাখির ব্যবসা: স্বল্প বিনিয়োগে আপনি শুরু করতে পারেন কোয়েল পাখির ব্যবসা। অনেকেই কোয়েল পাখির ব্যবসা করে স্বাবলম্বী হয়েছেন। কোয়েল পাখির মাংস এবং ডিম এর রয়েছে প্রচুর চাহিদা। আপনি যদি বানিজ্যিকভাবে কোয়েল পাখির ব্যবসা করতে পারেন তাহলে আপনার ভাগ্যের চাকা ঘুরে যেতে পারে। ১ মাসের মধ্যেই একটি কোয়েল পাখি খাওয়ার উপযোগী হয়ে উঠে। আর ৬ থেকে ৮ সপ্তাহে এরা ডিম দেয়া শুরু করে। তাই অল্প সময়ে আয় করা শুরু করতে পারবেন।

কাপড় সেলাইয়ের কাজ: অনেক পুরোনো একটি ব্যবসা হল কাপড় সেলাইয়ের কাজ। অনেকেই এই কাজ পারেন বা জানেন কিন্তু যুগের সাথে তাল মিলিয়ে ভাল কাজ কম মানুষই পারেন। আপনি যদি একটি সুন্দর নতুন ডিজাইনের কাপড় সেলাই করতে পারেন তাহলে আপনার জন্য এই ব্যবসা হবে উত্তম। এখন মানুষ সারা বছর নতুন কাপড় বানায়। তাই আপনার সুনাম থাকলে যে আপনি সুন্দর নতুন ডিজাইনের কাপড় সেলাই করতে পারেন তাহলে সবাই আপনার কাছেই আসবে।

উপহার সামগ্রীর দোকান: উপহার সামগ্রীর দোকানে যা পাওয়া যায় তা শুধু মানুষ কাউকে উপহার দেওয়ার জন্য ক্রয় করে না, নিজের ঘরে সুন্দর করে সাজিয়ে রাখার জন্যও ক্রয় করে। মানুষ সৌন্দর্য্য প্রিয়। আর এই আধুনিক যুগে গ্রামের মানুষও এখন অনেক আধুনিক এবং নিত্য নতুন সুন্দর জিনিস খুজে বেড়ান।

আপনি যদি নিজে একটু সময় নিয়ে চিন্তা করেন গ্রামে কি ব্যবসা করা যায় তাহলে আশাকরি অনেক সুন্দর আইডিয়া আপনার মাথায় আসবে। আমি একটু চেষ্টা করলাম আপনাদের সাথে কিছু আইডিয়া শেয়ার করার জন্য। আপনাদের যদি কোন উপকারে আসে তাহলে আমার লেখা সার্থক। ভাল থাকবেন সবসময়। তথ্যসূত্র” বিডি মোটিভেটর।

Comments (No)

Leave a Reply

এই সাইটের কোন লেখা কপি করা সম্পুর্ন নিষেধ