মুরগি পালন করে যেভাবে লাভবান হবেন

ফ্রী খাবার দিয়ে কিভাবে কম খরচে মুরগি পালন করা যায় এবং মুরগি পালন করে লাভ করার পদ্ধতি সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করছি। বাংলাদেশে মুরগি পালন শুরুতে যতটা লাভজনক ব্যবসা ছিল বর্তমানে সেরকম অবস্থায় নেই । অনেকেই এই মুরগি পালন করে লসের সমূখিন হচ্ছে। কিন্তু এখানে আমি আপনাদের এমন কয়েকটি উপায়

মুরগি পালন করে যেভাবে লাভবান হবেন 1


বলছি যা ফলো করে আপনি সহজেই আপনার মুরগির খামারে খাবার খরচ শতকরা প্রায় ৫০ ভাগ পর্যন্ত কমিয়ে আনতে পারেন এবং আপনার লাভের অংশ অনেকটাই বাড়িয়ে নিতে পারেন মুরগি পালন করে লাভ করার পদ্ধতি জানার আগে জেনে নিন এখানে আরো আলোচনা করা হয়েছে নিম্নোক্ত বিষয়গুলো নিয়ে :
মুরগি পালন করে লাভ, মুরগি পালন পদ্ধতি, মুরগি পালনের নিয়ম, লেয়ার মুরগি পালন করে লাভ, বয়লার মুরগি পালন করে লাভ, সোনালী মুরগি পালন করে লাভ, মুরগির খামারে লসের কারণ কি, মুরগির জন্য ফ্রী খাবার তৈরি করার নিয়ম,মুরগি পালন করে লাভ করার পদ্ধতি,মুরগি পালন করে কিভাবে লাভ করা যায় ,

মুরগির খামারে লস হবার কারণ কি ?

মূলত কারণ দুইটি
১, সিজনের সময় বাচ্চার বাড়তি দাম
২, অতিরিক্ত খাবারের দাম
মুরগির খামারে লস হবার প্রধান কারণ হলো খামারীরা হ্যচারী মালিক ও খাদ্য তৈরি কারক প্রতিষ্ঠান এর কাছে জিম্মি। প্রতি বছর ঈদের দুই মাস আগে ও অন্যান্য সিজনের আগে মুরগির বাচ্চার দাম বাড়ানো হয়। এবং অফ সিজনে দাম কমে যায়। তাই বড় প্রতিষ্ঠান গুলো নিজেরাই হ্যচারী করে বাচ্চা উৎপাদন করছে। এছাড়া বড় ফার্ম গুলো নিজেরাই খাদ্য উৎপাদন করে মুরগিকে খাইয়ে লাভবান হচ্ছে। আর ছোট খামারী রা এটা না করতে পারায় ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে ।
এছাড়া অনেকেই টিভিতে কৃষি বিষয়ক অনুষ্ঠান দেখে মুরগির খামার করার চিন্তা করে। কিন্তু এইসব অনুষ্ঠানের স্পন্সরশিপ করে থাকে বিভিন্ন রকম মুরগির খাবার তৈরিকারী প্রতিষ্ঠান , আর এই অনুষ্ঠানগুলোতে তারা তাদের কম্পানির খাবার খাওয়ানোর পরামর্শ দেয়। কিন্তু ফ্রী খাবার দিয়ে বা কম মূল্যে কিভাবে খাবার তৈরি করা যায় বা কি ধরনের প্রাকৃতিক খাবার দিয়ে মুরগির খাবার খরচ কমানো যায় তা নিয়ে কেউ আলোচনা করে না। অন্যদিকে উন্নত দেশগুলোতে ১০০% প্রাকৃতিক খাবার খাইয়ে বয়লার,লেয়ার,ও সোনালী মুরগি পালন করে থাকে।

মুরগি পালন করে যেভাবে লাভবান হবেন 2

মুরগি পালন করে কিভাবে লাভ করা যায়

মুরগি পালন করে লাভ করার পদ্ধতি টি ফলো করে লাভ করতে চাইলে আপনাকে অবশ্যই মুরগির জন্য নিজে খাবার বানাতে হবে । বাজার থেকে সব উপকরণ সঠিক মাত্রায় মিশিয়ে নিজে খাবার তৈরি করলে উৎপাদন খরচ বাজারের প্যাকেট খাবারের থেকে কেজিতে ১০ টাকা কমানো যায়। তাছাড়া ফ্রীতে মুরগির খাবার উৎপাদন এর কিছু পদ্ধতি নিচে দেয়া হল যা ফলো করে মুরগি পালন করে লাভ করার পদ্ধতি ভালো ভাবে জেনে নিতে পারবেন।
মুরগি পালন করে লাভ করার পদ্ধতি গুলোর মধ্যে ফ্রী খাবার উৎপাদন করা খুব দরকারি ও গুরুত্বপূর্ণ।

আমাদের দেশে পুকুরে ও নর্দমায় কুটিপানা খুব সহজেই জন্মায়। আপনি চাইলে নিজে এই পানা চাষ করতে পারবেন। এই কুটিপানা মুরগির খাবার হিসেবে খুবই উপযোগী। শুধু মাত্র এই কুটি পানা ব্যবহার করে আপনার মাংস উৎপাদনকারী বয়লার ও সোনালী মুরগির
খাবারের ১০% পর্যন্ত দানাদার খাদ্যের ব্যবহার কমিয়ে আনতে পারেন। লেয়ারের জন্য ৫%। এই পানায় ৪০ ভাগ প্রোটিন বিদ্যমান যা আপনার মুরগির জন্য খুবই উপকারী।
২য় যে ফ্রী খাবার রয়েছে তা হল শামুকের মিল (শামুকের শুকনো মাংস গুঁড়া) । শামুকের মিলে প্রটিন বিদ্যমান প্রায় ৯০% । বাংলাদেশে মাছ চাষের জন্য প্রচুর পুকুর রয়েছে। এইসব পুকুরে চাইলে মাছের পাশাপাশি খুব সহজেই শামুক উৎপাদন করা সম্ভব। নিজে উৎপাদন করতে পারলে এক কেজি শামুকের মিল উৎপাদন করতে খরচ হবে প্রায় ২০ টাকা। বয়লার ও সোনালী মুরগির খাবারে শতকরা ৩০থেকে ৩৫ ভাগ পর্যন্ত প্রোটিন প্রয়োজন হয়। এখানে শামুকের মিল দিয়ে মোট খাদ্যের প্রায় ৩০% খাবার এই মিল দিয়ে পরিবর্তন করা যায়। শামুকের মিল, চালের কুঁড়া ও অন্যান্য দেশীয় খাবার দিয়ে ২০ থেকে ২৫ টাকার মধ্যে মুরগির খাবার তৈরি করা সম্ভব যেখানে প্রতি কেজি প্যাকেট খাবারের দাম ৪০ থেকে ৫০ টাকা। এই নিয়মে মুরগির খাবার খরচ ৫০ % কমিয়ে আনা যায়।

তৃতীয় পদ্ধতি হল মুরগির খাবারের সাথে ঘাস ব্যবহার করা। হাইড্রোফনিক পদ্ধতিতে ঘরের ভেতর ঘাস উৎপাদন করে মুরগিকে খেতে দিতে পারেন। সব ধরনের মুরগিই ঘাস খেতে পছন্দ করে । বাড়িতে উৎপাদিত ঘাস ব্যবহার করে আপনি চাইলে আপনার খামারের খাবার খরচ অনেকটাই কমিয়ে আনতে পারবেন।

চতুর্থ প্যরেট পোকা বা black shoulder fly larvae মুরগির জন্য একটি উৎকৃষ্ট মানের খাবার হিসেবে ব্যবহার করা যায়। এর মধ্যে ৭০-৮০% প্রোটিন বিদ্যমান । বয়লার /সোনালী মুরগির খাবারে শতকরা প্রায় ৩০থেকে ৩৫ ভাগ প্রোটিন প্রয়োজন হয়। এই কারণে প্যরেট পোকা হতে পারে মুরগির বিকল্প খাবার উৎস । এই পোকার লার্ভা সরাসরি বা শুকিয়ে অন্যান্য খাবারের সাথে মিশিয়ে মুরগির খাবার তৈরি করা যায়। এই লার্ভার শুকনো গুরো ৩৫% + চালের কুঁড়া ৪০% + সরিষার খৈল ২৫% একত্রে মিশিয়ে পিলেট মেশিন দিয়ে মুরগির খাবার তৈরি করা যায়। লেয়ারের জন্য প্রটিন ১৮% রাখতে হবে। এতে করে এক কেজি মুরগির খাবার তৈরি করতে খরচ হয় ১৭-১৮ টাকা যেখানে বাজারে এক কেজি প্যাকেট খাবারের দাম ৪০ টাকা। তাই আপনি চাইলে এই পদ্ধতিতে আপনার পাঙ্গাস মাছের খাবার খরচ ৫০ % কমিয়ে আনতে পারবেন।প্যরেট পোকার চাষ পদ্ধতি জানতে এই লিংকে ক্লিক করুন

উপরে বর্ণিত পদ্ধতিগুলো অনুসরণ করলে একদিকে যেমন খামারিরা বেশি লাভ করতে পারবে, তেমনি ভোক্তারা ভেজাল মুক্ত ও এন্টি বায়োটিক মুক্ত মাংস ও ডিম খেতে পারবে।ও মুরগি পালনে আরো বেশি সফলতা আসবে।

Comments (No)

Leave a Reply

এই সাইটের কোন লেখা কপি করা সম্পুর্ন নিষেধ