মুক্তা চাষ পদ্ধতি । সরকারিভাবে মুক্তা চাষের প্রশিক্ষণের জন্যে আবেদন মুক্তার ব্যবহার কম বেশি অনেকেই গড়ে থাকে কিন্তু এটি কিভাবে উৎপাদিত হয় অনেকেই হয়তো জানার চেষ্টা করেন এবং কোথায় প্রশিক্ষণ কিভাবে নিবেন ভেবে থাকেন । মুক্তা মূলত দুই ধরণের হয়ে থাকে প্রাকৃতিক এবং কৃত্রিম ভাবে। মুক্তা চাষ এর প্রচলন অনেক দিন থেকে থাকলেও এখন এই মুক্তা চাষে মানুষের চাহিদা বাড়ছে কারণ এটি একটি লাভ জনক ব্যবসা।
মুক্তা চাষ মূলত ঝিনুকের থেকে হয় মিষ্টি জলের পুকুরে বা ট্যাংক এর মাধ্যমে। মাছ চাষের সাথে যারা নিযুক্ত তারা মুক্ত চাষ করলে লাভের পরিমান আরো দ্বিগুন হয় কারণ মুক্তার জন্যে আলাদা কোনো খাদ্য তৈরী করতে হয় না জলে।
ভালো প্রতিষ্ঠান থেকে প্রশিক্ষণ নিয়ে করলে মুক্তা চাষ খুব কঠিন বিষয় নয় তাই মুক্তা চাষের জন্যে প্রশিক্ষণ বিষয়টি আবশ্যক। মুক্তা চাষের প্রশিক্ষণ যেখানে সেখানে থেকে নিলে ব্যর্থতার চান্স বেশি থাকে তাই কোনো নির্দিষ্ট প্রতিষ্ঠান বা সরকারি প্রশিক্ষণ কেনার থেকে প্রশিক্ষণ নিয়ে চাষ করলে সাফল্য আসে খুব সহজে।
প্রজাতি –
মুক্তা অনেক ধরণের চাষ হয়ে থাকলেও তার মধ্যে তিনটি প্রজাতি বেশি চাষ করা হয়ে থাকে। –
ক। ল্যামেলিডেন্স মার্জিনালিস (LAMELLIDENS MARGINALIS )
খ। পাররেসিয়া কররুগাটা (PARREYSIA CORRUGATA)
গ। কোররিয়ানাস (CORRIANUS)
প্রত্যেকটি ধরণের ক্ষেত্রে চাষের সময় কাল বিভিন্ন হয়ে থাকে। সাধারনত ১ বছর থেকে ৩ বছর সময় লাগে।
মুক্তা চাষের মূল বিষয় –
মুক্তা চাষ কয়েকটি ধাপ অবলম্বন করে করা হয়ে থাকে –
১। মুক্তা চাষের জন্যে প্রশিক্ষণ আবশ্যক।
২। মুক্তা চাষের জন্যেই পুকুর বা ট্যাংক নির্বাচন করতে হবে –
ক। পুকুরে সারা বছর ৪৩ থেকে চার ফুট জল থাকা আবশ্যক।
খ। ট্যাংক এ করলে ভালো ট্যাংক নির্মাণ করতে জল নিকাশি আউট লেট্ দিয়ে।
৩। ঝিনুক সংগ্রহ করতে হবে -খাল বিল নদী থেকে বা ক্রয় করেও সংগ্রহ করা যায়। ঝিনুক নিয়ে এসে পুকুরে ছাড়তে হবে। এর পর লক্ষ্য রেখে হবে ঝিনুকের আকারের উপর যখন ৭ – ৮ সেন্টিমিটার সাইজ হবে তার পর সেটিকে অপারেশন এর জন্যে ব্যবহার করতে হবে।
মুক্ত চাষের বিষয় হলো ঝিনুকের খাসির ভিতর একধরণের কোষ আবৃত্য ম্যান্টর থাকে সেটা যতক্ষণ ঠিক থাকবে ততক্ষনই মুক্তা চাষের জন্যে ব্যবহার হবে। এই ক্ষেত্রে ঝিনুক দাতা ও গ্রাহিতার কাজ করে অর্থাৎ একটি ঝিনুক থেকে ম্যান্টর বের করে ২ মিমি করে কেটে নিয়ে আর একটি ঝিনুকের ভিতর প্রবেশ করানো হয় সেটিকে বলে অপারেশন।
ক। পুকুরে প্ল্যাঙ্কটন তৈরী করে মাছ চাষ করে থাকলে আলাদা করে কোনো খাদ্য তৈরী করতে হয় না। যদি না থাকে তবে খাদ্য বা প্ল্যাঙ্কটন তৈরী করতে হয় গোবস সার মিশ্রিত করে মাছ চাষের উপযোগীর মতোই।
খ। ট্যাংক এ চাষ করলেও খাদ্য তৈরী আবশ্যক।
৪। ঝিনুক অপারেশন এর সময় হলে আগে পুকুরে বা ট্যাংক এর জলের ৫ ফুট দূরত্ব বজায় রেখে দড়ির মধ্যে মাঝে মাঝে বোতল বা ভাসমান কিছু বেঁধে দিয়ে একপ্রান্ত থেকে আর একপ্রান্তে দড়ি বাঁধতে হবে।
৫। ম্যান্টর বা বিভিন্ন ঠাকুরের লকেট ডাইস নিয়ে ঝিনুক এর ভিতরে প্রবেশ করিয়ে ১০ মিনিটের মধ্যে অপারেশন করতে হবে। পরবর্তীতে সেগুলি বেড়ে মুক্তার আকার নেয়।
৬। অপারেশন হয়ে গেলে সেগুলো কে নেটের ভেতর ৬ থেকে ৮ টি একসাথে রেখে পুকুরে দড়িতে বেঁধে এক থেকে দেড় ফুট নিচে রেখে ঝুলিয়ে দেওয়া হয়।
৭। মাঝে চেক করতে হয় ঠিক আছে কিনা । ভালো অভিজ্ঞতা হলে ৮০ শতাংশের বেশি ভালো উৎপাদন পাওয়া যায়।
৮। জলের খাদ্যভাব ঠিক রাখতে হবে এবং গরমে জলের তাপমাত্রা যেন ২৫ ডিগ্রির মধ্যে থাকে তা লক্ষ্য রেখে ঝিনুকের ব্যাগ গুলি ওঠানামা করে বাঁধতে হবে।
৯। এক বিঘা পুকুরে তিন থেকে চার হাজার ঝিনুক ঝোলানো হয় । এর পর প্রজাতি অনুযায়ী ১ বছর পর থেকে সেগুলি তুলে এনে মুক্তা বের করা হয়।
১০। এক একটি মুক্ত মিনিমাম ৩০০ টাকা থেকে শুরু উর্ধে মুক্তার ধরণ অনুযায়ী দামে বিক্রি করা যায়।
আরও দেখুন পুকুরে মাছ ভাসার সম্ভাব্য কারন কি? এবং করনীয় কি ?
সরকরি প্রশিক্ষণ কেন্দ্র –
বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান প্রশিক্ষণ দিলেও সরকরি ভাবে প্রশিক্ষণ ভারতের একমাত্র মুক্তা চাষ প্রশিক্ষণ কেন্দ্র উড়িষ্যার ভুবেনেশ্বরে কৌসল্যাগঙ্গাতে অবস্থিত ICAR-সেন্ট্রাল ইনস্টিটিউট অফ ফ্রেশওয়াটার অ্যাকুয়াকালচার (CIFA ) দেওয়া হয়।
এখানে ১৯৯২ সাল থেকে যখন মুক্তা চাষের উপর প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়। এখানে প্রতিবছর মুক্তা চাষ এর প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়ে থাকে। ভারতের সব রাজ্য তথা বিদেশিরাও প্রশক্ষনের জন্যে আবেদন করে থাকে। এক একটি প্রশিক্ষণ ব্যাচ এ ২০ জন করে থাক।
৫ থেকে ৭ দিনের আবাসিক প্রশিক্ষণ হয়। প্রশিক্ষণ এর জন্যে তারা কিছু যোগ্যতার মান দাবি করে সেগুলির মধ্যে থেকেই ২০ জন বাছাই করে প্রশিক্ষণের জন্যে ডাকা হয়। প্রশিক্ষণের জন্যে ৮০০০ টাকা ধার্য্য করা হয়ে থাকে এবং থাকা খাওয়ার জন্যে মাথা পিছু দৈনিক ৩৫০ টাকা আলাদা ধার্য করা হয়ে থাকে।
আবেদন অনলাইন অফলাইনে দুটো ভাবেই করা যায়। আবেদন এর সিলেকশন হলে মেইল এর মাধ্যমে জানিয়ে দেওয়া হয় প্রশিক্ষণ তারিখ তার পর তারা পেমেন্ট কিভাবে করতে হবে জানিয়ে দেয়।
ঝিনুক অপারেশন
প্রশিক্ষণের নির্বাচনের জন্যে যে সকল তথ্য দেখা হয় –
১। প্রশিক্ষণার্থীদের মাছ/ঝিনুক চাষ/জল চাষ সম্পর্কে প্রাথমিক জ্ঞান থাকতে হবে।
২। অংশগ্রহণকারীদের বয়স 18-50 বছরের মধ্যে হতে হবে।
৩। অংশগ্রহণকারীদের কিছু অবকাঠামো থাকা উচিত যেমন পুকুর, সিমেন্টের ট্যাংক এবং ট্যাঙ্ক ইত্যাদ।
৪। নারী উদ্যোক্তাদের অগ্রাধিকার দেওয়া হবে (20%)।
5. প্রতিটি রাজ্য থেকে অংশগ্রহণকারীদের সমান বিবেচনা করা হয় ।
প্রশিক্ষণ কোর্স বিষয়বস্তু গুলি হল –
১। মিষ্টি জলের মুক্তা ঝিনুকের ভূমিকা, শারীরস্থান, নিউক্লিয়াস পুঁতির পরিচিতি এবং এর প্রস্তুতি, এগুলি বিষয় থাকে।
২। ম্যান্টল ক্যাভিটি, ম্যান্টেল টিস্যু এবং গোনাডালের মতো বিভিন্ন ইমপ্লান্টেশন পদ্ধতির উপর প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়ে থাকে।
৩। ইমপ্লান্টেশন, জলের গুণমান পরিমাপ ব্যবস্থাপনা, মুক্তা চাষের জন্য ব্যাগ তৈরি ইত্যাদি।
Comments (No)