ডিজিটাল মার্কেটিং কি :
এই সজ্ঞাটিকে বুঝতে হলে বোঝা দরকার আসলে মার্কেটিং কি ? খুবই সহজ ভাষায় মার্কেটিং হচ্ছে পণ্য বা সেবার প্রচার। আর এই প্রচারটি সেই জায়গাতেই চালানো হয় যেখানটায় টার্গেট কাস্টমার এর আনাগোনা বেশি হয়ে থাকে। এই যেমন ধরুন একটা ব্যস্ত রাস্তায় আপনি আপনার একটা বিলবোর্ড ঝুলিয়ে দিলেন। রাস্তাটা ব্যস্ত, সুতরাং কোনো না কোনো ভাবেই মানুষ আপনার বিজ্ঞাপনটা দেখছে বা দেখবে। ঠিক তেমনি কোনো জনপ্রিয় টিভি অনুষ্ঠানের সাথে আপনার বিজ্ঞাপনটি দেখানোর ব্যবস্থা করে দিলেন যাতে করে মানুষ আপনার বিজ্ঞপ্তি দেখতে পায়।
তাহলে মার্কেটিং যদি হয় কাস্টমারের কাছে পৌঁছানো ডিজিটাল মার্কেটিং ও হচ্ছে কাস্টমারের কাছে পৌঁছানো তবে তা ইন্টারনেট এর দুনিয়াতে।
ইন্টারনেট এর পৃথিবীটা একটু ভিন্ন রকম, তাই ভাবটাও ভিন্ন। কিন্তু মার্কেটিং এর মূল বিষয়টিও কিন্তু এখানটায় একই রকম। তাই ডিজিটাল মার্কেটিং কোনো টেকনিক্যাল বিষয় নয়, বরং এটি হচ্ছে ডিজিটাল পৃথিবীতে আপনার সেবা বা পণ্যের মার্কেটিং করা।
তাহলে ডিজিটাল মার্কেটিং যদি হয় ডিজিটাল পৃথিবীতে মার্কেটিং করা তাহলে প্রশ্ন আসতেই পারে, তবে SEO PPC SMM এই ব্যাপারগুলো কি অহেতুক ? একদমই না, বরং এই ব্যাপারগুলোই হচ্ছে মার্কেটিং করার টুল যা অতিভো প্রয়োজন। কিন্তু এই বিষয়টি বোঝার জন্য SEO, PPC, SMM, এই ব্যাপারগুলো আসলে কি, কেন করা তা বোঝা খুবই গুরুত্বপূর্ণ।
তাহলে আসুন একে একে জেনে নি এই ব্যাপারগুলো আসলে কি
SEO ( Seach Engine Optimization )
ইন্টারনেটের একটি বড় আধিপথ্যের জায়গা নিয়ে আছে সার্চ ইঞ্জিন। কিন্তু কেন এই আধিপত্য। মনে করুন, আপনি হাটে একটি দোকান দিবেন। আপনার দোকানটি যদি হাটের বা বাজারের মুখে হয় তাহলে আপনি বেশি কাস্টমার পাবেন আবার যদি একদম কোনায় বা শেষ মাথায় হয় তাহলে কম কাস্টমার। কিন্তু আপনার দোকানটি কোথায় হবে সেটা নির্ভর করছে বাজারের মালিকের উপর। তার কিছু মানদণ্ড আছে, সেই মানদণ্ডের সাথে হুবহু মিলে গেলেই কেবল আপনার দোকানটি বাজারের মুখে হওয়া সম্ভব। সেই মানদণ্ড গুলোর হতে পারে, আপনার ব্যবসায়ের সুনাম, আপনার ব্যবসায়ের বিক্রয় করা পণ্য বা সেবার মান, বাজারে আসা মানুষ যা খুঁজছে তার সাথে সামঞ্জস্য ইত্যাদি।
SEO এর ব্যাপারটিও ঠিক এই রকম। এখানটায় বাজারের মালিকপক্ষ হচ্ছে সার্চ ইঞ্জিন, আর আপনি হচ্ছেন দোকানদার। বাজারের মুখ এখানটায় হচ্ছে সার্চ ইঞ্জিন এর প্রথম পাতা। স্বভাববতই প্রথম পাতায় যা থাকবে আমরা তাই দেখার চেষ্টা করি বা ভিসিট করি।
কিন্তু প্রথম পাতায় আসতে হলে ঐযে বাজারের মতোই আপনার কিছু মানদণ্ড লাগবে যা দিয়ে আপনি ঠিক প্রথম পাতায় আসতে পারবেন।
কিন্তু সমস্যাটা হচ্ছে এই মানদন্ডটি সবসমই মেনে চলা সম্ভব নয়। যেমন আপনার যদি একদম নতুন একটি ব্যবসা প্রতিষ্ঠান হয়, তাহলে মানদণ্ড অনুযায়ী আপনি প্রথম দিকে আসতেই পারবেন না, কারণ প্রথমে তারাই আসবে যাদের কথা লোকে বলে বা যাদেরকে লোকে দেখতে চায়। আবার বাজারের মালিককে যদি আপনি টাকা দেন তাহলে সে আপনাকে বিশেষ একটি স্থান নির্ধারণ করে দিবে বাজারের মুখেই। কিন্তু সমস্যা হচ্ছে এই টাকার পরিমান অনেক। টাকা কোনোরূপ খরচ করা ছাড়াই আপনি এই জায়গাটি হাসিল করতে চাইছেন।
তাহলে উপায়টি কি ? খুব সহজ, ম্যানিপুলেশন। না এটা ঘুষ দেয়ার মতো নয় তবে এটা হচ্ছে কিছুটা নকল ভাবে নিজেকে তুলে ধরা যাতে করে বাজারের মালিকের মনে হয় আপনার দোকানটি মানুষের পছন্দ, তারা খুঁজছে ইত্যাদি। এই ম্যানিপুলেশন এর কাজটাই হচ্ছে SEO।
আর এই মনিপুলেশনটা আমরা কিভাবে করে থাকি ?
তার আগে আসুন একটু বুঝে নেই সার্চ ইঞ্জিন কিভাবে কাজ করে থাকে। তাহলেই বুঝবেন SEO এর ম্যানিপুলেশন এর কাজটা।
আমাদের সবারই এমন বন্ধু আছে যারা অনেকটাই মুশকিল আসান এর মতো কাজ করে। তাদের কাছ থেকে যে কোনো বিপদের সাহায্য পাওয়া যায়। যেমন আপনার ভালো গাড়ি লাগবে, বন্ধুটিকে জিজ্ঞাসা করলেন, আচ্ছা ভালো গাড়ি কোথা থেকে কিনবো ? সে আপনাকে ভালো কিছু গাড়ির নাম বলে দিলো। তাকে জিজ্ঞাসা করলেন ভালো ডাক্তার কোথায় পাবো ? সে ভালো ডাক্তারের নাম ও বলে দিল। তাকে জিজ্ঞাসা করলেন ভালো রেস্টুরেন্ট কোথায় পাবো ? সে আপনাকে ভালো কিছু রেস্টুরেন্ট এর নাম বলে দিলো।
গুগল মূলত এই কাজটি করে। এখন ভাবুন, যদি আপনার বন্ধুর মতামত শুনে আপনি একটি গাড়ি কিনলেন, কিন্তু সেই গাড়িটি কিছু দিনের মাঝেই নষ্ট হয়ে গেলো, তাহলে আপনি কি করবেন ? তাকে নির্ঘাত গালি দিবেন, তার কাছে আর যাবেন না, তাকে আর কিছুই জিজ্ঞাসা করবেন না। সার্চ ইঞ্জিন ও ঠিক এই ব্যাপারটি মাথায় রেখে কাজ করে। যেহেতু আপনাকে ভালো কিছু না বললে আপনি তার কাছে আর ফিরে আসবেন না, সেহেতু তার মূল লক্ষ্য থাকে ভালো কিছু রেফার করা।
কিন্তু সেটা কিভাবে করবে, সার্চ ইঞ্জিন তো মানুষ নয়, সে কিভাবে বুঝবে যে কোনটা ভালো আর কোনটা খারাপ ? এই জন্যই সার্চ ইঞ্জিন আপনার দেয়া অনুসন্ধানটির সাথে হাজার হাজার, লক্ষ্য লক্ষ্য সাইট এর সাথে সামঞ্জস্য খুঁজে থাকে। যার সামঞ্জস্যটা বেশি থাকে তাকেই প্রথমে নিয়ে আসে। আর এই সামঞ্জস্যের জন্য তার মানদণ্ড গুলো হলো
১। আপনি যা খুঁজছেন তা সাইট এর মধ্যে আছে কিনা
২। সাইটটি সম্পর্কে সবাই ভালো কথা বলে কিনা
৩। সাইটটিকে রেফার করে দেয়ার পর আপনার এক্সপেরিয়েন্স ভালো হবে কিনা
৪। সাইটটিকে অন্য কেউও রেফার করেছে কিনা
৫। অন্যরা সাইটটি নিয়ে আলোচনা করছে কিনা
৬। সাইটটি তে যা লিখেছেন তা আপনি রিসার্চ করে, জেনে বুঝে লিখেছেন কিনা বা বিশ্বাস যোগ্য কিনা।
দেখুন এই কাজগুলো আপনার বন্ধু ও করবে যখন সে কোনো কিছু আপনাকে রেফার করবে। সেও দেখবে আপনাকে সে যেটা ব্যবহার করতে বলছে তার
১। বাজারে ভালো নাম ডাক আছে কিনা
২। পণ্যটি দেখতে সুন্দর বা ভালো কিনা
৩। পণ্যটি নিয়ে সবাই কথা বলে কিনা
৪। পণ্যটি অন্যরাও অন্য সবাইকে রেফার করছে কিনা
৫। পণ্যটি যা বলছে তা সত্য কিনা অর্থাৎ বিশ্বাস যোগ্য কিনা
বুঝতেই পারছেন, সার্চ ইঞ্জিন এর মূল কাজটিই হচ্ছে আপনার ভালো বন্ধু হওয়া। যেন আপনি বার বার তার কাছে ফিরে আসেন।
এখন যেহেতু আপনি একজন বিক্রেতা বা আপনার একটি ওয়েবসাইট আছে তাই আপনার কাজ হচ্ছে সার্চ ইঞ্জিন এর পাতার সবার প্রথমে থাকা। ঠিক যেমনটি বাজারের মুখে দোকান নেয়ার মতো। আপনি মানদণ্ড গুলো জানেন। সুতরাং আপনার কাজ হচ্ছে ম্যানিপুলেট করা যেন আপনি সার্চ ইঞ্জিন এর প্রথম পাতায় চলে আসতে পারেন।
আর এই ম্যানিপুলেশন এর জন্য আপনি যা যা করলেন তা হচ্ছে
১। জেনে নিলেন আপনার কাস্টমার কি চায়, কি ধরণের প্রশ্ন করে, পণ্যের মধ্যে কি ধরণের গুণাগুণের কথা শুনতে চায়। মার্কেটিং এর ভাষায় একে বলে টার্গের মার্কেট রিসার্চ আর ডিজিটাল মার্কেটিং এর ভাষায় বলে কীওয়ার্ড রিসার্চ। যেহেতু আপনার কাস্টমার কীওয়ার্ড দিয়ে সার্চ করছে, তাই এটা জানা অনেক জরুরি তারা কি জিজ্ঞাসা করছে, অথবা তাদের চাহিদা কি ? ঠিক যেমনটি আমরা জেনে নেই আমাদের টার্গেট মার্কেট এর চাহিদা কি ? তারা কি চায় ?
২। আপনার কাস্টমার এর চাহিদা মতো আপনার সাইটটি সাজালেন, প্রতিটা জায়গাকে লিংক করে দিলেন, যেন কাস্টমার যে কোনো ভাবেই আপনাকে খুঁজে পায়। অর্থাৎ আপনার দোকানটিকে এমন ভাবে সাজালেন যে কাস্টমার ফিরে যেতে চায় না, অনেকটা সময় দোকানে ব্যয় করেন।
৩। আপনার দোকানটি কে সুন্দর করে সাজালেন। পণ্য হলে আমরা প্রোডাক্ট প্যাকেজিং করি আর সেবার ক্ষেত্রে সার্ভিস সেন্টারটি সুন্দর করে সাজাই ঠিক তেমনি ওয়েবসাইট হলে ওয়েবসাইটেও সুন্দর করে সাজানো বাধ্যতামূলক। যেন ওয়েবসাইট এ ঢুকেই একটা WOW Factor কাজ করে। তারা যা খুঁজছে তা সহজেই খুঁজে পায়।
৪। আপনার ওয়েবসাইটটি নিয়ে যেন সবাই কথা বলছে তা দেখানোর জন্য আপনি অন্যদের বললেন আপনাকে নিয়ে কিছু লিখতে। অথবা আপনি নিজেই কিছু লিখে দিলেন যা অন্যরা ছাপালো। ঠিক যেমনটি আমরা ট্রাডিশনাল মার্কেটিং এ Public Relation এর কাজটা করে থাকি। নেটওয়ার্ক বিল্ড করার চেষ্টা করি, বিভিন্ন পত্র-পত্রিকায় নিজেদের সম্পর্কে লেখানোর চেষ্টা করি বা প্রেস রিলিজ করে থাকি যেন মানুষ জানতে পারে।
৫। অন্যদের বললেন আপনার সাইটটিকে একটু রেফার করে দিতে, যেমন কেউ কিছু খুঁজছে, তাদেরকে কমেন্টের মাধ্যমে বলে দেয়া তুমি অমুক সাইট এ গেলে এই জিনিসটি পাবে।
৬। আপনার সাইটটিতে যা লিখছেন তা যে রিসার্চ করে লেখা, সেটা দেখানো, যেমন আমরা পণ্যের মার্কেটিং এর সময় বলে থাকি রিসার্চ করে অমুক পণ্যটি তৈরী করা হয়েছে।
৭। আপনি যা বলছেন তা যে অন্যের থেকে কপি করে বলা নয় তা বলা। কারণ কেউই নকল জিনিস পছন্দ করে না। তাই পণ্যের ক্ষেত্রে আমরা নকল পণ্য এড়িয়ে চলার চেষ্টা করি আর সার্চ ইঞ্জিন কপি করা কনটেন্ট এড়িয়ে চলার চেষ্টা করে।
৮। পণ্য বা সেবা নিয়ে নিজেই লিখছেন যেন তা পড়তে পড়তে কাস্টমার এর সাথে আপনার একটি ভালো সম্পর্ক তৈরী হয় এবং এর মাধ্যমে সে আপনার ওয়েবসাইট এ বার বার আসে। ঠিক যেমনটি বিভিন্ন ট্রাডিশনাল মার্কেটিং এ আমরা বিভিন্ন অনুষ্ঠানকে স্পন্সর করে থাকি শুধু কাষ্টমেরকে বোঝানোর জন্য আমাদের পণ্যটি ওই কাজটির জন্য ভালো। যেমন রাঁধুনির রান্নার অনুষ্ঠান, ক্যামব্রিয়ান স্কুল এর ক্যারিয়ার বিষয়ক অনুষ্ঠান ইত্যাদি।
তাহলে দেখতেই পারছেন শুধু SEO টাই কিভাবে ট্রাডিশনাল মার্কেটিং এর সাথে মিলে যাচ্ছে।
এটাতো গেলো SEO এর ব্যাপার, কনটেন্ট মার্কেটিং, সোশ্যাল মিডিয়া মার্কেটিং কিংবা PPC এই বিষয়গুলো খুব সুন্দর ভাবে মিলে যায় ট্রাডিশনাল মার্কেটিং এর সাথে। তবে আজ আর সেই বিষয়ে লিখবো না। আপনাদের উৎসাহ পেলে, পরবর্তী পর্বে এই বিষয়গুলো নিয়ে আলোচনা করবো।
যেহেতু একটু ভিন্ন মতবাদ থেকে লিখেছি, তাই দ্বিমত থাকাটাই স্বাভাবিক। তবে দ্বিমতকে আমি নেতিবাচক কোনো উপমা দিতে নারাজ, বরং আমি বিশ্বাস করি দ্বিমত থেকে আলোচনা আর আলোচনা থেকেই এক মতের তৈরী হয়। তাই আপনার মূল্যবান মতামতটি দিতে ভুলবেন না। সেটা দ্বিমত হলেও ক্ষতি নেই।
Comments (No)